সঙ্কটে চট্টগ্রাম বন্দর

আমদানি রফতানির জন্য সমুদ্রবন্দরের গুরুত্ব অপরিসীম। বহু আগে থেকে চট্টগ্রাম এ অঞ্চলের একটি প্রাচীন ও ঐতিহাসিক বন্দর। কয়েক শত বছর আগে থেকে এদেশের অন্যতম বন্দর হিসাবে এ বন্দরের গুরুত্ব অপরিসীম। চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে একদা বাংলা থেকে মসলিনসহ নানা ধরনের সূক্ষ্ম বস্ত্র, হাতির দাঁত, কয়েক ধরনের মসলা,


শঙ্খশিল্প প্রভৃতি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রফতানি হতো। অপরদিকে কিছু মূল্যবান পণ্য নিয়ে আরব, চীনা ও পর্তুগিজ জাহাজ এখানে এসে ভিড় করত। প্রাচীনকাল থেকে এ বন্দরটি ছিল সক্রিয়; এ কারণে পর্তুগিজ বণিকরা এ বন্দরের নাম দিয়েছিল পোর্ট গ্র্যান্ড বা বড় বন্দর। কিন্তু বিগত দু’তিন দশক ধরে এক সময়ের গৌরব চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে গভীর সঙ্কট বিরাজ করছে। দুর্নীতি, অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার কারণে চট্টগ্রাম বন্দর ক্রমেই স্থবির হয়ে পড়ছে। সংশ্লিষ্ট অনেকের মনে এই নিয়ে গভীর শঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে। গত কয়েক বছরে এ দেশে শিল্প খাতে যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক ও ওষুধ খাতে বাংলাদেশের সাফল্যের প্রতি অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। এ বন্দরের কার্যক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনাল বা এনসিটি নির্মাণের পর সংশ্লিষ্ট অনেকেরই ধারণা হয়েছিল, এতদিনে হয়ত চট্টগ্রাম বন্দর আবার সক্রিয় হবে।
জানা যায়, ক্ষমতাসীন দলের মধ্যকার দ্বন্দ্ব ও জটিলতা চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়নে প্রধান বাধা। যেখানে সারাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্য এ বন্দরের ওপর নির্ভরশীল; সেখানে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় কয়েকজন নেতার স্বার্থ ও দ্বন্দ্ব এত প্রাধান্য পাচ্ছে কেন? বন্দর রক্ষা পরিষদের ডাকে আজ ৯ সেপ্টেম্বর চাটগাঁর লালদীঘির মাঠে যে জনসভার আয়োজন করা হয়েছে, তা বন্দরকে রক্ষার লক্ষ্যে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবে কি? কারণ চার বছর আগে এনসিটি (নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনাল) নির্মিত হলেও এখন পর্যন্ত কয়েকটি কারণে এখানে অপারেটর নিয়োগ করা সম্ভব হয়নি। অপারেটর নিয়োগের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে মতবিরোধ ও জটিলতাই এর প্রধান কারণ। অথচ দেশ ও জাতির স্বার্থে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত ছিল। কারণ এনসিটি চালু হলে চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেনার হ্যান্ডলিং ক্ষমতা প্রায় দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এনসিটিতে টেন্ডারের মাধ্যমে অপারেটর নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এদিকে স্থানীয় একজন প্রভাবশালী নেতা মত প্রকাশ করেছেন, চট্টগ্রাম বন্দরকে মাফিয়াচক্রের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে নানাক্ষেত্রে শাসকশ্রেণী বা সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ব্যক্তিবর্গের মধ্যকার মতবিরোধের কারণে জনস্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ইতোমধ্যে গত ৩০ আগস্ট এনসিটিতে দরপত্র দাখিলের শেষদিনে দেশী-বিদেশী মোট পাঁচটি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে। চট্টগ্রাম বন্দরকে নিয়ে সৃষ্ট যাবতীয় মতবিরোধের অবসান জরুরী।

No comments

Powered by Blogger.