চরাচর-সর্প দংশন by আজিজুর রহমান
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অর্থায়নে ও নিউ ক্যাসল ইউনিভার্সিটির সহায়তায় পরিচালিত এক জরিপ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে ৮০ প্রজাতির সাপ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ২২ প্রজাতির সাপ বিষধর। আবার বিষধর এ প্রজাতিগুলোর মধ্যে মাত্র চারটি প্রজাতি খুবই মারাত্মক। এগুলো হচ্ছে গোখরা, কালকেউটে, শঙ্খিনী ও চন্দ্রবোড়া। সাপ শীতল রক্তের প্রাণী।
এদের পা, চোখের পাতা ও কান (শ্রবণেন্দ্রিয়) নেই। সাপের খাদ্যাভ্যাস লক্ষ করলে দেখা যাবে, এরা সাধারণত কেঁচো, ব্যাঙ, কীটপতঙ্গ, ইঁদুর, মাছ, ছোট ছোট পাখি ইত্যাদির ওপর নির্ভরশীল। আবার অনেক পশুপাখি সাপ শিকার করে খায়। এর মধ্যে রয়েছে চিল, বাজপাখি, ময়ূর, ধনেশ পাখি, কসাই পাখি, স্নাইপ, আফ্রিকার সেক্রেটারি পাখি আর পশুদের মধ্যে রয়েছে বেজি, শজারু, বনবিড়াল_আরো অনেক প্রাণী। প্রকৃতিতে পরভুক শিকারি প্রাণী ও শিকারের মধ্যে আপাত অদৃশ্য একটি সূত্র কাজ করে চলেছে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করা ছাড়াও সাপ মানুষের জীবন রক্ষাকারী ওষুধ তৈরির জৈব রাসায়নিক উপাদান সরবরাহ করছে। সাপের বিষ থেকেই উদ্ভাবন করা হয়েছে সাপের বিষনাশক অ্যান্টিভেনাম। এ ছাড়া সাপের বিষ থেকে সংগ্রহ করা এনজাইম চিকিৎসাবিজ্ঞানে মূল্যবান উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফসল বিনষ্টকারী পোকামাকড়, ইঁদুর, পাখি ইত্যাদি খেয়ে সাপ কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে। সাপের চামড়া মূল্যবান অর্থনৈতিক সম্পদ। সাপের চামড়ার তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী সারা বিশ্বে খুবই সমাদৃত। বড় সাপের চামড়া দামি অ্যান্টিক হিসেবে বেচাকেনা হয়। রপ্তানিসামগ্রী হিসেবে শঙ্খিনী ও চন্দ্রবোড়া সাপের চামড়া সবচেয়ে মূল্যবান। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশের মানুষ বিভিন্ন প্রজাতির সাপ অন্যতম উপাদেয় খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। এসব দেশে সাপ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পালন করা হয় এবং তা অন্যান্য দেশে রপ্তানি করা হয়। সাপ নিঃসন্দেহে উপকারী প্রাণী। গবেষকদের জরিপ প্রতিবেদনে আরো জানা যায়, বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে প্রতিবছর প্রায় ছয় লাখ মানুষ সাপের কামড়ের শিকার হয়। তাদের মধ্যে মারা যায় ছয় হাজারেরও বেশি। ভারতের গবেষকরা এক জরিপে জানতে পেরেছেন, সাপের কামড়ে মারা যাওয়া মানুষের ৮০ শতাংশেরই নির্বিষ সাপের কামড়ে মৃত্যু ঘটে। এসব মৃত্যুর কারণ মূলত আতঙ্ক। সাপের প্রকৃতি কখনোই আক্রমণাত্মক নয়। তাই সাপের কামড়ে মানুষের মৃত্যু যেকোনো দুর্ঘটনার মতোই একটি ঘটনা। এ দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে হলে অবশ্যই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এবং দুর্ঘটনার পর বিজ্ঞানভিত্তিক প্রতিকারমূলক চিকিৎসাব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের গ্রামীণ জনপদে সর্প দংশনের হার এবং এর ঝুঁকি নিরসনের উপায়বিষয়ক এক জরিপ প্রতিবেদনে সাপের কামড়কে গবেষকরা বাংলাদেশের প্রাচীন ও অবহেলিত জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
আজিজুর রহমান
আজিজুর রহমান
No comments