অসংগঠিত বিএনপিতে রাজ্যের হতাশা by মোশাররফ বাবলু
নানা ইস্যুতে হতাশায় ভুগছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও এর নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। সাংগঠনিক অবস্থা দুর্বল থাকায় আন্দোলন জোরদার করতে পারছে না তারা। ঈদুল ফিতরের পরপর দলটির সরকারবিরোধী কঠোর আন্দোলন শুরু করার ঘোষণা ছিল।
কিন্তু ওই ঘোষণা থেকে তারা সরে গিয়ে আগামী কোরবানির ঈদ পর্যন্ত শিথিল কর্মসূচি দিয়েছে। কর্মসূচি সফল করতে জোটের নেতারা রাস্তায় নামছেন না। আন্দোলন বেগবান করা নিয়ে দলের ১১টি অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মচারীদের মধ্যেও গা-ছাড়া ভাব। ছাত্রদলের নতুন কমিটিতে অছাত্র ও বয়স্করা থাকায় সংগঠনটির সাধারণ নেতা-কর্মীরা নাখোশ। এ ছাড়া আন্দোলন জোরদার করতে গিয়ে নেতারা গ্রেপ্তার আতঙ্কে ভুগছেন। তৃণমূল নেতারাও ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। দলের মধ্য থেকে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সঠিক পরামর্শ দেওয়ার লোক কমে যাচ্ছে।
বর্তমান সরকারের গত পৌনে চার বছরের মধ্যে বিএনপি বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়ে গেছে। প্রধান ইস্যু নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্গঠনের দাবিতে অনড় অবস্থানে দলটি। এ লক্ষ্যে সারা দেশে রোডমার্চ করেছে বিএনপি। সম্প্রতি নেওয়া কর্মসূচি অনুযায়ী এক মাস গণসংযোগ করতে সারা দেশ সফর শুরু করবেন খালেদা জিয়া। তিনি বিভিন্ন জেলা শহরে আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য দেবেন। এ সফর বাস্তবায়ন করতে সারা দেশে সংগ্রাম কমিটি গঠনের কথা ছিল। কিন্তু বিএনপি কমিটি গঠন করতে পারেনি। তবে ১৮ দলীয় জোট নিয়ে কয়েকটি টিম গঠন করা হয়েছে। এই টিম কতটুকু সফল হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম সক্রিয় না থাকায় মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন। কিছু সংগঠন কার্যক্রমের দিক থেকে যেন ব্যক্তিকেন্দ্রিক সংগঠনে পরিণত হচ্ছে। বিএনপির ঢাকা মহানগর কমিটি, যুবদল, ছাত্রদল, কৃষক দল, মহিলা দল, শ্রমিক দলসহ অধিকাংশ অঙ্গ-সংগঠনের কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। তবে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম কিছুটা সন্তোষজনক বলে মনে করছে বিএনপি হাইকমান্ড।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে হলে প্রথমে দলের অঙ্গ-সংগঠনগুলোকে মজবুত করতে হয়। কিন্তু বিএনপির ১১টি সংগঠনের কোনোটিই শক্তিশালী নয়। সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে হলে ঢাকা মহানগর বিএনপির ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। মহানগর আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কোনো খবর নেই। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নিজে ছাত্রদলের কমিটি গঠন করার আগে ধারাবাহিকভাবে বৈঠকও করেছেন। যাঁরা কমিটিতে আছেন তাঁদের ব্যাপারে ভালোভাবে খোঁজ-খবর না নেওয়ায় শক্তিশালী কমিটি হয়নি। এই কমিটি দিয়ে আন্দোলন বেগবান হবে কি না, সন্দেহ প্রকাশ করেন এই নেতা।
তবে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে যে দুর্বল হয়ে পড়ছে তা মানতে নারাজ ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, 'আমাদের একটাই দাবি, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করা। এই দাবিকে সামনে রেখে দলকে সাংগঠনিকভাবে মজবুত করতে জনসংযোগ কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। জনসংযোগের পর কঠোর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।' তিনি বলেন, ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী আন্দোলনের জন্য ছাত্রদল অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। অন্যান্য মেয়াদোত্তীর্ণ অঙ্গ-সংগঠনেরও নতুন কমিটি গঠন করা হবে। আন্দোলনের পাশাপাশি দলকে ঢেলে সাজানো হবে। যেসব জেলায় কমিটি নেই তা দ্রুত সম্পন্ন করা হবে। তিনি অতীতের তুলনায় বিএনপি সাংগঠনিকভাবে অনেক শক্তিশালী বলে মনে করেন।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'দিন-তারিখ ঠিক করে আন্দোলন হয় না। আন্দোলন বেগবান করতে হলে প্রথমে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হয়। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আমরা গত সাড়ে তিন বছরে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছি। এখন দলের সাংগঠনিক অবস্থা জোরদার করতে পারলে সরকার যত চেষ্টাই করুক না কেন বিএনপির আন্দোলন দমাতে পারবে না।'
দলের ভাইস চেয়ারম্যান পদের এক নেতা জানান, দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করা নিয়ে অনেক কথা বলেছি। কিন্তু দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতারা এ নিয়ে তেমন একটা আগের মতো ভাবছেন না। গা-ছাড়া ভাব। খালেদা জিয়াকে সঠিক পরামর্শ দেওয়ার লোকও দলের মধ্যে কমে যাচ্ছে। দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক কিংবা নির্বাহী কমিটির বৈঠক হলেও অনেকে কোনো কথা বলতে চান না। অনেকের মিটিংয়ে হাজিরা দেওয়া ছাড়া কোনো কাজ নেই। তাঁদের অভিযোগ হচ্ছে, সঠিক পরামর্শ দিলেও সেই পরামর্শ কোনো কাজে লাগানো হয় না। এ জন্যই দলের সাংগঠনিক অবস্থা করুণ। তাই চেয়ারপারসন সরকারবিরোধী কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করতে সাহস পাচ্ছেন না।
বিএনপির ১১টি অঙ্গ-সংগঠনের মধ্যে অন্যতম সংগঠন যুবদল। যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে দীর্ঘদিন ধরে সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নিরবের মধ্যে গ্রুপিং চলছে। অর্থের বিনিময়ে কমিটিতে পদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটি থাকলেও নানা কারণে বিভাগ, জেলা ও থানা কমিটি করতে পারছে না। যার কারণে সাংগঠনিক তৎপরতা ঝিমিয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় নতুন করে খালেদা জিয়া যুবদলের নতুন কমিটির কথা ভাবছেন বলে জানা গেছে।
দুই যুগের বেশি সময় ধরে কৃষক দলের কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই বললেই চলে। কোনো কাউন্সিল হচ্ছে না। জোড়াতালি দিয়ে ১০১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি নামে থাকলেও মূলত কার্যক্রম নিষ্ক্রিয়। এই সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আর সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন শামসুজ্জামান দুদু। ২০ বছর ধরে এক নেতাই দখল করে আছেন সাধারণ সম্পাদকের পদ। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব গত পাঁচ বছর ধরে দলের কৃষক দলেরও ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। প্রয়াত নেতা মান্নান ভূঁইয়া যখন এই দলের সভাপতি ছিলেন তখন থেকেই (১৯৯২ সাল) শামসুজ্জামান দুদু এ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক।
বিএনপির নারী সংগঠন মহিলা দল। কিন্তু এই দলের কার্যক্রমও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। আগের মতো মহিলা দলের নেতাদের তেমন একটা দেখা যায় না। সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি যাঁরা হয়েছেন তাঁদের মধ্যে অনেকে এক বছরের মাথায় নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভুলেও যান না। দলের সভাপতি নূরে আরা সাফা ও সম্পাদক শিরিন সুলতানা ছাড়া অনেকেই সক্রিয় নন। তবে শিরিন সুলতানার বিরুদ্ধে একগুঁয়ে আচরণের অভিযোগ করেন এক মহিলা নেত্রী।
জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের কার্যক্রম চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। শুধু মিলাদ ও দোয়া মাহফিল ছাড়া অন্য কোনো কার্যক্রম নেই। এক যুগে আগে যাঁরা নেতৃত্ব দিতেন বর্তমানে তাঁরাই নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। সংগঠনটির সভাপতি মাওলানা হাফেজ আবদুল মালেক ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা নেছারুল হকসহ হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া অন্যরা বিএনপির অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন না। জিয়ার কবর, দলের নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কোনো অনুষ্ঠানে দোয়া পড়া ছাড়া আর কোনো কাজে তাঁদের তেমন একটা দেখা যায় না।
বিএনপির আরেকটি বড় সংগঠন হচ্ছে শ্রমিক দল। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য হয়েও এই সংগঠনের সভাপতি হচ্ছেন নজরুল ইসলাম খান। এক যুগ ধরেই সংগঠনটির সভাপতি তিনি। তবে কাউন্সিলের মাধ্যেমে তিনি তৃতীয় বার সংগঠনটির সভাপতি হয়েছেন। এ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জাফরুল হাসান। বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রমে সময় দিতে গিয়ে নজরুল ইসলাম খান শ্রমিক দলের সাংগঠনিক কাজে সময় দিতে পারেন না। সংগঠনটির তাই আগের মতো সক্রিয়তা নেই। মাঠে-ময়দানেও তেমন কোনো কর্মসূচি নেই।
বর্তমান সরকারের গত পৌনে চার বছরের মধ্যে বিএনপি বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়ে গেছে। প্রধান ইস্যু নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্গঠনের দাবিতে অনড় অবস্থানে দলটি। এ লক্ষ্যে সারা দেশে রোডমার্চ করেছে বিএনপি। সম্প্রতি নেওয়া কর্মসূচি অনুযায়ী এক মাস গণসংযোগ করতে সারা দেশ সফর শুরু করবেন খালেদা জিয়া। তিনি বিভিন্ন জেলা শহরে আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য দেবেন। এ সফর বাস্তবায়ন করতে সারা দেশে সংগ্রাম কমিটি গঠনের কথা ছিল। কিন্তু বিএনপি কমিটি গঠন করতে পারেনি। তবে ১৮ দলীয় জোট নিয়ে কয়েকটি টিম গঠন করা হয়েছে। এই টিম কতটুকু সফল হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম সক্রিয় না থাকায় মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন। কিছু সংগঠন কার্যক্রমের দিক থেকে যেন ব্যক্তিকেন্দ্রিক সংগঠনে পরিণত হচ্ছে। বিএনপির ঢাকা মহানগর কমিটি, যুবদল, ছাত্রদল, কৃষক দল, মহিলা দল, শ্রমিক দলসহ অধিকাংশ অঙ্গ-সংগঠনের কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। তবে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম কিছুটা সন্তোষজনক বলে মনে করছে বিএনপি হাইকমান্ড।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে হলে প্রথমে দলের অঙ্গ-সংগঠনগুলোকে মজবুত করতে হয়। কিন্তু বিএনপির ১১টি সংগঠনের কোনোটিই শক্তিশালী নয়। সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে হলে ঢাকা মহানগর বিএনপির ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। মহানগর আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কোনো খবর নেই। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নিজে ছাত্রদলের কমিটি গঠন করার আগে ধারাবাহিকভাবে বৈঠকও করেছেন। যাঁরা কমিটিতে আছেন তাঁদের ব্যাপারে ভালোভাবে খোঁজ-খবর না নেওয়ায় শক্তিশালী কমিটি হয়নি। এই কমিটি দিয়ে আন্দোলন বেগবান হবে কি না, সন্দেহ প্রকাশ করেন এই নেতা।
তবে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে যে দুর্বল হয়ে পড়ছে তা মানতে নারাজ ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, 'আমাদের একটাই দাবি, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করা। এই দাবিকে সামনে রেখে দলকে সাংগঠনিকভাবে মজবুত করতে জনসংযোগ কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। জনসংযোগের পর কঠোর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।' তিনি বলেন, ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী আন্দোলনের জন্য ছাত্রদল অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। অন্যান্য মেয়াদোত্তীর্ণ অঙ্গ-সংগঠনেরও নতুন কমিটি গঠন করা হবে। আন্দোলনের পাশাপাশি দলকে ঢেলে সাজানো হবে। যেসব জেলায় কমিটি নেই তা দ্রুত সম্পন্ন করা হবে। তিনি অতীতের তুলনায় বিএনপি সাংগঠনিকভাবে অনেক শক্তিশালী বলে মনে করেন।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'দিন-তারিখ ঠিক করে আন্দোলন হয় না। আন্দোলন বেগবান করতে হলে প্রথমে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হয়। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আমরা গত সাড়ে তিন বছরে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছি। এখন দলের সাংগঠনিক অবস্থা জোরদার করতে পারলে সরকার যত চেষ্টাই করুক না কেন বিএনপির আন্দোলন দমাতে পারবে না।'
দলের ভাইস চেয়ারম্যান পদের এক নেতা জানান, দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করা নিয়ে অনেক কথা বলেছি। কিন্তু দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতারা এ নিয়ে তেমন একটা আগের মতো ভাবছেন না। গা-ছাড়া ভাব। খালেদা জিয়াকে সঠিক পরামর্শ দেওয়ার লোকও দলের মধ্যে কমে যাচ্ছে। দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক কিংবা নির্বাহী কমিটির বৈঠক হলেও অনেকে কোনো কথা বলতে চান না। অনেকের মিটিংয়ে হাজিরা দেওয়া ছাড়া কোনো কাজ নেই। তাঁদের অভিযোগ হচ্ছে, সঠিক পরামর্শ দিলেও সেই পরামর্শ কোনো কাজে লাগানো হয় না। এ জন্যই দলের সাংগঠনিক অবস্থা করুণ। তাই চেয়ারপারসন সরকারবিরোধী কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করতে সাহস পাচ্ছেন না।
বিএনপির ১১টি অঙ্গ-সংগঠনের মধ্যে অন্যতম সংগঠন যুবদল। যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে দীর্ঘদিন ধরে সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নিরবের মধ্যে গ্রুপিং চলছে। অর্থের বিনিময়ে কমিটিতে পদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটি থাকলেও নানা কারণে বিভাগ, জেলা ও থানা কমিটি করতে পারছে না। যার কারণে সাংগঠনিক তৎপরতা ঝিমিয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় নতুন করে খালেদা জিয়া যুবদলের নতুন কমিটির কথা ভাবছেন বলে জানা গেছে।
দুই যুগের বেশি সময় ধরে কৃষক দলের কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই বললেই চলে। কোনো কাউন্সিল হচ্ছে না। জোড়াতালি দিয়ে ১০১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি নামে থাকলেও মূলত কার্যক্রম নিষ্ক্রিয়। এই সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আর সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন শামসুজ্জামান দুদু। ২০ বছর ধরে এক নেতাই দখল করে আছেন সাধারণ সম্পাদকের পদ। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব গত পাঁচ বছর ধরে দলের কৃষক দলেরও ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। প্রয়াত নেতা মান্নান ভূঁইয়া যখন এই দলের সভাপতি ছিলেন তখন থেকেই (১৯৯২ সাল) শামসুজ্জামান দুদু এ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক।
বিএনপির নারী সংগঠন মহিলা দল। কিন্তু এই দলের কার্যক্রমও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। আগের মতো মহিলা দলের নেতাদের তেমন একটা দেখা যায় না। সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি যাঁরা হয়েছেন তাঁদের মধ্যে অনেকে এক বছরের মাথায় নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভুলেও যান না। দলের সভাপতি নূরে আরা সাফা ও সম্পাদক শিরিন সুলতানা ছাড়া অনেকেই সক্রিয় নন। তবে শিরিন সুলতানার বিরুদ্ধে একগুঁয়ে আচরণের অভিযোগ করেন এক মহিলা নেত্রী।
জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের কার্যক্রম চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। শুধু মিলাদ ও দোয়া মাহফিল ছাড়া অন্য কোনো কার্যক্রম নেই। এক যুগে আগে যাঁরা নেতৃত্ব দিতেন বর্তমানে তাঁরাই নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। সংগঠনটির সভাপতি মাওলানা হাফেজ আবদুল মালেক ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা নেছারুল হকসহ হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া অন্যরা বিএনপির অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন না। জিয়ার কবর, দলের নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কোনো অনুষ্ঠানে দোয়া পড়া ছাড়া আর কোনো কাজে তাঁদের তেমন একটা দেখা যায় না।
বিএনপির আরেকটি বড় সংগঠন হচ্ছে শ্রমিক দল। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য হয়েও এই সংগঠনের সভাপতি হচ্ছেন নজরুল ইসলাম খান। এক যুগ ধরেই সংগঠনটির সভাপতি তিনি। তবে কাউন্সিলের মাধ্যেমে তিনি তৃতীয় বার সংগঠনটির সভাপতি হয়েছেন। এ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জাফরুল হাসান। বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রমে সময় দিতে গিয়ে নজরুল ইসলাম খান শ্রমিক দলের সাংগঠনিক কাজে সময় দিতে পারেন না। সংগঠনটির তাই আগের মতো সক্রিয়তা নেই। মাঠে-ময়দানেও তেমন কোনো কর্মসূচি নেই।
No comments