কে নিয়েছে, কী নিয়েছে... by আসিফ আহমেদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যারা সনদপত্র পাবেন তাদের বিশেষ ধরনের গাউন ও চৌকোনা টুপি পরতে হয়। এসব সরবরাহ করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই শিক্ষার্থীরা এ ধরনের পোশাক পরে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে হাজির হন। সমাবর্তন পোশাকে ছবি তোলার আগ্রহ থাকে সব শিক্ষার্থীর।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও ব্যতিক্রম নয়। সমাবর্তন হবে ৩১ মার্চ শনিবার। বুধবার থেকেই এর পোশাক বিতরণ শুরু হয়েছে টিএসসি থেকে। পোশাকের সঙ্গে টুকটাক কিছু উপহার সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে। যেমন ছেলেদের জন্য টাই ও মেয়েদের হাতব্যাগ। এসব স্মৃতি নতুন প্রজন্মের কাছে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম দিন যারা পোশাক ও উপহারসামগ্রী পেয়েছেন, তারা ছবি তোলার জন্য বাড়তি সময় হাতে পাবেন। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত এবং তা প্রকাশের মাধ্যমও তাদের জানা থাকার কথা।
কিন্তু বিতরণের সময় সেদিন যা ঘটেছে, সেটা শোভন হয়নি। বিতরণ ব্যবস্থায় হয়তো কিছু ত্রুটি ছিল। অনেক 'গ্র্যাজুয়েট ও মাস্টার্স ডিগ্রিহোল্ডার' লাইনে দাঁড়িয়ে যাওয়ায় বিশৃঙ্খলার উপাদান ছিল। বিতরণের স্থান হয়তো সংকীর্ণ ছিল। কিন্তু শত শত উচ্চশিক্ষিত তরুণ-তরুণী যেখানে লাইনে সেখানে বিশৃঙ্খলাকে শৃঙ্খলায় নিয়ে আসা কি কঠিন ছিল? তারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করতে পারেন। পরিকল্পিতভাবে কেউ বিশৃঙ্খলা ঘটাতে চাইলে তাদের কীভাবে ঠেকাতে হয়, সে শিক্ষা এবং সাংগঠনিক ক্ষমতাও তাদের আয়ত্তে থাকার কথা। কিন্তু কেমন করে যেন সব ওলটপালট হয়ে গেল। কিছু শিক্ষার্থী বাড়তি ব্যাগ নিয়েছেন। কারও মতে এটা লুট, কারও মতে এটা বা সুযোগ পেয়ে দু'চারটা বেশি গিফট ব্যাগ হাতিয়ে নেওয়া। কেউবা বলবেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের দোষেই এটা হয়েছে।
কে বা কারা এসব করেছেন সেটা হয়তো সহজেই বের করা সম্ভব। প্রথমে গাউন নিয়ে তারপর গিফট ব্যাগের জন্য যারা লাইন দিয়েছেন তাদের কেউ কেউ এ অপরাধ করেছেন। এখন কেউ চাইলে ঢালাওভাবে সবাইকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারে। আবার কেউবা বলতে পারেন, এসব ছোটখাটো বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের সর্ববৃহৎ সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজনকে খাটো করার কোনো অর্থ হয় না। যারা ভুল করেছেন, তাদের ক্ষমা করে সমাবর্তনকে সফল করায় সবার সচেষ্ট হওয়াই শ্রেয়।
অতএব, কে নিয়েছেন বা কারা নিয়েছেন সে বিচার আপাতত থাক। চিরতরে চাপা পড়লেও এমন কিছু ক্ষতি হবে না। যা গেছে তা তো আর ফেরত পাওয়া যাবে না। হাতের কাছে আকর্ষণীয় কিছু উপহার পড়ে আছে, সেটা নিতে দোষ কী!
এখন একটু ভিন দেশের একটি সত্য ঘটনা বলি। কানাডার অন্টারিও কার্কল্যান্ড লেকের উত্তর ১১ নম্বর হাইওয়েতে ৫০ লাখ ডলার মূল্যমানের (বাংলাদেশের মুদ্রায় ৪০ কোটি টাকা) কয়েন ভর্তি একটি ট্রাক দুর্ঘটনায় পড়লে ১ ডলার ও ২৫ সেন্টের হাজার হাজার কয়েন রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে। দুর্ঘটনার পরপরই ট্রাকটির পেছনে সজোরে আছড়ে পড়ে ক্যান্ডি বোঝাই আরেকটি ট্রাক। ট্রাক ভর্তি ক্যান্ডিও ছড়িয়ে পড়ে রাস্তায়।
বাংলাদেশের কোনো বড় বা ছোট সড়কে ৪০ কোটি টাকার কয়েন এবং হাজার হাজার ক্যান্ডি ছড়িয়ে পড়ার কয়েক ঘণ্টা পর পর্যন্ত ওই এলাকার দৃশ্য কেমন হতে পারে, সেটা ভাবতে থাকুন। আর এই অবসরে সবাইকে জানাই_ বুধবার, ২৮ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে বিশ্ববিদ্যালয় সর্বোচ্চ ডিগ্রি পাওয়া ব্যক্তিদের হাতে যে জিনিসটি খোয়া গেছে, তার গিফট ব্যাট নয়_ নাম আত্মসম্মান ও মর্যাদাবোধ। কোনো গোয়েন্দা কিংবা পুলিশ র‌্যাব কি তা ফিরিয়ে দিতে পারবে?

No comments

Powered by Blogger.