নিরাপদ আবাস, না নিরাপত্তাহীন আবাস by এ এম এম শওকত আলী
জামায়াতে ইসলামীর অন্তত তিনজন শীর্ষস্থানীয় নেতা যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত। আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালতে তাঁদের বিচারের প্রক্রিয়া চলছে। তদন্ত এখনো সম্পন্ন হয়নি। তাঁরা কারাগারে। সম্প্রতি অধিকতর তদন্তের স্বার্থে তদন্ত সংস্থা দুইজনকে রিমান্ডে নেওয়ার প্রার্থনা করে। প্রকাশিত সংবাদে দেখা যায়,
এ প্রসঙ্গে আদালতের আদেশ ছিল_কোনো নিরাপদ আবাসে (Safe home) তাঁদের প্রশ্ন করতে হবে। রিমান্ড ছিল মাত্র এক দিনের। এই আদেশের পরই বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি হয়। বর্তমানে কিছুটা স্তব্ধ। প্রধান বিরোধী দলের কিছুসংখ্যক নেতা নিরাপদ আবাসকে নির্যাতনের আবাস হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ক্ষমতাসীন দলের এক নেতা তা খণ্ডন করেছেন। এ ধরনের রাজনৈতিক বিতর্ক নিরাপদ আবাস-সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক ব্যাখ্যা বা ঘটনাবলির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। এর ফলে যথেষ্ট বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। প্রকৃত ব্যাখ্যা দেওয়া আবশ্যক। এ সম্পর্কে আন্তর্জাতিক রীতি বা গৃহীত ব্যবস্থা কী?
উইকিপিডিয়া অর্থাৎ জ্ঞানকোষে এ সম্পর্কে কিছু তথ্য দেওয়া হয়েছে। 'নিরাপদ আবাস' শব্দটি আইন প্রয়োগ এবং গোয়েন্দা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। নিরাপদ আবাসের অর্থ এমন আবাসস্থল, যেখানে নিরাপত্তার অভাব নেই। সাক্ষী, গোয়েন্দাদের এজেন্ট বা অন্য কোনো ব্যক্তি, যে নিরাপত্তাহীনতার শিকার হবে, তাদের জন্যই নিরাপদ আবাস। নিরাপদ আবাসের অন্যান্য অর্থের মধ্যে রয়েছে_(এক) অপরাধজনিত বিচার এড়ানো কোন ব্যক্তির বাসস্থান, (দুই) পারিবারিক কারণে নির্যাতিত ব্যক্তির আশ্রয়স্থল, (তিন) যুদ্ধ বা অন্য কোনো নির্যাতন থেকে নিরাপদ রাখার গোপন বাসস্থান, (চার) মধ্যযুগীয় আইনের সংজ্ঞায় অভয়াশ্রম এবং (পাঁচ) আস্যাইলামে বা ভিন্ন দেশে আশ্রয় গ্রহণ করার অধিকার।
উপর্যুক্ত বিভিন্ন ব্যাখ্যায় যে বিষয়টি স্পষ্ট, তা হলো, নিরাপদ আবাস নির্যাতনের জন্য নয়। প্রকৃতপক্ষে নিরাপত্তাহীনতার জন্য আশঙ্কাগ্রস্ত ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের জন্যই 'নিরাপদ আবাস' শব্দটি ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন উদ্দেশ্যে এই শব্দ বা রীতি প্রচলিত। তবে অত্যাচারের জন্য নয়। মানবিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্যও এই শব্দ ব্যবহার করা বা এই রীতি অনুসরণ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায়, আমেরিকায় ভূগর্ভস্থ রেল চলাচল ব্যবস্থায় নিরাপদ আবাস স্থাপনের প্রথা ছিল। অধুনা খ্যাত এসব স্থানে একসময় মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্য ঊনবিংশ শতাব্দীতে নিরাপদ আশ্রয়স্থল ছিল। এসব স্থানে হ্যারিকেন বাতি হাতে নেওয়া আফ্রিকান-আমেরিকান কৃষ্ণবর্ণ ব্যক্তির মূর্তিও দেখা যায়। ধারণা করা হয়, ওই বাতি মুক্তির প্রতীক। ইউরোপে নাৎসি আমলে নিরাপদ আবাসের প্রথা ছিল। উদ্দেশ্য ছিল_নাৎসিদের নির্যাতন থেকে কোনো ব্যক্তিকে নিরাপদ রাখা। বিখ্যাত অ্যান ফ্রাংক এবং তাঁর পরিবারকে এই রীতি অনুসরণ করেই নাৎসিদের নির্যাতন থেকে নিরাপদে রাখা হয়েছিল।
বাংলাদেশে এ শব্দটির ব্যবহারের পটভূমি ছিল আদালতের আদেশ। প্রথমে কেন্দ্রীয় কারাগারে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ ছিল। কারাগার কর্তৃপক্ষ কারাগারে জিজ্ঞাসাবাদের সুবিধার অভাবের বিষয়টি আদালতকে জানানোর পর আইনসম্মত ব্যবস্থার জন্যই নির্দেশ দেওয়া হয়; কিন্তু পুলিশ রিমান্ডে নয়। ধারণা করা যায়, এরই ধারাবাহিকতায় সরকারি মালিকানাধীন একটি বাড়িকে জেলকোডের বিধান অনুযায়ী উপ-কারাগার (Sub-jail) হিসেবে ঘোষণা জারি করে, যা গেজেটেও প্রকাশিত হয়। ক্ষমতাসীন দলের সংশ্লিষ্ট নেতাও গেজেটে প্রকাশিত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন। এ ধারণার ভিত্তি হলো_নিরাপদ আবাস সব সময়ই গোপন রাখা হয়। গেজেট বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কোনো ঘোষণা দেওয়া হয় না। সাব-জেল ঘোষণা করলে অবশ্যই বিধি অনুযায়ী গেজেটে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে, যাতে সবাই জানতে পারে। এ কথাই সরাসরি উল্লেখ করলে সব ধরনের বিতর্কের অবসান হতো।
সাব-জেলে যাতে নির্যাতনের আশঙ্কা না থাকে, সে জন্যও আদালত কিছু নির্দেশনা দেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো_আসামিদের আইনজীবী এবং একজন চিকিৎসক একটি কক্ষে অবস্থান করবেন। আসামিদের জেরার বিরতির সময় আইনজীবী আসামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারবেন। আসামিদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ রিমান্ড সাধারণত থানায় হয়। তবে জিজ্ঞাসাবাদের সুবিধার জন্য প্রয়োজনবোধে কোনো বাসস্থানও গোয়েন্দারা বা তদন্ত সংস্থা ব্যবহার করে। বিষয়টি গোপন থাকে। এ ধরনের বাড়িতে নির্যাতনের আশঙ্কা অমূলক নয়। আলোচ্য পদক্ষেপে এই আশঙ্কাকে যতদূর সম্ভব হ্রাস করা হয়েছে। কারণ পুলিশ বা তদন্ত সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত স্থানে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নির্যাতন করার যন্ত্রপাতি থাকাটা স্বাভাবিক।
তবে প্রচলিত আইনে রিমান্ডের সময় নির্যাতন রোধ করার বিধানও রয়েছে। সাধারণত আসামিদের স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য নির্যাতন করা হয়। আইন ও আদালত এই কার্যক্রম সমর্থন করে না। তাই আইনের বিধান অনুযায়ী অপরাধীর স্বীকারোক্তির বিষয়টি হবে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত; নির্যাতনের মাধ্যমে নয়। এ কারণে আইনের বিধানে দুই ধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা রয়েছে_এক. আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি লিপিবদ্ধকারী ম্যাজিস্ট্রেটকে আসামিকে জানাতে হবে, সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য নয়। দুই. জবানবন্দি গ্রহণের সময় ম্যাজিস্ট্রেটের কক্ষে কোনো পুলিশ কর্মকর্তার উপস্থিতি আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ। উদ্দেশ্য হলো, এ ধরনের উপস্থিতি যেন আসামির জন্য ভীতির কারণ না হয়। নিরাপদ আবাস-সংক্রান্ত পরস্পরবিরোধী রাজনৈতিক বক্তব্য উইকিপিডিয়া যে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট প্রদান করেছে, তার সঙ্গে সম্পূর্ণ সংগতিহীন। মধ্যযুগীয় আইনেও এ প্রথাকে অভয়াশ্রম বলা হয়েছে। আসামিদের জন্য অভয়াশ্রম বলা হয়নি।
মুক্তিযুদ্ধের সময় এ দেশের কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছিল, তা সর্বজনবিদিত। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এ ধরনের ঘটনা ঘটে। নাৎসিদের আমলেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছিল, যার জন্য পরবর্তীকালে অপরাধীদের বিচার ও শাস্তি হয়। ন্যুরেমবার্গ বিচার একটি স্মরণীয় ঘটনা। আন্তর্জাতিক আইনেও এ ধরনের বিচার স্বীকৃত। ১৯৭৩-এর আইনেও এ দেশে বিষয়টি স্বীকৃত। সর্বশেষ তামিলদের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার সরকারি বাহিনীর যুদ্ধে যেসব অপরাধের ঘটনা ঘটেছে, তার তদন্ত জাতিসংঘ সম্প্রতি সম্পন্ন করেছে। অতএব, এ ধরনের বিচার নিয়ে কোনো রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি করার বিষয় সমর্থনযোগ্য নয়।
তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেওয়া যায়, এ ধরনের রাজনৈতিক বিতর্ক এড়ানো বাস্তবসম্মত নয়, তাহলে বলতে হয়, বিতর্ক গঠনমূলক হতে হবে; রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে অহেতুক আক্রমণের জন্য নয়। এর ফলে আইনের শাসন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে কিছু অতি উৎসাহী নেতা রয়েছেন। তাঁরা পাল্টা বক্তব্য সব সময় তাৎক্ষণিকভাবেই দিতে আগ্রহী। এর জন্যও জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। এ প্রসঙ্গে সাম্প্রতিক উদাহরণও রয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের একজন অতি উৎসাহী ব্যক্তি প্রয়াত জিয়াউর রহমানকে পাকিস্তানপন্থী হিসেবে একসময় আখ্যায়িত করেন। তাঁর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের ব্যাপারে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন। অতি সম্প্রতি একজন সিনিয়র মন্ত্রী, যিনি মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছিলেন, তিনি বলেছেন তাঁর নিজস্ব মতামত। ১৯৭২ সালে সিলেট যাওয়ার সময় কুমিল্লা সেনানিবাসে তিনি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তাঁকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আখ্যায়িত করেন। যেটা বাস্তব, তা হলো, মুক্তিযুদ্ধ কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর একক অবদান নয়। দেশত্যাগ না করে যাঁরা ওই সময় দেশেই থেকেছেন, তাঁরাও উইকিপিডিয়া সংজ্ঞায়িত প্রথায় বহু ব্যক্তিকে মৃত্যু অথবা নির্যাতন থেকে রক্ষা করেছেন।
নিরাপদ আবাস নিয়ে উইকিপিডিয়ায় এ শব্দটি গোয়েন্দা বাহিনীতে প্রচলিত কেন? এর উত্তর আগেই দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর ঘটনায় আন্তর্জাতিক মিডিয়া অ্যাবোটাবাদের বাড়িটিকে আইএসআইয়ের নিরাপদ আবাস হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। অনেকে বিশ্বাস করেন, নিরাপদে রাখার জন্যই আইএসআই ওই বাড়িটি ওসামাকে দিয়েছিল।
লেখক : তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টাউইকিপিডিয়া অর্থাৎ জ্ঞানকোষে এ সম্পর্কে কিছু তথ্য দেওয়া হয়েছে। 'নিরাপদ আবাস' শব্দটি আইন প্রয়োগ এবং গোয়েন্দা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। নিরাপদ আবাসের অর্থ এমন আবাসস্থল, যেখানে নিরাপত্তার অভাব নেই। সাক্ষী, গোয়েন্দাদের এজেন্ট বা অন্য কোনো ব্যক্তি, যে নিরাপত্তাহীনতার শিকার হবে, তাদের জন্যই নিরাপদ আবাস। নিরাপদ আবাসের অন্যান্য অর্থের মধ্যে রয়েছে_(এক) অপরাধজনিত বিচার এড়ানো কোন ব্যক্তির বাসস্থান, (দুই) পারিবারিক কারণে নির্যাতিত ব্যক্তির আশ্রয়স্থল, (তিন) যুদ্ধ বা অন্য কোনো নির্যাতন থেকে নিরাপদ রাখার গোপন বাসস্থান, (চার) মধ্যযুগীয় আইনের সংজ্ঞায় অভয়াশ্রম এবং (পাঁচ) আস্যাইলামে বা ভিন্ন দেশে আশ্রয় গ্রহণ করার অধিকার।
উপর্যুক্ত বিভিন্ন ব্যাখ্যায় যে বিষয়টি স্পষ্ট, তা হলো, নিরাপদ আবাস নির্যাতনের জন্য নয়। প্রকৃতপক্ষে নিরাপত্তাহীনতার জন্য আশঙ্কাগ্রস্ত ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের জন্যই 'নিরাপদ আবাস' শব্দটি ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন উদ্দেশ্যে এই শব্দ বা রীতি প্রচলিত। তবে অত্যাচারের জন্য নয়। মানবিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্যও এই শব্দ ব্যবহার করা বা এই রীতি অনুসরণ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায়, আমেরিকায় ভূগর্ভস্থ রেল চলাচল ব্যবস্থায় নিরাপদ আবাস স্থাপনের প্রথা ছিল। অধুনা খ্যাত এসব স্থানে একসময় মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্য ঊনবিংশ শতাব্দীতে নিরাপদ আশ্রয়স্থল ছিল। এসব স্থানে হ্যারিকেন বাতি হাতে নেওয়া আফ্রিকান-আমেরিকান কৃষ্ণবর্ণ ব্যক্তির মূর্তিও দেখা যায়। ধারণা করা হয়, ওই বাতি মুক্তির প্রতীক। ইউরোপে নাৎসি আমলে নিরাপদ আবাসের প্রথা ছিল। উদ্দেশ্য ছিল_নাৎসিদের নির্যাতন থেকে কোনো ব্যক্তিকে নিরাপদ রাখা। বিখ্যাত অ্যান ফ্রাংক এবং তাঁর পরিবারকে এই রীতি অনুসরণ করেই নাৎসিদের নির্যাতন থেকে নিরাপদে রাখা হয়েছিল।
বাংলাদেশে এ শব্দটির ব্যবহারের পটভূমি ছিল আদালতের আদেশ। প্রথমে কেন্দ্রীয় কারাগারে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ ছিল। কারাগার কর্তৃপক্ষ কারাগারে জিজ্ঞাসাবাদের সুবিধার অভাবের বিষয়টি আদালতকে জানানোর পর আইনসম্মত ব্যবস্থার জন্যই নির্দেশ দেওয়া হয়; কিন্তু পুলিশ রিমান্ডে নয়। ধারণা করা যায়, এরই ধারাবাহিকতায় সরকারি মালিকানাধীন একটি বাড়িকে জেলকোডের বিধান অনুযায়ী উপ-কারাগার (Sub-jail) হিসেবে ঘোষণা জারি করে, যা গেজেটেও প্রকাশিত হয়। ক্ষমতাসীন দলের সংশ্লিষ্ট নেতাও গেজেটে প্রকাশিত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন। এ ধারণার ভিত্তি হলো_নিরাপদ আবাস সব সময়ই গোপন রাখা হয়। গেজেট বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কোনো ঘোষণা দেওয়া হয় না। সাব-জেল ঘোষণা করলে অবশ্যই বিধি অনুযায়ী গেজেটে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে, যাতে সবাই জানতে পারে। এ কথাই সরাসরি উল্লেখ করলে সব ধরনের বিতর্কের অবসান হতো।
সাব-জেলে যাতে নির্যাতনের আশঙ্কা না থাকে, সে জন্যও আদালত কিছু নির্দেশনা দেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো_আসামিদের আইনজীবী এবং একজন চিকিৎসক একটি কক্ষে অবস্থান করবেন। আসামিদের জেরার বিরতির সময় আইনজীবী আসামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারবেন। আসামিদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ রিমান্ড সাধারণত থানায় হয়। তবে জিজ্ঞাসাবাদের সুবিধার জন্য প্রয়োজনবোধে কোনো বাসস্থানও গোয়েন্দারা বা তদন্ত সংস্থা ব্যবহার করে। বিষয়টি গোপন থাকে। এ ধরনের বাড়িতে নির্যাতনের আশঙ্কা অমূলক নয়। আলোচ্য পদক্ষেপে এই আশঙ্কাকে যতদূর সম্ভব হ্রাস করা হয়েছে। কারণ পুলিশ বা তদন্ত সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত স্থানে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নির্যাতন করার যন্ত্রপাতি থাকাটা স্বাভাবিক।
তবে প্রচলিত আইনে রিমান্ডের সময় নির্যাতন রোধ করার বিধানও রয়েছে। সাধারণত আসামিদের স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য নির্যাতন করা হয়। আইন ও আদালত এই কার্যক্রম সমর্থন করে না। তাই আইনের বিধান অনুযায়ী অপরাধীর স্বীকারোক্তির বিষয়টি হবে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত; নির্যাতনের মাধ্যমে নয়। এ কারণে আইনের বিধানে দুই ধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা রয়েছে_এক. আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি লিপিবদ্ধকারী ম্যাজিস্ট্রেটকে আসামিকে জানাতে হবে, সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য নয়। দুই. জবানবন্দি গ্রহণের সময় ম্যাজিস্ট্রেটের কক্ষে কোনো পুলিশ কর্মকর্তার উপস্থিতি আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ। উদ্দেশ্য হলো, এ ধরনের উপস্থিতি যেন আসামির জন্য ভীতির কারণ না হয়। নিরাপদ আবাস-সংক্রান্ত পরস্পরবিরোধী রাজনৈতিক বক্তব্য উইকিপিডিয়া যে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট প্রদান করেছে, তার সঙ্গে সম্পূর্ণ সংগতিহীন। মধ্যযুগীয় আইনেও এ প্রথাকে অভয়াশ্রম বলা হয়েছে। আসামিদের জন্য অভয়াশ্রম বলা হয়নি।
মুক্তিযুদ্ধের সময় এ দেশের কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছিল, তা সর্বজনবিদিত। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এ ধরনের ঘটনা ঘটে। নাৎসিদের আমলেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছিল, যার জন্য পরবর্তীকালে অপরাধীদের বিচার ও শাস্তি হয়। ন্যুরেমবার্গ বিচার একটি স্মরণীয় ঘটনা। আন্তর্জাতিক আইনেও এ ধরনের বিচার স্বীকৃত। ১৯৭৩-এর আইনেও এ দেশে বিষয়টি স্বীকৃত। সর্বশেষ তামিলদের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার সরকারি বাহিনীর যুদ্ধে যেসব অপরাধের ঘটনা ঘটেছে, তার তদন্ত জাতিসংঘ সম্প্রতি সম্পন্ন করেছে। অতএব, এ ধরনের বিচার নিয়ে কোনো রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি করার বিষয় সমর্থনযোগ্য নয়।
তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেওয়া যায়, এ ধরনের রাজনৈতিক বিতর্ক এড়ানো বাস্তবসম্মত নয়, তাহলে বলতে হয়, বিতর্ক গঠনমূলক হতে হবে; রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে অহেতুক আক্রমণের জন্য নয়। এর ফলে আইনের শাসন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে কিছু অতি উৎসাহী নেতা রয়েছেন। তাঁরা পাল্টা বক্তব্য সব সময় তাৎক্ষণিকভাবেই দিতে আগ্রহী। এর জন্যও জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। এ প্রসঙ্গে সাম্প্রতিক উদাহরণও রয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের একজন অতি উৎসাহী ব্যক্তি প্রয়াত জিয়াউর রহমানকে পাকিস্তানপন্থী হিসেবে একসময় আখ্যায়িত করেন। তাঁর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের ব্যাপারে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন। অতি সম্প্রতি একজন সিনিয়র মন্ত্রী, যিনি মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছিলেন, তিনি বলেছেন তাঁর নিজস্ব মতামত। ১৯৭২ সালে সিলেট যাওয়ার সময় কুমিল্লা সেনানিবাসে তিনি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তাঁকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আখ্যায়িত করেন। যেটা বাস্তব, তা হলো, মুক্তিযুদ্ধ কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর একক অবদান নয়। দেশত্যাগ না করে যাঁরা ওই সময় দেশেই থেকেছেন, তাঁরাও উইকিপিডিয়া সংজ্ঞায়িত প্রথায় বহু ব্যক্তিকে মৃত্যু অথবা নির্যাতন থেকে রক্ষা করেছেন।
নিরাপদ আবাস নিয়ে উইকিপিডিয়ায় এ শব্দটি গোয়েন্দা বাহিনীতে প্রচলিত কেন? এর উত্তর আগেই দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর ঘটনায় আন্তর্জাতিক মিডিয়া অ্যাবোটাবাদের বাড়িটিকে আইএসআইয়ের নিরাপদ আবাস হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। অনেকে বিশ্বাস করেন, নিরাপদে রাখার জন্যই আইএসআই ওই বাড়িটি ওসামাকে দিয়েছিল।
No comments