আস্থার অভাবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সরে গেছেন by ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ
এখন যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, তা সত্যিই কঠিন। এই কঠিন অবস্থা মোকাবিলায় যেসব প্যাকেজ, প্রণোদনার কথা বলা হয়েছিল, সেগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। সেগুলো বাস্তবায়ন করলে হয়তো বাজারের চেহারা ঘুরে যেতে পারত। এই যে বাজার প্রতিনিয়ত মন্দ অবস্থার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে, এর মূল কারণ হলো, জনগণ পুঁজিবাজারের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। এই আস্থা হারিয়ে ফেলার কারণেও মুদ্রাবাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না।
মুদ্রাবাজার ঘুরে দাঁড়াতে না পারার আরো একটি বড় কারণ হলো, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা এ বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। মুদ্রাবাজারের বড় বড় বিনিয়োগগুলো করে থাকেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু তাঁরা কোনো ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। এখন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা যদি পূর্ণোদ্যমে ফিরে না আসেন, তাহলে মাঝারি ও ছোট ব্যক্তিগত পর্যায়ের বিনিয়োগকারীদের উত্তরণ কঠিন হয়ে পড়বে। তবে সরকার যা করতে পারত তা হলো, গত বছর যখন ব্যাপক ধস নামে, তখন এর কারণ অনুসন্ধানে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সে তদন্ত কমিটি পরিশ্রমসাধ্য একটি রিপোর্ট পেশ করেছিল। সে রিপোর্ট অনুসারে ব্যবস্থা নিলে পুঁজিবাজারের প্রতি মানুষের আস্থাটা অন্তত ফিরে আসত। পুঁজিবাজারে যাদের প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করা হয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। বরং সে রিপোর্টটি একেবারে ঢেকে ফেলা হয়েছে। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বদাই একটি আস্থার প্রয়োজন হয়। এই রিপোর্ট বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণেও বড় বিনিয়োগকারীরা আস্থা হারিয়েছেন এবং মুদ্রাবাজার থেকে সরে গেছেন।
তবে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার কারণে মুদ্রাবাজারে কোনো প্রভাব পড়েছে বলে আমি মনে করি না। অনেকে যে এ ধারণা করছে তা ঠিক নয়। সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে আবার তা ফিরিয়ে দেয়। বর্তমান সরকারও তা-ই করছে। কথা হলো, সময়মতো ঋণ ফিরিয়ে দিলেই হলো। সরকার ঋণ নিচ্ছে, আবার কিছু ঋণ ফিরিয়েও দিচ্ছে কি না দেখতে হবে। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ঋণের কারণে সাময়িকভাবে ব্যাংকে কিছু তারল্য সংকট দেখা দিতে পারে। তবে সেটা মুদ্রাবাজারের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।
ভারতের বাজারেও মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়। সেখানেও আমরা ব্যাংক ঋণের বিষয়টি দেখি। কিন্তু ভারতের পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা রয়েছে। বাজার নিবিড়ভাবে মনিটর করা হয়। সেখানে কারসাজির কোনো সুযোগ থাকে না।
এখন পুঁজিবাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে ঘোষিত প্যাকেজ, প্রণোদনা ও পরামর্শগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে এলে এবং স্বচ্ছতার নিশ্চয়তা দেওয়া গেলে তাঁরা ফিরে আসবেন এবং বাজার স্বাভাবিক হবে।
No comments