অনুমোদনহীন নৌযান-নিরাপদ করতে হবে আমাদের নৌপথ

বর্ষা মৌসুম আসা মানেই দেশে নৌ দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়া। দেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথে যাত্রীবাহী নৌযানের দুর্ঘটনা বেড়ে যায় বর্ষা মৌসুমে। কিছুদিন আগে রাজধানীর সদরঘাটে ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটেছে। অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী যাত্রীবাহী নৌযান ছাড়াও রয়েছে মালামাল পরিবহনকারী নৌযান।


যাত্রীবাহী অনেক নৌযানের যেমন ফিটনেস সার্টিফিকেটসহ চলাচলের অনুমোদন নেই, তেমনি মালামাল পরিবহনকারী অনেক নৌযানেরও চলাচলের অনুমোদন নেই। এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, দেশের নদী ও সমুদ্রে চলাচলকারী লাইটারেজ জাহাজ, পণ্যবাহী কোস্টার জাহাজ, জ্বালানি ও ভোজ্য তেল বহনকারী কোস্টাল ট্যাংকারগুলোর মধ্যে প্রায় এক হাজারের অনুমোদন নেই। কিন্তু অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও প্রতিমাসে এসব জাহাজ সমুদ্র অতিক্রম করছে। সমুদ্র অতিক্রম করতে গিয়ে এসব জাহাজকে জরিমানাও গুনতে হচ্ছে। ফিটনেস সমস্যাসহ বিভিন্ন মামলায় জেল-জরিমানা ও শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে নৌযানের মাস্টার ও শ্রমিকদের। এর পাশাপাশি ঘটছে দুর্ঘটনা, প্রাণহানি ও সম্পদহানি।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, আমদানীকৃত কিছু ছোট জাহাজের ফিটনেস সার্টিফিকেটসহ চলাচলের অনুমতি দেয় মেরিন মার্কেন্টাইল ডিপার্টমেন্ট (এমএমডি) মার্চেন্ট শিপিং অর্ডিন্যান্সের (এমএমও) আওতায়। অন্যদিকে মালিকদের চাহিদা অনুযায়ী বেশির ভাগ ছোট জাহাজ ও নৌযান তৈরি হয় ঢাকা ও চট্টগ্রামের শিপইয়ার্ডগুলোতে। এই জাহাজ ও নৌযানগুলোকে ফিটনেস সার্টিফিকেট ও চলাচলের অনুমোদন দেয় নৌ পরিবহন অধিদপ্তর ইনল্যান্ড শিপিং অর্ডিন্যান্সের (আইএসও) আওতায়। দেশে তৈরি জাহাজ ও নৌযানগুলোতে খরচ বাঁচানোর জন্য অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয় না। যথাযথ শর্ত পূরণ না করায় এসব নৌযানের অনুমোদন পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দরকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন নদীবন্দরের মধ্যে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ ছোট জাহাজ ও নৌযান চলাচল করে। এগুলোর মধ্যে সমুদ্র অতিক্রম ও বন্দরের বহির্নোঙরে গিয়ে পণ্য পরিবহনের অনুমোদন রয়েছে মাত্র ২০০ থেকে ২৫০টি নৌযান ও জাহাজের। অন্যদিকে সারা দেশে ২০ হাজারের মতো ছোট নৌযান ও জাহাজ চলাচল করে। ফিটনেস সার্টিফিকেটসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়াই নৌপথে চলছে এসব নৌযান। এসব নৌযানে চলাচল করা যেমন ঝুঁকিপূর্ণ, তেমনি মালামাল পরিবহনও অনিরাপদ। কিন্তু কিছু মালিকের অধিক মুনাফার লোভ ফিটনেস সার্টিফিকেট ও অনুমোদনবিহীন এসব নৌযানকে নৌপথে চলতে বাধ্য করছে।
আমাদের নৌপথ যে নিরাপদ নয়, সে কথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। নৌপথে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ফিটনেসবিহীন ও অননুমোদিত নৌযান চলাচল বন্ধ করতে হবে। এটা বন্ধ করতে না পারলে নৌ দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা যাবে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে আরো কড়া ভূমিকা নিতে হবে। ফিটনেস সার্টিফিকেটবিহীন নৌযানকে নৌপথে চলাচল করতে দেওয়া যাবে না। আমাদের নৌপথ নিরাপদ করতে এর বিকল্প নেই।

No comments

Powered by Blogger.