ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা ধ্বংস চলছেই, এবার লালবাগের মন্দির
রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী পুরোনো ভবনগুলো ভেঙে ফেলার ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগর সংরক্ষণ কমিটি ২০০৯ সালে ঢাকার সংরক্ষণযোগ্য ঐতিহ্যবাহী ভবনের যে তালিকা করেছিল, তার ধারাবাহিকতা রক্ষা না পাওয়া এর একটি বড় কারণ।
ঐতিহ্যবাহী ভবন ধ্বংসের সর্বশেষ শিকার হয়েছে লালবাগের শেখ সাহেব বাজারের দৃষ্টিনন্দন মন্দিরটি।
পুরান ঢাকার কোনো কোনো মহল্লার প্রায় সব কটি ঐতিহ্যবাহী ভবন ইতিমধ্যে ভেঙে ফেলা হয়েছে। ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য ইতিহাসপ্রেমী ও বিশেষজ্ঞদের তাগিদ এবং ক্ষেত্রবিশেষে সরকারি প্রচেষ্টা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক সময়ে নির্বিচারে পুরোনো স্থাপত্য ভাঙার হার বেড়েছে বলেই অনেকে মনে করেন।
পুরান ঢাকার বেশির ভাগ এলাকায় এখন ঐতিহ্যবাহী ভবনের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। সম্প্রতি উত্তর মৈশুন্ডি এলাকায় গিয়ে কোনো পুরোনো ভবন পাওয়া যায়নি। সেখানে শত বছরের পুরোনো অন্তত ১০টি ভবন ভেঙে ফেলা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রাতের বেলায় এসব ভবন ভাঙা হয়। সেখানে বহুতল ভবন হবে বলে তাঁরা শুনেছেন।
ওয়ারী থানার গোলক পাল লেনে রাস্তার পাশের কয়েকটি পুরোনো ভবন ভেঙে নতুন ভবন তৈরি হচ্ছে। লালবাগের আমলীগোলায় জগন্নাথ সাহার ঐতিহ্যবাহী বাড়িটি ভেঙে বসানো হয়েছে গভীর নলকূপ। মোগল আমলে নির্মিত ঐতিহাসিক স্থাপনা ছোট কাটরা ও বড় কাটরার অবস্থা দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে। বিধি অনুযায়ী, সংরক্ষিত এসব স্থাপনার চারদিক ফাঁকা রাখার কথা থাকলেও চারপাশে বড় বড় ভবন তোলা হচ্ছে।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা যায়, সরকারি-বেসরকারি প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত নগর সংরক্ষণ কমিটি ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঐতিহ্যবাহী ভবনের যে তালিকা করেছিল, তার ধারাবাহিকতা রক্ষা না পাওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ কমিটির সভাও অনেক দিন ধরে হয় না। ২০০৯ সালে এ বিষয়ে প্রকাশিত গেজেটে পুরান ও নতুন ঢাকার ৯৩টি ভবন ছাড়াও চারটি অঞ্চল ও এর ১৩টি রাস্তাকে সম্পূর্ণ সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছিল। কথা ছিল, ওই তালিকায় অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা এবং এলাকা যুক্ত করা হবে। কিন্তু সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়নি। তা ছাড়া অর্পিত সম্পত্তি আইনের কয়েকটি ‘দুর্বলতার’ সুযোগেও অনেক ভবন ভেঙে ফেলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজউকের সদস্য (পরিকল্পনা) শেখ আবদুল মান্নান জানান, কিছু ভবনকে নোটিশ করা হয়েছে। কয়েকটি ভবনের মালিক ও ভাঙার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
সংরক্ষিত ও ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এ বছরের শুরুর দিকে সরকারি-বেসরকারি পাঁচজন প্রতিনিধির একটি উপকমিটি করা হয়। এ উপকমিটি সিদ্ধান্ত নেয়, রাজউক স্থাপনা ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এ ছাড়া কমিটি একটি নীতিমালা তৈরি করছে, যাতে মূল কাঠামো ঠিক রেখে পুরোনো ভবনগুলো সংস্কার করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে।
সর্বশেষ শিকার: পুরান ঢাকার সংরক্ষিত তালিকাভুক্ত ৩৩ প্যারীদাস রোডের বাড়ি, সংরক্ষিত এলাকা ২৮ উৎসব পোদ্দার লেনের দোতলা বাড়ি, টিপু সুলতান রোডের শঙ্খনিধি ভবনের একটি মন্দির, আলাউদ্দিন রোড ও ডালপট্টির একাধিক বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়েছে। এ প্রবণতার সর্বশেষ শিকার হয়েছে লালবাগের শেখ সাহেব বাজারে অবস্থিত জমিদার কেদারনাথ শীলের বাসভবনসংলগ্ন শৈলীময় স্থাপত্যের মন্দিরটি। ২৫৫ ও ২৫৬ নম্বর হোল্ডিংয়ে অবস্থিত স্থাপনাটি সপ্তাহ খানেক ধরে ভাঙা হচ্ছে। মন্দিরটি অনেক দিন ধরে কারখানা ও গুদামঘর হিসেবে ব্যবহূত হয়ে আসছিল।
স্থানীয় লোকজন জানান, মন্দিরের একাংশের বর্তমান ভোগদখলকারী মৃধা অ্যান্ড কোম্পানি কিছু দিন আগে ভবনটির ছাদ ভাঙার জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করে। ছাদটি দ্রুত ভেঙেও ফেলা হয়।
মৃধা অ্যান্ড কোম্পানির একজন অংশীদার মাহমুদ আলী মৃধা বলেন, মন্দিরটি তাঁরা ভাঙেননি। দুই মাস আগের ঝড়-বৃষ্টিতে তা ভেঙে গেছে। তবে গত সোমবার সেখানে নিয়োজিত শ্রমিক ও আশপাশের বাসিন্দারা বলেন, মন্দিরের ছাদ আয়োজন করেই ভাঙা হয়েছে।
মন্দিরের মূল অংশটির সামনের দিকে রয়েছে কারুকার্যমণ্ডিত পাঁচটি অর্ধবৃত্তাকার খিলান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই দুটি হোল্ডিং নম্বরের মালিক কেদারনাথ শীল ও তাঁর ভাই পরিতোষ শীল ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর ভারতে চলে যান। পরে বিভিন্ন সময় বিহারিসহ কয়েকজনের কাছে ওই সম্পত্তি লিজ দেওয়া হয়। এভাবে সম্পত্তির একাংশ মৃধা অ্যান্ড কোম্পানির হাতে আসে।
নগর সমন্বয় কমিটির সদস্য এবং ‘আরবান স্টাডি গ্রুপ’ নামের একটি সংরক্ষণকামী সংগঠনের প্রধান নির্বাহী স্থপতি তাইমুর ইসলাম ঘটনাস্থল ঘুরে প্রথম আলোকে জানান, প্রায় ১০০ বছরের পুরোনো স্থাপনাটি ধ্রুপদি স্থাপত্যরীতিতে নির্মিত হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের স্থাপনা ধ্বংস করা শুধু দুঃখজনকই নয়, আমাদের জন্য চরম অগৌরবজনক।’
স্থাপত্য ইনস্টিটিউটের সভাপতি মোবাশ্বের হোসেন শুক্রবার এ বিষয়ে বলেন, সংরক্ষিত বা ঐতিহ্যবাহী ভবনগুলো রক্ষার সব প্রচেষ্টাই প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কথা ছিল রাজউক এ ধরনের ভবনের তালিকা করবে। সিটি করপোরেশন এ ধ্বংসযজ্ঞের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু এখন তো সিটি করপোরেশনের কোনো মা-বাপ নেই।
পুরান ঢাকার কোনো কোনো মহল্লার প্রায় সব কটি ঐতিহ্যবাহী ভবন ইতিমধ্যে ভেঙে ফেলা হয়েছে। ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য ইতিহাসপ্রেমী ও বিশেষজ্ঞদের তাগিদ এবং ক্ষেত্রবিশেষে সরকারি প্রচেষ্টা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক সময়ে নির্বিচারে পুরোনো স্থাপত্য ভাঙার হার বেড়েছে বলেই অনেকে মনে করেন।
পুরান ঢাকার বেশির ভাগ এলাকায় এখন ঐতিহ্যবাহী ভবনের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। সম্প্রতি উত্তর মৈশুন্ডি এলাকায় গিয়ে কোনো পুরোনো ভবন পাওয়া যায়নি। সেখানে শত বছরের পুরোনো অন্তত ১০টি ভবন ভেঙে ফেলা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রাতের বেলায় এসব ভবন ভাঙা হয়। সেখানে বহুতল ভবন হবে বলে তাঁরা শুনেছেন।
ওয়ারী থানার গোলক পাল লেনে রাস্তার পাশের কয়েকটি পুরোনো ভবন ভেঙে নতুন ভবন তৈরি হচ্ছে। লালবাগের আমলীগোলায় জগন্নাথ সাহার ঐতিহ্যবাহী বাড়িটি ভেঙে বসানো হয়েছে গভীর নলকূপ। মোগল আমলে নির্মিত ঐতিহাসিক স্থাপনা ছোট কাটরা ও বড় কাটরার অবস্থা দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে। বিধি অনুযায়ী, সংরক্ষিত এসব স্থাপনার চারদিক ফাঁকা রাখার কথা থাকলেও চারপাশে বড় বড় ভবন তোলা হচ্ছে।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা যায়, সরকারি-বেসরকারি প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত নগর সংরক্ষণ কমিটি ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঐতিহ্যবাহী ভবনের যে তালিকা করেছিল, তার ধারাবাহিকতা রক্ষা না পাওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ কমিটির সভাও অনেক দিন ধরে হয় না। ২০০৯ সালে এ বিষয়ে প্রকাশিত গেজেটে পুরান ও নতুন ঢাকার ৯৩টি ভবন ছাড়াও চারটি অঞ্চল ও এর ১৩টি রাস্তাকে সম্পূর্ণ সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছিল। কথা ছিল, ওই তালিকায় অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা এবং এলাকা যুক্ত করা হবে। কিন্তু সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়নি। তা ছাড়া অর্পিত সম্পত্তি আইনের কয়েকটি ‘দুর্বলতার’ সুযোগেও অনেক ভবন ভেঙে ফেলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজউকের সদস্য (পরিকল্পনা) শেখ আবদুল মান্নান জানান, কিছু ভবনকে নোটিশ করা হয়েছে। কয়েকটি ভবনের মালিক ও ভাঙার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
সংরক্ষিত ও ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এ বছরের শুরুর দিকে সরকারি-বেসরকারি পাঁচজন প্রতিনিধির একটি উপকমিটি করা হয়। এ উপকমিটি সিদ্ধান্ত নেয়, রাজউক স্থাপনা ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এ ছাড়া কমিটি একটি নীতিমালা তৈরি করছে, যাতে মূল কাঠামো ঠিক রেখে পুরোনো ভবনগুলো সংস্কার করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে।
সর্বশেষ শিকার: পুরান ঢাকার সংরক্ষিত তালিকাভুক্ত ৩৩ প্যারীদাস রোডের বাড়ি, সংরক্ষিত এলাকা ২৮ উৎসব পোদ্দার লেনের দোতলা বাড়ি, টিপু সুলতান রোডের শঙ্খনিধি ভবনের একটি মন্দির, আলাউদ্দিন রোড ও ডালপট্টির একাধিক বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়েছে। এ প্রবণতার সর্বশেষ শিকার হয়েছে লালবাগের শেখ সাহেব বাজারে অবস্থিত জমিদার কেদারনাথ শীলের বাসভবনসংলগ্ন শৈলীময় স্থাপত্যের মন্দিরটি। ২৫৫ ও ২৫৬ নম্বর হোল্ডিংয়ে অবস্থিত স্থাপনাটি সপ্তাহ খানেক ধরে ভাঙা হচ্ছে। মন্দিরটি অনেক দিন ধরে কারখানা ও গুদামঘর হিসেবে ব্যবহূত হয়ে আসছিল।
স্থানীয় লোকজন জানান, মন্দিরের একাংশের বর্তমান ভোগদখলকারী মৃধা অ্যান্ড কোম্পানি কিছু দিন আগে ভবনটির ছাদ ভাঙার জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করে। ছাদটি দ্রুত ভেঙেও ফেলা হয়।
মৃধা অ্যান্ড কোম্পানির একজন অংশীদার মাহমুদ আলী মৃধা বলেন, মন্দিরটি তাঁরা ভাঙেননি। দুই মাস আগের ঝড়-বৃষ্টিতে তা ভেঙে গেছে। তবে গত সোমবার সেখানে নিয়োজিত শ্রমিক ও আশপাশের বাসিন্দারা বলেন, মন্দিরের ছাদ আয়োজন করেই ভাঙা হয়েছে।
মন্দিরের মূল অংশটির সামনের দিকে রয়েছে কারুকার্যমণ্ডিত পাঁচটি অর্ধবৃত্তাকার খিলান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই দুটি হোল্ডিং নম্বরের মালিক কেদারনাথ শীল ও তাঁর ভাই পরিতোষ শীল ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর ভারতে চলে যান। পরে বিভিন্ন সময় বিহারিসহ কয়েকজনের কাছে ওই সম্পত্তি লিজ দেওয়া হয়। এভাবে সম্পত্তির একাংশ মৃধা অ্যান্ড কোম্পানির হাতে আসে।
নগর সমন্বয় কমিটির সদস্য এবং ‘আরবান স্টাডি গ্রুপ’ নামের একটি সংরক্ষণকামী সংগঠনের প্রধান নির্বাহী স্থপতি তাইমুর ইসলাম ঘটনাস্থল ঘুরে প্রথম আলোকে জানান, প্রায় ১০০ বছরের পুরোনো স্থাপনাটি ধ্রুপদি স্থাপত্যরীতিতে নির্মিত হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের স্থাপনা ধ্বংস করা শুধু দুঃখজনকই নয়, আমাদের জন্য চরম অগৌরবজনক।’
স্থাপত্য ইনস্টিটিউটের সভাপতি মোবাশ্বের হোসেন শুক্রবার এ বিষয়ে বলেন, সংরক্ষিত বা ঐতিহ্যবাহী ভবনগুলো রক্ষার সব প্রচেষ্টাই প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কথা ছিল রাজউক এ ধরনের ভবনের তালিকা করবে। সিটি করপোরেশন এ ধ্বংসযজ্ঞের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু এখন তো সিটি করপোরেশনের কোনো মা-বাপ নেই।
No comments