সংসদে প্রশ্নোত্তর-বেহাল স্বাস্থ্যসেবা তোপের মুখে স্বাস্থ্যমন্ত্রী

দেশব্যাপী স্বাস্থ্যসেবার বেহাল দশা। চিকিৎসক নেই, চিকিৎসা নেই। এ অভিযোগ কয়েকজন সাংসদের। আর এ নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে সাংসদদের তোপের মুখে পড়েন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক।
সাংসদেরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মন্ত্রণালয়ের অব্যবস্থাপনার কারণে দেশের বেশির ভাগ উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক নেই, যন্ত্রপাতি নেই।


অ্যাম্বুলেন্স আছে তো চালক নেই। চালক আছে তো গাড়ি নেই। যন্ত্রপাতি আছে তো অপারেটর নেই। আবার অপারেটর আছে তো যন্ত্রপাতি নেই।
প্রশ্নবাণে জর্জরিত স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে মন্ত্রণালয়ের আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই। চিকিৎসক-সংকট রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও শূন্যপদ পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সদস্য তোফায়েল আহমেদ জানান, তাঁর জেলা ভোলায় সব মিলিয়ে ৮০ জন চিকিৎসকের পদের বিপরীতে মাত্র ২০ জন চিকিৎসক আছেন। এ বিষয়ে তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ৭১ বিধিতে চিঠি দেন। কিন্তু চিঠি দেওয়ার পরপরই ভোলা থেকে আরও চিকিৎসক সরিয়ে নেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘এখন প্রশ্ন করার ফলে না জানি আরও ডাক্তার তুলে নেওয়া হয়! তিন বছরে নতুন অনেকগুলো মেডিকেল কলেজের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কারা, কীভাবে এগুলোর অনুমোদন পেয়েছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।’
জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে সঠিকভাবে চিকিৎসাসেবা দিতে হলে আরও ছয়-সাত হাজার ডাক্তার প্রয়োজন। তবে এখন তা দেওয়া সম্ভব নয়। পুতুলের মতো ডাক্তার বানানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া যায়। এ নিয়ে জটিলতায় আছি। এখন বিকল্প রয়েছে অ্যাডহকের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া।’
মন্ত্রী আরও বলেন, অনেক চিকিৎসক বিদেশে পড়তে গিয়ে বিভিন্ন তদবির করে থেকে যান। গ্রামে না গিয়ে বিদেশে শিক্ষা সফরে চলে যান। ফলে বিভিন্ন পদ শূন্য হয়ে রয়েছে। তিনি জানান, তাঁর নিজের এলাকায়ও ৬৯টি চিকিৎসকের পদ খালি।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সম্পূরক প্রশ্নে বলেন, দিনাজপুর জেলার স্বাস্থ্যব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়েছে। অ্যাডহক ভিত্তিতে যাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাঁদেরও বদলি করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও নেই।
জবাবে মন্ত্রী বলেন, গত দুই বছরে বদলি-প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। যেহেতু সাত-আট হাজার চিকিৎসকের পদ খালি, ফলে কোনো না কোনো জায়গায় খালি তো থাকবেই।
মুহিবুর রহমান বলেন, ছয় হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সেই হিসাবে প্রতি নির্বাচনী এলাকায় ২০ জন চিকিৎসক দেওয়ার কথা। সেসব চিকিৎসক কোথায়?
মারুফ সাকলাইন তাঁর নির্বাচনী এলাকার দুটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক-সংকটের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘এ নিয়ে আমি অন্তত ১০০ বার মন্ত্রণালয়ে গিয়েছি। ডিও লেটার লিখেছি। তার পরও কাজ হয়নি। তাই মন্ত্রীর কাছে আমার প্রশ্ন, কবে আমার এলাকায় ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হবে।’ এ সময় অন্য সাংসদেরা টেবিল চাপড়ে তাঁকে সমর্থন জানান।
মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির হাফিজউদ্দিন আহমেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মন্ত্রী বলছেন দেশের এখানে-ওখানে নতুন হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। এসবের প্রয়োজন নেই। বরং যেগুলো আছে, সেগুলোকে কীভাবে ভালোভাবে পরিচালনা করা যায়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। যন্ত্রপাতি না থাকলে, চিকিৎসক না থাকলে হাসপাতালের সংখ্যা আর শয্যা বাড়িয়ে লাভ কী?
জাহিদ মালেক বলেন, মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতালে ৮০ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও সব মিলিয়ে আছেন মাত্র ২০ জন। তা ছাড়া কোনো আধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকায় জেলার রোগীদের হরহামেশাই ঢাকায় ছুটে আসতে হচ্ছে। জাসদের শাহ জিকরুল আহমেদ বলেন, তাঁর এলাকার হাসপাতালের দুটি অ্যাম্বুলেন্সের দুটিই অকেজো।
প্রশ্নোত্তর পর্বে আওয়ামী লীগের এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, এক সন্তানের দম্পতিদের বিশেষ পুরস্কার দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই সরকারের। তবে চলতি অর্থবছর থেকে জন্মনিয়ন্ত্রণে স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণকারী নারী ও পুরুষদের পুরস্কার দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
সবশেষে সংসদের অধিবেশন আজ বুধবার বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.