আজ বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতঃ দেশ ও বিশ্বজুড়ে শান্তি কামনা
আজ টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত। দেশি-বিদেশি প্রায় ২৫ লাখ মুসল্লির অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত মুসলমানদের এই অন্যতম বৃহত্ ধর্মীয় সমাবেশের শেষ দিন। আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ৪৬তম বিশ্ব ইজতেমা।
৮৬ বছর আগে হিজরি ১৩৪৫ সালে ভারতের রাজধানী দিল্লির পার্শ্ববর্তী নিজামউদ্দিন আউলিয়ার (রহ.) মাজার সংলগ্ন মসজিদকে কেন্দ্র করে মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) যে তাবলিগ তথা ইসলাম ধর্মের দাওয়াতি কার্যক্রমের সূচনা করেছিলেন তারই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় এই বিশ্ব ইজতেমা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এবং ভারত, পাকিস্তান, মধ্যপ্রাচ্যসহ এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকা মহাদেশের প্রায় ৮০টি দেশের মুসল্লিরা এবারের ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন। বিদেশি মুসল্লিদের সংখ্যা ৫ হাজারের বেশি। কহর দরিয়াখ্যাত তুরাগ নদীর তীরে উন্মুক্ত প্রান্তরে প্রায় ১৬৫ একর এলাকাজুড়ে চট ও নাইলনের কাপড় দিয়ে তৈরি বিশাল প্যান্ডেলের নিচে সমবেত মুসল্লিরা গত তিন দিন ধরে নামাজ আদায় করছেন এবং দেশ-বিদেশের হাক্কানি ওলামায়ে কেরাম ও বিশিষ্ট বুজর্গদের বয়ান শুনছেন। বয়ানে ঈমান, আকিদা, আখেরাত ও দ্বীনের দাওয়াত সম্পর্কে আল্লাহ, রাসুলের (সা.) বাণী ও হাদিস, কোরআন ও ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন দিক আলোচিত হয়েছে।
বিশ্ব ইজতেমায় লাখ লাখ মুসল্লি সমাজজীবনের হিংসা, দ্বেষ, দ্বন্দ্ব-বিরোধ ও দলাদলি ভুলে শুধুই ইবাদত আর মোনাজাতে অংশ নিতে সমবেত হন। সবার লক্ষ্য আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা। এখানে ধন-দৌলতের গরিমা নেই, অন্যের প্রতি বিরূপতা নেই। যারা গরিব, হজ করার সামর্থ্য নেই—তারা দলে দলে দীর্ঘপথ পায়ে হেঁটে, গাদাগাদি করে দীর্ঘপথ গাড়িতে চড়ে বিশ্ব ইজতেমায় শরিক হন একটু আধ্যাত্মিক শান্তি লাভের আশায়। আজকের আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়ে প্রায় অর্ধকোটি মুসলমান শান্তির জন্য আল্লাহর দরবারে হাত তুলবেন। যারা দেশ পরিচালনা করেন, সমাজে নেতৃত্ব দেন তারাও বাদ যাবেন না। সবাই এখানে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবেন। ইহলৌকিক নানা কাজে যা বলা হয় এবং করা হয়, সেগুলো স্মরণ করেই এই চাওয়া। সন্দেহ নেই এর ফলে তিক্ত অতীতের পুনরাবৃত্তি যদি রোধ হয় তবে তা সবার জন্য শুভ লক্ষণ। আল্লাহ সবাইকে হেদায়েত করুন। এদেশে এমন কিছু লোক আছেন যারা নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য ইসলামের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যে কোনো কাজকে মৌলবাদ বলে গালি দেয়া একটা ফ্যাশনে পরিণত করেছেন। আবার অন্যরা নিজেদের প্রভাব বিস্তারে ইসলামের নাম ব্যবহার করছেন। বিশ্ব ইজতেমার এই জামাত এসবের ধারেকাছে নেই। এখানে লাখ লাখ মানুষ এক শামিয়ানার নিচে এক কাতারে সমবেত হয়েছেন শুধুই ধর্মের বাণী শোনার উদ্দেশ্যে। এটা যে বাংলাদেশে হচ্ছে, তা আমাদের জন্য সন্তুষ্টি আর গৌরবের বিষয়। এখানে আত্মার শুদ্ধি ও শান্তির জন্য যে প্রার্থনা, তা যেন শুধু আমাদের জন্য না হয়। বিশেষ করে ফিলিস্তিন, ইরাক ও আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব অর্জন এবং মুসলিম বিশ্বের ঐক্য, সংহতি ও ভ্রাতৃত্বোবোধ জোরদার করার জন্যও যেন মোনাজাত হয়। বিশ্ব ইজতেমার মুসল্লিদের আখেরি মোনাজাত কবুল হোক, আমাদের দেশসহ বিশ্বজুড়ে শান্তি বিরাজ করুক—আল্লাহর দরবারে এটাই আমাদের ঐকান্তিক কামনা।
No comments