নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন দক্ষিণ আফ্রিকার সমকামী নারীরা

লিকামভা সেকিসোর বয়স ২৯ বছর। তিনি এগারো বছর বয়সী এক কন্যাসন্তানের মা। এক দিন চাচাতো ভাইয়ের ঘর পরিষ্কার করছিলেন সেকিসো। এমন সময় সেই ভাই ওই ঘরে ঢোকে। একপর্যায়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করে। ‘আমি সমকামী, তাই সমকামিতা দূর করার জন্য সে আমাকে ধর্ষণ করে।’ বলেন সেকিসো। ওই চাচাতো ভাই পরে তাঁকে আরও একবার ধর্ষণ করে।


শুধু সেকিসো নন, দক্ষিণ আফ্রিকায় তাঁর মতো সমকামী নারীরা ধর্ষণসহ নানা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। নির্যাতনকারীরা তাঁদের উপহাস করে বলছে, পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট করতে ‘সংশোধনের পদক্ষেপ’ হিসেবে তারা সমকামী নারীদের ধর্ষণ করছে। সমকামী নারীরা পরিবার, এমনকি আইনের আশ্রয় নিতে গেলে পুলিশের কাছেও বিদ্রূপের শিকার হচ্ছেন।
লিন্ডেকা স্টুলো নামের ২৫ বছর বয়সী একজন নারী বলেন, ‘আমি অন্তত চারবার হামলার শিকার হয়েছি।’ একবার লিন্ডেকার পা ভেঙে দেয় দুর্বৃত্তরা। এ জন্য তাঁকে প্রায় এক মাস হাসপাতালে থাকতে হয়। লিন্ডেকা বলেন, ‘তারা আমাকে মারতে মারতে বলছিল, আমাকে অবশ্যই বদলে যেতে হবে...আমি একজন নারী, তাই একজন নারীর সঙ্গে অভিসার করতে পারি না। আমি নারী, এটা বোঝাতে আমাকে ধর্ষণেরও চেষ্টা করে তারা।’ তিনি বলেন, সমকামী নারীদের কুমারী হিসেবে মনে করা হয়। তাই ধর্ষণের শিকার হওয়ারও আশঙ্কা থাকে বেশি।
চাচাতো ভাইয়ের হাতে ধর্ষণের শিকার লিকামভা সেকিসো জানান, সমকামী এক নারী তাঁর নিজের বাবার হাতে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার সমকামীদের অধিকার নিয়ে কাজ করে ক্রিশ্চিয়ান সেন্টার অ্যান্ড সেফ হাউস। এ সংস্থার কর্মকর্তা বুলেলওয়া পান্ডা বলেন, ‘কৃষ্ণাঙ্গ সমকামীরা বেশি সহিংসতার ঝুঁকিতে থাকে। আমাদের সংস্কৃতির কারণেই তাঁদের ওপর সহিংসতার ঘটনা বেশি ঘটে।’
পুলিশের তথ্যমতে, ২০১০-১১ সালে ৫৬ হাজার ২৭২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। সমকামী নারী ও পুরুষেরা এর শিকার হন।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিচার মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র টিলালি টিলালি এসব ঘটনাকে ‘বর্বরোচিত’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। এসব ঘৃণ্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি হবে।’
২০০৬ সালে বিশ্বের পঞ্চম দেশ হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকায় সমলিঙ্গের বিয়ের বৈধতা দেওয়া হয়। এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.