ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতি-নিয়ন্ত্রণ করাটাই বড় চ্যালেঞ্জ

জীবনযাত্রার ব্যয় যে বেড়েছে, এটা অনস্বীকার্য। বাজারে প্রায় প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে। বেড়েছে বাড়িভাড়া, গাড়িভাড়া। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে পণ্য পরিবহন ও গণপরিবহনে। বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। সব মিলিয়ে মূল্যস্ফীতির প্রভাব জনজীবনে ভালোভাবেই পড়েছে।


বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যই বলছে, মূল্যস্ফীতির সূচক ঊর্ধ্বমুখী। এই ঊর্ধ্বমুখী সূচকের লাগাম এখনই টেনে ধরতে না পারলে দেশের অর্থনীতিতে তা বিরূপ প্রভাব ফেলবে। মূল্যস্ফীতি রোধ করা এখন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হলেও সেটা নিয়ন্ত্রণের কোনো উপায় সরকারের হাতে আছে বলে মনে হয় না। মূল্যস্ফীতির এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
বাংলাদেশে পরিসংখ্যান ব্যুরো সম্প্রতি মূল্যস্ফীতির সূচক ঊর্ধ্বমুখী বলে জানিয়েছে। ব্যুরোর হিসাবে দেশের গ্রামাঞ্চলে জানুয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ১৫ শতাংশ, যা গত ডিসেম্বর মাসে ছিল ১০ দশমিক ২৫ শতাংশ। জানুয়ারি মাসে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতির হার ছিল যথাক্রমে ১০ দশমিক ১৮ এবং ১৩ দশমিক ২৬ শতাংশ। গত ডিসেম্বর মাসে এ হার ছিল যথাক্রমে ৯ দশমিক ৬০ ও ১১ দশমিক ৬২ শতাংশ। অন্যদিকে দেশে শহরাঞ্চলে জানুয়ারি মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এর মধ্যে খাদ্যপণ্য ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল যথাক্রমে ১২ দশমিক ৫৬ ও ১২ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
পরিসংখ্যান ব্যুরো মনে করে, জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে জানুয়ারি মাসে মূল্যস্তরের ওপর। জানুয়ারি মাসে চাল, ডাল, মাছ, মাংস, ডিম, ফল, ভোজ্য তেল ও প্যাকেটজাত দুধের দাম বেড়েছে। অন্যদিকে পরিধেয় বস্ত্র, বাড়িভাড়া ও জ্বালানি তেল, চিকিৎসা সেবার খরচ, পরিবহন খাত, আসবাবপত্র ও গৃহস্থালি এবং লন্ড্রি সামগ্রীর দাম বৃদ্ধিতে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি আরেক দফা বেড়েছে। ডিসেম্বরে গড় জাতীয় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০ দশমিক ৬৩ শতাংশ। জানুয়ারিতে তা বেড়ে ১১ দশমিক ৫৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে এক মাসের ব্যবধানে জাতীয় মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে শূন্য দশমিক ৯৬ শতাংশ। এ ছাড়া ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরকে ভিত্তি বছর ধরার পর থেকে জানুয়ারিতে গড় খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতির হারে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে জানুয়ারিতে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতির হার ১৩ দশমিক ১৬ শতাংশে পেঁৗছেছে। গত ডিসেম্বরে এ হার ছিল সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতির এই হারের সঙ্গে সমানতালে বাড়েনি দেশের সিংহভাগ মানুষের আয়। ফলে সাধারণ মানুষকে এই বর্ধিত মূল্যের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। নিম্ন-আয়ের মানুষের জন্য এই মূল্যস্ফীতি অনেকটাই দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। গত দুই বছরে খাদ্যপণ্য উৎপাদনে সাফল্য অর্জন করা গেলেও বেড়েছে উৎপাদন খরচ। এর পাশাপাশি অতিসম্প্রতি ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নে আমদানি পণ্যের দাম বেড়েছে। বেড়েছে উৎপাদন খরচ। স্বাভাবিকভাবেই এই ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়। এ অবস্থায় সরকারের করণীয় কী? অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন, দেশের অর্থনীতিতে কোনো সংকট নেই। কিন্তু মূল্যস্ফীতির সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা কোনো সুখের বার্তা দেয় না। যেভাবে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে, তাতে মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘর থেকে নামিয়ে আনা একেবারেই অসম্ভব বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এই সূচক যেন আর ওপরের দিকে না যায়, সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া যেতে পারে। নিয়ন্ত্রণের একটা উপায় সরকারকে খুঁজে বের করতেই হবে।

No comments

Powered by Blogger.