রবার্ট ফিস্ক-সিরিয়া : প্রকৃত অবস্থা বেনগাজির মতো নয়
প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ এখনই যে ক্ষমতা ছেড়ে সরে যাচ্ছেন, তা নয়। অন্তত এখন পর্যন্ত তা নয়। হয়তো আরো বড় একটি সময়েও যাবেন না। মধ্যপ্রাচ্যের সংবাদপত্রগুলো ভরে আছে একই খবর দিয়ে যে আসাদের জন্য এটা লিবিয়ার সেই বেনগাজির পরিস্থিতি কি না। একই কথা ওয়াশিংটন, লন্ডন এবং প্যারিসের পত্রিকাগুলোতেও লেখা হচ্ছে।
কিন্তু এ অঞ্চলের অল্প কিছু মানুষ বুঝতে পারছেন, আমাদের পশ্চিমারা বিষয়টি কিভাবে ভুল বুঝছে। পুরনো দেখাটাই বারবার ফিরে আসে : মিসরের ঘটনা তিউনিসিয়ার মতো ছিল না, বাহরাইনের ঘটনা মিসরের মতো ছিল না, ইয়েমেন বাহরাইনের মতো ছিল না, লিবিয়ার ঘটনা ইয়েমেনের মতো ছিল না এবং এখন অবশ্যই সিরিয়ার ঘটনাবলি লিবিয়ার মতো নয়।
কিন্তু পশ্চিমে যে এর উল্টো স্রোত বইছে, তা দেখা খুব কঠিন কিছু নয়। হোম থেকে অসংখ্য ছবির স্রোত, সিরিয়ার সংগঠন ফ্রি সিরিয়ান আর্মির বক্তব্য এবং হিলারি ক্লিনটন গংয়ের হম্বিতম্বি ও সুখ-ভাবনা যে রাশিয়া সিরীয়দের দুর্ভোগের ক্ষেত্রে অবুঝ হয়ে উঠতে পারে- ঠিক আমেরিকা যেমন আর যা-ই হোক, ফিলিস্তিনিদের ক্ষেত্রে থেকেছে। এই যেমন, গাজায় এক হাজার ৩০০ মানুষ ইসরায়েলিদের হাতে নিহত হয়েছে। কিন্তু এসব চিন্তার সঙ্গে বাস্তবতার তেমন মিল নেই। কেন রাশিয়া হোম শহরের মানুষের চিন্তা করবে? তারা কি চেচনিয়ায় মানুষ নিহত হওয়া নিয়ে চিন্তা করেছে?
অন্যভাবে বিষয়টি দেখুন।
হ্যাঁ, আমরা সবাই জানি, সিরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। তারা লেবাননেও তাই-ই করেছে। হ্যাঁ, আমরা সবাই জানি, সিরিয়ার শাসক নির্বাচিত শাসক নন। আমরা দুর্নীতির কথা জানি। আমরা সবাই জাতিসংঘের অবমাননাও দেখেছি সপ্তাহান্তে। তার পরও হিলারি ক্লিনটন কেন আশা করবেন, লিবিয়ার 'নো ফ্লাই জোন' ব্যবস্থার কারণে শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তন আসার পর রাশিয়া তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে?
সিরিয়ায় আলাউয়িত (শিয়াদের একটি সম্প্রদায়) নেতৃত্বাধীন সরকার উৎখাতের অর্থ হলো, এটা শিয়া ইরানের আত্মার একটি তরবারিতে পরিণত হবে। রাজকীয় প্রাসাদের জানালা দিয়ে প্রাচীন দামেস্ক শহরের ওপর দিয়ে বর্তমান মধ্যপ্রাচ্যের দিকে তাকিয়ে দেখুন। সত্যিই উপসাগর সিরিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সত্যিই তুরস্ক সিরিয়ার বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু পূর্বের দিকে তাকিয়ে বাশার কী দেখতে পান? বিশ্বস্ত ইরান তাঁর সঙ্গে আছে। আরব বিশ্বে ইরানের নতুন বিশ্বস্ত বন্ধু ইরাকও নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। আর পশ্চিম পাশে অনুগত লেবানন নিষেধাজ্ঞাবিরোধী। এভাবেই আফগান সীমান্ত থেকে শুরু করে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত আসাদের রয়েছে স্ট্রেইট লাইন জোট। আর কিছু না হোক, এই জোট অর্থনৈতিক ধস ঠেকাতে পারবে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো- ভয়ানক ইরান, অবিশ্বাসী ইরাক, পাপাচারী সিরিয়া এবং আতঙ্কজনক লেবানন সম্পর্কে বক্তব্য, কাহিনী এমনভাবে বর্ষিত হচ্ছে যে এই কাহিনীকে মুছে ফেলা অসম্ভব। ফলে মনে হচ্ছে, আসাদ বুঝি একা।
এটা আসাদের প্রশংসা বা তাঁর অব্যাহতভাবে ক্ষমতায় থাকার প্রতি সমর্থন করা নয়। এটা হলো বাস্তবতা। তুর্কিরা ক্লিনটনের মতোই হম্বিতম্বি করে উত্তর সিরিয়ায় কর্ডন স্যানিটেয়ার (ফ্রেজ-আদর্শ প্রচারকে বাধাগ্রস্ত) করেনি। সিরিয়াবিরোধীদের ডাকে বাদশাহ আবদুল্লাহও দক্ষিণে কর্ডন স্যানিটেয়ার করেননি। অপ্রাসঙ্গিকভাবে আমি আবারও উল্লেখ করছি, একমাত্র ইসরায়েল চুপ করে আছে।
যতক্ষণ পর্যন্ত সিরিয়া ইরাক ও ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য করতে পারবে, ততক্ষণ অবশ্যই লেবাননের সঙ্গে বাণিজ্য করতে পারবে। ইরানের শিয়া সম্প্রদায়, ইরাকের সংখ্যাগুরু শিয়া সম্প্রদায় এবং সংখ্যাগুরু না হয়েও সিরিয়ার শিয়া শাসক সম্প্রদায় এবং সংখ্যাগুরু না হয়েও লেবাননের বিশাল শিয়া সম্প্রদায় গড়িমসি করে হলেও আসাদের পক্ষে থাকবে। এ কারণেই আমার ভয়, কেকের মতো নরম প্রতিরোধ টুকরো টুকরো হয়ে পড়বে। খেপাটে গাদ্দাফির ছিল শক্তিশালী শত্রু এবং ন্যাটোর বিরোধিতা। আর আসাদের শত্রুদের হাতে রয়েছে কেবল কালাশনিকভ রাইফেল। আসাদের হাতে রয়েছে দামেস্ত এবং আলেপ্পোর মতো গুরুত্বপূর্ণ শহর। তাঁর প্রধান সেনা ইউনিটগুলো স্বপক্ষ ত্যাগ করেনি।
ভালো মানুষদের মধ্যে খারাপ মানুষও থাকে। লিবিয়ার ক্ষেত্রে আমরা তা ভুলে গিয়েছি, যখন ভালো মানুষগুলো তাদের স্বপক্ষ ত্যাগ করা আর্মি কমান্ডারদের এবং বন্দিদের নির্যাতন করে হত্যা করেছে। ও হ্যাঁ, আরেকটি কথা, রাজকীয় ব্রিটিশ নেভি লিবিয়ার বেনগাজি শহরকে ব্যবহার করতে পেরেছিল। এ ক্ষেত্রে তারতাউসকে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। কারণ রাশিয়ার নৌবাহিনী সেখানে অবস্থান করছে।
লেখক : ব্রিটেনের দ্য ইনডিপেনডেন্ট পত্রিকার মধ্যপ্রাচ্য প্রতিনিধি। ইনডিপেনডেন্ট থেকে ভাষান্তর : মহসীন হাবিব
কিন্তু পশ্চিমে যে এর উল্টো স্রোত বইছে, তা দেখা খুব কঠিন কিছু নয়। হোম থেকে অসংখ্য ছবির স্রোত, সিরিয়ার সংগঠন ফ্রি সিরিয়ান আর্মির বক্তব্য এবং হিলারি ক্লিনটন গংয়ের হম্বিতম্বি ও সুখ-ভাবনা যে রাশিয়া সিরীয়দের দুর্ভোগের ক্ষেত্রে অবুঝ হয়ে উঠতে পারে- ঠিক আমেরিকা যেমন আর যা-ই হোক, ফিলিস্তিনিদের ক্ষেত্রে থেকেছে। এই যেমন, গাজায় এক হাজার ৩০০ মানুষ ইসরায়েলিদের হাতে নিহত হয়েছে। কিন্তু এসব চিন্তার সঙ্গে বাস্তবতার তেমন মিল নেই। কেন রাশিয়া হোম শহরের মানুষের চিন্তা করবে? তারা কি চেচনিয়ায় মানুষ নিহত হওয়া নিয়ে চিন্তা করেছে?
অন্যভাবে বিষয়টি দেখুন।
হ্যাঁ, আমরা সবাই জানি, সিরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। তারা লেবাননেও তাই-ই করেছে। হ্যাঁ, আমরা সবাই জানি, সিরিয়ার শাসক নির্বাচিত শাসক নন। আমরা দুর্নীতির কথা জানি। আমরা সবাই জাতিসংঘের অবমাননাও দেখেছি সপ্তাহান্তে। তার পরও হিলারি ক্লিনটন কেন আশা করবেন, লিবিয়ার 'নো ফ্লাই জোন' ব্যবস্থার কারণে শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তন আসার পর রাশিয়া তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে?
সিরিয়ায় আলাউয়িত (শিয়াদের একটি সম্প্রদায়) নেতৃত্বাধীন সরকার উৎখাতের অর্থ হলো, এটা শিয়া ইরানের আত্মার একটি তরবারিতে পরিণত হবে। রাজকীয় প্রাসাদের জানালা দিয়ে প্রাচীন দামেস্ক শহরের ওপর দিয়ে বর্তমান মধ্যপ্রাচ্যের দিকে তাকিয়ে দেখুন। সত্যিই উপসাগর সিরিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সত্যিই তুরস্ক সিরিয়ার বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু পূর্বের দিকে তাকিয়ে বাশার কী দেখতে পান? বিশ্বস্ত ইরান তাঁর সঙ্গে আছে। আরব বিশ্বে ইরানের নতুন বিশ্বস্ত বন্ধু ইরাকও নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। আর পশ্চিম পাশে অনুগত লেবানন নিষেধাজ্ঞাবিরোধী। এভাবেই আফগান সীমান্ত থেকে শুরু করে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত আসাদের রয়েছে স্ট্রেইট লাইন জোট। আর কিছু না হোক, এই জোট অর্থনৈতিক ধস ঠেকাতে পারবে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো- ভয়ানক ইরান, অবিশ্বাসী ইরাক, পাপাচারী সিরিয়া এবং আতঙ্কজনক লেবানন সম্পর্কে বক্তব্য, কাহিনী এমনভাবে বর্ষিত হচ্ছে যে এই কাহিনীকে মুছে ফেলা অসম্ভব। ফলে মনে হচ্ছে, আসাদ বুঝি একা।
এটা আসাদের প্রশংসা বা তাঁর অব্যাহতভাবে ক্ষমতায় থাকার প্রতি সমর্থন করা নয়। এটা হলো বাস্তবতা। তুর্কিরা ক্লিনটনের মতোই হম্বিতম্বি করে উত্তর সিরিয়ায় কর্ডন স্যানিটেয়ার (ফ্রেজ-আদর্শ প্রচারকে বাধাগ্রস্ত) করেনি। সিরিয়াবিরোধীদের ডাকে বাদশাহ আবদুল্লাহও দক্ষিণে কর্ডন স্যানিটেয়ার করেননি। অপ্রাসঙ্গিকভাবে আমি আবারও উল্লেখ করছি, একমাত্র ইসরায়েল চুপ করে আছে।
যতক্ষণ পর্যন্ত সিরিয়া ইরাক ও ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য করতে পারবে, ততক্ষণ অবশ্যই লেবাননের সঙ্গে বাণিজ্য করতে পারবে। ইরানের শিয়া সম্প্রদায়, ইরাকের সংখ্যাগুরু শিয়া সম্প্রদায় এবং সংখ্যাগুরু না হয়েও সিরিয়ার শিয়া শাসক সম্প্রদায় এবং সংখ্যাগুরু না হয়েও লেবাননের বিশাল শিয়া সম্প্রদায় গড়িমসি করে হলেও আসাদের পক্ষে থাকবে। এ কারণেই আমার ভয়, কেকের মতো নরম প্রতিরোধ টুকরো টুকরো হয়ে পড়বে। খেপাটে গাদ্দাফির ছিল শক্তিশালী শত্রু এবং ন্যাটোর বিরোধিতা। আর আসাদের শত্রুদের হাতে রয়েছে কেবল কালাশনিকভ রাইফেল। আসাদের হাতে রয়েছে দামেস্ত এবং আলেপ্পোর মতো গুরুত্বপূর্ণ শহর। তাঁর প্রধান সেনা ইউনিটগুলো স্বপক্ষ ত্যাগ করেনি।
ভালো মানুষদের মধ্যে খারাপ মানুষও থাকে। লিবিয়ার ক্ষেত্রে আমরা তা ভুলে গিয়েছি, যখন ভালো মানুষগুলো তাদের স্বপক্ষ ত্যাগ করা আর্মি কমান্ডারদের এবং বন্দিদের নির্যাতন করে হত্যা করেছে। ও হ্যাঁ, আরেকটি কথা, রাজকীয় ব্রিটিশ নেভি লিবিয়ার বেনগাজি শহরকে ব্যবহার করতে পেরেছিল। এ ক্ষেত্রে তারতাউসকে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। কারণ রাশিয়ার নৌবাহিনী সেখানে অবস্থান করছে।
লেখক : ব্রিটেনের দ্য ইনডিপেনডেন্ট পত্রিকার মধ্যপ্রাচ্য প্রতিনিধি। ইনডিপেনডেন্ট থেকে ভাষান্তর : মহসীন হাবিব
No comments