চকরিয়ায় বনভূমি দখল-সরকারি দল বলে কথা!

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় প্রভাবশালী স্থানীয় নেতা সামাজিক বনায়নের গাছ কেটে ৫০ হেক্টর বনভূমি দখল করে নিয়েছে বলে শনিবার সমকালে প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে। এতে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির অধীনে যারা এক লাখ আগর গাছ লাগিয়েছিলেন, তারা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।


তা ছাড়া এই বনায়ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি হ্রাসে যে অবদান রাখতে পারত, সে সম্ভাবনাও নষ্ট হলো। বন বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের প্রকাশ্য বা প্রচ্ছন্ন মদদ ছাড়া যে এক মাস ধরে বনভূমির গাছ কাটা চলেনি, তা সহজেই অনুমেয়। এর সঙ্গে সরকারের উচ্চ মহলের কারও যোগাযোগ থাকাও বিচিত্র নয়। কারণ গাছ কাটা নিয়ে গণমাধ্যমে ইতিপূর্বে রিপোর্ট প্রকাশ পেয়েছে। ফলে বিষয়টি সম্পর্কে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় প্রশাসনেরও ওয়াকিবহাল থাকার কথা। কিন্তু গাছ কাটা বন্ধ করা বা বনভূমিটি রক্ষা করার ব্যাপারে এ পর্যন্ত তেমন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি। আমরা জানি, ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতারা কখনও কখনও ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থে জনস্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। এর ফলে দলের কতিপয় ব্যক্তির লাভ হলেও সামগ্রিকভাবে দল এবং জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক সময় স্থানীয়, এমনকি জাতীয় নির্বাচনেও ক্ষমতাসীনদের জন্য এসব কর্মকাণ্ড ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এদের কর্মকাণ্ড অনেক সময় প্রকৃতি এবং পরিবেশেরও ক্ষতির কারণ হয়। চকরিয়ার বনভূমি দখলের ঘটনাটি স্থানীয় পর্যায়ের হলেও এর সঙ্গে যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলা ও সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ সৃষ্টির প্রশ্ন জড়িয়ে আছে, তাই এর একটা জাতীয় পর্যায়ের প্রতিক্রিয়াও থাকবে। সরকারের উচিত যারা বনভূমির এক লাখ গাছ কেটে এটিকে দখল করে নিয়েছে, তাদের হাত থেকে এটিকে উদ্ধার করা। বনভূমির ৫০ হেক্টর জায়গাকে দখলদাররা যাতে আবাসন প্লটে পরিণত করতে না পারে, সে জন্য প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে জরুরি ভিত্তিতেই। বন বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের এ ধরনের জনস্বার্থ, প্রকৃতি ও পরিবেশবিরুদ্ধ এবং বেআইনি কাজে কাউকে সহায়তা দান করা উচিত নয়।

No comments

Powered by Blogger.