চরাচর-নারী চা শ্রমিকদের ঝুঁকিপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা by বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন
প্রতিদিন তীব্র দাবদাহ অথবা ঘনবর্ষণ মাথায় নিয়ে 'দুটি পাতা একটি কুঁড়ি' তোলেন ১৬৩টি চা বাগানের নারী শ্রমিকরা। বাগানের ভাষায় তাঁদের বলে 'পাত্তিওয়ালী'। চায়ের নানা কাজের সঙ্গে তাঁদের রয়েছে সুদীর্ঘকালের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। প্রায় দেড় শ বছরের চা শিল্প সমৃদ্ধ হয়েছে তাঁদের হাত দিয়েই। তার পরও তাঁদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি।
মৌলিক অধিকার থেকে আজও বঞ্চিত তাঁরা। প্রসূতিকাল তাঁদের জন্য আরো বিপজ্জনক। প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা ও পুষ্টিকর খাবার তাঁদের ভাগ্যে জোটে না বললেই চলে।
'চা শ্রমিকের কথা' বইয়ে ডা. নিবাস চন্দ্র পাল উল্লেখ করেন, 'চা বাগানের শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ নারীই রক্তশূন্যতার মাঝে গর্ভধারণ করেন। অপুষ্টি ও বাল্যবিবাহ এর অন্যতম কারণ। চা বাগানে মেয়েদের বিয়ের গড় বয়স ১৪। ঘন ঘন গর্ভধারণ, অবাঞ্ছিত গর্ভপাত, পরবর্তী সেবার স্বল্পতা ও পরিবার পরিকল্পনার অভাব ইত্যাদি রক্তশূন্যতার জন্য দায়ী।' তিনি আরো বলেন, 'চা বাগানে শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার সাধারণের চেয়ে অনেক বেশি। প্রতিটি চা বাগানেই রয়েছে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রীর তীব্র অভাব। অধিকাংশ শিশুরই জন্ম হয় মাটির মেঝে, চটের ছালায় বা পলিথিনের ওপর। নারী চা শ্রমিকরা ম্যালেরিয়া, কৃমি, যক্ষ্মা, কুষ্ঠ, গনোরিয়া, সিফিলিস, স্কেবিস, চর্মরোগ প্রভৃতি রোগে ভোগেন।'
চা বাগানগুলোতে প্রসূতি চা শ্রমিকরা রয়েছেন নিরাপদ পানীয় জল গ্রহণের বাইরে। বাংলাদেশের শ্রম আইন-২০০৬-এর ৫৮ ধারায় সুবিধাজনক স্থানে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ জলের সরবরাহের কথা বলা থাকলেও চিত্রটা উল্টো। নারী শ্রমিকদের সরকারি আইন অনুযায়ী মাতৃত্বকালীন পূর্ণ ছুটি ভোগের কথা থাকলেও বাস্তবে তার প্রয়োগ যথেষ্ট নয়। প্রতিটি চা বাগানে একটি চিকিৎসাকেন্দ্র থাকার বিধান থাকলেও অনেক চা বাগানে নূ্যনতম স্বাস্থ্যসেবার কোনো সুবিধা নেই। কোনো অ্যাম্বুলেন্স বা সাধারণ গাড়ির ব্যবস্থা নেই। যেসব বাগানে ডিসপেনসারি রয়েছে, সেখানে নামমাত্র ওষুধ ছাড়া জীবনরক্ষাকারী কোনো ওষুধই মেলে না। বেশির ভাগ বাগানেই ভালো ডাক্তার, ওষুধ ও উন্নত চিকিৎসা নেই। নিজ খরচে শহরে গিয়ে চিকিৎসা করাতে হয়। কেউ কেউ তা পারলেও বেশির ভাগ শ্রমিকই তা পারেন না।
চা শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সেডের গবেষক শেখর কান্তি রায় বলেন, 'চা বাগানগুলোতে শ্রমিকদের নূ্যনতম চিকিৎসাসেবা খুবই অপ্রতুল। একটি-দুটি বাগান বাদে বেশির ভাগ বাগানেই স্বাস্থ্যসেবার সুবিধা নেই বললেই চলে।'
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক ও চা শ্রমিক নেতা বিজয় হাজরা বলেন, 'শ্রমিকদের বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মজুরি প্রভৃতি বিষয়ের সঙ্গে উৎপাদনশীলতার প্রশ্ন জড়িত। বাংলাদেশে একজন শ্রমিক দৈনিক গড়ে ২৫-৩০ কেজি পাতা তুলতে পারেন। কর্মপরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত অবস্থা উন্নত হলে ৫০ থেকে ৫৫ কেজি বা তারও বেশি পাতা তোলা সম্ভব।'
চা শ্রমিকদের দৈনিক সর্বোচ্চ মজুরি প্রথম শ্রেণীর বাগানের জন্য ৪৮ টাকা, দ্বিতীয় শ্রেণীর ৪৬ টাকা এবং তৃতীয় শ্রেণীর বাগানের জন্য ৪৫ টাকা। এ ছাড়া নামমাত্র মূল্যের কিছু সুবিধাদি রয়েছে। বাংলাদেশে প্রায় এক লাখ ১৮ হাজার চা শ্রমিকের অর্ধেকটা অংশ নারী। এই নারী শ্রমিকরা চা শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার কাজে নিরলস শ্রম বিলিয়ে যাচ্ছেন, অথচ তাঁদের এই শ্রমের সঠিক মূল্য পাচ্ছেন না।
বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন
'চা শ্রমিকের কথা' বইয়ে ডা. নিবাস চন্দ্র পাল উল্লেখ করেন, 'চা বাগানের শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ নারীই রক্তশূন্যতার মাঝে গর্ভধারণ করেন। অপুষ্টি ও বাল্যবিবাহ এর অন্যতম কারণ। চা বাগানে মেয়েদের বিয়ের গড় বয়স ১৪। ঘন ঘন গর্ভধারণ, অবাঞ্ছিত গর্ভপাত, পরবর্তী সেবার স্বল্পতা ও পরিবার পরিকল্পনার অভাব ইত্যাদি রক্তশূন্যতার জন্য দায়ী।' তিনি আরো বলেন, 'চা বাগানে শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার সাধারণের চেয়ে অনেক বেশি। প্রতিটি চা বাগানেই রয়েছে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রীর তীব্র অভাব। অধিকাংশ শিশুরই জন্ম হয় মাটির মেঝে, চটের ছালায় বা পলিথিনের ওপর। নারী চা শ্রমিকরা ম্যালেরিয়া, কৃমি, যক্ষ্মা, কুষ্ঠ, গনোরিয়া, সিফিলিস, স্কেবিস, চর্মরোগ প্রভৃতি রোগে ভোগেন।'
চা বাগানগুলোতে প্রসূতি চা শ্রমিকরা রয়েছেন নিরাপদ পানীয় জল গ্রহণের বাইরে। বাংলাদেশের শ্রম আইন-২০০৬-এর ৫৮ ধারায় সুবিধাজনক স্থানে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ জলের সরবরাহের কথা বলা থাকলেও চিত্রটা উল্টো। নারী শ্রমিকদের সরকারি আইন অনুযায়ী মাতৃত্বকালীন পূর্ণ ছুটি ভোগের কথা থাকলেও বাস্তবে তার প্রয়োগ যথেষ্ট নয়। প্রতিটি চা বাগানে একটি চিকিৎসাকেন্দ্র থাকার বিধান থাকলেও অনেক চা বাগানে নূ্যনতম স্বাস্থ্যসেবার কোনো সুবিধা নেই। কোনো অ্যাম্বুলেন্স বা সাধারণ গাড়ির ব্যবস্থা নেই। যেসব বাগানে ডিসপেনসারি রয়েছে, সেখানে নামমাত্র ওষুধ ছাড়া জীবনরক্ষাকারী কোনো ওষুধই মেলে না। বেশির ভাগ বাগানেই ভালো ডাক্তার, ওষুধ ও উন্নত চিকিৎসা নেই। নিজ খরচে শহরে গিয়ে চিকিৎসা করাতে হয়। কেউ কেউ তা পারলেও বেশির ভাগ শ্রমিকই তা পারেন না।
চা শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সেডের গবেষক শেখর কান্তি রায় বলেন, 'চা বাগানগুলোতে শ্রমিকদের নূ্যনতম চিকিৎসাসেবা খুবই অপ্রতুল। একটি-দুটি বাগান বাদে বেশির ভাগ বাগানেই স্বাস্থ্যসেবার সুবিধা নেই বললেই চলে।'
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক ও চা শ্রমিক নেতা বিজয় হাজরা বলেন, 'শ্রমিকদের বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মজুরি প্রভৃতি বিষয়ের সঙ্গে উৎপাদনশীলতার প্রশ্ন জড়িত। বাংলাদেশে একজন শ্রমিক দৈনিক গড়ে ২৫-৩০ কেজি পাতা তুলতে পারেন। কর্মপরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত অবস্থা উন্নত হলে ৫০ থেকে ৫৫ কেজি বা তারও বেশি পাতা তোলা সম্ভব।'
চা শ্রমিকদের দৈনিক সর্বোচ্চ মজুরি প্রথম শ্রেণীর বাগানের জন্য ৪৮ টাকা, দ্বিতীয় শ্রেণীর ৪৬ টাকা এবং তৃতীয় শ্রেণীর বাগানের জন্য ৪৫ টাকা। এ ছাড়া নামমাত্র মূল্যের কিছু সুবিধাদি রয়েছে। বাংলাদেশে প্রায় এক লাখ ১৮ হাজার চা শ্রমিকের অর্ধেকটা অংশ নারী। এই নারী শ্রমিকরা চা শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার কাজে নিরলস শ্রম বিলিয়ে যাচ্ছেন, অথচ তাঁদের এই শ্রমের সঠিক মূল্য পাচ্ছেন না।
বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন
No comments