চীনে ইসলাম ও মুসলমান by জহির উদ্দিন বাবর
গণচীন আয়তনের দিক থেকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম এবং জনসংখ্যার দিক থেকে বৃহত্তম দেশ। সবচেয়ে জনসংখ্যাবহুল এ দেশটিতে বাস করে আট কোটি মুসলমান। তবে এখানকার মুসলমানরা আধুনিক চীনের অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। চীনের যেসব এলাকায় উন্নতির ছোঁয়া এখনও তেমনটা লাগেনি সেখানেই বেশিরভাগ মুসলমানের বসবাস।
ধনী রাষ্ট্র চীনের মুসলমানরা অপেক্ষাকৃত দরিদ্র। ৫৬টি সম্প্রদায়ের লোক বাস করে চীনে। এর মধ্যে ১২টি গোত্র মুসলমান। মুসলমান গোত্রগুলো হলো_ উইঘর তুর্কি, কাজাখ, কিরঘিজ, উজবেক, তাতার, সালার, তাজিক, দুং শাইয়ং, বাওয়ান ও খুয়ি।
চীনে ইসলামের আবির্ভাব হয় হিজরি প্রথম শতকে। ধারণা করা হয়, সাহাবায়ে কেরামের যুগেই চীনে ইসলাম আসে। চীনে কয়েকজন সাহাবির কবর রয়েছে বলেও জানা যায়। 'তং' রাজবংশের শাসনামলে সিল্ক রোড আর সমুদ্রপথে আরব ও ইরানি মুসলমানরা এসে প্রথমে এ দেশে ইসলাম প্রচার করে। তারা চীনের সঙ্গে মুসলিম বিশ্বের পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপন ও যোগাযোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। প্রথম থেকেই চীনের সমৃদ্ধি ও উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রেখেছে মুসলমানরা। মুসলমানরাই চীনে জ্যোতির্বিদ্যা প্রথমবারের মতো নিয়ে আসে এবং এ শাস্ত্রের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মুসলমানরা এখনও চীনের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অব্যাহত রেখেছে। ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারণা সত্ত্বেও চীনে, বিশেষ করে দেশটির বৃহত্তম হান গোত্রের মধ্যে ইসলামে দীক্ষিতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।
অন্য অনেক অমুসলিম দেশের মতো চীনের মুসলমানরাও অনেক সমস্যা ও সংকট মোকাবেলা করছে। চীনের মুসলমানদের অবস্থা সম্পর্কে বহির্বিশ্বে খুব কম তথ্যই প্রচারিত হয়। অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, ধর্মীয় বা আদর্শিক মতপার্থক্য নয় বরং মূলত চীনা মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ, বৈষম্য ও অবিচারের ফলেই চীন সরকারের সঙ্গে মুসলমানদের দ্বন্দ্ব-সংঘাত সৃষ্টি হয়েছে এবং এসবের বিরুদ্ধে চীনা মুসলমানরা বারবার প্রতিবাদ জানিয়েছে।
২০০৯ সালের জুলাই মাসে চীনের সিংকিয়াং প্রদেশে যে সহিংসতা হয়েছিল তাকে বাহ্যিক দিক থেকে বর্ণবাদী হানদের সঙ্গে উইঘর মুসলমানদের জাতিগত সংঘাত বলে মনে করা হয়। কিন্তু মূলত চীন সরকারের ইসলামবিদ্বেষী নীতির মধ্যেই ওই সহিংসতার শিকড় বিস্তৃত হয়েছিল। বহু বছর ধরেই বেইজিং ইসলামবিদ্বেষী নীতি প্রয়োগ করে এসেছে দেশটির মুসলমান অধ্যুষিত অঞ্চলে। চীনের কেন্দ্রীয় সরকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের অজুহাতে দেশটির জনগণের, বিশেষ করে মুসলমানদের ধর্মীয় চিন্তাধারা ও সাংস্কৃতিক তৎপরতাকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে। উইঘর মুসলমানরা বেইজিংয়ের ব্যাপক বৈষম্যের শিকার। যেমন ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৬ সালে সিংকিয়াংয়ের ৯৩৮টি মাদ্রাসা পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেওয়া হয়। চীনের মুসলমানরা ইসলামী সংস্কৃতি থেকে বঞ্চিত হওয়া ছাড়াও রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নাগরিক অধিকারগুলো থেকেও বঞ্চিত। গত কয়েক বছরে মুসলিম অধ্যুষিত সিংকিয়াং প্রদেশে জ্বালানি তেল উৎপাদন দুই গুণ বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও সেখানকার মুসলমানরা এই আয় থেকে বঞ্চিত রয়েছে। ১৯৯০ সাল থেকে উইঘর মুসলমানরা সিংকিয়াং প্রদেশে প্রতিবাদ জোরদার করতে থাকে। এ অবস্থায় বেইজিং সেখানে হানদের অভিবাসনের কাজও ত্বরান্বিত করে এবং কড়া নিরাপত্তার মধ্যে সেখানকার ধর্মীয় বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করছে। বেইজিংয়ের ইসলামবিদ্বেষী নীতির কারণে সিংকিয়াং প্রদেশের মুসলমানরা ব্যাপক অর্থনৈতিক বঞ্চনার শিকার হয়েছে। বেইজিংয়ের বিশেষ কিছু নীতির কারণে এ অঞ্চলে হানরা অর্থনৈতিক কর্তৃত্ব ক্রমেই বিস্তার করে চলেছে এবং উইঘররা ক্রমেই দরিদ্র হয়ে পড়ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারি সুযোগ-সুবিধা এবং সরকারের পুঁজি-বিনিয়োগের বেশিরভাগই হানরা ভোগ করছে।
তবে শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও চীনে প্রকৃত দ্বীনদার মুসলমানের সংখ্যা অনেক। ধর্মের প্রতি তাদের আন্তরিকতা অনেক বেশি। প্রতি বছর চীন থেকে অনেক লোক হজে যান। দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে যারা চীনে যান তাদের সহযোগিতায়ও যথেষ্ট আন্তরিকতার প্রমাণ দেন চীনা মুসলমানরা।
zahirbabor@yahoo.com
চীনে ইসলামের আবির্ভাব হয় হিজরি প্রথম শতকে। ধারণা করা হয়, সাহাবায়ে কেরামের যুগেই চীনে ইসলাম আসে। চীনে কয়েকজন সাহাবির কবর রয়েছে বলেও জানা যায়। 'তং' রাজবংশের শাসনামলে সিল্ক রোড আর সমুদ্রপথে আরব ও ইরানি মুসলমানরা এসে প্রথমে এ দেশে ইসলাম প্রচার করে। তারা চীনের সঙ্গে মুসলিম বিশ্বের পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপন ও যোগাযোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। প্রথম থেকেই চীনের সমৃদ্ধি ও উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রেখেছে মুসলমানরা। মুসলমানরাই চীনে জ্যোতির্বিদ্যা প্রথমবারের মতো নিয়ে আসে এবং এ শাস্ত্রের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মুসলমানরা এখনও চীনের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অব্যাহত রেখেছে। ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারণা সত্ত্বেও চীনে, বিশেষ করে দেশটির বৃহত্তম হান গোত্রের মধ্যে ইসলামে দীক্ষিতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।
অন্য অনেক অমুসলিম দেশের মতো চীনের মুসলমানরাও অনেক সমস্যা ও সংকট মোকাবেলা করছে। চীনের মুসলমানদের অবস্থা সম্পর্কে বহির্বিশ্বে খুব কম তথ্যই প্রচারিত হয়। অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, ধর্মীয় বা আদর্শিক মতপার্থক্য নয় বরং মূলত চীনা মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ, বৈষম্য ও অবিচারের ফলেই চীন সরকারের সঙ্গে মুসলমানদের দ্বন্দ্ব-সংঘাত সৃষ্টি হয়েছে এবং এসবের বিরুদ্ধে চীনা মুসলমানরা বারবার প্রতিবাদ জানিয়েছে।
২০০৯ সালের জুলাই মাসে চীনের সিংকিয়াং প্রদেশে যে সহিংসতা হয়েছিল তাকে বাহ্যিক দিক থেকে বর্ণবাদী হানদের সঙ্গে উইঘর মুসলমানদের জাতিগত সংঘাত বলে মনে করা হয়। কিন্তু মূলত চীন সরকারের ইসলামবিদ্বেষী নীতির মধ্যেই ওই সহিংসতার শিকড় বিস্তৃত হয়েছিল। বহু বছর ধরেই বেইজিং ইসলামবিদ্বেষী নীতি প্রয়োগ করে এসেছে দেশটির মুসলমান অধ্যুষিত অঞ্চলে। চীনের কেন্দ্রীয় সরকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের অজুহাতে দেশটির জনগণের, বিশেষ করে মুসলমানদের ধর্মীয় চিন্তাধারা ও সাংস্কৃতিক তৎপরতাকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে। উইঘর মুসলমানরা বেইজিংয়ের ব্যাপক বৈষম্যের শিকার। যেমন ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৬ সালে সিংকিয়াংয়ের ৯৩৮টি মাদ্রাসা পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেওয়া হয়। চীনের মুসলমানরা ইসলামী সংস্কৃতি থেকে বঞ্চিত হওয়া ছাড়াও রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নাগরিক অধিকারগুলো থেকেও বঞ্চিত। গত কয়েক বছরে মুসলিম অধ্যুষিত সিংকিয়াং প্রদেশে জ্বালানি তেল উৎপাদন দুই গুণ বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও সেখানকার মুসলমানরা এই আয় থেকে বঞ্চিত রয়েছে। ১৯৯০ সাল থেকে উইঘর মুসলমানরা সিংকিয়াং প্রদেশে প্রতিবাদ জোরদার করতে থাকে। এ অবস্থায় বেইজিং সেখানে হানদের অভিবাসনের কাজও ত্বরান্বিত করে এবং কড়া নিরাপত্তার মধ্যে সেখানকার ধর্মীয় বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করছে। বেইজিংয়ের ইসলামবিদ্বেষী নীতির কারণে সিংকিয়াং প্রদেশের মুসলমানরা ব্যাপক অর্থনৈতিক বঞ্চনার শিকার হয়েছে। বেইজিংয়ের বিশেষ কিছু নীতির কারণে এ অঞ্চলে হানরা অর্থনৈতিক কর্তৃত্ব ক্রমেই বিস্তার করে চলেছে এবং উইঘররা ক্রমেই দরিদ্র হয়ে পড়ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারি সুযোগ-সুবিধা এবং সরকারের পুঁজি-বিনিয়োগের বেশিরভাগই হানরা ভোগ করছে।
তবে শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও চীনে প্রকৃত দ্বীনদার মুসলমানের সংখ্যা অনেক। ধর্মের প্রতি তাদের আন্তরিকতা অনেক বেশি। প্রতি বছর চীন থেকে অনেক লোক হজে যান। দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে যারা চীনে যান তাদের সহযোগিতায়ও যথেষ্ট আন্তরিকতার প্রমাণ দেন চীনা মুসলমানরা।
zahirbabor@yahoo.com
No comments