সদরঘাটের ইজারা-লাভের গুড় পিঁপড়াই খেয়ে যাবে?
ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের তিনটি ঘাটের মালপত্র পরিবহনের কাজ এক বছরের মাথায় অর্ধেকেরও কম মূল্যে ইজারা দেওয়ার বিষয়টি খটকা জাগায় বটে। মঙ্গলবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যাচ্ছে, ২০০৯-১০ সালে যেখানে ৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা নির্ধারিত ছিল, পরবর্তী দুই অর্থবছরে তা ১ কোটি ৮৩ লাখ টাকায় নেমে এসেছে।
বিআইডবি্লউটিএ সচিব দাবি করছেন, মালামাল পরিবহন সম্পূর্ণ টোলমুক্ত করার কারণেই ইজারামূল্য কমে এসেছে। আমাদেরও মনে আছে, ২০১০ সালে 'যাত্রী হয়রানি' বন্ধে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল 'ইজারামুক্ত' করা হয়েছিল। ওই বছরের জুলাই মাসের প্রথম দিন থেকে 'শ্রম যার মজুরি তার' কর্মসূচির আওতায় অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের শ্রম ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধিত কুলিরা মালামাল ওঠানামার কাজ পেয়েছিল। ঢাকঢোল পিটিয়ে ঘোষিত ওই কর্মসূচির শুরুতে কুলিদের পারিশ্রমিকের হারও ঘাট এলাকায় টানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে না যাত্রী হয়রানি, না টোল আদায় বন্ধ হয়েছে। সমকালের প্রতিবেদনেই রয়েছে যে, ইজারাদার নিয়োজিত শ্রমিকরা যাত্রী ও ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মাল পরিবহন বাবদ অর্থ আদায় করছে। যাত্রী নিজে বহন করলেও অপেক্ষাকৃত ভারী মালামালের টোল আদায় করা হচ্ছে। তাহলে কি ইজারামুক্তি কেবল কাগজে-কলমে? পুরনো সিন্ডিকেটও যে বহাল তবিয়তে_ তিনটি ঘাটই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার ইজারাপ্রাপ্তি তা প্রমাণ করে। পরিবর্তন কেবল একটিই দেখা যাচ্ছে, সরকারের রাজস্ব আদায় কমে যাওয়া। আমরা মনে করি, কর্তৃপক্ষের উচিত বিষয়টি খতিয়ে দেখা। কতিপয় কর্মকর্তা ইজারাদারের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে এই মৌরসি পাট্টা কায়েম করেছে বলে যে অভিযোগ রয়েছে, তাও আমলে নেওয়া হোক। প্রজাতন্ত্রের লাভের গুড় পিঁপড়ার ঘরে যেতে পারে না। অনিয়ম তদন্তের পাশাপাশি যাত্রী হয়রানি যেন শূন্যের কোঠায় নেমে আসে, তাও নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশের প্রকৃতি প্রদত্ত নৌপথ নিয়ে এমনিতেই বিড়ম্বনার অন্ত নেই। ব্যক্তি ও গোষ্ঠীবিশেষের লোভের কারণে সেই বোঝায় শাকের আঁটি চাপিয়ে দেওয়া চলবে না।
No comments