আমদানি খাতে অনিয়মের শীর্ষে ‘বিপি শিট’! by মাসুদ মিলাদ

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ‘বিপি শিট’ (ঢেউটিন ও নানা ধরনের ধাতব পাত তৈরির মধ্যবর্তী কাঁচামাল) জাতীয় পণ্য আমদানিতে সবচেয়ে বেশি অনিয়ম শনাক্ত করেছে শুল্ক কর্তৃপক্ষ। গত এক মাসে শুধু এজাতীয় পণ্যের ৫৯টি আমদানি-চালানে অনিয়ম ধরা পড়েছে। এসব চালানের বিপরীতে প্রায় পৌনে আট কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব ও জরিমানা আদায় করা হচ্ছে।


কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা জানান, যেসব পণ্যের আমদানি-চালানে অনিয়ম ধরা পড়ে, তার মধ্যে প্রায় ৪৮ শতাংশ পণ্যই হচ্ছে বিপি শিট।
কর্মকর্তারা জানান, উন্নত মানের বিপি শিটকে সাধারণ মানের বিপি শিট ঘোষণা দিয়ে আমদানির মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকির ঘটনা বেশি ঘটছে। এ ছাড়া পণ্যের মূল্য ও ওজন কম ঘোষণার মাধ্যমেও ফাঁকি দিচ্ছেন আমদানিকারকেরা। বাণিজ্যিক আমদানির ক্ষেত্রে এসব অনিয়ম হয় বলে কর্মকর্তারা জানান।
এ প্রসঙ্গে কাস্টম হাউসের কমিশনার মারুফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, একক খাত হিসেবে বিপি শিট জাতীয় পণ্যে সবচেয়ে বেশি অনিয়ম শনাক্ত করা হয়েছে। শুল্ক ফাঁকির প্রবণতা কমিয়ে আনতে ২০০ শতাংশ জরিমানা করা হচ্ছে। অর্থাৎ কারও বিরুদ্ধে এক টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁকে দুই টাকা জরিমানা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ঢেউটিনসহ বিভিন্ন পাত তৈরির মধ্যবর্তী কাঁচামাল হলো বিপি শিট।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ধাতব পাত ও ঢেউটিন তৈরির কাঁচামালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় বিপি শিট। ২০১০-১১ অর্থবছরে এজাতীয় সব পণ্য আমদানিতে ব্যয় হয় প্রায় ৩৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে শুধু বিপি শিট আমদানিতে ব্যয় হয় ৩৩৬ দশমিক ৮৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ব্যবসায়ীরা জানান, বাণিজ্যিক আমদানিকারকেরা বিপি শিট আমদানি করে ছোটখাটো কারখানায় নিম্নমানের ঢেউটিন তৈরি করেন। শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার কারণে তাঁদের উৎপাদন খরচও কম পড়ে। এ কারণে বড় আকারের বিনিয়োগে স্থাপন করা দেশীয় শিল্প কারখানাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এ প্রসঙ্গে এস আলম গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ প্রথম আলোকে বলেন, বাণিজ্যিক আমদানিকারকেরা অপঘোষণার মাধ্যমে পণ্য আমদানি করায় দেশীয় বড় শিল্প কারখানাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে শুল্ক কর্তৃপক্ষ অনিয়মের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করায় এবং অনিয়মের দায়ে মোটা অঙ্কের জরিমানা আদায় করায় তাঁরা আশান্বিত হয়েছেন। দেশীয় শিল্পের জন্য এটি ইতিবাচক হবে বলে মনে করেন তিনি।
কাস্টম হাউসের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে এ ধরনের পণ্য আমদানির ১৬৭টি চালানে অনিয়ম শনাক্ত করা হয়েছে। এসব চালানের আমদানিকারকদের কাছ থেকে প্রায় ২২ কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব ও জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফাঁকির ঘটনা ধরা পড়ে গত জানুয়ারি মাসে। এ মাসে ৫৯টি চালান থেকে দুই কোটি ৬০ লাখ টাকা বাড়তি রাজস্ব আদায় হয়। এ ছাড়া এসব চালানে জরিমানা আদায় করা হয় প্রায় পাঁচ কোটি ২০ লাখ টাকা।
কাস্টম হাউস সূত্র জানায়, অনিয়ম বেশি হওয়ায় শুল্কায়নের আগে ও পরে এই পণ্যটি এখন সরেজমিনে পরীক্ষা করে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনারের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি কমিটির উপস্থিতিতে এই পণ্য ছাড় দেওয়া হয়।
কাস্টম হাউসের একজন শুল্ক কর্মকর্তা জানান, শুল্ক আইন, ১৯৬৯-এর বিধি-২১ অনুযায়ী, সরেজমিনে কায়িক পরীক্ষা করা হলে কায়িক পরীক্ষার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শুল্কায়নের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রাক-জাহাজীকরণ পরিদর্শন সংস্থার প্রতিবেদনের (সিআরএফ) ভিত্তিতে শুল্কায়নের সুযোগ নেই।

No comments

Powered by Blogger.