ঝুঁকিতে কাঁচপুর সেতু-দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন

প্রধান সমুদ্রবন্দরসহ দেশের পূর্বাঞ্চলীয় ১৬টি জেলার সঙ্গে রাজধানীর সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে শীতলক্ষ্যার ওপর নির্মিত কাঁচপুর সেতুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন এর ওপর দিয়ে গড়ে ২২ হাজারেরও বেশি যানবাহন চলাচল করে। অথচ উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারকাজের অভাবে সেতুটি আজ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।


যেকোনো সময় বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটারও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নদীমাতৃক বাংলাদেশে সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিকভাবেই অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। প্রচুর সেতু নির্মাণের জন্য সংগত কারণেই প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়। অর্থের সংকুলান না হওয়ায় সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণ হয় খুবই ধীরগতিতে। পাশাপাশি বন্যা-জলাবদ্ধতার কারণে সড়কের স্থায়িত্বও কমে যায়। ফলে সড়ক যোগাযোগের যে নেটওয়ার্ক আছে, তারও বেহাল দশা বরাবরই দেখতে হয় আমাদের। অন্যদিকে সংস্কারের অভাবে বেশির ভাগ নদী নাব্যতা হারিয়ে ফেলায় আমরা নদীপথের সুবিধাও যথাযথভাবে নিতে পারছি না। অথচ একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বহুলাংশেই নির্ভর করে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অবকাঠামো সুবিধার ওপর। সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্ব প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকেও দেখা যায়, বাংলাদেশের ১০ ধাপ অবনতি হয়েছে। এরও একটি প্রধান কারণ অপর্যাপ্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা, চাহিদা অনুযায়ী সড়ক যোগাযোগের উন্নতি করতে না পারা। একটি পদ্মা সেতুর অভাবে গোটা দক্ষিণাঞ্চল ব্যাপকভাবে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ অবস্থায় বিদ্যমান সেতুগুলো, বিশেষ করে কাঁচপুর সেতুর মতো একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ সেতুকেও যদি আমরা টিকিয়ে রাখতে না পারি, তাহলে সেই ব্যর্থতা হবে ক্ষমার অযোগ্য। জানা যায়, এক যুগেরও বেশি সময় ধরে সেতুটির রক্ষণাবেক্ষণ কাজ প্রায় নেই বললেই চলে। তার ওপর চলছে সেতুটির ওপর নানা ধরনের অত্যাচার। ধারণক্ষমতার তিন গুণেরও বেশি বোঝা চাপছে সেতুটির ওপর। ১০০ টন ওজনেরও বেশি ট্রাক, ভ্যান বা লরি পারাপার হচ্ছে সেতুটির ওপর দিয়ে। নদীর মাটিখনন, সেতুর পিলারের সঙ্গে বেঁধে বড় বড় কার্গো জাহাজ থেকে মালামাল নামানো, পিলারের কাছাকাছি পাথর ভাঙার মেশিন চালানো- এসবই সেতুটির আয়ু কমিয়ে দিচ্ছে। অথচ ১০০ বছর কর্মক্ষম থাকবে- এমন লক্ষ্য নিয়েই সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু মাত্র ৩৫ বছর পার হতে না হতেই সেতুটির আয়ুষ্কাল নিয়ে যে সংশয় দেখা দিয়েছে, তা কেবল দুর্ভাগ্যজনকই নয়, আমাদের অপরাধেরও সাক্ষ্য বহন করে। আর এ ধরনের অপরাধ জাতি হিসেবে আমাদের এগিয়ে চলাকে বরাবরই ব্যাহত করে আসছে।
দুর্জনেরা বলে, আমাদের কর্তাব্যক্তিরা সেতু রক্ষণাবেক্ষণের চেয়ে সেতু নির্মাণেই বেশি আগ্রহী। তাতে নাকি নগদ প্রাপ্তির অঙ্কটাও অনেক বড় হয়। বর্তমান সরকার জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) সহায়তায় কাঁচপুর, মেঘনা ও মেঘনা-গোমতী সেতুর পাশে আরেকটি করে সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। সম্ভাব্যতা জরিপের কাজ চলছে। ডিসেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন আশা করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে আড়াই থেকে তিন বছরের মধ্যে সেতুগুলো নির্মিত হতে পারে। সেতুগুলো নির্মিত হলে বর্তমান সেতুগুলোর ওপর যানবাহনের চাপ অনেকটাই কমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু তার পরও সেতুগুলোর ওপর অতিরিক্ত চাপ থাকবে। সে ক্ষেত্রে রেল যোগাযোগ উন্নত করা গেলে হয়তো সড়কের ওপর চাপ আরো কমিয়ে আনা যাবে। সে কারণে আমরা চাই, সরকার যত দ্রুত সম্ভব নতুন সেতুগুলোর কাজ সম্পন্ন করুক। একই সঙ্গে বিদ্যমান সেতুগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকি যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে পরিচালনা করে এগুলোর আয়ুষ্কাল ঠিক রাখা হোক।

No comments

Powered by Blogger.