ফরিদপুরে দুই ট্রাকের পাল্লা, মা-মেয়ে-নাতনিসহ নিহত ৫- চালকের আসনে কিশোর সহকারী ঝরে গেল ১০টি প্রাণ

রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কে মোহনপুরের খয়রায় গতকাল শনিবার সকাল সাতটার দিকে বাস ও হিউম্যান হলারের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই ছাত্রসহ ১০ জন নিহত হয়েছে। দুর্ঘটনায় আহত আরও চারজন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।


আহত যাত্রীদের অভিযোগ, চালকের বদলে গাড়ি চালাচ্ছিল এক কিশোর সহকারী। হতাহত ব্যক্তিরা সবাই হিউম্যান হলারের যাত্রী।
আরেকটি দুর্ঘটনা ঘটে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার পরীক্ষিতপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সামনে গতকাল সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে। দুটি ট্রাক পাল্লা দিয়ে চলার সময় একটি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজনকে চাপা দেয়। এতে মা-মেয়ে-নাতনিসহ পাঁচজন নিহত ও দুজন আহত হন।
রাজশাহীতে নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন ছাত্র ও বেশির ভাগ শ্রমজীবী মানুষ। দুই ছাত্রের একজন জসীম নগরের রয়েল ডেন্টাল কলেজের শেষ বর্ষের ছাত্র এবং শামীম রাজশাহী কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণীর ছাত্র। মৃত্যুসংবাদ ছড়িয়ে পড়লে রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন ও রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এ সময় ওই কলেজের সামনের রাস্তায় প্রায় ৩০ মিনিট যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।
ঘটনাস্থলে নিহত ব্যক্তিরা হলেন: হিউম্যান হলারের হেলপার রবিন (১৬), সাইফুল ইসলাম (২৮) ও সুমন আলী (৩৮)। তাঁদের মধ্যে রবিনের বাড়ি রাজশাহী নগরের কোর্ট এলাকায়। অপর দুজনের বাড়ি মোহনপুর উপজেলায়। হাসপাতালে মারা যান অজিত সরকার (৪৫), জসীম উদ্দিন (২২), তৌহিদুল ইসলাম (৪০), মোজাম্মেল হক (৪০, শামীম আহাম্মেদ (২০), মোজাফফর হোসেন (৩৫) ও মোজাম্মেল (৩০)। তাঁদের মধ্যে শহীদুল, জসীম, মোজাম্মেল ও মোজাফফরের বাড়ি নওগাঁয়। আরেক মোজাম্মেল, সুজিত সরকার, শামীমের বাড়ি মোহনপুরে। অজিত সরকার টাঙ্গাইলে একটি এনজিওতে চাকরি করেন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন মিলন আলী (২৫), আফজাল হোসেন (৩০), সম্রাট (৩০) ও সবুর আলী (২৮)। তাঁদের মধ্যে আফজাল ছাড়া কেউ কথা বলতে পারছেন না। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী যাত্রীরা জানান, হিউম্যান হলারটি বগুড়া থেকে গ্যাস নিয়ে ফেরার পথে নওগাঁ ও মোহনপুর থেকে যাত্রী নিয়ে রাজশাহীর দিকে রওনা হয়। মোহনপুরের খয়রা এলাকায় পৌঁছলে নওগাঁগামী বুলবুলি এন্টারপ্রাইজের একটি বাসের সঙ্গে হিউম্যান হলারের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে হিউম্যান হলারটি দুমড়েমুচড়ে রাস্তার ওপরে ছিটকে পড়ে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত আফজাল হোসেন বলেন, তিনি গাড়ির (হিউম্যান হলার) পেছনে বসা ছিলেন। ছোট ছেলেটি গাড়ি চালাচ্ছিল। আর আসল চালক যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা তুলছিলেন। মাঝেমধ্যে যাত্রীদের আসনে বসে তিনি ঝিমাচ্ছিলেন। হঠাৎ সংঘর্ষ ঘটে। তারপর আর কিছুই মনে নেই। হাসপাতালে আসার পর তিনি জ্ঞান ফিরে পান।
রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আয়েন উদ্দিন বলেন, তাঁর বাড়ি মোহনপুরে। যাত্রীদের অধিকাংশই রিকশাচালক। বগুড়া থেকে গ্যাস নিয়ে ফেরা হিউম্যান হলারে করে তাঁরা প্রতিদিন সকালে রাজশাহীতে আসেন। তিনি হাসপাতালে গিয়ে লাশ নিয়ে তাঁদের বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাকিরুল ইসলাম বলেন, চালক হিসেবে যে ছেলেটি মারা গেছে, সে আসলে হেলপার। তার বয়স বড়জোর ১৬ বছর। আসল চালককে পাওয়া যায়নি। আর বাসটি থানায় আটক করা হয়েছে। এর চালককেও পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে থানায় একটি দুর্ঘটনা মামলা হয়েছে।
মধুখালীতে পথচারীদের ওপর ট্রাক: প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, দুটি ট্রাক ফরিদপুর থেকে যশোরগামী দুই ট্রাকের একটি আরেকটিকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু করে। এতে ধাক্কা খেয়ে একটি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজনের ওপর উঠে যায়। নিহতদের চারজনই আলতাখান জুট মিলের কর্মী। কারখানার মালিক মো. লোকমান খান বলেন, ‘মৃত প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে। আহতদের ব্যয়ভারও মিল কর্তৃপক্ষ বহন করবে।’
মধুখালী সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাহাবুদ্দি আহমেদ বলেন, নিহতের মধ্যে একই পরিবারের তিনজন রয়েছেন। তাঁরা হলেন: মা আনোয়ারা বেগম (৪৫), তাঁর মেয়ে আমিরণ (২৮) ও আমিরণের মেয়ে আলেয়া (১৪)। এঁরা সবাই মধুখালী উপজেলার সদর ইউনিয়নের জাউহাটি গ্রামের বাসিন্দা। নিহত অপর দুজন হলেন মমতাজ বেগম (৩৫) ও সাত বছরের শিশু আফসানা। তাঁরা মধুখালী সদরের গাড়াখোলা এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাস করেন।
আহত দুজনকে মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের নাম জানা যায়নি।
জেলা প্রশাসক হেলালুদ্দীন আহমদ ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিজয় কুমার বসাক খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন।
মধুখালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল হক বলেন, জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ তাঁদের স্বজনদের কাছে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এ ঘটনায় একটি ট্রাক আটক করা হয়েছে। তবে চালক পলাতক রয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.