সিলেটে ব্যবসায়ী নিজ ঘরে খুন?

সিলেট নগরের জিন্দাবাজারের বিপণিবিতান ‘সিটি সেন্টার’-এর প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবাসন ব্যবসায়ী সর্দার শামসুল হক ওরফে শাহিন সর্দারের (৪০) লাশ তাঁর নিজ বাসা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। বসতঘরের একটি কক্ষে দুর্বৃত্তদের হাতে তিনি খুন হয়েছেন—এ অভিযোগ তাঁর আত্মীয়দের।


তবে তাঁর মৃত্যু হত্যা না আত্মহত্যা—এ প্রশ্ন নিয়ে চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে।
পুলিশ জানায়, পরিবারের দেওয়া খবরে পুলিশ নগরের জালালাবাদ আবাসিক এলাকার ৩৫/৫ নম্বর বাসার তৃতীয় তলার একটি কক্ষের জানালার গ্রিলের সঙ্গে ঝোলানো অবস্থায় তাঁর লাশ পায়। তাঁর গলায় প্যান্টের বেল্ট পেঁচানো ছিল। পুলিশ প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা বলে অবহিত হলেও লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন দেখে পুলিশ ঘটনাটি কোনো ‘সাইলেন্ট কিলিং’ কি না, তা তদন্ত করছে।
পরিবার সূত্র জানায়, শাহিন সর্দার গতকাল বৃহস্পতিবার প্রতিদিনের মতো সকালে ঘুম থেকে ওঠেন। নাশতা সেরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটান। পরে তিনি তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেন। ১০টার দিকে তাঁর বাসার তৃতীয় তলায় নিজের চেম্বারে চলে যান। এর পর থেকে তাঁর আর কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছিল না। ওই সময় থেকে তাঁর মুঠোফোনও বন্ধ ছিল।
দুই সন্তানের জনক শাহিন সর্দার আবাসন প্রকল্প লেকসিটি ও জালালাবাদ ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। তাঁর মৃত্যু পরিবারের পক্ষ থেকে প্রথমে আত্মহত্যা বলে পুলিশকে জানানো হলেও পরে এ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।
লাশ উদ্ধারের পরপরই পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর বাবা সিরাজুল হক সর্দার ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন করতে সিলেটের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবরে আবেদন করেছিলেন। রাত সাড়ে ১০টায় পরিবার থেকেই ওই আবেদন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। রাত ১১টায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে লাশের ময়নাতদন্তের প্রস্তুতি চলছিল।
হাসপাতালের মর্গে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরিকারী পুলিশের একজন সদস্য জানান, গলায় বেল্ট থাকায় কিছু জখম ছাড়া শরীরে আর কোনো ক্ষত নেই। ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করলে সাধারণত লাশ বিকৃত হয়ে যায়। কিন্তু শাহিন সর্দারের শরীরে এ রকম কোনো বিকৃতি পাওয়া যায়নি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রাতে শাহিন সর্দারের খালাতো বোন তাহেরা খানম বলেন, ‘আমার ভাইয়ের শত কোটি টাকার ব্যবসা রয়েছে। ব্যবসায়িক কারণ বা ক্ষতির কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটতে পারে না। পরিবারে জমিজমা নিয়ে একটি মামলা আছে। এ বিরোধ থেকে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে বাইরের কোনো পেশাদার কিলার হত্যা করে আত্মহত্যা সাজাতে পারে।’
বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল ফজল প্রথম আলোকে বলেন, দুপুরে লাশ উদ্ধারের পর তাঁর স্ত্রী নাসিমা জামান ময়নাতদন্ত না করে লাশ পরিবারের জিম্মায় দেওয়ার জন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবরে আবেদন করেছিলেন। পুলিশ এ আবেদন মঞ্জুর হওয়ার অপেক্ষায় ছিল। রাতে এ আবেদন তাঁরা নিজ থেকে প্রত্যাহার করায় ময়নাতদন্ত হবে।
ওসি জানান, লাশের সুরতহাল দেখে পুলিশেরও এ নিয়ে সন্দেহ হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে অবশ্যই এ ব্যাপারে তদন্ত করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.