দারিদ্র্যই স্বপ্ন জাগিয়ে তুলেছে by ভবতোষ রায় মনা
বিয়ের পর কঠিন অভাবের মধ্যে থেকেও কখনও মানুষের সেবা করার কথা ভুলে যাননি ফুলেরা বেগম। 'ছোটবেলা থেকেই আশা করেছিলাম, সমাজের মানুষের সেবা করব এবং নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটাব। ব্রহ্মপুত্র নারী উন্নয়ন লোককেন্দ্রের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন করার বিষয়টি চিন্তা করি।
এ বিষয়টি নিয়ে আমার স্বামী ও সন্তানদের সঙ্গে আলোচনা করি। স্বামী এবং সন্তানরা একপর্যায়ে নির্বাচন করার জন্য মতামত দেন।' এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামের মোছাম্মৎ ফুলেরা বেগম (৩১)। তার স্বামী মো. সাজু মিয়া (৩৫) চায়ের দোকান করেন ওই গ্রামেই। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। দশম শ্রেণীতে পড়াকালীন ফুলেরা বেগমের বিয়ে হয়।
২০১১ সালে এসকেএস অ্যাওয়ার প্রকল্পের মাধ্যমে একশন এইড বাংলাদেশ নেতৃত্ব বিকাশের ওপর ৩০ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করে। সেখানে তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং নির্বাচনী সব কার্যক্রমসহ যোগাযোগ, কাউন্সেলিং ও প্রচারাভিযান সম্পর্কে পুরোপুরি জ্ঞান অর্জন করেন। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি গ্রামে এসে মানুষের সঙ্গে ভালোভাবে যোগাযোগ করতে থাকেন এবং নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেন। এরপর আবার এসকেএস ফাউন্ডেশন দুই দিনের ফলোআপ প্রশিক্ষণের আয়োজন করলে সেখানেও তিনি অংশগ্রহণ করে নির্বাচনের যাবতীয় বিষয় জেনে নেন। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা আসনে কমিশনার পদে নির্বাচন করার জন্য নমিনেশন পেপার জমা দেন। তার নির্বাচনী প্রতীক ছিল 'টিয়া পাখি'। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ৪ জন মহিলা অংশগ্রহণ করেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে ৩৯০ ভোটের ব্যবধানে তিনি জয়ী হন।
নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি জনগণের উন্নয়নের জন্য ৪০ দিনের কর্মসূচিতে ৩০ জন নারীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন। মশামারী খেয়া ঘাট থেকে কাবিলপুর পর্যন্ত ৮০০ মিটার নতুন রাস্তা তৈরির জন্য ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছেন, যা এখনও চলমান। ওই রাস্তা তৈরির ফলে কালাসোনা চরাঞ্চলবাসী বন্যার কবল থেকে রক্ষা পাবে, যার ফলে ওই এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটবে। ফুলেরা বেগম বলেন, 'এখন আমি স্বামী, সন্তান ও এলাকাবাসীকে নিয়ে খুবই শান্তিতে আছি।' তার ইচ্ছা মানুষের সেবার মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অজর্ন করা এবং পরবর্তী সময়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হয়ে নির্বাচন করা। উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল হামিদ সরকার বলেন, নির্যাতিত নারীর বন্ধু হচ্ছেন ফুলেরা বেগম। নারীর অধিকার ও এলাকার উন্নয়ন কীভাবে করা যায় সেটি নিয়েই ভাবেন বেশি তিনি। হ
No comments