সংসদে আলোচনা করতে সমস্যা কোথায়?-শেয়ারবাজার বিপর্যয়

সোমবার জাতীয় সংসদে মহাজোটের কয়েকজন সাংসদ যখন শেয়ারবাজার বিপর্যয়ের বিষয়টি নিয়ে এক দিনের আলোচনার সুযোগ রাখতে স্পিকারের প্রতি অনুরোধ জানান, তার কয়েক ঘণ্টা আগে মতিঝিলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সামনের সড়কে শেয়ারের দরপতনের প্রতিবাদে মিছিল করার প্রস্তুতিকালে নয়জন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। গত ২৩ জানুয়ারিও আটজন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।


কিন্তু শেয়ারবাজারের বিপর্যয়ে দিশাহারা হয়ে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা যখন আত্মহত্যা করার দিকে ঝুঁকেছেন, তখন বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীদের গ্রেপ্তার করা বা আটক রাখার মতো দমনপীড়নমূলক পদক্ষেপ মূল সমস্যা সমাধানে ফলপ্রসূ হবে না।
শেয়ারবাজারের সমস্যাটি যে জাতীয় সংসদে আলোচনার মতো জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে দেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে, কারসাজির অভিযোগ ব্যাপক প্রচারিত, বিপুলসংখ্যক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী সর্বস্বান্ত হয়ে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ; এমনকি দুজন আত্মহত্যা করেছেন। বিশ্বব্যাপী প্রচারিত মার্কিন সাময়িকী টাইম সম্প্রতি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার সম্পর্কে এক প্রতিবেদন, যেখানে এ বাজারকে অভিহিত করা হয়েছে বিশ্বের নিকৃষ্টতম শেয়ারবাজার বলে। ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থার আরও একধাপ অবনতি ঘটেছে। বিপুলসংখ্যক মানুষের অর্থনৈতিক জীবনকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করেছে যে শেয়ারবাজার; যার প্রভাব জাতীয় অর্থনীতিতেও গুরুতরভাবে দেখা দিয়েছে, তা নিয়ে আলোচনার যথাযোগ্য স্থান জাতীয় সংসদ বৈকি।
ক্ষমতাসীন মহাজোটের সাংসদেরা আলোচনার দাবি তোলার আগে বিরোধীদলীয় সাংসদেরা একাধিক অধিবেশনে এই দাবি তুলেছেন। উভয় পক্ষের সাংসদেরা আলোচনা প্রস্তাবের পক্ষে অনেক জোরালো যুক্তি তুলে ধরেছেন। আমাদের মনে হয় এ বিষয়ে জাতীয় সংসদে আলোচনা অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল; শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি তদন্তের জন্য গঠিত খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বাধীন কমিটির প্রতিবেদনটি নিয়েও সংসদে আলোচনা হতে পারত। প্রতিবেদনটিকে সরকার গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে এমন কোনো লক্ষণ নেই। ওই প্রতিবেদনে শেয়ারবাজারে কারসাজির সঙ্গে যাঁরা জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়েছিল, তাঁদের ব্যাপারে সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। সোমবার মহাজোটের সাংসদেরা জাতীয় সংসদে এটা উল্লেখ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তদন্ত প্রতিবেদনটি যথার্থ বা পর্যাপ্ত নয় বলে যদি সরকারের মনে হয়, তাহলে অবশ্যই অধিকতর তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। শেয়ারবাজারের অস্বাভাবিক অস্থিতিশীল আচরণের মূল কারণগুলো সুনির্দিষ্টভাবে শনাক্ত করে সেগুলো দূর করার কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। মাঝেমধ্যে পুঁজি-প্রণোদনা, নতুন নিয়ম করে আবার তা প্রত্যাহার করা ইত্যাদি উপরিতলের পদক্ষেপ থেকে স্থায়ী সুফল পাওয়া যে সম্ভব নয়, তা ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে।
কারসাজির কারণেই আমাদের শেয়ারবাজারের আচরণ অস্বাভাবিক—এই সাধারণ ধারণা শেয়ারবাজারের ওপর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতার মূল উৎস। আস্থা ফিরিয়ে আনা যেতে পারে; সে আস্থা স্থায়ী বা টেকসই হতে পারে কেবল তখনই, যখন সব ধরনের কারসাজির সুযোগ বন্ধ করে স্বাভাবিক কেনাবেচা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এসব কিছু নিয়েই জাতীয় সংসদে আলোচনা হোক।

No comments

Powered by Blogger.