ফরিদপুরে ইউপি চেয়ারম্যানকে কুপিয়ে হত্যা

ফরিদপুরের সালথা উপজেলার আটঘর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মলয় বসুকে (৪৫) প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। গতকাল মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে মোটরসাইকেল চালিয়ে ইউপি ভবনে যাওয়ার পথে সদর উপজেলার রণকাইল এলাকায় ওই হত্যাকাণ্ড ঘটে।


ওই সময় মলয়ের সঙ্গী আটঘরের গোয়ালপোতা গ্রামের সোহাগ খানকেও (৩২) কুপিয়ে জখম করা হয়। বর্তমানে তিনি ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মো. আওলাদ আলী ফকির প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে চারজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে।
হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী আটঘর ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী রণকাইল এলাকার দীপালি রানী দাস বলেন, বেলা পৌনে ১২টার দিকে ছয়-সাতজন ব্যক্তি একটি নছিমন নিয়ে মলয়ের মোটরসাইকেলের গতি রোধ করে। তারা মলয় ও সোহাগকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করতে থাকে। একপর্যায়ে রাস্তার পাশের খাদে মলয় পড়ে যান। সন্ত্রাসীরা ওই খাদে গিয়ে মলয়কে কুপিয়ে হত্যা করে। পরে তারা ওই নছিমনে করে ফরিদপুরের বদরপুরের দিকে চলে যায়।
দীপালির মতে, খুনিদের বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে।
খুনিরা চলে যাওয়ার পর ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এলাকাবাসী। তাঁরা আহত সোহাগকে উদ্ধার করে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। বেলা পৌনে একটার দিকে পুলিশ এসে মলয়ের মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়।
আহত সোহাগের মাথা ও পিঠে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ঘটনা সম্পর্কে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
এদিকে চেয়ারম্যান মলয় হত্যাকাণ্ডের খবর শুনে আটঘর ইউনিয়নের বাসিন্দাদের অনেককে বিলাপ করতে দেখা যায়।
মলয়ের বাড়ি আটঘরের সারুকদিয়া গ্রামে। তাঁর স্ত্রী ববিতা বসু স্থানীয় দৈনিক গণ সংহতি পত্রিকার সালথা উপজেলা প্রতিনিধি। তাঁদের এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ে বাঁধন (১০) পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী, ছেলে মুকুটের বয়স চার বছর।
সাবেক ইউপি সদস্যের সঙ্গে বিরোধ: যোগাযোগ করলে সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফসার উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আটঘর ইউপি চেয়ারম্যান মলয়ের সঙ্গে ওই ইউপির ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য বকুল মাতুব্বরের বিরোধ চলছিল। এক মাস আগে এই দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে থানায় মামলাও করেন মলয়। ওই মামলার আসামিরা বর্তমানে জামিনে আছেন।
আটঘর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বরুণ কুমার সরকার বলেন, মলয় আওয়ামী লীগের সমর্থক। বকুল আগে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও বর্তমানে আওয়ামী লীগ করেন। কিন্তু বকুলের বিরুদ্ধে এলাকায় চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
বরুণ বলেন, গত ২২ জুন আটঘর ইউপির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মলয়। পরাজিত হন বকুল। নির্বাচিত হওয়ার পর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মলয়ের সঙ্গে বকুলের বিরোধ সৃষ্টি হয়।
মলয়ের স্ত্রী ববিতা বসু গতকাল কাঁদতে কাঁদতে প্রথম আলোকে বলেন, কিছুদিন ধরে বকুল মাতুব্বর মুঠোফোনে মলয়কে হত্যার হুমকি দিয়েছিল।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে বকুল মাতুব্বরের বক্তব্য জানতে তাঁর মুঠোফোন একাধিকবার কল দিলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
হত্যাকাণ্ডের নিন্দা: চেয়ারম্যান মলয় হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সালথা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ও ফরিদপুর জেলার ইউপি চেয়ারম্যানদের সমিতির সভাপতি খন্দকার ইফতেখার হোসেন।
ইউএনওর সঙ্গে শেষ দেখা: সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম তুহীনুর আলম বলেন, ‘একটি প্রকল্পের কাজের ব্যাপারে আলাপ করতে চেয়ারম্যান মলয় গতকাল সকাল ১০টার দিকে ফরিদপুরে আমার বাসায় এসেছিলেন। কিন্তু আমার বাসা থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হয়ে আটঘরে যাওয়ার পথে সন্ত্রাসীদের হামলায় তিনি খুন হন।’

No comments

Powered by Blogger.