পথহারা রাজনীতি, দিশাহারা মানুষ-নিজেদের নানা কুকর্মের বেড়াজালে আ. লীগ by পার্থ প্রতীম ভট্টাচার্য্য
নানা রকম ব্যর্থতা ও চ্যালেঞ্জে নাকানি-চুবানির পর দুর্নীতি আর অর্থ কেলেঙ্কারি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ধুলোয় মিশিয়ে দিচ্ছে। বাইরে তো বটেই, নিজ দলের ভেতরেই নিন্দিত হচ্ছে সরকারি দল। দলীয় নেতারা প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে সরকারের কর্তাব্যক্তিদের কড়া সমালোচনায় সরব।
এভাবে ক্ষমতার শেষদিকে এসে আওয়ামী লীগে স্পষ্ট দুটি বিপরীতমুখী ধারা সৃষ্টি হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে মতদ্বৈধতা। একদিকে ক্ষমতায় আসীন তথা সরকারি সুযোগ-সুবিধাপ্রাপ্তরা, অন্যদিকে ক্ষমতার বাইরের নেতা-কর্মীরা। সুযোগ-সুবিধাপ্রাপ্তদের মুখে কোনো রা নেই। বাইরের নেতা-কর্মীরা ভবিষ্যৎ চিন্তায় হতাশায় ডুবে আছেন। মন্ত্রী, উপদেষ্টা আর ক্ষমতার স্বাদ পাচ্ছেন- এমন নেতা ছাড়া অন্য প্রায় সব নেতার সুর এক ও অভিন্ন। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে দলের ভেতরের এ অবস্থা জানা গেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের ঋণচুক্তি বাতিল, গ্রামীণ ব্যাংক ও নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের সঙ্গে সরকারের দ্বন্দ্ব, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, বিরোধী দলের আন্দোলন- এসব বিষয় সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে থাকলেও সম্প্রতি কয়েকটি দুর্নীতি ও আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা সহজে মেনে নিতে পারছেন না। সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএস বস্তাভর্তি টাকাসহ ধরা পড়ার পর মন্ত্রীর পদত্যাগ এবং অবশেষে তিনি দপ্তরবিহীন মন্ত্রী; পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ কাঁধে নিয়ে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের অপসারণ- বিশেষ করে এ দুটি ঘটনা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ধুলোয় মিশিয়ে দেয়। এরপর সোনালী ব্যাংক-হলমার্ক কেলেঙ্কারি সরকারি দলের ভাবমূর্তি তলানিতে নিয়ে ঠেকিয়েছে। পদ্মা সেতু প্রকল্প ও হলমার্ক কেলেঙ্কারির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দুজন উপদেষ্টার নামও উঠছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, বিগত বিএনপি সরকার যে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে বিদায় নিয়েছে, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো আওয়ামী লীগকেও সেই একই কাতারে নামিয়ে এনেছে। পাশাপাশি এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সরকার নিজেই বিরোধী দলের হাতে ইস্যু তুলে দিচ্ছে। তবে বিরোধী দলও এসব ইস্যুতে রাজনীতির মাঠ গরম করতে ব্যর্থ হচ্ছে বলে ক্ষমতাসীনরা কিছুটা হলেও রেহাই পেয়ে যাচ্ছেন বলে মনে করছেন অনেক নেতা।
দলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা বলেছেন, যে দুর্নীতির কারণে বিগত নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি হয়েছে, বর্তমান ক্ষমতাসীনদের বেলায়ও সেই আলামত দেখা যাচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে কেউ কোনো কথা বলতে নারাজ। নিজেদের মধ্যেও আলোচনায় সতর্ক তাঁরা। ক্ষমতার বাইরের নেতারা মনে করেন, যাঁরা ক্ষমতার অংশ তাঁরা এসব ব্যাপারে নীরব থাকছেন। সুতরাং শুধু তাঁরা কথা বলে শীর্ষ মহলের বিরাগভাজন হতে চান না। তবে আগামী শনিবার দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সাম্প্রতিককালের ঘটনাগুলো নিয়ে কিছুটা ঝড় উঠতে পারে- ইঙ্গিত দিয়েছেন দলের এক প্রভাবশালী নেতা।
একজন নেতা বলেছেন, এসব কেলেঙ্কারির ঘটনা কার কাছে বলব? দ্বিধা-দ্বন্দ্বে নেতারা। তাঁরা মনে করেন, দল ও সরকারের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকরা সব জেনেও চুপ। আবার বলেও লাভ হয় না। দলীয় ফোরামেও এখন স্বাধীনভাবে কথা বলা যায় না। দলের নেতাদের অনেকেই মনে করেন, সরকার নিজেদের অবস্থা বুঝে গেছে। কোনো কিছুই আর নাগালে নেই কিংবা কোনো কিছুতেই আর আগের ভাবমূর্তি বা অবস্থানে ফেরা যাবে না- এমনটা বুঝেই হয়তো সরকার কোনো কিছুকেই আর তোয়াক্কা করছে না।
এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন কালের কণ্ঠকে বলেন, সম্প্রতি অনেক কিছুই ঘটছে, যা সরকার ও দলের জন্য অস্বস্তিকর। হলমার্কের আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সোনালী ব্যাংকে যেটা ঘটেছে, সেটা একজন ব্যক্তির সঙ্গে ব্যাংকের বিষয়। তবে সরকারি ব্যাংক হিসাবে সরকারেরও কিছু দায়বদ্ধতা আছে। এ ঘটনায় সরকার বা দলের কোনো ব্যক্তির সম্পৃক্ততা যদি প্রমাণিত হয়, সেটা সরকার বা দল কারো জন্য সুখকর হবে না।
সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, সাম্প্রতিক অনেক বিষয় সরকারের জন্য বিব্রতকর হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতারাও এসব বিষয় সঠিক মনে করছেন না বলে তাঁরা এ ব্যাপারে কথা বলছেন। হলমার্কের কেলেঙ্কারি প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, এ ঘটনায় মুষ্টিমেয় কিছু লোক জড়িত। তাদের বিচারের আওতায় আনতে না পারলে জনগণ আস্থাহীন হবে। দলীয় ফোরামে এসব বিষয়ে কোনো আলোচনা হবে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সামনের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
সম্প্রতি বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ নেতারা সবচেয়ে সমালোচনামুখর প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাদের নিয়ে। এত কিছুর পরও তাঁদের অনেকের স্বপদে বহাল থাকার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। তাঁদের মত, উপদেষ্টাদের কর্মকাণ্ডের জন্য পরবর্তী নির্বাচনে সরকারকে চড়া মূল্য দিতে হবে এবং যার ফল ভোগ করতে হবে সাধারণ নেতা-কর্মীদের। তবে সরকারে বা দলে- কোনো জায়গায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব ধরে রাখতে পারছে না বলে মনে করেন তাঁরা। সব কিছুই যেন লেজেগোবরে হয়ে যাচ্ছে। আবার এসব সমস্যা থেকে উত্তরণের কোনো পদক্ষেপও দেখছেন না তাঁরা। কিন্তু কেউ কোনো কথা বলতে নারাজ। ভবিষ্যতে কী হয় দেখি- এমন ভাব সবার মধ্যে।
সোনালী ব্যাংক-হলমার্ক কেলেঙ্কারি নিয়ে অর্থমন্ত্রীর মন্তব্যও বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। তিনি বলেন, চার হাজার কোটি টাকা বেশি টাকা নয়। গত ৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এবং বৃহস্পতিবার সংসদে এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী মন্ত্রী ও নেতারা। পরে অবশ্য অর্থমন্ত্রী ক্ষমা চেয়ে তাঁর ওই সব বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেন।
সংসদে দলের প্রবীণ নেতা আব্দুল জলিল, তোফায়েল আহমেদ, সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু কঠোর ভাষায় সরকারের সমালোচনা করেছেন। পরবর্তী নির্বাচনে এসব ঘটনার জন্য দলকে কড়া মূল্য দিতে হবে এবং সরকারকে সব কিছুর দায় নিতে হবে বলেও তাঁরা হুঁশিয়ার করেছেন। তবে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন সরকারের বেলায়। সরকার চুপ। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কিছুর ব্যাখ্যাও দেওয়া হচ্ছে না। ফলে বিভিন্ন ঘটনার ব্যাপারে দেশবাসী যেমন অন্ধকারে থাকছেন, তেমনি অবস্থায় দলের নেতা-কর্মীরাও। কোনো কিছু সম্পর্কেই তাঁরা অবগত নন। আওয়ামী লীগের এক সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সব দেখছি, সব শুনছি। কিন্তু আমাদের বলার কিছুই নেই। বলার মতো জায়গাও নেই।' নিজেদের মধ্যে এসব ব্যাপারে আলোচনা হয় কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কে কার লোক তা কেউ বলতে পারে না। দলের নেতাদের নিজেদের মধ্যেই অবিশ্বাস, সন্দেহ। তাই কোনো কিছু কোথাও বলাও নিরাপদ নয়। তবে পরবর্তী নির্বাচনে এই সব কিছুর জন্য দলকে মাসুল দিতে হবে বলে মনে করেন এই নেতাও।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের ঋণচুক্তি বাতিল, গ্রামীণ ব্যাংক ও নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের সঙ্গে সরকারের দ্বন্দ্ব, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, বিরোধী দলের আন্দোলন- এসব বিষয় সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে থাকলেও সম্প্রতি কয়েকটি দুর্নীতি ও আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা সহজে মেনে নিতে পারছেন না। সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএস বস্তাভর্তি টাকাসহ ধরা পড়ার পর মন্ত্রীর পদত্যাগ এবং অবশেষে তিনি দপ্তরবিহীন মন্ত্রী; পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ কাঁধে নিয়ে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের অপসারণ- বিশেষ করে এ দুটি ঘটনা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ধুলোয় মিশিয়ে দেয়। এরপর সোনালী ব্যাংক-হলমার্ক কেলেঙ্কারি সরকারি দলের ভাবমূর্তি তলানিতে নিয়ে ঠেকিয়েছে। পদ্মা সেতু প্রকল্প ও হলমার্ক কেলেঙ্কারির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দুজন উপদেষ্টার নামও উঠছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, বিগত বিএনপি সরকার যে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে বিদায় নিয়েছে, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো আওয়ামী লীগকেও সেই একই কাতারে নামিয়ে এনেছে। পাশাপাশি এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সরকার নিজেই বিরোধী দলের হাতে ইস্যু তুলে দিচ্ছে। তবে বিরোধী দলও এসব ইস্যুতে রাজনীতির মাঠ গরম করতে ব্যর্থ হচ্ছে বলে ক্ষমতাসীনরা কিছুটা হলেও রেহাই পেয়ে যাচ্ছেন বলে মনে করছেন অনেক নেতা।
দলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা বলেছেন, যে দুর্নীতির কারণে বিগত নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি হয়েছে, বর্তমান ক্ষমতাসীনদের বেলায়ও সেই আলামত দেখা যাচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে কেউ কোনো কথা বলতে নারাজ। নিজেদের মধ্যেও আলোচনায় সতর্ক তাঁরা। ক্ষমতার বাইরের নেতারা মনে করেন, যাঁরা ক্ষমতার অংশ তাঁরা এসব ব্যাপারে নীরব থাকছেন। সুতরাং শুধু তাঁরা কথা বলে শীর্ষ মহলের বিরাগভাজন হতে চান না। তবে আগামী শনিবার দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সাম্প্রতিককালের ঘটনাগুলো নিয়ে কিছুটা ঝড় উঠতে পারে- ইঙ্গিত দিয়েছেন দলের এক প্রভাবশালী নেতা।
একজন নেতা বলেছেন, এসব কেলেঙ্কারির ঘটনা কার কাছে বলব? দ্বিধা-দ্বন্দ্বে নেতারা। তাঁরা মনে করেন, দল ও সরকারের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকরা সব জেনেও চুপ। আবার বলেও লাভ হয় না। দলীয় ফোরামেও এখন স্বাধীনভাবে কথা বলা যায় না। দলের নেতাদের অনেকেই মনে করেন, সরকার নিজেদের অবস্থা বুঝে গেছে। কোনো কিছুই আর নাগালে নেই কিংবা কোনো কিছুতেই আর আগের ভাবমূর্তি বা অবস্থানে ফেরা যাবে না- এমনটা বুঝেই হয়তো সরকার কোনো কিছুকেই আর তোয়াক্কা করছে না।
এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন কালের কণ্ঠকে বলেন, সম্প্রতি অনেক কিছুই ঘটছে, যা সরকার ও দলের জন্য অস্বস্তিকর। হলমার্কের আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সোনালী ব্যাংকে যেটা ঘটেছে, সেটা একজন ব্যক্তির সঙ্গে ব্যাংকের বিষয়। তবে সরকারি ব্যাংক হিসাবে সরকারেরও কিছু দায়বদ্ধতা আছে। এ ঘটনায় সরকার বা দলের কোনো ব্যক্তির সম্পৃক্ততা যদি প্রমাণিত হয়, সেটা সরকার বা দল কারো জন্য সুখকর হবে না।
সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, সাম্প্রতিক অনেক বিষয় সরকারের জন্য বিব্রতকর হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতারাও এসব বিষয় সঠিক মনে করছেন না বলে তাঁরা এ ব্যাপারে কথা বলছেন। হলমার্কের কেলেঙ্কারি প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, এ ঘটনায় মুষ্টিমেয় কিছু লোক জড়িত। তাদের বিচারের আওতায় আনতে না পারলে জনগণ আস্থাহীন হবে। দলীয় ফোরামে এসব বিষয়ে কোনো আলোচনা হবে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সামনের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
সম্প্রতি বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ নেতারা সবচেয়ে সমালোচনামুখর প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাদের নিয়ে। এত কিছুর পরও তাঁদের অনেকের স্বপদে বহাল থাকার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। তাঁদের মত, উপদেষ্টাদের কর্মকাণ্ডের জন্য পরবর্তী নির্বাচনে সরকারকে চড়া মূল্য দিতে হবে এবং যার ফল ভোগ করতে হবে সাধারণ নেতা-কর্মীদের। তবে সরকারে বা দলে- কোনো জায়গায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব ধরে রাখতে পারছে না বলে মনে করেন তাঁরা। সব কিছুই যেন লেজেগোবরে হয়ে যাচ্ছে। আবার এসব সমস্যা থেকে উত্তরণের কোনো পদক্ষেপও দেখছেন না তাঁরা। কিন্তু কেউ কোনো কথা বলতে নারাজ। ভবিষ্যতে কী হয় দেখি- এমন ভাব সবার মধ্যে।
সোনালী ব্যাংক-হলমার্ক কেলেঙ্কারি নিয়ে অর্থমন্ত্রীর মন্তব্যও বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। তিনি বলেন, চার হাজার কোটি টাকা বেশি টাকা নয়। গত ৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এবং বৃহস্পতিবার সংসদে এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী মন্ত্রী ও নেতারা। পরে অবশ্য অর্থমন্ত্রী ক্ষমা চেয়ে তাঁর ওই সব বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেন।
সংসদে দলের প্রবীণ নেতা আব্দুল জলিল, তোফায়েল আহমেদ, সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু কঠোর ভাষায় সরকারের সমালোচনা করেছেন। পরবর্তী নির্বাচনে এসব ঘটনার জন্য দলকে কড়া মূল্য দিতে হবে এবং সরকারকে সব কিছুর দায় নিতে হবে বলেও তাঁরা হুঁশিয়ার করেছেন। তবে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন সরকারের বেলায়। সরকার চুপ। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কিছুর ব্যাখ্যাও দেওয়া হচ্ছে না। ফলে বিভিন্ন ঘটনার ব্যাপারে দেশবাসী যেমন অন্ধকারে থাকছেন, তেমনি অবস্থায় দলের নেতা-কর্মীরাও। কোনো কিছু সম্পর্কেই তাঁরা অবগত নন। আওয়ামী লীগের এক সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সব দেখছি, সব শুনছি। কিন্তু আমাদের বলার কিছুই নেই। বলার মতো জায়গাও নেই।' নিজেদের মধ্যে এসব ব্যাপারে আলোচনা হয় কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কে কার লোক তা কেউ বলতে পারে না। দলের নেতাদের নিজেদের মধ্যেই অবিশ্বাস, সন্দেহ। তাই কোনো কিছু কোথাও বলাও নিরাপদ নয়। তবে পরবর্তী নির্বাচনে এই সব কিছুর জন্য দলকে মাসুল দিতে হবে বলে মনে করেন এই নেতাও।
No comments