বিদ্যালয়ে ১০ পরিবারের বসবাস by সাধন বিকাশ চাকমা

রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের বাঘাইহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাতটি কক্ষ দখল করে বসবাস করছে ১০টি পরিবার। এতে শ্রেণীকক্ষ সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাহত হচ্ছে সাড়ে ৪০০ শিক্ষার্থীর পাঠদান।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের মাঠে রান্নার চুলা গড়ে উঠেছে।


নারীরা রান্না করছেন, পাশে শিক্ষার্থীরা জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান জানাচ্ছে। বিদ্যালয়ের দুটি ভবনের মধ্যে একটি ভবনের সাতটি কক্ষে ১০টি পরিবার বসবাস করে। কক্ষের বেঞ্চগুলো একত্র করে খাট বানানো হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিদ্যালয়ে ঢুকে মাঠে ও বারান্দার ময়লা ও পায়খানা পরিষ্কার করতে হয়। বিদ্যালয়ের তিনটি শৌচাগার ব্যবহার করা যাচ্ছে না। বসবাসকারী লোকজনের রান্নার ধোঁয়ায় ক্লাস করা যায় না।
শিক্ষকেরা অভিযোগ করেন, প্রতিদিন বিদ্যালয়ের বারান্দা ও মাঠের ময়লা পরিষ্কার করতে হয়। বসবাসরত লোকজন যেখানে-সেখানে মলমূত্র ত্যাগ করে। দুটি ভবনের মধ্যে একটি ভবন তাঁদের দখলে। আরেক ভবনের দুটি কক্ষে ও একটি ছাপরা ঘরের দুটি কক্ষে সাড়ে চার শতাধিক শিক্ষার্থীর গাদাগাদিভাবে ক্লাস করতে হচ্ছে। দখল করা ভবনের বারান্দা ও কক্ষে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ক্লাস চলাকালীন তাদের চিৎকারে সমস্যা হচ্ছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে আদিবাসী-বাঙালি সংঘর্ষের পর ওই বিদ্যালয়ে ২৬টি পরিবার আশ্রয় নেয়। পরে ১৬টি পরিবার বিভিন্ন এলাকায় চলে গেলেও এখানো ১০টি পরিবার বসবাস করছে।
বিদ্যালয়ে বসবাসকারী লোকজন অভিযোগ করেন, শিক্ষকেরা কথা বলতে নিষেধ করেন। ইচ্ছেমতো চলাচল করা যায় না। রান্না করার মতো ঘর নেই। বিদ্যালয়ের মাঠে-বারান্দায় রান্না করতে হয়।
পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী দয়া রাণী ও আশিকা চাকমা জানায়, শিশু ও বসবাসকারী লোকজনের হট্টগোলে ক্লাস করা যায় না। পরিবারের মধ্যে ঝগড়া হয়।
বসবাসকারী মো. আবদুল হাই বলেন, মা-বোন নিয়ে স্কুলে থাকা কঠিন। বাধ্য হয়ে থাকতে হচ্ছে। সরকার যদি থাকার ব্যবস্থা করে দেয়, তা হলে চলে যাব।
প্রধান শিক্ষক মো. তাহের জানান, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৫০। কক্ষের অভাবে অনেক শিক্ষার্থীর ক্লাস নিতে পারছি না। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। তারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুজিত মিত্র বলেন, উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ওই স্কুলে। গত দুবছর ধরে বিদ্যালয়ে বসতি গড়ে ওঠায় পাঠদানের কোনো পরিবেশ নেই। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে, কোনো ফল হয়নি।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুদর্শন চাকমা জানান, বাঘাইহাটের সহিংসতার পর ২৬টি পরিবার ওই বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়। এর মধ্যে অনেক পরিবার বিভিন্ন এলাকায় চলে গেছে। আরও ১০টি পরিবার রয়েছে। বিদ্যালয় ভবন ছেড়ে দেওয়ার জন্য আবারও অনুরোধ করা হবে। ছেড়ে না দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.