সরকারের ভুল নীতির খেসারত?-রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চারটি বাণিজ্যিক ব্যাংক—সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালীর মূলধন ও ঋণের ভারসাম্যহীনতার খবরটি উদ্বেগজনক। রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের দুটি (উত্তরা ও পূবালী) ইতিমধ্যে বেসরকারি মালিকানায় চলে গেছে। বাকি চারটি নিয়েও চলছে তেলেসমাতি কাণ্ড। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে রূপালী ব্যাংক বিদেশিদের কাছে বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল।


দেশে যখন বেসরকারি ব্যাংকগুলো রমরমা ব্যবসা করছে এবং সরকার নতুন ব্যাংক খোলার উদ্যোগ নিয়েছে, তখন রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অবস্থা নাজুক কেন? আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেসব কারণে ক্রমাবনতির দিকে ধাবিত হয়, তার সব লক্ষণই এই ব্যাংকগুলোতে আছে: আমানত সংগ্রহ ও ঋণ দেওয়ায় ভারসাম্যহীনতা থেকে শুরু করে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা। ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের মূল শক্তি আমানত। কিন্তু যখন আমানতের চেয়ে ঋণের প্রবৃদ্ধি বেশি হয়, তখন প্রতিষ্ঠান দুর্দশায় পড়ে। পরিসংখ্যান বলছে, চারটি ব্যাংকেই ঋণ প্রদানের প্রবৃদ্ধি আমানত সংগ্রহের প্রবৃদ্ধিকে ছাড়িয়ে গেছে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। গত ছয় মাসে রূপালী ছাড়া বাকি তিনটি ব্যাংকেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে। তাই মুদ্রাবাজার থেকে ধার করে ব্যাংকগুলোকে চলতে হচ্ছে। অথচ নিকট অতীতেও এই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ছিল অর্থের প্রধান জোগানদাতা।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর দুরবস্থার জন্য ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকির অভাবও কম দায়ী নয়। মাঝেমধ্যে নির্দেশনা পাঠালেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। সেই নির্দেশনার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করাও জরুরি। তদুপরি সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে যে মোটা অঙ্কের ঋণ নেয়, তার সিংহভাগের জোগানদাতা কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি বাণিজ্যিক ব্যাংক। গত বছর সরকার বাজেটে ১১ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে। এ বছর ভর্তুকির পরিমাণ ৪০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাতে পারে। এই টাকা সরকারকে ব্যাংকিং খাত থেকেই ঋণ হিসেবে নিতে হবে। বেসরকারি ব্যাংকগুলো সরকারকে ঋণ দিতে আগ্রহী নয়। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ও রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছেই ধরনা দিতে হচ্ছে। এই সমস্যার সমাধান করতে হলে সরকারকে ভর্তুকি, অপচয় ও অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় কমাতে হবে। আইএমএফও এমন পরামর্শই দিয়েছে।
একই সঙ্গে ব্যাংকগুলোকে ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতা অর্জন করতে হবে। কোনো মহলের চাপে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ দেওয়ার ঝুঁকি নেওয়া যাবে না। ব্যাংক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান যা বলেছেন, তা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। ব্যাংকের আর্থিক আয়-ব্যয়ের পরিস্থিতি দেখা কি তাঁর কিংবা পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না? রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদে তাঁদেরই নিয়োগ দেওয়া উচিত, যাঁদের ব্যাংকিং বিষয়ে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা আছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় এ ক্ষেত্রে অগ্রহণযোগ্য।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো আইন অনুযায়ী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে চলুক। এসব প্রতিষ্ঠান মন্দ ঋণের কুপ্রভাব থেকেও বেরিয়ে আসুক এবং সব ধরনের হস্তক্ষেপ বন্ধ হোক।

No comments

Powered by Blogger.