ব্যাপক অনিয়ম- শিৰক নিয়োগ পরীৰায় 0 গ্রেফতার ২৩, বহিস্কার ৬০ 0 প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ 0 পরীৰা হলে মোবাইল ফোন ব্যবহার by বিভাষ বাড়ৈ
ব্যাপক অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা আর প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো সারাদেশে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য সহকারী শিৰক নিয়োগ পরীৰা। প্রশ্নপত্র জালিয়াতি, ভুয়া পরীৰার্থীদের অংশগ্রহণ, পরীৰার হলে মোবাইল ফোন ব্যবহার, পরীৰার্থীকে পরিদর্শকদের সহযোগিতা করা, আসন বণ্টনে অব্যবস্থাপনাসহ নানা অভিযোগ
পাওয়া গেছে সারাদেশ থেকে। অপরাধের দায়ে সারাদেশে বহিষ্কৃত হয়েছে ৬০ জন। গ্রেফতার করা হয়েছে ২৩ ভুয়া পরাীৰার্থীকে। ফলে দেশের ইতিহাসে একবারে সবচেয়ে বেশি শিৰক নিয়োগ দেয়ার ঘোষণা দিয়ে অনুষ্ঠিত পরীৰা রীতিমতো প্রশ্নের মুখে পড়েছে। তবে, প্রাথমিক ও গণশিৰা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিৰা অধিদফতর জানিয়েছে, পরীৰা শনত্মিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিৰা অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, ২৫ হাজার সহকারী শিৰক নিয়োগের জন্য শূন্যপদের বিপরীতে এ পরীৰায় ৮ লাখ ৭২ হাজার ৫৬৮ চাকরিপ্রার্থী অংশগ্রহণ করেছে। নেয়া হবে ২৫ হাজার শিৰক; একক পরীৰায় দেশের ইতিহাসে সবের্াচ্চ। প্রাথমিক শিৰা অধিদফতরের মহাপরিচালক শ্যামল কানত্মি ঘোষ জানিয়েছেন, শিৰকসংখ্যা আরও বেশি নেয়া হতে পারে। এর আগে গত বছর ২০ হাজারের মতো শিৰক নেয়া হয়েছিল। তিন পার্বত্য জেলা ছাড়া সারাদেশের ৬১টি জেলায় একযোগে এ পরীৰা অনুষ্ঠিত হয়। শুক্রবার সকালে পরীৰা চলাকালীন প্রাথমিক ও গণশিৰা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ডা. আফসারম্নল আমীন লিখিত পরীৰার কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। তিনি রাজধানীর তেজগাঁও সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ধানম-ি গভর্মেন্ট বয়েজ হাই স্কুল কেন্দ্র পরিদর্শনে যান এবং পরীৰা সম্পর্কিত বিভিন্ন খোঁজখবর নেন। মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মোঃ মোতাহার হোসেন ইডেন মহিলা কলেজ এবং অগ্রণী স্কুল এ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে বাংলা, ইংরেজী, গণিত ও সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে পরীৰা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটি বিষয়ের জন্য নির্ধারিত ২০ করে মোট ৮০ নমারের প্রশ্ন ছিল। নতুন নিয়োগ নীতিমালা অনুসারে এবারই প্রথম মাল্টিপল চয়েজ কোশ্চেন (এমসিকিউ) পদ্ধতিতে পরীৰা অনুষ্ঠিত হলো। পরীৰার উত্তরপত্রও মূল্যায়ন করা হবে অপটিক্যাল মার্ক রিডার (ওএমআর) পদ্ধতিতে। এতে করে খুব কম সময়ের মধ্যে পরীৰার ফল দেয়া সম্ভব হবে বলে জানা গেছে।
সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য সহকারী শিৰক নিয়োগ পরীৰায় ব্যাপক অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে সারাদেশ থেকে আমাদের প্রতিনিধি ও সংবাদদাতারা জানান- নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস করার অভিযোগে সাতক্ষারীয় ১৪ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১০ নারী ও চার পুরম্নষ। একই সঙ্গে একজনের হয়ে আরেকজন পরীক্ষা দিতে গিয়ে ধরা পড়েছে সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। তার বাড়ি সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার ভাদিয়ালী গ্রামে। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাশেম খান জানান, সকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ শহরের শহীদ রীমু সরণির আইনজীবী আলাউদ্দিনের বাড়ি থেকে তাদের সকাল নয়টার দিকে আটক করা হয়। এ সময় তারা বাড়ির ভেতর একটি প্রশ্ন দিয়ে খাতায় লেখালেখি করছিল। এই ১৪ জন তাঁর বাড়ির ভাড়াটিয়া ইকবাল হোসেনের ছাত্রছাত্রী।
শেরপুরে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। একটি কেন্দ্রে অনিয়ম ঠেকাতে ৩০ মিনিট পরে পরীক্ষা শুরম্ন হওয়া, কেন্দ্রের ভেতর বহিরাগতরা ঢুকে পরীক্ষা দেয়া, ভিআইপি পরীক্ষার্থীদের গোপন কক্ষের তথ্য ফাঁস, একই রোল নম্বরের একাধিক পরীক্ষার্থীসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। শেরপুর সদর উপজেলার পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অনিয়ম হয়েছে। একটি কেন্দ্রে ২৬টি কক্ষের পরীক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতানেত্রীদের আত্মীয়স্বজনের রোল নম্বর কেটে এনে কথিত ২৭ নম্বর কক্ষে বসিয়ে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ করা হয় বলে আভিযোগ করেছেন পরীৰার্থীরা।
সাতৰীরার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিৰক নিয়োগ পরীৰার প্রশ্নপত্র আগেই প্রকাশ হয়ে গেছে। কয়েক পরীৰার্থী ওই প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে আইনজীবী এ্যাডভোকেট আলাউদ্দিন আহম্মেদের বাড়িতে পরীৰা দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে মর্মে খবর পেয়ে তিনি সকাল সাড়ে ৮ টায় ওই বাড়ি থেকে তাদের গ্রেফতার করেন। আটককৃতরা হলো- সাতৰীরার তালা উপজেলার বলরামপুর গ্রামের নীলিমা মলিস্ন্লক, আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা গ্রামের ফারম্নখ হোসেন, একই গ্রামের রাকিবুল হাসান, একই উপজেলার শীতলপুর গ্রামের আজাহারম্নল ইসলাম, কাকবসিয়া গ্রামের শামিমা নার্গিস, আসাফুর রহমান, মহিষকুড় গ্রামের লাইজু, একসরা গ্রামের আয়েশা খাতুন, কালিগঞ্জ উপজেলার বারেয়া গ্রামের নাদিরা খাতুন, সাতৰীরা জেলা শহরের সুলতানপুরের ফারজানা, গড়েরকান্দার সালেহা খাতুন, শহরের মধুমোল্লার ডাঙির হালিমা খাতুন, জেলা সদরের নবাতকাটি গ্রামের ফাল্গুনী সরকার, ও একই উপজেলার বাঁকাল গ্রামের তানিয়া তাছনিন।
নানা অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে পঞ্চগড়ে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিৰক নিয়োগ পরীৰা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোন কোন কেন্দ্রে দেরিতে পরীৰা শুরম্ন, পরীৰা কৰে মোবাইল ফোন ব্যবহার, আসন বিন্যাসে অনিয়ম, পরীৰাথর্ীকে পরিদর্শকদের সহযোগিতা করার অভিযোগ করেছেন পরীৰাথর্ীরা। শুক্রবার শহরের বিভিন্ন পরীৰা কেন্দ্র ঘুরে এসব অনিয়ম দেখা গেছে। জেলা প্রাথমিক শিৰা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১১ টি কেন্দ্রে জেলার ৫ টি উপজেলার ৯ হাজার ১৫০ জন পরীৰায় অংশ নেয়।
পরীৰাথর্ীরা জানায়, অধিকাংশ কেন্দ্রের আসন ব্যবস্থা সঠিক ছিল না। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কুলের ছোট বেঞ্চে পরীৰার্থীদের বসার ব্যবস্থা করায় তাদের ঠাসাঠাসি করে বসতে হয়েছে। এর ফলে পরীৰার্থীরা একে অন্যের খাতা সহজে দেখাদেখি করেছে। এ ছাড়া অনেক কেন্দ্রে যানজটের কারণে পরীৰা শুরম্ন হয় ১০ থেকে ১৫ মিনিট দেরিতে। কিন্তু পরীৰা শেষে তাদের বাড়তি কোন সময় দেয়া হয়নি।
শহরের ২ নং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত পরীৰা ছিল ফ্রি স্টাইলে। এ ছাড়া অনেক পরীৰা কেন্দ্রে পরীৰার্থীদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দেখা গেছে। পাশাপাশি অনেক কৰ পরিদর্শককেও পরীৰার্থীদের সাহায্য করতে দেখা গেছে।
পঞ্চগড় ২ নং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ৫ নং কৰের পরীৰার্থী সুলতানা জেসমিন, ইসরাত জাহান, ইসমত আরা এবং ৭ নং কৰের মিজানুর রহমান বলেন, ১৫ থেকে ২০ মিনিট পরে তাদের প্রশ্নপত্র দেয়া হয়েছে। কিন্তু শেষে তাদের কোন বাড়তি সময় দেয়া হয়নি।
জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিক বলেন, সার্বিকভাবে পরীৰা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। যানজটের কারণে কোন কোন কেন্দ্রে পরীৰা দেরিতে শুরম্ন হলেও পরীৰাথর্ীদের বাড়তি সময় দেয়া হয়েছে। তাৎৰণিক পরিদর্শকদের কৰ পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে।
এদিকে, গত বৃহস্পতিবার রাতে সহকারী প্রাথমিক শিৰক নিয়োগ পরীৰার ভুয়া প্রশ্ন ও উত্তর সংবলিত কপি বিক্রি হতে দেখা গেছে। এসব প্রশ্নের ফটোকপির আশায় শহরের ফটোস্ট্যাট দোকানগুলো বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যনত্ম খোলা থাকতে দেখা যায়। তিন শ' থেকে ৫শ' টাকায় ভুয়া প্রশ্নপত্রের কারণে পরীৰার্থীরা বিভ্রানত্মিতে পড়ে।
রংপুরে সরকারী প্রাথমিক শিৰক নিয়োগ পরীৰায় ৪ ভুয়া পরীৰার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুক্রবার ছোট ভাইয়ের হয়ে পরীৰা দেয়ার সময় দুটি কেন্দ্র থেকে তারা গ্রেফতার হন।
জেলা প্রাথমিক শিৰা অফিস ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রংপুরে ২৮টি কেন্দ্রে ২৪,৫৯৯ পরীৰার্থী প্রাথমিক শিৰক নিয়োগ পরীৰায় অংশ নেন। নাটোরে প্রাথমিক শিৰক নিয়োগ পরীৰায় বদলি পরীৰা দিতে এসে সুব্রত কুমার দে নামে এক ভুয়া পরীৰার্থী আটক হয়েছে। বৃহস্পতিবার শহরতলীর দিঘাপতিয়া পি এন উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে বদলি পরীৰা দিতে এসে আটক হয় সুব্রত। পরীৰা চলাকালীন কর্তব্যরত ম্যাজিস্ট্রেটের সন্দেহ হলে সুব্রতকে চ্যালেঞ্জ করে। এর পর কাগজপত্র পরীৰা করে জানা যায়, সে বদলি পরীৰা দিতে এসেছিল। পরে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। সুব্রত সিংড়া উপজেলার সাইফুল ইসলাম নামের এক পরীৰাথর্ীর বদলে পরীৰা দিতে এসেছিল। আটক সুব্রত বাগেরহাট জেলার কু-লা গ্রামের দিলীপ কুমার দের ছেলে। এ ব্যাপারে নাটোর থানায় একটি মামলা হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রাথমিক শিৰক নিয়োগ পরীৰায় অংশগ্রহণকারী এক ভুয়া পরীৰার্থী গ্রেফতার হয়েছে। গ্রেফতারকৃত রবিউল ইসলাম (২১) শিবগঞ্জ উপজেলার শেরপুর ভা-ার গ্রামের ফারম্নক আহমেদের ছেলে।
সদর থানার এএসআই মোসাঃ সালেহা আক্তার জানান, শুক্রবার নিয়োগ পরীৰা চলার সময় শহরের নবাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে মোহাঃ আবু সেলিমের (ক্রমিক নং- ১১০৩৭) পরিবর্তে পরীৰা দিচ্ছিল রবিউল। নকল সিল ও স্বাৰর দেয়া ভুয়া প্রবেশপত্র দেখে সন্দেহ হলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এ ব্যাপারে নবাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিৰক হাসিনুর রহমান বাদী হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানায় একটি মামলা করেছে।
এ ছাড়া দেশের অনেক জেলা ও উপজেলা থেকেও পরীৰায় নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
প্রাথমিক ও গণশিৰা অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, ২৫ হাজার সহকারী শিৰক নিয়োগের জন্য শূন্যপদের বিপরীতে এ পরীৰায় ৮ লাখ ৭২ হাজার ৫৬৮ চাকরিপ্রার্থী অংশগ্রহণ করেছে। নেয়া হবে ২৫ হাজার শিৰক; একক পরীৰায় দেশের ইতিহাসে সবের্াচ্চ। প্রাথমিক শিৰা অধিদফতরের মহাপরিচালক শ্যামল কানত্মি ঘোষ জানিয়েছেন, শিৰকসংখ্যা আরও বেশি নেয়া হতে পারে। এর আগে গত বছর ২০ হাজারের মতো শিৰক নেয়া হয়েছিল। তিন পার্বত্য জেলা ছাড়া সারাদেশের ৬১টি জেলায় একযোগে এ পরীৰা অনুষ্ঠিত হয়। শুক্রবার সকালে পরীৰা চলাকালীন প্রাথমিক ও গণশিৰা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ডা. আফসারম্নল আমীন লিখিত পরীৰার কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। তিনি রাজধানীর তেজগাঁও সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ধানম-ি গভর্মেন্ট বয়েজ হাই স্কুল কেন্দ্র পরিদর্শনে যান এবং পরীৰা সম্পর্কিত বিভিন্ন খোঁজখবর নেন। মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মোঃ মোতাহার হোসেন ইডেন মহিলা কলেজ এবং অগ্রণী স্কুল এ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে বাংলা, ইংরেজী, গণিত ও সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে পরীৰা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটি বিষয়ের জন্য নির্ধারিত ২০ করে মোট ৮০ নমারের প্রশ্ন ছিল। নতুন নিয়োগ নীতিমালা অনুসারে এবারই প্রথম মাল্টিপল চয়েজ কোশ্চেন (এমসিকিউ) পদ্ধতিতে পরীৰা অনুষ্ঠিত হলো। পরীৰার উত্তরপত্রও মূল্যায়ন করা হবে অপটিক্যাল মার্ক রিডার (ওএমআর) পদ্ধতিতে। এতে করে খুব কম সময়ের মধ্যে পরীৰার ফল দেয়া সম্ভব হবে বলে জানা গেছে।
সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য সহকারী শিৰক নিয়োগ পরীৰায় ব্যাপক অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে সারাদেশ থেকে আমাদের প্রতিনিধি ও সংবাদদাতারা জানান- নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস করার অভিযোগে সাতক্ষারীয় ১৪ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১০ নারী ও চার পুরম্নষ। একই সঙ্গে একজনের হয়ে আরেকজন পরীক্ষা দিতে গিয়ে ধরা পড়েছে সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। তার বাড়ি সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার ভাদিয়ালী গ্রামে। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাশেম খান জানান, সকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ শহরের শহীদ রীমু সরণির আইনজীবী আলাউদ্দিনের বাড়ি থেকে তাদের সকাল নয়টার দিকে আটক করা হয়। এ সময় তারা বাড়ির ভেতর একটি প্রশ্ন দিয়ে খাতায় লেখালেখি করছিল। এই ১৪ জন তাঁর বাড়ির ভাড়াটিয়া ইকবাল হোসেনের ছাত্রছাত্রী।
শেরপুরে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। একটি কেন্দ্রে অনিয়ম ঠেকাতে ৩০ মিনিট পরে পরীক্ষা শুরম্ন হওয়া, কেন্দ্রের ভেতর বহিরাগতরা ঢুকে পরীক্ষা দেয়া, ভিআইপি পরীক্ষার্থীদের গোপন কক্ষের তথ্য ফাঁস, একই রোল নম্বরের একাধিক পরীক্ষার্থীসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। শেরপুর সদর উপজেলার পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অনিয়ম হয়েছে। একটি কেন্দ্রে ২৬টি কক্ষের পরীক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতানেত্রীদের আত্মীয়স্বজনের রোল নম্বর কেটে এনে কথিত ২৭ নম্বর কক্ষে বসিয়ে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ করা হয় বলে আভিযোগ করেছেন পরীৰার্থীরা।
সাতৰীরার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিৰক নিয়োগ পরীৰার প্রশ্নপত্র আগেই প্রকাশ হয়ে গেছে। কয়েক পরীৰার্থী ওই প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে আইনজীবী এ্যাডভোকেট আলাউদ্দিন আহম্মেদের বাড়িতে পরীৰা দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে মর্মে খবর পেয়ে তিনি সকাল সাড়ে ৮ টায় ওই বাড়ি থেকে তাদের গ্রেফতার করেন। আটককৃতরা হলো- সাতৰীরার তালা উপজেলার বলরামপুর গ্রামের নীলিমা মলিস্ন্লক, আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা গ্রামের ফারম্নখ হোসেন, একই গ্রামের রাকিবুল হাসান, একই উপজেলার শীতলপুর গ্রামের আজাহারম্নল ইসলাম, কাকবসিয়া গ্রামের শামিমা নার্গিস, আসাফুর রহমান, মহিষকুড় গ্রামের লাইজু, একসরা গ্রামের আয়েশা খাতুন, কালিগঞ্জ উপজেলার বারেয়া গ্রামের নাদিরা খাতুন, সাতৰীরা জেলা শহরের সুলতানপুরের ফারজানা, গড়েরকান্দার সালেহা খাতুন, শহরের মধুমোল্লার ডাঙির হালিমা খাতুন, জেলা সদরের নবাতকাটি গ্রামের ফাল্গুনী সরকার, ও একই উপজেলার বাঁকাল গ্রামের তানিয়া তাছনিন।
নানা অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে পঞ্চগড়ে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিৰক নিয়োগ পরীৰা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোন কোন কেন্দ্রে দেরিতে পরীৰা শুরম্ন, পরীৰা কৰে মোবাইল ফোন ব্যবহার, আসন বিন্যাসে অনিয়ম, পরীৰাথর্ীকে পরিদর্শকদের সহযোগিতা করার অভিযোগ করেছেন পরীৰাথর্ীরা। শুক্রবার শহরের বিভিন্ন পরীৰা কেন্দ্র ঘুরে এসব অনিয়ম দেখা গেছে। জেলা প্রাথমিক শিৰা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১১ টি কেন্দ্রে জেলার ৫ টি উপজেলার ৯ হাজার ১৫০ জন পরীৰায় অংশ নেয়।
পরীৰাথর্ীরা জানায়, অধিকাংশ কেন্দ্রের আসন ব্যবস্থা সঠিক ছিল না। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কুলের ছোট বেঞ্চে পরীৰার্থীদের বসার ব্যবস্থা করায় তাদের ঠাসাঠাসি করে বসতে হয়েছে। এর ফলে পরীৰার্থীরা একে অন্যের খাতা সহজে দেখাদেখি করেছে। এ ছাড়া অনেক কেন্দ্রে যানজটের কারণে পরীৰা শুরম্ন হয় ১০ থেকে ১৫ মিনিট দেরিতে। কিন্তু পরীৰা শেষে তাদের বাড়তি কোন সময় দেয়া হয়নি।
শহরের ২ নং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত পরীৰা ছিল ফ্রি স্টাইলে। এ ছাড়া অনেক পরীৰা কেন্দ্রে পরীৰার্থীদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দেখা গেছে। পাশাপাশি অনেক কৰ পরিদর্শককেও পরীৰার্থীদের সাহায্য করতে দেখা গেছে।
পঞ্চগড় ২ নং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ৫ নং কৰের পরীৰার্থী সুলতানা জেসমিন, ইসরাত জাহান, ইসমত আরা এবং ৭ নং কৰের মিজানুর রহমান বলেন, ১৫ থেকে ২০ মিনিট পরে তাদের প্রশ্নপত্র দেয়া হয়েছে। কিন্তু শেষে তাদের কোন বাড়তি সময় দেয়া হয়নি।
জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিক বলেন, সার্বিকভাবে পরীৰা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। যানজটের কারণে কোন কোন কেন্দ্রে পরীৰা দেরিতে শুরম্ন হলেও পরীৰাথর্ীদের বাড়তি সময় দেয়া হয়েছে। তাৎৰণিক পরিদর্শকদের কৰ পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে।
এদিকে, গত বৃহস্পতিবার রাতে সহকারী প্রাথমিক শিৰক নিয়োগ পরীৰার ভুয়া প্রশ্ন ও উত্তর সংবলিত কপি বিক্রি হতে দেখা গেছে। এসব প্রশ্নের ফটোকপির আশায় শহরের ফটোস্ট্যাট দোকানগুলো বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যনত্ম খোলা থাকতে দেখা যায়। তিন শ' থেকে ৫শ' টাকায় ভুয়া প্রশ্নপত্রের কারণে পরীৰার্থীরা বিভ্রানত্মিতে পড়ে।
রংপুরে সরকারী প্রাথমিক শিৰক নিয়োগ পরীৰায় ৪ ভুয়া পরীৰার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুক্রবার ছোট ভাইয়ের হয়ে পরীৰা দেয়ার সময় দুটি কেন্দ্র থেকে তারা গ্রেফতার হন।
জেলা প্রাথমিক শিৰা অফিস ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রংপুরে ২৮টি কেন্দ্রে ২৪,৫৯৯ পরীৰার্থী প্রাথমিক শিৰক নিয়োগ পরীৰায় অংশ নেন। নাটোরে প্রাথমিক শিৰক নিয়োগ পরীৰায় বদলি পরীৰা দিতে এসে সুব্রত কুমার দে নামে এক ভুয়া পরীৰার্থী আটক হয়েছে। বৃহস্পতিবার শহরতলীর দিঘাপতিয়া পি এন উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে বদলি পরীৰা দিতে এসে আটক হয় সুব্রত। পরীৰা চলাকালীন কর্তব্যরত ম্যাজিস্ট্রেটের সন্দেহ হলে সুব্রতকে চ্যালেঞ্জ করে। এর পর কাগজপত্র পরীৰা করে জানা যায়, সে বদলি পরীৰা দিতে এসেছিল। পরে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। সুব্রত সিংড়া উপজেলার সাইফুল ইসলাম নামের এক পরীৰাথর্ীর বদলে পরীৰা দিতে এসেছিল। আটক সুব্রত বাগেরহাট জেলার কু-লা গ্রামের দিলীপ কুমার দের ছেলে। এ ব্যাপারে নাটোর থানায় একটি মামলা হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রাথমিক শিৰক নিয়োগ পরীৰায় অংশগ্রহণকারী এক ভুয়া পরীৰার্থী গ্রেফতার হয়েছে। গ্রেফতারকৃত রবিউল ইসলাম (২১) শিবগঞ্জ উপজেলার শেরপুর ভা-ার গ্রামের ফারম্নক আহমেদের ছেলে।
সদর থানার এএসআই মোসাঃ সালেহা আক্তার জানান, শুক্রবার নিয়োগ পরীৰা চলার সময় শহরের নবাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে মোহাঃ আবু সেলিমের (ক্রমিক নং- ১১০৩৭) পরিবর্তে পরীৰা দিচ্ছিল রবিউল। নকল সিল ও স্বাৰর দেয়া ভুয়া প্রবেশপত্র দেখে সন্দেহ হলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এ ব্যাপারে নবাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিৰক হাসিনুর রহমান বাদী হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানায় একটি মামলা করেছে।
এ ছাড়া দেশের অনেক জেলা ও উপজেলা থেকেও পরীৰায় নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
No comments