মিডিয়া খুব দুষ্টু! by তুষার আবদুল্লাহ
ইদানিং আমরা দুষ্টুমিটা মনে হয় বেশিই করছি। আমরা বলতে যারা খবর টোকাই। কুড়িয়ে নেয়া খবর দর্শকদের জন্য পরিবেশন করছি-- পত্রিকা, বেতার, টেলিভিশন এবং অনলাইনে। দুষ্টুমির ছলে আমরা যা খুশি তা-ই বলে ফেলছি। খবরটি কার বিপক্ষে যাচ্ছে তার তোয়াক্কা করছি না।
যা সত্য তাই পাঠক-শ্রোতা-দর্শকের কাছে তুলে ধরছি। কিন্তু যাদের ঘিরে এই খবর তারা পছন্দ করছেন না আমাদের দুষ্টুমিটা। তারা অস্বস্তি প্রকাশ করছেন। এবং তারা যে তাদের কাজের জন্য সমালোচিত হচ্ছেন, সেই দায়টাও চাপাচ্ছেন গণমাধ্যমের উপর। এই দায় চাপানো নিয়ে গণমাধ্যম অবশ্য বিচলিত নয়। কারণ এধরনের দায় চাপানোটা ঐতিহ্যগতভাবে হয়ে আসছে।
সরকার যখন যে ব্যানারে আচ্ছাদিত থাকুক না কেন, গণমাধ্যম যখন তাদের ভুলগুলো তুলে ধরেছে বা যেপথে কাজ করার প্রয়োজন বলে ইংগিত করেছে, তখনই সরকারের নানা স্তর থেকে নালিশ উঠেছে গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে। নালিশের সুরটা প্রায় একই- সাংবাদিকরা যা লিখছেন, বলছেন ঘটনা আসলে তা নয়। ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে লেখা হচ্ছে। স্মৃতি থেকে বলতে পারি, চারদলীয় জোটের সময় আইনশৃংখলা পরিস্থিতি, বিদ্যুৎ সংকট, ডিজেল ও সার সংকট, চালের দাম বৃদ্ধি’র ঘটনায় তখনকার মন্ত্রী মহোদয়রা গণমাধ্যমকর্মীদের বংশলতিকা ধরে ভর্ৎসনা করেছিলেন। তাদের বক্তব্যের সারমর্ম ছিল: সকল সংকটই গণমাধ্যমের তৈরি।
গণমাধ্যমে ছাপানো, শোনানো, দেখানো সংকট বাস্তবে খুঁজে পাওয়া যাবে না। খবর কুড়োতে যখন মাঠে ছিলাম তখনও অনেক মন্ত্রী-আমলার কাছ থেকে শুনতে হয়েছে,: ‘‘সমস্যাতো খালি তোমরাই চোখে দেখো, আমরাতো দেখি না।’’ হয়তো তাদের কথাই ঠিক ক্ষমতায় বসার পর তারা বিশেষ কোনো লেন্সের চশমা পড়ে নেন। যে চশমায় কেবল উন্নয়নের জোয়ার আর তাদের সুকীর্তি দেখা যায়। যা কিছু অসংগতি, অনিয়ম সব ঢাকা থাকে।
জানা নেই, গত চারদলীয় জোট সরকার আর বর্তমান মহাজোটের মন্ত্রীরা চশমায় একই লেন্স ব্যবহার করছেন কিনা? কারণ তাদের কন্ঠেও পূর্বসূরিদের সুর। দপ্তরহীন হয়ে পড়া সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত রেলমন্ত্রী থাকাকালীন আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। দুর্নীতির সঙ্গে তিনি জড়িত নাকি জড়িত নন, এনিয়ে গনমাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশ হতে থাকলে তিনি একে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেননি। তার স্বভাব সুলভ ভঙ্গিতে গণমাধ্যমের বিষোদগার করেছেন। দেশের পুঁজিবাজার নিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন, পুঁজিবাজারের ধ্বস যখন রেকর্ডসীমা ছাড়াচ্ছে, পুঁজিবাজারের টাকা কতিপয় ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠছে গণমাধ্যমে, তখন গণমাধ্যমের সেই ভূমিকায় রুষ্ট হন অর্থমন্ত্রীসহ সরকারের ঘনিষ্ঠজনেরা। তারা শেয়ারবাজার ধ্বসের প্রকৃতচিত্র পত্রিকা, বেতার, টেলিভিশন এবং অনলাইনে দেখে বিচলিত হয়ে পড়েন। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেই বসেন, পুঁজিবাজার অস্থিতিশীল নয় এবং এনিয়ে গণমাধ্যমে গুরুত্ব পাওয়ার মতো কিছু ঘটেনি।
যখনই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে যে এসেছেন, তখনই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হবার দায় তারা চাপিয়েছেন গণমাধ্যমের উপর। তাদের অভিযোগ, মিডিয়ার কারণেই পণ্যের দাম বেড়ে যায়। যে পণ্য নিয়ে মিডিয়াতে মাতামাতি হয়, দাম আকাশছোঁয়া হয় সেই পণ্যেরই। পত্রিকা এবং টেলিভিশনে যখন সারাদেশের বেহাল সড়ক দেখানো হচ্ছে, তখন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কাব্যিক ঢঙে বললেন- ‘অপপ্রচারে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। ফেসবুকে অনেকেই আমাকে জানিয়েছে, গণমাধ্যমে যে খারাপ রাস্তার কথা উঠে এসেছে, তা ঠিক নয়।’
জানা নেই মন্ত্রী মহোদয়ের ফেসবুক বন্ধু তালিকায় তার কর্মীদের বাইরে কেউ আছেন কিনা। তবে যোগাযোগমন্ত্রী একটি ব্যবস্থাপত্রও দিয়েছিলেন- ‘‘কোনো প্রতিবেদন এলে তা যাচাই করে প্রকাশ করা উচিত।’’ এই ব্যবস্থাপত্র মেনে চললে দেখতে হবে, যত্রতত্র তার আকস্মিক সফরগুলো আসলেই কতোটা আকস্মিক!
গণমাধ্যম নিয়ে সরকারের উচ্চস্তর থেকেও সমালোচনা এসেছে। বলা হয়েছে, ‘‘সরকারের বিরুদ্ধে না লিখলে পেটের ভাত হজম হয় না।’ জাতীয় সংসদের স্পিকারও ‘দায়িত্বশীলতার’ পাশপাশি গণতন্ত্র এবং গণমাধ্যমের অগ্রযাত্রা অব্যহত রাখতে দায়িত্বশীল হতে বলেছেন। মন্ত্রিসভার বৈঠকে কোনো কোনো মন্ত্রী বলেছেন, গণমাধ্যম এখন নিজেদের স্বার্থে ব্যবহৃত হচ্ছে। সর্বশেষ অর্থমন্ত্রী আবারো গণমাধ্যমের ভূমিকায় উষ্ণ হয়ে উঠেছেন। হলমার্ক কেলেঙ্কারী বিষয়ে তিনি ৪ সেপ্টেম্বর বললেন-‘‘চার হাজার কোটি টাকা কোনো বড় অঙ্কের অর্থ নয়। এনিয়ে হৈ চৈ করার কিছু নেই। সংবাদমাধ্যম এটা নিয়ে অতিরিক্ত প্রচার করে দেশের ক্ষতি করছে।’’ পরদিন ৫ সেপ্টেম্বর তিনি বললেন-‘‘গণমাধ্যমের বাড়াবাড়িতে হলমার্কের দুই হাজার কোটি টাকা আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।’’ তিনি বলেছেন, ‘‘মিডিয়া সংযত থাকলে এই টাকা আদায় করা সম্ভব।’’
কথা হচ্ছে, দেশের স্বার্থে ঐ দুই হাজার কোটি টাকা আদায় নিশ্চিত করতে মিডিয়া যদি সংযত হবার ব্রত নেয়, আর সেজন্য যদি তারা অর্থমন্ত্রীকে অনুসরণ করে? না, ভরসার জায়গাটা কেমন যেন টলমল। আবার ভয়ও পাচ্ছি যদি অর্থমন্ত্রী বলে বসেন-‘‘ মিডিয়া খুব দুষ্টু!’’
সরকার যখন যে ব্যানারে আচ্ছাদিত থাকুক না কেন, গণমাধ্যম যখন তাদের ভুলগুলো তুলে ধরেছে বা যেপথে কাজ করার প্রয়োজন বলে ইংগিত করেছে, তখনই সরকারের নানা স্তর থেকে নালিশ উঠেছে গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে। নালিশের সুরটা প্রায় একই- সাংবাদিকরা যা লিখছেন, বলছেন ঘটনা আসলে তা নয়। ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে লেখা হচ্ছে। স্মৃতি থেকে বলতে পারি, চারদলীয় জোটের সময় আইনশৃংখলা পরিস্থিতি, বিদ্যুৎ সংকট, ডিজেল ও সার সংকট, চালের দাম বৃদ্ধি’র ঘটনায় তখনকার মন্ত্রী মহোদয়রা গণমাধ্যমকর্মীদের বংশলতিকা ধরে ভর্ৎসনা করেছিলেন। তাদের বক্তব্যের সারমর্ম ছিল: সকল সংকটই গণমাধ্যমের তৈরি।
গণমাধ্যমে ছাপানো, শোনানো, দেখানো সংকট বাস্তবে খুঁজে পাওয়া যাবে না। খবর কুড়োতে যখন মাঠে ছিলাম তখনও অনেক মন্ত্রী-আমলার কাছ থেকে শুনতে হয়েছে,: ‘‘সমস্যাতো খালি তোমরাই চোখে দেখো, আমরাতো দেখি না।’’ হয়তো তাদের কথাই ঠিক ক্ষমতায় বসার পর তারা বিশেষ কোনো লেন্সের চশমা পড়ে নেন। যে চশমায় কেবল উন্নয়নের জোয়ার আর তাদের সুকীর্তি দেখা যায়। যা কিছু অসংগতি, অনিয়ম সব ঢাকা থাকে।
জানা নেই, গত চারদলীয় জোট সরকার আর বর্তমান মহাজোটের মন্ত্রীরা চশমায় একই লেন্স ব্যবহার করছেন কিনা? কারণ তাদের কন্ঠেও পূর্বসূরিদের সুর। দপ্তরহীন হয়ে পড়া সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত রেলমন্ত্রী থাকাকালীন আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। দুর্নীতির সঙ্গে তিনি জড়িত নাকি জড়িত নন, এনিয়ে গনমাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশ হতে থাকলে তিনি একে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেননি। তার স্বভাব সুলভ ভঙ্গিতে গণমাধ্যমের বিষোদগার করেছেন। দেশের পুঁজিবাজার নিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন, পুঁজিবাজারের ধ্বস যখন রেকর্ডসীমা ছাড়াচ্ছে, পুঁজিবাজারের টাকা কতিপয় ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠছে গণমাধ্যমে, তখন গণমাধ্যমের সেই ভূমিকায় রুষ্ট হন অর্থমন্ত্রীসহ সরকারের ঘনিষ্ঠজনেরা। তারা শেয়ারবাজার ধ্বসের প্রকৃতচিত্র পত্রিকা, বেতার, টেলিভিশন এবং অনলাইনে দেখে বিচলিত হয়ে পড়েন। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেই বসেন, পুঁজিবাজার অস্থিতিশীল নয় এবং এনিয়ে গণমাধ্যমে গুরুত্ব পাওয়ার মতো কিছু ঘটেনি।
যখনই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে যে এসেছেন, তখনই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হবার দায় তারা চাপিয়েছেন গণমাধ্যমের উপর। তাদের অভিযোগ, মিডিয়ার কারণেই পণ্যের দাম বেড়ে যায়। যে পণ্য নিয়ে মিডিয়াতে মাতামাতি হয়, দাম আকাশছোঁয়া হয় সেই পণ্যেরই। পত্রিকা এবং টেলিভিশনে যখন সারাদেশের বেহাল সড়ক দেখানো হচ্ছে, তখন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কাব্যিক ঢঙে বললেন- ‘অপপ্রচারে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। ফেসবুকে অনেকেই আমাকে জানিয়েছে, গণমাধ্যমে যে খারাপ রাস্তার কথা উঠে এসেছে, তা ঠিক নয়।’
জানা নেই মন্ত্রী মহোদয়ের ফেসবুক বন্ধু তালিকায় তার কর্মীদের বাইরে কেউ আছেন কিনা। তবে যোগাযোগমন্ত্রী একটি ব্যবস্থাপত্রও দিয়েছিলেন- ‘‘কোনো প্রতিবেদন এলে তা যাচাই করে প্রকাশ করা উচিত।’’ এই ব্যবস্থাপত্র মেনে চললে দেখতে হবে, যত্রতত্র তার আকস্মিক সফরগুলো আসলেই কতোটা আকস্মিক!
গণমাধ্যম নিয়ে সরকারের উচ্চস্তর থেকেও সমালোচনা এসেছে। বলা হয়েছে, ‘‘সরকারের বিরুদ্ধে না লিখলে পেটের ভাত হজম হয় না।’ জাতীয় সংসদের স্পিকারও ‘দায়িত্বশীলতার’ পাশপাশি গণতন্ত্র এবং গণমাধ্যমের অগ্রযাত্রা অব্যহত রাখতে দায়িত্বশীল হতে বলেছেন। মন্ত্রিসভার বৈঠকে কোনো কোনো মন্ত্রী বলেছেন, গণমাধ্যম এখন নিজেদের স্বার্থে ব্যবহৃত হচ্ছে। সর্বশেষ অর্থমন্ত্রী আবারো গণমাধ্যমের ভূমিকায় উষ্ণ হয়ে উঠেছেন। হলমার্ক কেলেঙ্কারী বিষয়ে তিনি ৪ সেপ্টেম্বর বললেন-‘‘চার হাজার কোটি টাকা কোনো বড় অঙ্কের অর্থ নয়। এনিয়ে হৈ চৈ করার কিছু নেই। সংবাদমাধ্যম এটা নিয়ে অতিরিক্ত প্রচার করে দেশের ক্ষতি করছে।’’ পরদিন ৫ সেপ্টেম্বর তিনি বললেন-‘‘গণমাধ্যমের বাড়াবাড়িতে হলমার্কের দুই হাজার কোটি টাকা আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।’’ তিনি বলেছেন, ‘‘মিডিয়া সংযত থাকলে এই টাকা আদায় করা সম্ভব।’’
কথা হচ্ছে, দেশের স্বার্থে ঐ দুই হাজার কোটি টাকা আদায় নিশ্চিত করতে মিডিয়া যদি সংযত হবার ব্রত নেয়, আর সেজন্য যদি তারা অর্থমন্ত্রীকে অনুসরণ করে? না, ভরসার জায়গাটা কেমন যেন টলমল। আবার ভয়ও পাচ্ছি যদি অর্থমন্ত্রী বলে বসেন-‘‘ মিডিয়া খুব দুষ্টু!’’
No comments