প্রকল্পের চাপে এডিপি-পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম অপরিকল্পিত!

যেকোনো কাজের সাফল্য নির্ভর করে এর যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়নের ওপর। পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম চলছে অপরিকল্পিতভাবে- এমন সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২, একটি সহযোগী দৈনিকে। একদিকে পরিকল্পনা কমিশনের নেই কোনো সঠিক পরিকল্পনা, অন্যদিকে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) যুক্ত হয়েছে প্রকল্পের পাহাড়।


বিদ্যমান এই বিপরীত পরিস্থিতির কারণে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয়েছে হ-য-ব-র-ল অবস্থার। এমতাবস্থায় দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়াটাই খুব স্বাভাবিক এবং হচ্ছেও তা-ই।
ওই প্রতিবেদনে প্রকাশ, উন্নয়ন প্রকল্পের সংখ্যা ইতিমধ্যে ১ হাজার ২০০ ছাড়িয়ে গেছে এবং এসব প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়ন করতে গেলে চলতি অর্থবছরেই বরাদ্দ প্রয়োজন প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। কিন্তু চলতি অর্থবছরে এডিপির মোট বরাদ্দ ৪৬ হাজার কোটি টাকা, যা কাটছাঁট করে আরো কমানো হচ্ছে! যেখানে গৃহীত প্রকল্পের বিপরীতে মোট বরাদ্দ অর্ধেকেরও কম, সেখানে যদি আবার বরাদ্দ কাটছাঁট করা হয়, তাহলে পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকতে পারে, তাও সহজেই অনুমেয়। বরাদ্দকৃতের অর্থের সংগতি বেড়ে প্রকল্প প্রণয়নের ফলে বিপুলসংখ্যক প্রকল্পে অর্থ জোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। প্রকল্পের চাপে পড়েছে এডিপি এবং স্বাভাবিক কারণেই দেশের উন্নয়ন কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে বিশৃঙ্খলা। দেশের উন্নয়ন কার্যক্রমে এমন চিত্র যে এবারই প্রথম দেখা দিল, তাও নয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের নাম নেই অথচ অতিমাত্রায় প্রকল্প অনুমোদনের প্রবণতা সব সময়ই প্রকট। এই বৈপরীত্য অদূরদর্শিতা, অদক্ষতা এবং মিথ্যা রাজনৈতিক অঙ্গীকার-প্রতিশ্রুতিরই প্রতিফলন, যা কোনোভাবেই মঙ্গলজনক নয়। এডিপি বরাদ্দ বিবেচনায় রেখে প্রয়োজন ও গুরুত্বের ভিত্তিতে অগ্রাধিকার প্রকল্প বাছাইয়ের ক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিশন দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেনি- বিদ্যমান চিত্র এরই সাক্ষ্যবহ।
পরিকল্পনা কমিশনের কাজের ক্ষেত্র বিস্তৃত। কিন্তু তারা যেন তা ভুলতে বসেছে। কমিশনের মূল্যায়ন কমিটি সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলো পর্যালোচনা করে প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা ও বাস্তবতার নিরিখে সিদ্ধান্ত নেবে, এটি তাদের দায়িত্ব। তাদের অনুমোদনপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলো চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য একনেক সভায় পাঠানোর কথা থাকলেও এ ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। মন্ত্রণালয়গুলো কমিশনে যেসব প্রকল্প পাঠাচ্ছে, সেসব যাচাই-বাছাই না করেই তারা অনুমোদন দিয়ে একনেকে পাঠাচ্ছে! এটি নিয়মতান্ত্রিকতার স্পষ্ট ব্যত্যয় এবং এভাবে যদি চলতে থাকে, তাহলে দেশের পুরো উন্নয়ন কার্যক্রম কঠিন প্রশ্নের মুখে পড়তে বাধ্য। আমাদের সম্পদ খুব সীমিত। ইচ্ছা করলেই যখন-তখন এডিপির বরাদ্দ বাড়ানো সম্ভব নয়। নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে না পারলে ব্যয় বেড়ে যায় এবং এর বিরূপ প্রভাব হয় বহুমুখী। প্রকল্প বাস্তবায়নে যদি চাহিদামতো অর্থ ছাড় করা না যায়, তাহলে প্রকল্প বাস্তবায়ন তো দুরূহ হবেই, সঙ্গে সঙ্গে উন্নয়ন কার্যক্রমও স্থবির হতে বাধ্য। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে অতিগুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি আমলে নেওয়া উচিত। এ ধরনের বিশঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির ফল কখনোই ভালো হতে পারে না; উপরন্তু এর নেতিবাচক প্রভাবে অনেক কিছুই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে, যা কারোরই কাম্য নয়।

No comments

Powered by Blogger.