চাঁদাবাজি ও ঈদ-বাণিজ্য-বন্ধ হোক ফুটপাতের অবৈধ ব্যবসা

রাজধানীর ফুটপাত এখন পুরোপুরি হকারদের দখলে। এমনিতেই সারা বছর ফুটপাতগুলো হকারদের দখলে থাকে। কিন্তু ঈদ সামনে রেখে ফুটপাতের হকার্স মার্কেট এখন রমরমা। ফুটপাতে কম দামে পণ্য মেলে, তাই স্বল্প আয়ের মানুষজন সেখানে ভিড় জমায়। ঈদের সময় সবারই লক্ষ্য থাকে নতুন পোশাকের দিকে।


কিন্তু বড় বিপণিবিতানে গিয়ে দামি ও চটকদার পোশাক কেনার সামর্থ্য দেশের বেশির ভাগ মানুষেরই নেই। তাই রাজধানীতে বসবাসকারী মানুষের একটি বড় অংশের ভরসা এই ফুটপাতের বাজার। আবার এই ফুটপাতের বাজারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে চাঁদাবজির একটি বড় চক্র। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতা, ছাত্রনেতা, পেশাদার চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসী ও স্থানীয় মাস্তান_সবাই এই চাঁদাবাজির ভাগীদার।
রাজধানীর ফুটপাতের বাজার নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। অনেক আগে থেকেই ফুটপাতজুড়ে বাজার বসছে। এর আগে কয়েকবার হকার্স মার্কেট করা হলেও ফুটপাত থেকে হকারদের তুলে দেওয়া যায়নি। হকারদের নানা জায়গায় পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু পুনর্বাসন কতটা সম্ভব হয়েছে, সে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি আজও। ফুটপাত থেকে হকারদের সরিয়ে দেওয়ার জন্য রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তায়, বিশেষ করে মানিক মিয়া এভিনিউয়ে সাপ্তাহিক বাজার চালুর চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু হকাররা ফিরে গেছে আগের জায়গায়। ফলে যে ফুটপাত থাকার কথা পথচারীদের দখলে, তা চলে গেছে হকারদের দখলে। এমন কোনো পণ্য নেই, যা ফুটপাতে পাওয়া যায় না। আবার এই ফুটপাতে যাঁরা ব্যবসা করেন, তাঁদের প্রত্যেককে প্রতিদিন নির্দিষ্ট হারে চাঁদা দিতে হয়। এই ফুটপাতেও চাঁদা না দিয়ে ব্যবসা করা যায় না_এটা সবাই জানেন। ফুটপাতে একেকটি এলাকার জন্য একেক ধরনের চাঁদার হারও নির্দিষ্ট করা আছে। ঈদের সময় চাঁদার পরিমাণ আরো বেড়ে যায়।
রাজধানীর ফুটপাতের বাজারের ওপর এখন অনেক মানুষেরই জীবিকা নির্ভর করছে। স্বল্প আয়ের মানুষ এই ফুটপাতের বাজারে নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী কেনাকাটা করতে পারছে। এ অবস্থায় বিকল্প ব্যবস্থা না করে এই হকারদের তুলে দেওয়াটা হবে অমানবিক। কিন্তু এখানে ব্যবসা করেন যে হকাররা, তাঁদের পুলিশ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতা, ছাত্রনেতা, পেশাদার চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসী ও স্থানীয় মাস্তানদের যে চাঁদা দিতে হয় বা সে চাঁদা যেভাবে আদায় করা হয়, সে পন্থাটিও মানবিক নয়। কাজেই ফুটপাতকে হকারমুক্ত করার আগে অবশ্যই একটি বিকল্প খুঁজতে হবে। পাশাপাশি ফুটপাত পথচারীদের জন্য উন্মুক্ত করে সেখানকার অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ চাঁদাবাজির পথও বন্ধ করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.