শেখ হাসিনার অভিযোগ-সদস্য পদ ও বেতন ভাতার জন্য বিএনপি সংসদে আসে
সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'প্রধান বিরোধী দল বিএনপি সদস্য পদ রক্ষা ও বেতন-ভাতা নিতে সংসদে এসেছিল। কাজ শেষ করে যথারীতি চলে গেছে। এখন বাইরে গিয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি করছে।' গতকাল বৃহস্পতিবার নবম সংসদের দ্বাদশ অধিবেশনের শেষ দিনে সমাপনী বক্তৃতায় সংসদ নেতা এ কথা বলেন।
তিনি বিরোধী দলকে উদ্দেশ করে বলেন, 'তাদের কাজ সংসদে এসে বেতন-ভাতা রক্ষা করা, সেটা তারা করেছে। তবে সংসদে এসে যে আচরণ করেছে, দেশবাসীর কাছে এ ধরনের আচরণ কাম্য নয়। এর পরও চাই বিরোধী দল সংসদে আসুক।' 'বাইরে চিৎকার-চেঁচামেচি, জ্বালাও-পোড়াও কেন করছে, তা জানি' দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, 'আমাদের সরকার একটার পর একটা ভালো কাজ করে যাচ্ছে, সেটাও তাদের দুঃখ।'
বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'অনেক কষ্ট করে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছি, সবাই যেন বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হন, তাতে বিলও কম আসবে। আমরা মাত্র তিন বছরের মধ্যে ৫২টা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে পেরেছি, এটা সহজ কাজ না। এর আগে কোনো সরকারই এটা পারেনি। আমরা কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট নিয়ে এসেছি। পরিকল্পনা করে এগোচ্ছি বলেই তিন হাজার ৩০০ মেগাওয়াট অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি।'
সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংসদের চলতি অধিবেশনে মোট ২৮টি বিল পাওয়া গেছে। ১৫টি আইন পাস হয়েছে। ১৩টি বিল কমিটিতে রয়ে গেছে। রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর এত দীর্ঘ আলোচনা এর আগে হয়নি। চলতি অধিবেশনে ৫০ ঘণ্টা ২৬ মিনিট আলোচনার সুযোগ দিয়েছেন স্পিকার।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, 'বিরোধীদলীয় নেতা এক ঘণ্টা ৫৭ মিনিট বক্তব্য দিয়েছেন। স্পিকারের ধৈর্য আছে। এটা গণতান্ত্রিক চর্চা। অথচ আমি বিরোধীদলীয় নেতা থাকার সময় আমার মাইক বারবার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা অনেক বিষয় তখন সংসদে আলোচনা করতে চেয়েছি। একটি কথাও আমাদের তখন বলতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু আমরা সংসদকে সব কিছুর কেন্দ্রবিন্দু করতে চাই।'
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বিএনপির সময়েও অনেক সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। সাগর-রুনি বিষয়েও তদন্ত হচ্ছে।' সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে তিনি বলেন, 'সৌদি সরকারকেও আহ্বান জানিয়েছি তাদের তদন্ত টিম পাঠানোর জন্য, যাতে তদন্ত স্বচ্ছ হয়।'
মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখার জন্য বিদেশিদের সম্মাননা দেওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আরো বন্ধুপ্রতিম দেশ ও ব্যক্তিকে আমরা সম্মাননা দেব। কারণ তাঁদের সহযোগিতার কারণেই আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। কোনো মিত্র শক্তি সহযোগিতা করার পর তারা দ্রুত ওই দেশ ছেড়ে দেশে ফেরে না। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মতো নেতৃত্বের কারণেই ইন্দিরা গান্ধী তাঁর সৈন্যকে দেশে ফেরত নেন। এটাও জাতির পিতার দৃঢ় নেতৃত্বের কারণেই সম্ভব হয়েছিল।'
অর্থনীতিতে বিশ্ব মন্দা থাকা সত্ত্বেও অর্থনীতিকে শক্তিশালী রাখার দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'রিজার্ভ তিন বছরের মধ্যে দ্বিগুণ হয়েছে। আমাদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ৯৩ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে।'
বিএনপির শাসনামলের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, 'যখন হুমায়ুন আজাদকে আহত করা হলো, তখন আমাকে ক্যান্টনমেন্টে যেতে দেওয়া হয়নি। হেঁটে হেঁটে সিএমএইচের গেটে পৌঁছানোর পর আমাকে রোগী দেখতে দেওয়া হয়নি। তাদের কাছ থেকে এখন যখন নানা ধরনের কথা শুনি, তখন হাসি পায়। আমার নামে তখন মামলাও দেওয়া হয়েছিল।'
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, 'পাঁচ বছর বিএনপি রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করেনি। আমরা অনেক ব্রিজ ও রাস্তার কাজ করে যাচ্ছি। পত্রপত্রিকা আমাদের সমালোচনা করে নানা কথা লিখে যাচ্ছে। টক শোতেও বলা হচ্ছে। আমরা তো এ নিয়ে কিছু বলছি না। বিএনপির সময় সাংবাদিকদেরও হত্যা করা হয়েছে। বিএনপির আমলে মামলা করারও সুযোগ ছিল না। আমাদের সময় তো মানুষ বিচার পায়।'
তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'প্রতিটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেই ঘটনা ঘটেছে। হাবিবুর রহমানের আমলে ক্যু হলো। লতিফুর রহমানের আমলে আমাদের নেতা-কর্মীর ওপর যে নির্যাতন-অত্যাচার হলো, সেটা আমরা দেখেছি। চারজন সচিবের চাকরি নেই। এমনকি অফিসে যাওয়ার পথেও চাকরি হারানোর ঘটনা দেখেছি। সর্বশেষ দুই বছর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নির্যাতনের কথা এ দেশের মানুষ ভুলে যাবে না। ওই সরকার সর্বত্র একটা আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল। আমাকে ও বিরোধীদলীয় নেতাকেও জেলে নেওয়া হয়েছিল।'
এর আগে বিকেল সোয়া ৪টায় বিরোধী দল বিএনপির অনুপস্থিতিতে আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেটের সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশন শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর স্পিকার রাষ্ট্রপতির সংসদ সমাপ্তির চিঠি সংসদকে অবহিত করে চলতি অধিবেশন সমাপ্তি করার ঘোষণা দেন। এর আগে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ বলেন, 'আমার সময় দুটি সংসদ হয়েছিল। সেই সংসদের সঙ্গে যদি এখনকার সংসদের তুলনা করেন, তাহলে দেখবেন সেই সংসদ অনেক ভালো ছিল।'
খাদ্যে বিষের কথা উল্লেখ করে এরশাদ বলেন, 'কলা খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি। কোনো ফল খেতে পারি না। সেদিন এক ডাক্তার বলল, এখন আসে ক্যান্সার ও কিডনির রোগী। প্রধানমন্ত্রীকে বলব, আপনার পিতা এ জাতির সৃষ্টি করে গেছেন। সেই জাতিকে বাঁচান। ঢাকা শহর অসুন্দর শহর। দৃষ্টিনন্দন কোনো জিনিস এখানে নেই। ১০ বছর ধরে রাস্তায় পিচের প্রলেপ পড়েনি। এই শহরে বাস করতে পারে ৩০ লাখ মানুষ। আছে দুই কোটি। কিভাবে বাংলাদেশকে ঢাকার বাইরে নিয়ে যেতে পারি, সেটাই করতে হবে। এ জন্য আমাদের প্রাদেশিক ব্যবস্থায় যেতে হবে। সাতটা প্রদেশ করতে হবে।'
বিরোধী দলের তীব্র সমালোচনায় স্পিকার
বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার তীব্র সমালোচনা করেছেন স্পিকার আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট ও সরকারি দলের সিনিয়র সংসদ সদস্যরা। স্পিকার বলেছেন, 'বিরোধী দলের নেতা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চান না, তবে কী চান, কোনটা মানেন, কোনটা মানেন না- সেটা সংসদে বলা উচিত ছিল। কিন্তু তা না বলে তিনি জাতিকে ধূম্রজালের মধ্যে ফেলে দিয়েছেন।' তিনি বলেন, 'ধূম্রজাল সৃষ্টি না করে বলেন, কী চান। ইউ শুড স্পিক ইন পার্লামেন্ট।'
গতকাল বৃহস্পতিবার সংসদ অধিবেশনের সমাপনী দিনে বিরোধী দলের প্রধান নেতা ও সংসদ সদস্যদের তীব্র সমালোচনা করা হয়। সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সময় বিরোধীদলীয় নেত্রীর সংসদ কক্ষ ত্যাগ করার সমালোচনা করে স্পিকার বলেন, 'বিরোধীদলীয় নেত্রী যখন বক্তব্য দিয়েছেন তখন সংসদ নেতা সংসদে থেকে তাঁর বক্তব্য শুনেছেন। কিন্তু সংসদ নেতা যখন বক্তব্য শুরু করেন তখন বিরোধীদলীয় নেত্রী সংসদ থেকে চলে গেলেন। এটা তো হতে পারে না। এটা ঠিক হয়নি।' স্পিকার বলেন, 'এসব বললে আমাকে অনেকে ওয়ানসাইডেড বলবেন। তবে আমি ওয়ানসাইডেড নই। আমি আমার বিবেকের কাছে মুক্ত, বাংলাদেশের ইতিহাসে যত স্পিকার এসেছেন এর মধ্যে আমি বলতে পারব, আমি নিরপেক্ষ। বিশ্বের উন্নত গণতান্ত্রিক দেশের স্পিকারদের তুলনায় আমি কোনো অংশে কম ধৈর্য-সহ্য দেখাইনি।'
স্পিকার আরো বলেন, 'অন্তরে জ্বালা থাকলেও বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারি না। কারণ আমাকে স্পিকারের দায়িত্ব দিয়েছেন। শপথ নিয়েছি নিরপেক্ষতার। বিরোধীদলীয় মহিলা সদস্য রেহানা আক্তার রানু যে ভাষায় কথা বলেছেন, আমি শুনেছি। যদি ওই দিন তাঁর বক্তব্য বন্ধ করে দিতাম তাহলে ইস্যু ধরে তাঁরা চলে যেতেন। বিভিন্ন পত্রিকায় বলতেন, স্পিকার ধৈর্য ধরলেন না কেন। তাই আমি শতভাগ ধৈর্য দেখিয়েছি। রানুর যেসব বক্তব্য কুরুচিপূর্ণ ছিল সেগুলো আমি এক্সপাঞ্জ করেছি। এ ধরনের ভাষা সংসদের হতে পারে না।' গতকাল সংসদে বিরোধী দলের না আসা এবং এর আগে রাষ্ট্রপতির ভাষণের আলোচনার সময় বিরোধীদলীয় নেত্রীসহ অন্যদের সমালোচনা করে সরকারি দলের কয়েকজন সদস্য পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য দিলে স্পিকার এর ইতি টানতে গিয়ে এসব কথা বলেন।
সরকারদলীয় সদস্যরা বিরোধী দলের সংসদে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, তারা সদস্য পদ রক্ষা এবং বেতন-ভাতাসহ সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার জন্য সংসদে যোগ দিয়েছিল। আসলে বিরোধী দল বাইরে থাকতে ও সংসদকে অকার্যকর করতে চায়।
বিকেলে স্পিকারের সভাপতিত্বে বৈঠক শুরু হলে অধিবেশন শেষ করার ঘোষণা দিয়ে স্পিকার প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপন এবং অন্যান্য কর্মসূচি স্থগিত করেন।
অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে যাওয়ার আগেই আওয়ামী লীগের সিনিয়র সদস্য তোফায়েল আহমেদ ফ্লোর চান। ফ্লোর পেয়ে তিনি বলেন, 'বিরোধী দল বলেছে- তারা সরকারি দলের অশালীন বক্তব্য এক্সপাঞ্জ না হলে নাকি সংসদে আসবেন না। কিন্তু বিরোধীদলীয় নেত্রীসহ তাদের সদস্য তখন কোনো অংশেই বক্তব্য এক্সপাঞ্জের দাবি করেননি। এক্সপাঞ্জের দরকার হলে তাঁরা সংসদে এসে দাবি করতে পারতেন। তাঁরা স্পিকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন। আপনার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্নে তুলেছেন। বিরোধীদলীয় নেত্রী এক ঘণ্টা ৫৭ মিনিট কথা বলেছেন। আপনি একটি বারের জন্য প্রশ্ন করেননি। সত্তর সাল থেকে এ পর্যন্ত কোনো নেতা এত দীর্ঘ সময় সংসদে বক্তব্য দেননি। এর পরও যদি স্পিকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় তাহলে আমরা কার কাছে কী বলব। দেশবাসী যেটা বিশ্বাস করতে বসেছে, সদস্য পদ রক্ষা ও বেতন-ভাতা নিতে সংসদে এসেছে, তা প্রমাণিত হয়েছে। আপনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ বাস্তবতা বিবর্জিত এবং অত্যন্ত নিন্দনীয়। আপনি যেভাবে ধৈর্য ধরে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেছেন এর জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।'
এরপর ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননও তোফায়েল আহমেদের কথার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বলেন, 'বিরোধীদলীয় সদস্যরা সংসদে অশালীন ও অসংসদীয়, অশোভনীয় বক্তব্য দিয়েছেন। সেটা বাদ দেওয়ার দায়িত্ব আপনার রয়েছে। তাঁরা আপনার বিষয়ে একতরফাভাবে প্রশ্ন তুলেছেন।' বিরোধীদলীয় নেত্রীর প্রসঙ্গে মেনন বলেন, 'বিরোধীদলীয় নেত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে অপ্রাসঙ্গিক কথা বলেছেন। বাইরে ৯০ দিনের আলটিমেটাম দিলেও এখানে সেটা নিয়ে কিছু বলেননি। তাঁদের শক্তি-সামর্থ্য নেই, তাই দেননি। সংসদ ও নির্বাচনে তাঁরা বিশ্বাস করেন না। তাই তাঁরা সংসদকে অকার্যকর করতে চান।' সংসদ অকার্যকরের বিষয়ে তিনি স্পিকারের বক্তব্য দাবি করেন।
এরপর জাসদের মঈন উদ্দীন খান বাদল বলেন, 'যারা গণতান্ত্রিক সুবিধা গ্রহণ করে গণতন্ত্রের মুখে এসিড মারে তাদের বিষয়ে আজকে সংসদকে ভাবতে হবে। স্পিকার, আপনার কাছে প্রটেকশন চাই। বিরোধীদলীয় বন্ধুদের বলছি, ময়দানে কিছু হবে না। ফায়সালা এখানে হবে।'
এরপর স্পিকার অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্য শুরু করেন। প্রথমেই স্বতন্ত্র সদস্য ফজলুল আজিমকে তিনি ফ্লোর দেন। ফজলুল আজিম বলেন, 'কোনো কিছু হলেই আমরা গণমাধ্যমের প্রতি রক্তচক্ষু দেখাই। এটা ঠিক নয়। গণমাধ্যম যা ঘটে, যা দেখে তা-ই লেখে। এটা গণমাধ্যমের মৌলিক অধিকার।' তিনি বলেন, 'যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে প্রতিদিন সরকারের তরফ থেকে কেউ না কেউ কথা বলছেন। কেন এ বিষয়টি নিয়ে এত কথা বলতে হবে, এত আলোচনা হবে? এই বিচার সবাই চায়। বরং এ বিচার শুরু হতে ৪০ বছর কেন লেগেছে সেটা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন। আর এ বিচার তো হবেই। বিরোধী দল কি কখনো বলেছে বিচার চায় না? বিচারের ক্ষেত্রে বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা দাবি করেছে।' তাঁর এই কথার পর সরকারি দলের শেখ ফজলুল করিম সেলিমসহ সবাই হৈচৈ শুরু করেন।
সমাপনী বক্তব্যের মধ্যেই ফজলুল আজিমের বক্তব্যের জবাব দিতে আওয়ামী লীগের শেখ সেলিম পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর চান। কিন্তু স্পিকার বলেন, 'আমি এ পর্যায়ে আপনাকে পয়েন্ট অব অর্ডার দিতে পারব না। তবে সমাপনী বক্তব্যে আপনি দুই মিনিট বলতে পারেন।' ফ্লোর পেয়ে শেখ সেলিম বলেন, 'স্বতন্ত্র সদস্য ফজলুল আজিম অসত্য কথা বলেছেন। বিরোধীদলীয় নেত্রী মিটিংয়ে বলেছেন- নিজামী, মুজাহিদ, সাঈদী, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী যুদ্ধাপরাধী নয়। এদের মুক্তি দেওয়া হোক। তিনি (খালেদা জিয়া) ট্রাইব্যুনাল বাতিলেরও দাবি করেছেন।' স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে শেখ সেলিম বলেন, 'সুতরাং এ সদস্যের বক্তব্য সংসদ প্রসিডিংসে রাখার দরকার নেই।'
শেখ সেলিম সংসদে দেওয়া খালেদা জিয়ার বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, 'এক ঘণ্টা ৫৭ মিনিট বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। স্পিকার একবারও হস্তক্ষেপ করেননি। আমরা যখন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত হয়ে সংসদে কথা বলতে এসেছি, তখন আমাদের কথা বলতে দেওয়া হয়নি।' এর পরই স্পিকার এ প্রসঙ্গে বলেন 'একানব্বই থেকে ছিয়ানব্বই সালে আমি যখন বিরোধী দলের উপনেতা ছিলাম, আমাদের সঙ্গে কী করেছেন আপনারাও দেখেছেন, দেশবাসী দেখেছে।' তিনি বিরোধীদলীয় নেত্রীকে দীর্ঘ বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ প্রদানের কথা তুলে ধরে বলেন, 'আমি সংসদ নেতাসহ তাঁকে শুধু বলেছিলাম- বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলা আছে সে জন্য যেন কথা সংক্ষেপ করা হয়। তখন বিরোধীদলীয় নেত্রী বললেন, আমি যেন তাঁকে বাধা না দিই।'
বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'অনেক কষ্ট করে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছি, সবাই যেন বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হন, তাতে বিলও কম আসবে। আমরা মাত্র তিন বছরের মধ্যে ৫২টা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে পেরেছি, এটা সহজ কাজ না। এর আগে কোনো সরকারই এটা পারেনি। আমরা কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট নিয়ে এসেছি। পরিকল্পনা করে এগোচ্ছি বলেই তিন হাজার ৩০০ মেগাওয়াট অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি।'
সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংসদের চলতি অধিবেশনে মোট ২৮টি বিল পাওয়া গেছে। ১৫টি আইন পাস হয়েছে। ১৩টি বিল কমিটিতে রয়ে গেছে। রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর এত দীর্ঘ আলোচনা এর আগে হয়নি। চলতি অধিবেশনে ৫০ ঘণ্টা ২৬ মিনিট আলোচনার সুযোগ দিয়েছেন স্পিকার।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, 'বিরোধীদলীয় নেতা এক ঘণ্টা ৫৭ মিনিট বক্তব্য দিয়েছেন। স্পিকারের ধৈর্য আছে। এটা গণতান্ত্রিক চর্চা। অথচ আমি বিরোধীদলীয় নেতা থাকার সময় আমার মাইক বারবার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা অনেক বিষয় তখন সংসদে আলোচনা করতে চেয়েছি। একটি কথাও আমাদের তখন বলতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু আমরা সংসদকে সব কিছুর কেন্দ্রবিন্দু করতে চাই।'
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বিএনপির সময়েও অনেক সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। সাগর-রুনি বিষয়েও তদন্ত হচ্ছে।' সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে তিনি বলেন, 'সৌদি সরকারকেও আহ্বান জানিয়েছি তাদের তদন্ত টিম পাঠানোর জন্য, যাতে তদন্ত স্বচ্ছ হয়।'
মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখার জন্য বিদেশিদের সম্মাননা দেওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আরো বন্ধুপ্রতিম দেশ ও ব্যক্তিকে আমরা সম্মাননা দেব। কারণ তাঁদের সহযোগিতার কারণেই আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। কোনো মিত্র শক্তি সহযোগিতা করার পর তারা দ্রুত ওই দেশ ছেড়ে দেশে ফেরে না। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মতো নেতৃত্বের কারণেই ইন্দিরা গান্ধী তাঁর সৈন্যকে দেশে ফেরত নেন। এটাও জাতির পিতার দৃঢ় নেতৃত্বের কারণেই সম্ভব হয়েছিল।'
অর্থনীতিতে বিশ্ব মন্দা থাকা সত্ত্বেও অর্থনীতিকে শক্তিশালী রাখার দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'রিজার্ভ তিন বছরের মধ্যে দ্বিগুণ হয়েছে। আমাদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ৯৩ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে।'
বিএনপির শাসনামলের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, 'যখন হুমায়ুন আজাদকে আহত করা হলো, তখন আমাকে ক্যান্টনমেন্টে যেতে দেওয়া হয়নি। হেঁটে হেঁটে সিএমএইচের গেটে পৌঁছানোর পর আমাকে রোগী দেখতে দেওয়া হয়নি। তাদের কাছ থেকে এখন যখন নানা ধরনের কথা শুনি, তখন হাসি পায়। আমার নামে তখন মামলাও দেওয়া হয়েছিল।'
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, 'পাঁচ বছর বিএনপি রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করেনি। আমরা অনেক ব্রিজ ও রাস্তার কাজ করে যাচ্ছি। পত্রপত্রিকা আমাদের সমালোচনা করে নানা কথা লিখে যাচ্ছে। টক শোতেও বলা হচ্ছে। আমরা তো এ নিয়ে কিছু বলছি না। বিএনপির সময় সাংবাদিকদেরও হত্যা করা হয়েছে। বিএনপির আমলে মামলা করারও সুযোগ ছিল না। আমাদের সময় তো মানুষ বিচার পায়।'
তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'প্রতিটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেই ঘটনা ঘটেছে। হাবিবুর রহমানের আমলে ক্যু হলো। লতিফুর রহমানের আমলে আমাদের নেতা-কর্মীর ওপর যে নির্যাতন-অত্যাচার হলো, সেটা আমরা দেখেছি। চারজন সচিবের চাকরি নেই। এমনকি অফিসে যাওয়ার পথেও চাকরি হারানোর ঘটনা দেখেছি। সর্বশেষ দুই বছর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নির্যাতনের কথা এ দেশের মানুষ ভুলে যাবে না। ওই সরকার সর্বত্র একটা আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল। আমাকে ও বিরোধীদলীয় নেতাকেও জেলে নেওয়া হয়েছিল।'
এর আগে বিকেল সোয়া ৪টায় বিরোধী দল বিএনপির অনুপস্থিতিতে আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেটের সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশন শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর স্পিকার রাষ্ট্রপতির সংসদ সমাপ্তির চিঠি সংসদকে অবহিত করে চলতি অধিবেশন সমাপ্তি করার ঘোষণা দেন। এর আগে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ বলেন, 'আমার সময় দুটি সংসদ হয়েছিল। সেই সংসদের সঙ্গে যদি এখনকার সংসদের তুলনা করেন, তাহলে দেখবেন সেই সংসদ অনেক ভালো ছিল।'
খাদ্যে বিষের কথা উল্লেখ করে এরশাদ বলেন, 'কলা খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি। কোনো ফল খেতে পারি না। সেদিন এক ডাক্তার বলল, এখন আসে ক্যান্সার ও কিডনির রোগী। প্রধানমন্ত্রীকে বলব, আপনার পিতা এ জাতির সৃষ্টি করে গেছেন। সেই জাতিকে বাঁচান। ঢাকা শহর অসুন্দর শহর। দৃষ্টিনন্দন কোনো জিনিস এখানে নেই। ১০ বছর ধরে রাস্তায় পিচের প্রলেপ পড়েনি। এই শহরে বাস করতে পারে ৩০ লাখ মানুষ। আছে দুই কোটি। কিভাবে বাংলাদেশকে ঢাকার বাইরে নিয়ে যেতে পারি, সেটাই করতে হবে। এ জন্য আমাদের প্রাদেশিক ব্যবস্থায় যেতে হবে। সাতটা প্রদেশ করতে হবে।'
বিরোধী দলের তীব্র সমালোচনায় স্পিকার
বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার তীব্র সমালোচনা করেছেন স্পিকার আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট ও সরকারি দলের সিনিয়র সংসদ সদস্যরা। স্পিকার বলেছেন, 'বিরোধী দলের নেতা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চান না, তবে কী চান, কোনটা মানেন, কোনটা মানেন না- সেটা সংসদে বলা উচিত ছিল। কিন্তু তা না বলে তিনি জাতিকে ধূম্রজালের মধ্যে ফেলে দিয়েছেন।' তিনি বলেন, 'ধূম্রজাল সৃষ্টি না করে বলেন, কী চান। ইউ শুড স্পিক ইন পার্লামেন্ট।'
গতকাল বৃহস্পতিবার সংসদ অধিবেশনের সমাপনী দিনে বিরোধী দলের প্রধান নেতা ও সংসদ সদস্যদের তীব্র সমালোচনা করা হয়। সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সময় বিরোধীদলীয় নেত্রীর সংসদ কক্ষ ত্যাগ করার সমালোচনা করে স্পিকার বলেন, 'বিরোধীদলীয় নেত্রী যখন বক্তব্য দিয়েছেন তখন সংসদ নেতা সংসদে থেকে তাঁর বক্তব্য শুনেছেন। কিন্তু সংসদ নেতা যখন বক্তব্য শুরু করেন তখন বিরোধীদলীয় নেত্রী সংসদ থেকে চলে গেলেন। এটা তো হতে পারে না। এটা ঠিক হয়নি।' স্পিকার বলেন, 'এসব বললে আমাকে অনেকে ওয়ানসাইডেড বলবেন। তবে আমি ওয়ানসাইডেড নই। আমি আমার বিবেকের কাছে মুক্ত, বাংলাদেশের ইতিহাসে যত স্পিকার এসেছেন এর মধ্যে আমি বলতে পারব, আমি নিরপেক্ষ। বিশ্বের উন্নত গণতান্ত্রিক দেশের স্পিকারদের তুলনায় আমি কোনো অংশে কম ধৈর্য-সহ্য দেখাইনি।'
স্পিকার আরো বলেন, 'অন্তরে জ্বালা থাকলেও বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারি না। কারণ আমাকে স্পিকারের দায়িত্ব দিয়েছেন। শপথ নিয়েছি নিরপেক্ষতার। বিরোধীদলীয় মহিলা সদস্য রেহানা আক্তার রানু যে ভাষায় কথা বলেছেন, আমি শুনেছি। যদি ওই দিন তাঁর বক্তব্য বন্ধ করে দিতাম তাহলে ইস্যু ধরে তাঁরা চলে যেতেন। বিভিন্ন পত্রিকায় বলতেন, স্পিকার ধৈর্য ধরলেন না কেন। তাই আমি শতভাগ ধৈর্য দেখিয়েছি। রানুর যেসব বক্তব্য কুরুচিপূর্ণ ছিল সেগুলো আমি এক্সপাঞ্জ করেছি। এ ধরনের ভাষা সংসদের হতে পারে না।' গতকাল সংসদে বিরোধী দলের না আসা এবং এর আগে রাষ্ট্রপতির ভাষণের আলোচনার সময় বিরোধীদলীয় নেত্রীসহ অন্যদের সমালোচনা করে সরকারি দলের কয়েকজন সদস্য পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য দিলে স্পিকার এর ইতি টানতে গিয়ে এসব কথা বলেন।
সরকারদলীয় সদস্যরা বিরোধী দলের সংসদে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, তারা সদস্য পদ রক্ষা এবং বেতন-ভাতাসহ সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার জন্য সংসদে যোগ দিয়েছিল। আসলে বিরোধী দল বাইরে থাকতে ও সংসদকে অকার্যকর করতে চায়।
বিকেলে স্পিকারের সভাপতিত্বে বৈঠক শুরু হলে অধিবেশন শেষ করার ঘোষণা দিয়ে স্পিকার প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপন এবং অন্যান্য কর্মসূচি স্থগিত করেন।
অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে যাওয়ার আগেই আওয়ামী লীগের সিনিয়র সদস্য তোফায়েল আহমেদ ফ্লোর চান। ফ্লোর পেয়ে তিনি বলেন, 'বিরোধী দল বলেছে- তারা সরকারি দলের অশালীন বক্তব্য এক্সপাঞ্জ না হলে নাকি সংসদে আসবেন না। কিন্তু বিরোধীদলীয় নেত্রীসহ তাদের সদস্য তখন কোনো অংশেই বক্তব্য এক্সপাঞ্জের দাবি করেননি। এক্সপাঞ্জের দরকার হলে তাঁরা সংসদে এসে দাবি করতে পারতেন। তাঁরা স্পিকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন। আপনার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্নে তুলেছেন। বিরোধীদলীয় নেত্রী এক ঘণ্টা ৫৭ মিনিট কথা বলেছেন। আপনি একটি বারের জন্য প্রশ্ন করেননি। সত্তর সাল থেকে এ পর্যন্ত কোনো নেতা এত দীর্ঘ সময় সংসদে বক্তব্য দেননি। এর পরও যদি স্পিকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় তাহলে আমরা কার কাছে কী বলব। দেশবাসী যেটা বিশ্বাস করতে বসেছে, সদস্য পদ রক্ষা ও বেতন-ভাতা নিতে সংসদে এসেছে, তা প্রমাণিত হয়েছে। আপনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ বাস্তবতা বিবর্জিত এবং অত্যন্ত নিন্দনীয়। আপনি যেভাবে ধৈর্য ধরে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেছেন এর জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।'
এরপর ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননও তোফায়েল আহমেদের কথার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বলেন, 'বিরোধীদলীয় সদস্যরা সংসদে অশালীন ও অসংসদীয়, অশোভনীয় বক্তব্য দিয়েছেন। সেটা বাদ দেওয়ার দায়িত্ব আপনার রয়েছে। তাঁরা আপনার বিষয়ে একতরফাভাবে প্রশ্ন তুলেছেন।' বিরোধীদলীয় নেত্রীর প্রসঙ্গে মেনন বলেন, 'বিরোধীদলীয় নেত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে অপ্রাসঙ্গিক কথা বলেছেন। বাইরে ৯০ দিনের আলটিমেটাম দিলেও এখানে সেটা নিয়ে কিছু বলেননি। তাঁদের শক্তি-সামর্থ্য নেই, তাই দেননি। সংসদ ও নির্বাচনে তাঁরা বিশ্বাস করেন না। তাই তাঁরা সংসদকে অকার্যকর করতে চান।' সংসদ অকার্যকরের বিষয়ে তিনি স্পিকারের বক্তব্য দাবি করেন।
এরপর জাসদের মঈন উদ্দীন খান বাদল বলেন, 'যারা গণতান্ত্রিক সুবিধা গ্রহণ করে গণতন্ত্রের মুখে এসিড মারে তাদের বিষয়ে আজকে সংসদকে ভাবতে হবে। স্পিকার, আপনার কাছে প্রটেকশন চাই। বিরোধীদলীয় বন্ধুদের বলছি, ময়দানে কিছু হবে না। ফায়সালা এখানে হবে।'
এরপর স্পিকার অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্য শুরু করেন। প্রথমেই স্বতন্ত্র সদস্য ফজলুল আজিমকে তিনি ফ্লোর দেন। ফজলুল আজিম বলেন, 'কোনো কিছু হলেই আমরা গণমাধ্যমের প্রতি রক্তচক্ষু দেখাই। এটা ঠিক নয়। গণমাধ্যম যা ঘটে, যা দেখে তা-ই লেখে। এটা গণমাধ্যমের মৌলিক অধিকার।' তিনি বলেন, 'যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে প্রতিদিন সরকারের তরফ থেকে কেউ না কেউ কথা বলছেন। কেন এ বিষয়টি নিয়ে এত কথা বলতে হবে, এত আলোচনা হবে? এই বিচার সবাই চায়। বরং এ বিচার শুরু হতে ৪০ বছর কেন লেগেছে সেটা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন। আর এ বিচার তো হবেই। বিরোধী দল কি কখনো বলেছে বিচার চায় না? বিচারের ক্ষেত্রে বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা দাবি করেছে।' তাঁর এই কথার পর সরকারি দলের শেখ ফজলুল করিম সেলিমসহ সবাই হৈচৈ শুরু করেন।
সমাপনী বক্তব্যের মধ্যেই ফজলুল আজিমের বক্তব্যের জবাব দিতে আওয়ামী লীগের শেখ সেলিম পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর চান। কিন্তু স্পিকার বলেন, 'আমি এ পর্যায়ে আপনাকে পয়েন্ট অব অর্ডার দিতে পারব না। তবে সমাপনী বক্তব্যে আপনি দুই মিনিট বলতে পারেন।' ফ্লোর পেয়ে শেখ সেলিম বলেন, 'স্বতন্ত্র সদস্য ফজলুল আজিম অসত্য কথা বলেছেন। বিরোধীদলীয় নেত্রী মিটিংয়ে বলেছেন- নিজামী, মুজাহিদ, সাঈদী, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী যুদ্ধাপরাধী নয়। এদের মুক্তি দেওয়া হোক। তিনি (খালেদা জিয়া) ট্রাইব্যুনাল বাতিলেরও দাবি করেছেন।' স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে শেখ সেলিম বলেন, 'সুতরাং এ সদস্যের বক্তব্য সংসদ প্রসিডিংসে রাখার দরকার নেই।'
শেখ সেলিম সংসদে দেওয়া খালেদা জিয়ার বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, 'এক ঘণ্টা ৫৭ মিনিট বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। স্পিকার একবারও হস্তক্ষেপ করেননি। আমরা যখন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত হয়ে সংসদে কথা বলতে এসেছি, তখন আমাদের কথা বলতে দেওয়া হয়নি।' এর পরই স্পিকার এ প্রসঙ্গে বলেন 'একানব্বই থেকে ছিয়ানব্বই সালে আমি যখন বিরোধী দলের উপনেতা ছিলাম, আমাদের সঙ্গে কী করেছেন আপনারাও দেখেছেন, দেশবাসী দেখেছে।' তিনি বিরোধীদলীয় নেত্রীকে দীর্ঘ বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ প্রদানের কথা তুলে ধরে বলেন, 'আমি সংসদ নেতাসহ তাঁকে শুধু বলেছিলাম- বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলা আছে সে জন্য যেন কথা সংক্ষেপ করা হয়। তখন বিরোধীদলীয় নেত্রী বললেন, আমি যেন তাঁকে বাধা না দিই।'
No comments