ধর্ম-ঐক্য ও সংহতি জাতির অন্তর্নিহিত শক্তি by মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান
জাতীয় ঐক্য ও সংহতি স্বাধীনতার গুরুত্বপূর্ণ একটি ভিত্তি। ঐক্য ও সংহতি জাতির অন্তর্নিহিত শক্তি বৃদ্ধি করে, ঈমানি চেতনা ও মনোবলকে সুদৃঢ় করে। দেশের আপামর জনসাধারণের মধ্যে পারস্পরিক ঐক্য, মৈত্রী এবং সামাজিক সংহতি ও সম্প্রীতি যে অত্যন্ত প্রশংসনীয় এবং মানব জাতির একান্ত কাম্য এতে বিশ্বের বিভিন্ন জাতি-ধর্ম ও দলমত-নির্বিশেষে সবাই
ঐকমত্য প্রকাশ করে। ইসলাম তার অনুসারীদের মধ্যে দেশপ্রেম, সামাজিক ঐক্য, সংহতি, সৌহার্দ্য, সমপ্রীতি ও অনুপম ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি করেছে, যা তাদের মানবতার অভিন্ন জাতিসত্তায় পরিণত করেছে। মানবাত্মার সঙ্গে দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সম্পর্ক যেমন অবিচ্ছেদ্য, ইসলামে দেশপ্রেমিক মুসলমানদের পারস্পরিক সম্পর্কও তেমনি অবিচ্ছেদ্য, অবিভাজ্য। ইসলাম মানুষকে জাতীয় ঐক্য, সংহতি, দেশাত্মবোধ ও সৌভ্রাতৃত্ব শিক্ষা দান করে, আর দেশপ্রেমের মাধ্যমে এ সামাজিক সংহতি টিকে আছে। স্বাধীনতা সুরক্ষায় ঐক্য ও সংহতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মানবতার ঐক্যের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে পবিত্র কোরআনে মানুষকে সতর্ক করা হয়েছে, ‘তোমরা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত-১০৩)
কারও কোনো রকম হস্তক্ষেপ ছাড়া জাতি যখন স্বীয় কর্তৃত্ব আইনানুগভাবে প্রতিষ্ঠা ও প্রয়োগ করতে সমর্থ হয়, তখন তারা নিজেকে স্বাধীন জাতি হিসেবে ভাবতে থাকে। সে ক্ষেত্রে জাতীয় চেতনাবোধ, মানবতার ঐক্য ও সংহতি, আত্মনির্ভরশীলতা, আত্মবিশ্বাস-স্বাধীনতার মৌল উপাদান হিসেবে কাজ করে। কোনো দেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর যদি সে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা, নীতি-নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের বিকাশ না ঘটে, স্রষ্টা প্রদত্ত জীবনবিধান বাস্তব জীবনে প্রতিফলিত করতে না পারে তাহলে সে দেশের স্বাধীনতা অর্থবহ হয়ে ওঠে না। ধর্ম ও বিবেকের দৃষ্টিতে সুস্পষ্ট যে শুধু ভৌগোলিক নিজস্বতাই কোনো জাতির পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা নয়, বরং স্বাধীনতা তখনই পূর্ণাঙ্গ হতে পারে যখন সে দেশের অধিকাংশ মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সামাজিক সচেতনতার আলোকে স্বাধীনভাবে ন্যায়নীতিবোধ প্রতিষ্ঠা করা যায় এবং নৈতিক শিক্ষা, সভ্য সংস্কৃতি ও সার্বিক সুন্দরতম জীবনাচার গড়ে তোলা সম্ভব হয়। মুসলিম অধ্যুষিত জাতির শিক্ষা-সংস্কৃতি ও সভ্যতা যদি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে অপসংস্কৃতির অনুসরণে গড়ে ওঠে তাহলে সে দেশের স্বাধীনতা বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়।
মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত জীবনব্যবস্থাস্বরূপ ঐশীগ্রন্থ আল-কোরআনকে কাজে-কর্মে সম্মিলিতভাবে বাস্তবায়িত করা প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ মুসলমানের জন্য অবশ্যকর্তব্য। সামাজিক সুসম্পর্ক স্থাপনের অনিবার্য ফলস্বরূপ তারা পরস্পর ঐক্যবদ্ধ ও সুশৃঙ্খল জাতিতে পরিণত হতে পারে। ধর্মীয় মূল্যবোধ ও ইসলামের অনুশাসন তথা পবিত্র কোরআন ও হাদিসের বিধিবিধান মেনে চললে কেউ তার কোনো ধরনের অনিষ্ট সাধনে সক্ষম হবে না এবং ব্যক্তিগত জীবনের মতো মুসলিম জাতির শক্তিও অনেক সুদৃঢ় হবে। বলাবাহুল্য, পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে থাকলেই ইতস্তত বিক্ষিপ্ত শক্তি একত্র হয় এবং মরণোন্মুখ জাতি নবজীবন লাভ করে। পক্ষান্তরে ধর্মীয় শিক্ষা ও নীতি-আদর্শ থেকে দূরে সরে থাকলে মানুষের জাতীয় ও দলগত জীবনে যেমন বিপর্যয় নেমে আসে, তেমনি ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনও সুখকর হয় না। ব্যক্তি যখন নিজের ভালো-মন্দ নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকে তখন সমাজে বিভিন্ন জনের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক, ভাব বিনিময় ও যোগাযোগ স্থাপন করা কঠিন হয়ে পড়ে। মুসলমানেরা অভিন্ন সংস্কৃতি এবং একটি মহান ও উন্নত সভ্যতার অধিকারী। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘তোমরাই সর্বোত্তম জাতি, মানবজাতির (কল্যাণের) জন্য তোমাদের আবির্ভাব, তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং মন্দ কাজ করতে নিষেধ করবে।’ (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)
পারস্পরিক সহযোগিতা, সহানুভূতিশীলতাপূর্ণ সামাজিক সম্পর্ক ছাড়া মানুষ চলতে পারে না। ইসলাম মুসলমানদের পরস্পরের ভাই বলে উল্লেখ করেছে এবং একে অন্যের সহযোগিতার মধ্যে এই ভ্রাতৃত্বের বন্ধন অটুট রাখার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। মানুষের একের প্রতি অপরের বিশেষ অধিকার ও কর্তব্য রয়েছে। এ অধিকার ও কর্তব্যবোধ ধর্মভীরু মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ করে, ফলে সামাজিক সংহতি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠিত হয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই, সুতরাং তোমরা তোমাদের ভ্রাতৃগণের মধ্যে মীমাংসা করবে আর আল্লাহকে ভয় করবে, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও।’ (সূরা আল হুজুরাত, আয়াত-১০)
মানব জীবনে জাতীয় ঐক্য, সংহতি স্থাপনের জন্য প্রয়োজন পারস্পরিক সহযোগিতা, সহানুভূতি ও সামাজিক সুসম্পর্ক। সুতরাং উম্মতে মুহাম্মদি পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হবে। এক ধর্মাবলম্বী গোত্র অন্য গোত্রের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার বা অসৌজন্যমূলক আচরণ করবে না, কোনো রকম সহিংসতা বা উগ্রতা প্রদর্শন করবে না, এক সম্প্রদায় অন্য সম্প্রদায়ের ওপর আভিজাত্য প্রকাশ করবে না। মূলত বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় মুসলিম উম্মাহর মধ্যে সামাজিক সংহতি, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যভাব প্রকাশ করতে সংঘবদ্ধ প্রয়াস এবং ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বাঞ্ছনীয়। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণে এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ জাতীয় ঐক্য ও সামাজিক সংহতি। একতাবদ্ধ থাকা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বাণী প্রদান করেছেন, ‘একজন মুমিন অপর মুমিনের জন্য অট্টালিকাস্বরূপ, যার এক অংশ অন্য অংশকে সুদৃঢ় করে রাখে এবং তিনি আঙুলগুলো একত্রে মিলিত করলেন।’ (বুখারি)
আবহমানকাল থেকে সব ধর্ম ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন চির শান্তি ও সম্প্রীতির এ দেশের মানুষ দলবদ্ধভাবে সামাজিক সংহতি, পরমতসহিষ্ণুতা ও ধর্মীয় সহনশীলতার মধ্য দিয়ে পারস্পরিক শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থান করছে। দেশবাসীর প্রত্যাশা সহিংসতার মধ্য দিয়ে নয়, আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান ও মীমাংসা হবে। তাহলে দেশের সার্বিক উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতার ফলে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের দিক থেকে ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে জাতীয় ঐক্য ও পারস্পরিক সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। এতদ্ব্যতীত পারস্পরিক শ্রদ্ধা, স্নেহ, ভালোবাসা, বিনয়, নম্রতা, শিষ্টাচার, সমঝোতা ও সহযোগিতার মনোভাব বজায় রাখলে সমাজের বিভিন্ন ধর্মপ্রাণ ব্যক্তির সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন সহজ হতে পারে। এমনিভাবে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষার স্বার্থে মানুষে মানুষে সম্প্রীতি, ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠায় ইসলামের দিকনির্দেশনার যথাযথ বাস্তবায়ন হোক আমাদের ধর্মপ্রাণ জাতির অন্তর্নিহিত শক্তি।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক ও কলাম লেখক।
dr.munimkhan@yahoo.com
কারও কোনো রকম হস্তক্ষেপ ছাড়া জাতি যখন স্বীয় কর্তৃত্ব আইনানুগভাবে প্রতিষ্ঠা ও প্রয়োগ করতে সমর্থ হয়, তখন তারা নিজেকে স্বাধীন জাতি হিসেবে ভাবতে থাকে। সে ক্ষেত্রে জাতীয় চেতনাবোধ, মানবতার ঐক্য ও সংহতি, আত্মনির্ভরশীলতা, আত্মবিশ্বাস-স্বাধীনতার মৌল উপাদান হিসেবে কাজ করে। কোনো দেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর যদি সে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা, নীতি-নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের বিকাশ না ঘটে, স্রষ্টা প্রদত্ত জীবনবিধান বাস্তব জীবনে প্রতিফলিত করতে না পারে তাহলে সে দেশের স্বাধীনতা অর্থবহ হয়ে ওঠে না। ধর্ম ও বিবেকের দৃষ্টিতে সুস্পষ্ট যে শুধু ভৌগোলিক নিজস্বতাই কোনো জাতির পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা নয়, বরং স্বাধীনতা তখনই পূর্ণাঙ্গ হতে পারে যখন সে দেশের অধিকাংশ মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সামাজিক সচেতনতার আলোকে স্বাধীনভাবে ন্যায়নীতিবোধ প্রতিষ্ঠা করা যায় এবং নৈতিক শিক্ষা, সভ্য সংস্কৃতি ও সার্বিক সুন্দরতম জীবনাচার গড়ে তোলা সম্ভব হয়। মুসলিম অধ্যুষিত জাতির শিক্ষা-সংস্কৃতি ও সভ্যতা যদি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে অপসংস্কৃতির অনুসরণে গড়ে ওঠে তাহলে সে দেশের স্বাধীনতা বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়।
মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত জীবনব্যবস্থাস্বরূপ ঐশীগ্রন্থ আল-কোরআনকে কাজে-কর্মে সম্মিলিতভাবে বাস্তবায়িত করা প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ মুসলমানের জন্য অবশ্যকর্তব্য। সামাজিক সুসম্পর্ক স্থাপনের অনিবার্য ফলস্বরূপ তারা পরস্পর ঐক্যবদ্ধ ও সুশৃঙ্খল জাতিতে পরিণত হতে পারে। ধর্মীয় মূল্যবোধ ও ইসলামের অনুশাসন তথা পবিত্র কোরআন ও হাদিসের বিধিবিধান মেনে চললে কেউ তার কোনো ধরনের অনিষ্ট সাধনে সক্ষম হবে না এবং ব্যক্তিগত জীবনের মতো মুসলিম জাতির শক্তিও অনেক সুদৃঢ় হবে। বলাবাহুল্য, পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে থাকলেই ইতস্তত বিক্ষিপ্ত শক্তি একত্র হয় এবং মরণোন্মুখ জাতি নবজীবন লাভ করে। পক্ষান্তরে ধর্মীয় শিক্ষা ও নীতি-আদর্শ থেকে দূরে সরে থাকলে মানুষের জাতীয় ও দলগত জীবনে যেমন বিপর্যয় নেমে আসে, তেমনি ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনও সুখকর হয় না। ব্যক্তি যখন নিজের ভালো-মন্দ নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকে তখন সমাজে বিভিন্ন জনের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক, ভাব বিনিময় ও যোগাযোগ স্থাপন করা কঠিন হয়ে পড়ে। মুসলমানেরা অভিন্ন সংস্কৃতি এবং একটি মহান ও উন্নত সভ্যতার অধিকারী। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘তোমরাই সর্বোত্তম জাতি, মানবজাতির (কল্যাণের) জন্য তোমাদের আবির্ভাব, তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং মন্দ কাজ করতে নিষেধ করবে।’ (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)
পারস্পরিক সহযোগিতা, সহানুভূতিশীলতাপূর্ণ সামাজিক সম্পর্ক ছাড়া মানুষ চলতে পারে না। ইসলাম মুসলমানদের পরস্পরের ভাই বলে উল্লেখ করেছে এবং একে অন্যের সহযোগিতার মধ্যে এই ভ্রাতৃত্বের বন্ধন অটুট রাখার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। মানুষের একের প্রতি অপরের বিশেষ অধিকার ও কর্তব্য রয়েছে। এ অধিকার ও কর্তব্যবোধ ধর্মভীরু মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ করে, ফলে সামাজিক সংহতি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠিত হয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই, সুতরাং তোমরা তোমাদের ভ্রাতৃগণের মধ্যে মীমাংসা করবে আর আল্লাহকে ভয় করবে, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও।’ (সূরা আল হুজুরাত, আয়াত-১০)
মানব জীবনে জাতীয় ঐক্য, সংহতি স্থাপনের জন্য প্রয়োজন পারস্পরিক সহযোগিতা, সহানুভূতি ও সামাজিক সুসম্পর্ক। সুতরাং উম্মতে মুহাম্মদি পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হবে। এক ধর্মাবলম্বী গোত্র অন্য গোত্রের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার বা অসৌজন্যমূলক আচরণ করবে না, কোনো রকম সহিংসতা বা উগ্রতা প্রদর্শন করবে না, এক সম্প্রদায় অন্য সম্প্রদায়ের ওপর আভিজাত্য প্রকাশ করবে না। মূলত বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় মুসলিম উম্মাহর মধ্যে সামাজিক সংহতি, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যভাব প্রকাশ করতে সংঘবদ্ধ প্রয়াস এবং ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বাঞ্ছনীয়। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণে এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ জাতীয় ঐক্য ও সামাজিক সংহতি। একতাবদ্ধ থাকা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বাণী প্রদান করেছেন, ‘একজন মুমিন অপর মুমিনের জন্য অট্টালিকাস্বরূপ, যার এক অংশ অন্য অংশকে সুদৃঢ় করে রাখে এবং তিনি আঙুলগুলো একত্রে মিলিত করলেন।’ (বুখারি)
আবহমানকাল থেকে সব ধর্ম ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন চির শান্তি ও সম্প্রীতির এ দেশের মানুষ দলবদ্ধভাবে সামাজিক সংহতি, পরমতসহিষ্ণুতা ও ধর্মীয় সহনশীলতার মধ্য দিয়ে পারস্পরিক শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থান করছে। দেশবাসীর প্রত্যাশা সহিংসতার মধ্য দিয়ে নয়, আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান ও মীমাংসা হবে। তাহলে দেশের সার্বিক উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতার ফলে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের দিক থেকে ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে জাতীয় ঐক্য ও পারস্পরিক সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। এতদ্ব্যতীত পারস্পরিক শ্রদ্ধা, স্নেহ, ভালোবাসা, বিনয়, নম্রতা, শিষ্টাচার, সমঝোতা ও সহযোগিতার মনোভাব বজায় রাখলে সমাজের বিভিন্ন ধর্মপ্রাণ ব্যক্তির সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন সহজ হতে পারে। এমনিভাবে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষার স্বার্থে মানুষে মানুষে সম্প্রীতি, ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠায় ইসলামের দিকনির্দেশনার যথাযথ বাস্তবায়ন হোক আমাদের ধর্মপ্রাণ জাতির অন্তর্নিহিত শক্তি।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক ও কলাম লেখক।
dr.munimkhan@yahoo.com
No comments