যা করা যেতে পারে
ছাত্রছাত্রী পড়ানো নিজের ছেলেমেয়ে দু'জনকে নিয়ে স্কুলে যেতেন তাহমিনা রশীদ। পড়াশোনায় বেশ ভালোই দু'জন। ফার্স্ট-সেকেন্ডের মধ্যেই থাকত ওরা। স্কুলে আসা অন্য অভিভাবকরা জানতে চাইতেন কে পড়াচ্ছে ওদের। তাহমিনা গ্র্যাজুয়েশনের পর বিয়ে-সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে আর পড়তে পারেননি।
নানা কাজের পর পুরো সময়টাই দিতেন সন্তানদের। যতটা সম্ভব যত্ন করে পড়িয়েছেন ওদের। একথা জানার পরই অন্য অভিভাবকরা তাকে অনুরোধ জানাতে শুরু করেন তাদের ছেলেমেয়েদের পড়ানোর জন্য। সন্তানদের সহপাঠীদের নিয়েই শুরু করেছিলেন। আর এখন কয়েক ব্যাচে ১৫ থেকে ২০ জন পড়তে আসে তার কাছে। 'সময় কাটানোর জন্য শুরু করলেও এখন এটা আমার আয়ের পথ হয়ে দাঁড়িয়েছে'_ বললেন তাহমিনা। আপনি শিক্ষিত, হাতে অনেকটা সময় আছে, ভেবে দেখুন বাড়তি আয়ের এ পথটাকে কাজে লাগাতে পারেন কি-না। যে পাড়ায় থাকেন সে পাড়ায় আগে খোঁজ করুন। প্রয়োজনে পাড়ার দোকানগুলোতে তিন লাইনের একটি বিজ্ঞাপন দিয়ে দেখুন। ফ্ল্যাটে যে বাড়িতে শিশু আছে তাদের সঙ্গে আলাপ করুন। সবাই গৃহশিক্ষক রাখেন, কাউকে তো আবার প্রাইভেট পড়াতে অন্যত্র ছুটতে হয়। বাড়ির কাছে আপনাকে পেয়ে যদি উপকার হয় তবে সে সুযোগ অনেকেই হারাবেন না। তবে পড়ানোর জন্য ধৈর্য যেমন দরকার তেমনি দরকার সৃজনশীলতা। শিশুরা গৎবাঁধা পড়াশোনা পছন্দ করে না। আপনার কাছে যদি সে একটু আলাদা কিছু পায় তবে সে আপনাকেও পছন্দ করবে, নিজের পড়ার প্রতি আগ্রহী হবে।
গান শেখানো
হাবিবা আখতার ছোটবেলায় গান শিখেছিলেন শখে। সেই শখ যে তার জন্য এমন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে নিজেও জানতেন না তিনি । নিজের মেয়েকে নিয়ে মাঝে মধ্যে বসতেন। এক এক করে ভাই-বোনদের বাচ্চাদেরও শেখাতে শুরু করলেন। অনেকেরই শখ ছেলেমেয়ে গান-নাচ শিখুক। কিন্তু যাতায়াতের কথা ভেবে কেউই দূরে যেতে চান না। প্রতিবেশী অনেকেই যেচে এসে ধরলেন হাবিবাকে। অনেকটা বাধ্য হয়েই দুপুরের ভাত-ঘুম ফেলে বাচ্চাদের নিয়ে বসতে শুরু করলেন হাবিবা। সাড়াও পেলেন। এবার নিজেই একজন নাচের শিক্ষক ঠিক করলেন। চারুকলায় পড়া ভাগ্নেকে বললেন, বাচ্চাদের ছবি আঁকা শেখাতে। ব্যস, এভাবেই
জমে উঠল হাবিবার স্কুল। আপনি স্কুল-কলেজে পড়ার সময় গান শিখেছিলেন কিংবা নাচ কিংবা খুব ভালো আবৃত্তি করতে পারতেন? নিজের ভেতরের সেই লুকিয়ে থাকা সত্তাটাকে জাগিয়ে তুলুন। নিজে যেমন আনন্দ পাবেন তেমনি আপনার কল্যাণে এ যুগের শিশুদের সময়টাও ভরে উঠবে আনন্দে। তিন-চারজন শিশু নিয়েই শুরু করুন। তারাই অন্যদের আগ্রহী করে তুলতে পারবে।
অর্ডারে রান্না
পুরো রোজার মাসটা ভীষণ ব্যস্ততায় কেটেছে সাহানা ইকবালের। বাড়ির কাছাকছি একটি নামি ফুড শপে ইফতারের জন্য মিষ্টি আইটেম সরবরাহ করতে হয়েছে। এমনিতে সারা বছর ঘরোয়া পার্টির জন্য রান্না করে দেওয়া, শুধু কাবাব তৈরি করে দেওয়া, কোনো প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে পিঠা সরবরাহ করার কাজ করতে হয়। আজকাল তো শবেবরাতের জন্য নানা ধরনের হালুয়ারও অর্ডার পাচ্ছেন তিনি। সাহানা জানালেন, রান্নার প্রতি ভালোলাগা থাকলে এবং গুণগত মান নিশ্চিত করতে পারলে এ ধরনের কাজকে আয়ের উৎস হিসেবে যে কেউ কাজে লাগাতে পারেন। এ কাজের জন্য প্রধানত প্রয়োজন বিশ্বাসযোগ্যতা। আপনার ওপর কেউ একবার বিশ্বাস স্থাপন করতে পারলে কাজের অভাব হবে না। আপনি চাইলে এ কাজটি ছোট পরিসরে করে দেখতে পারেন। পাড়ার দোকান, স্কুলের ক্যান্টিন বা কোনো অফিসেও লিফলেট দিয়ে দেখতে পারেন। সাড়া অবশ্যই পাবেন। শুরুতে দামের বিষয়ে ছাড় দিয়ে হলেও আপনাকে মানের নিশ্চয়তা দিতে হবে। স্বাদের ক্ষেত্রে কম্প্রোমাইজ কেউ করবে না। আজকাল সুপার শপগুলোও নানা ধরনের ঘরে তৈরি ফ্রোজেন ফুড রাখছে। চাইলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও আপনি কিছু করতে পারেন। পরিচিতদের মধ্যে শুধু কেক বানিয়ে বিক্রি করলেও আপনার ভালো আয় হতে পারে।
শিশুদের পোশাক
এক সময় আত্মকর্মসংস্থানের জন্য অনেকে ঘরে বুটিক ব্যবসা শুরু করেছিলেন। কিন্তু এখন চারপাশে হাজার হাজার মার্কেটে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় নানা বুটিক। আপনি নিজের সন্তানদের জন্য নিজে ডিজাইন করে পোশাক বানান? কাজে লাগান সেই মেধাকে। টিনা মনজুর এভাবেই গড়ে তুলেছেন তার প্রজাপতি নামের শিশুদের জন্য বিশেষ বুটিকটি। পেশায় শিক্ষক হলেও টিনা তার অবসরকে কাজে লাগিয়ে বাড়তি আয়ের পথ করেছেন এভাবেই।
ভেজিটেবল কার্ভিং ও হলুদের তত্ত্ব
মাসুমা নবী রান্না করতে ভালোবাসতেন। শিখেছেনও অনেক রকম রান্না। বই লিখেছেন কয়েকটি। কিন্তু তার ভালোলাগার জায়গাটি ছিল ভেজিটেবল কার্ভিং। আলু, গাজর, মিষ্টিকুমড়াসহ নানা রকম সবজি বা ফল কেটে
কুটির শিল্পে পরিণত করার এ বিদ্যাটা তাকে আকর্ষণ করত খুব। থাই কার্ভিং শেখার পর কাজের অভাব হয়নি তার। দুয়েকটা কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন। তারপর অর্ডার যেমন পেয়েছেন তেমনি শেখার জন্যও এসেছেন অনেকে। বিয়ের মৌসুমে ব্যস্ততা বাড়ে তার। কার্ভিং ব্যবহার করে হলুদের পুরো তত্ত্ব সাজানোর কাজ পেয়ে যান অনেক। কার্ভিং করা ফলের ঝুড়ি, কাবাবের ময়ূর, পানের বারবি ডলসহ নানা আইটেম করেন তিনি। 'মানুষের মধ্যে শৌখিনতা বেড়েছে। সবাই নতুনত্ব খোঁজেন। অন্যদিকে ব্যস্ততার কারণে এমন কাউকে খোঁজেন যে, আপনার সেই চাহিদা পূরণ করতে পারেন_ বললেন মাসুমা।
অন্যান্য
সবার পক্ষে হঠাৎ করে বড় কোনো আয়োজন নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া সম্ভব নয় এবং সেটা উচিতও নয়। যেহেতু নিজের একটা অবলম্বনের পথ সবে খুঁজতে শুরু করেছেন আপনি, সেহেতু চেষ্টা করুন খরচ যতটা সম্ভব না বাড়াতে। চাইলে বাড়িতে ডে কেয়ার সেন্টারের ব্যবস্থা করতে পারেন। পরিচিত কারও সন্তান দিয়ে শুরু করুন। আস্তে আস্তে প্রচার হলে, পরিচিত পেতে শুরু করলে বড় আকারে কাজে নামতে পারবেন। বড় ফ্ল্যাটে একটা ঘর খালিই পড়ে আছে? ঢাকা শহরে একা থাকে এমন পরিচিত কোনো মেয়েকে ভাড়া দিতে পারেন। এক ঘরে দু'জন মেয়ে থাকলে যদি ১০ হাজার টাকা আসে তাইবা মন্দ কী? আপনারও আয়ের পথ হলো আর মেয়েরাও ব্যাচেলর বলে বাড়ি ভাড়া খোঁজার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেল। ফুল সাজিয়ে, পটে ছোট গাছ তৈরি করে, এমনকি নিজে ডিজাইন করে ছোট ছোট আসবাবপত্র বিক্রি করতে পারেন আপনি। শুরুটা এভাবেই করেছিলেন কাকলি। নিজের ফ্ল্যাট সাজাতে যেসব আসবাব বানিয়েছিলেন তাই ভালো লেগে গেল অনেকের। ফলে নিজে মিস্ত্রি রেখে এখন অর্ডারে কাজ করে ভালোই আয় করছেন তিনি।
কিছু করার জন্য ইচ্ছাটাই হলো প্রধান শক্তি। কী করবেন, কীভাবে করবেন তা ভাবতেই হবে। তবে আগে নিজেকে বিশ্বাস করতে শিখুন। সংসারে আপনার অবদান আপনাকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে পারবে।
No comments