জাহাজ রফতানি বন্ধের পথে by আবু হেনা মুহিব
তৈরি পোশাকের পর সম্ভাবনাময় রফতানি খাত হিসেবে জাহাজ নির্মাণ শিল্পের কথা বলেছেন অনেকেই। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কয়েকটি জাহাজ রফতানি করে এ শিল্পের আন্তর্জাতিক বিশ্বাসযোগ্যতাও তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন উদ্যোক্তারা।
এ খাত থেকে বছরে অন্তত ৩০ হাজার কোটি টাকা রফতানি আয় সম্ভব বলে দাবি করেছেন তারা। জাহাজ নির্মাণ শিল্পের সহযোগী খাতের হিসাব বিবেচনায় নিলে রফতানি আয়ের পরিমাণ দ্বিগুণ করা সম্ভব বলে তাদের দাবি। এ জন্য সরকারের কাছে বিভিন্ন নীতি সহায়তার সুপারিশ করেছে একাধিক বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানও। এতসব সম্ভাবনা সত্ত্বেও জাহাজ নির্মাণ শিল্পের রফতানি এখন প্রায় বন্ধ।
নতুন অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে এক ডলারও আয় আসেনি এ খাত থেকে। সদ্যসমাপ্ত ২০১১-১২ অর্থবছরে জাহাজ রফতানি খাতে আয় কমেছে ৮২ শতাংশ। ২৫ কোটি ডলারের রফতানি লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এ সময় আয় নেমে এসেছে মাত্র ৪ কোটি ডলারে। রফতানির এই করুণ চিত্রের জন্য উদ্যোক্তারা বিশ্বমন্দাকে দায়ী করেছেন। ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান সুভাশিষ বসু সমকালকে বলেছেন, বিশ্বমন্দা কেটে গেলে আবার জাহাজ রফতানি থেকে আয় আসতে শুরু করবে। এ শিল্পের উন্নয়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করছে বলে জানান তিনি।
এ খাতের রফতানি আয়ের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, টানা গত ৩ বছর ধরে রফতানি আয় কমছে। ইপিবির তথ্য অনুযায়ী_ ২০০৮-০৯ অর্থবছরে জাহাজ রফতানি থেকে আয় ১ কোটি ২৭ লাখ ডলার। পরের অর্থবছরে (২০০৯-১০) এর পরিমাণ নেমে আসে মাত্র ৯৩ লাখ ডলারে। ২০১০-১১ অর্থবছরে রফতানি আয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪ কোটি ডলারে। আর গত ২০১১-১২ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার। কিন্তু অর্থবছর শেষে রফতানি আয় দাঁড়ায় মাত্র ৪ কোটি ৫৯ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে এ খাত থেকে কোনো আয় আসেনি। এ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা নিধারণ করা হয়েছে ২৬ কোটি ডলার।
এ পরিস্থিতির কারণ জানতে চাইলে আনন্দ শিপইয়ার্ডের পরিচালক সাইফুল ইসলাম সমকালকে জানান, মূলত বিশ্বমন্দার কারণেই রফতানিতে ধস নেমেছে। এক বছর আগে যেসব জাহাজ রফতানি করা হয়েছে সেগুলোর রফতানি আদেশ ছিল ২০০৯ এর আগের। রফতানি আদেশ পাওয়ার পর একটি জাহাজ রফতানি করতে আড়াই থেকে ৩ বছর পর্যন্ত সময় লাগে। ওই সময়ের পর নতুন করে আর রফতানি আদেশ নেই। সাইফুল জানান, অবকাঠামো সংকট এবং উচ্চহারের ব্যাংক ঋণের সুদ হারের কারণে প্রতিযোগী অন্য দেশের তুলনায় সক্ষমতা হারিয়েছে বাংলাদেশ। অন্য সমস্যার মধ্যে কঁাঁচামাল আমদানিতে ব্যাংক গ্যারান্টি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক রেটিংয়ে বাংলাদেশের সার্বভৌম ঋণমান অনেক কম হওয়ায় তৃতীয় ব্যাংক থেকে এ গ্যারান্টি নিতে হয়। এ গ্যারান্টি বাবদ কমিশন অনেক বেশি। ফলে উৎপাদন ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। এ কারণে ইচ্ছা করেও এখন আর রফতানি আদেশ নিচ্ছেন না বলে সাইফুল জানান। এ অবস্থায় স্থানীয় চাহিদা পূরণের মাধ্যমে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন তারা। মাছ ধরার ট্রলার, তেলবাহী কন্টেইনার তৈরির কাজই চলছে আপাতত। তিনি বলেন, সরকার গত ৩ বছর ধরে বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে ২০০ কোটি টাকার ঋণ দেওয়ার কথা। কিন্তু অপ্রতুল এ ঋণের অর্থও এখনও ছাড় করতে পারেনি সরকার। যদিও অর্থ প্রয়োজনের তুলনায় কম জানিয়ে তিনি বলেন, একটি জাহাজ নির্মাণে সাধারণ ব্যয় হচ্ছে ১০০ কোটি টাকা।
No comments