তসলিমার দেহ ও মুখ রঙে রাঙানো
তসলিমা নাসরিনের যৌন হয়রানির অভিযোগ আমাকে খুব পীড়া দেয়। আমি বিস্মিত ও হতবাক। এ কথাগুলো বলেছেন পশ্চিমবঙ্গের খ্যাতনামা সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। অনলাইন আউটলুক ইন্ডিয়াকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, আমি তসলিমাকে সব সময় পথ দেখাতে চেয়েছি।
কিন্তু তিনি আমার কথায় কান দেন নি। বাংলাদেশের বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন সামাজিক মাইক্রো ব্লগিং সাইট টুইটারে পশ্চিমবঙ্গের শীর্ষস্থানীয় সাহিত্যিক, সাহিত্য অকাদমি’র সভাপতি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেছেন, একবার সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার গায়ে হাত দিয়েছিলেন। তিনি তাকে যৌন হয়রানি করেছেন। সাহিত্যে তিনি শক্তিশালী অবস্থানে থাকার জন্য অন্য নারীদের কাছ থেকেও সুবিধা নিয়েছেন। এ নিয়ে এ অঞ্চলে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। এরই প্রেক্ষিতে আউটলুক ইন্ডিয়ার পক্ষে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি সাক্ষাৎকার নেন দোলা মিত্র। এখানে তার অনুবাদ তুলে দেয়া হলো:
প্রশ্ন: তসলিমা নাসরিন আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন যে, আপনি তাকে ও অন্য নারীদের যৌন হয়রানি করেছেন।
সুনীল: আমি মনে করি তার মন্তব্যে প্রতিক্রিয়া দেয়ার মাধ্যমে তাকে অহেতুক গুরুত্ব দেয়া হবে। আমি প্রশ্ন করতে চাই যৌন হয়রানির এই অভিযোগ এখন কেন? যখন এটা ঘটেছিল তিনি তখন কেন অভিযোগ করেননি? কেন তিনি হঠাৎ করে এখন এসব প্রসঙ্গ তুলছেন?
প্রশ্ন: তসলিমা বলছেন, এ অভিযোগ তিনি যখন ইচ্ছা করবেন- এটা পুরোপুরি নারীর অধিকারের বিষয়।
সুনীল: এখন ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির অভিযোগ নিয়ে চিৎকার করা তার জন্য খুবই সহজ। কিন্তু তসলিমা আমার খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। আমরা একত্রে অনেক সময় কাটিয়েছি। তিনি মাঝেমধ্যেই আমার বাসায় আসতেন। আমরা সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করতাম। একসঙ্গে খাবার খেয়েছি আমরা। হোলি উৎসবের সময় একবার আমরা শান্তিনিকেতনে ছিলাম। ঠিক সেই দিনই তার একটি রূপ দেখতে পেলাম। তার সারা দেহ ও মুখ রঙে রাঙানো। তিনি বসে আছেন আমার পায়ের কাছে।
প্রশ্ন: তাহলে তসলিমা নাসরিন কেন এমন অভিযোগ আনছেন?
সুনীল: তসলিমা এমন এক নারী যিনি সব সময় মনোযোগের কেন্দ্রীয় অবস্থানে থাকতে চান। তিনি বিতর্ক সৃষ্টি করতে খুব পছন্দ করেন। অনেকটা পরে, তিনি এখন বুঝতে পারছেন যে তিনি প্রত্যাখ্যাত হচ্ছেন। তিনি ভারতে ফিরে এখানে অবস্থান করতে বেপরোয়া হয়ে পড়েছেন। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন। কেউ আর তাকে নিয়ে তেমন আলোচনা করে বলে মনে হয় না। তাই যে কোন মূল্যে হোক তিনি নিজেকে ফোকাসে আনার চেষ্টা করছেন। এরকম স্পর্শকাতর অভিযোগ আনতে পারলে তার সেই উদ্দেশ্য সফল হবে।
প্রশ্ন: তসলিমা আপনাকে ‘ভণ্ড’ও বলেছেন। তার বই ‘দ্বিখণ্ডিত’ পশ্চিমবঙ্গে যখন নিষিদ্ধ হয় তিনি দাবি করছেন তখন তার পিছনে আপনার হাত ছিল। এখন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের লেখা ‘মুসলমানদের করণীয়’ বইটি সমপ্রতি পশ্চিমবঙ্গ সরকার বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু আপনি এখন তাতে আপত্তি তুলেছেন।
সুনীল: যে কোন রকম সেন্সরশিপের বিরোধী আমি। তসলিমার বই নিষিদ্ধ হওয়ার পিছনে আমার কোন হাত ছিল না। আমি তাকে শুধু পরামর্শ দিয়েছি যে, মুসলমানদের ধর্মকে আক্রমণ করো না। (তার বইয়ে) এমন কিছু অংশ ছিল যা ইসলাম ধর্মের মহানবীকে মারাত্মকভাবে অবমাননা করে। যারা তার ভাল চায় এমন একজন হিসেবে আমি তাকে বুঝিয়েছি যে, এই অংশগুলো অপ্রয়োজনীয়। এতে অসন্তোষ বাড়বে। এতে সামপ্রদায়িক সহিংসতারও সৃষ্টি হতে পারে।
প্রশ্ন: তসলিমার মতে, গণতান্ত্রিক একটি দেশে তিনি লেখক হিসেবে বসবাস করছেন। তার মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকা উচিত।
সুনীল: সব কিছুর জন্য স্থান ও সময় দু’টিই দরকার। আমি তাকে সতর্ক করেছিলাম যে, তিনি যে স্বাধীনতার কথা বলছেন সে রকম মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য ভারত এখনও প্রস্তুত নয়। অধিক উদার সমাজে, যখন সেখানে কারও দৃষ্টিভঙ্গিতে অন্যদের আপত্তি থাকে সেখানে মতপার্থক্যকে যুক্তি দিয়ে দেখা হয়। কিন্তু এটা ভারত। যেখানে আবেগ খুব সস্তা। সামান্য একটু প্ররোচনা এখানে ভয়ঙ্কর সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। তসলিমা কলকাতা ছেড়ে যাওয়ার ঠিক আগে পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি ছিল লেজেগোবরে। তার খুন দাবি করে তীব্র বিক্ষোভ হয়েছে। এটা তার জন্য বিপজ্জনক। কিন্তু তিনি আমার পরামর্শে কানই দিলেন না।
প্রশ্ন: অভিযোগ আছে যে, আপনি ও পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যিক, বোদ্ধারা তার জন্য যথেষ্ট করেন নি।
সুনীল: এটা ঠিক নয়। যখন তার বিরুদ্ধে একটি ফতোয়া দেয়া হলো, তার জীবন হুমকির মধ্যে পড়েছিল। তখন কবি শঙ্খ ঘোষ ও আমি ব্যক্তিগতভাবে কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি এবং তাকে অনুরোধ করি তসলিমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সম্ভাব্য সব কিছু করতে। তসলিমা ২০০৭ সালে কলকাতা ছেড়ে যাওয়ার ঠিক আগে তার হয়ে টিপু সুলতান মসজিদের ইমামের কাছে দুঃখ প্রকাশ করি এবং তসলিমাকে তার ভুলের জন্য ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখার আহ্বান জানাই। কিন্তু তিনি আমার কথা শুনলেন না।
প্রশ্ন: এখন কি আপনি ক্ষোভ অনুভব করছেন? আপনি কি আঘাত পেয়েছেন?
সুনীল: তসলিমার জন্য আমার অনেক সহমর্মিতা আছে। আমি সবসময় তাকে পথ দেখাতে চেয়েছি। যখন তিনি ‘লজ্জা’ লেখেন আমি তাকে বলেছিলাম- দেখুন আপনাকে ব্যালান্স করতে হবে। সব হিন্দুই ভাল নন। আবার সব মুসলমানই খারাপ নন। কিন্তু তিনি বিতর্ক সৃষ্টি করলেন। তিনি আমার সঙ্গে একমত না হলেও আমি তা মেনে নিই। কিন্তু এই যৌন হয়রানির অভিযোগ আমাকে খুব পীড়া দেয়। আমি বিস্মিত ও হতবাক।
সুনীল: আমি মনে করি তার মন্তব্যে প্রতিক্রিয়া দেয়ার মাধ্যমে তাকে অহেতুক গুরুত্ব দেয়া হবে। আমি প্রশ্ন করতে চাই যৌন হয়রানির এই অভিযোগ এখন কেন? যখন এটা ঘটেছিল তিনি তখন কেন অভিযোগ করেননি? কেন তিনি হঠাৎ করে এখন এসব প্রসঙ্গ তুলছেন?
প্রশ্ন: তসলিমা বলছেন, এ অভিযোগ তিনি যখন ইচ্ছা করবেন- এটা পুরোপুরি নারীর অধিকারের বিষয়।
সুনীল: এখন ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির অভিযোগ নিয়ে চিৎকার করা তার জন্য খুবই সহজ। কিন্তু তসলিমা আমার খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। আমরা একত্রে অনেক সময় কাটিয়েছি। তিনি মাঝেমধ্যেই আমার বাসায় আসতেন। আমরা সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করতাম। একসঙ্গে খাবার খেয়েছি আমরা। হোলি উৎসবের সময় একবার আমরা শান্তিনিকেতনে ছিলাম। ঠিক সেই দিনই তার একটি রূপ দেখতে পেলাম। তার সারা দেহ ও মুখ রঙে রাঙানো। তিনি বসে আছেন আমার পায়ের কাছে।
প্রশ্ন: তাহলে তসলিমা নাসরিন কেন এমন অভিযোগ আনছেন?
সুনীল: তসলিমা এমন এক নারী যিনি সব সময় মনোযোগের কেন্দ্রীয় অবস্থানে থাকতে চান। তিনি বিতর্ক সৃষ্টি করতে খুব পছন্দ করেন। অনেকটা পরে, তিনি এখন বুঝতে পারছেন যে তিনি প্রত্যাখ্যাত হচ্ছেন। তিনি ভারতে ফিরে এখানে অবস্থান করতে বেপরোয়া হয়ে পড়েছেন। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন। কেউ আর তাকে নিয়ে তেমন আলোচনা করে বলে মনে হয় না। তাই যে কোন মূল্যে হোক তিনি নিজেকে ফোকাসে আনার চেষ্টা করছেন। এরকম স্পর্শকাতর অভিযোগ আনতে পারলে তার সেই উদ্দেশ্য সফল হবে।
প্রশ্ন: তসলিমা আপনাকে ‘ভণ্ড’ও বলেছেন। তার বই ‘দ্বিখণ্ডিত’ পশ্চিমবঙ্গে যখন নিষিদ্ধ হয় তিনি দাবি করছেন তখন তার পিছনে আপনার হাত ছিল। এখন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের লেখা ‘মুসলমানদের করণীয়’ বইটি সমপ্রতি পশ্চিমবঙ্গ সরকার বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু আপনি এখন তাতে আপত্তি তুলেছেন।
সুনীল: যে কোন রকম সেন্সরশিপের বিরোধী আমি। তসলিমার বই নিষিদ্ধ হওয়ার পিছনে আমার কোন হাত ছিল না। আমি তাকে শুধু পরামর্শ দিয়েছি যে, মুসলমানদের ধর্মকে আক্রমণ করো না। (তার বইয়ে) এমন কিছু অংশ ছিল যা ইসলাম ধর্মের মহানবীকে মারাত্মকভাবে অবমাননা করে। যারা তার ভাল চায় এমন একজন হিসেবে আমি তাকে বুঝিয়েছি যে, এই অংশগুলো অপ্রয়োজনীয়। এতে অসন্তোষ বাড়বে। এতে সামপ্রদায়িক সহিংসতারও সৃষ্টি হতে পারে।
প্রশ্ন: তসলিমার মতে, গণতান্ত্রিক একটি দেশে তিনি লেখক হিসেবে বসবাস করছেন। তার মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকা উচিত।
সুনীল: সব কিছুর জন্য স্থান ও সময় দু’টিই দরকার। আমি তাকে সতর্ক করেছিলাম যে, তিনি যে স্বাধীনতার কথা বলছেন সে রকম মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য ভারত এখনও প্রস্তুত নয়। অধিক উদার সমাজে, যখন সেখানে কারও দৃষ্টিভঙ্গিতে অন্যদের আপত্তি থাকে সেখানে মতপার্থক্যকে যুক্তি দিয়ে দেখা হয়। কিন্তু এটা ভারত। যেখানে আবেগ খুব সস্তা। সামান্য একটু প্ররোচনা এখানে ভয়ঙ্কর সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। তসলিমা কলকাতা ছেড়ে যাওয়ার ঠিক আগে পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি ছিল লেজেগোবরে। তার খুন দাবি করে তীব্র বিক্ষোভ হয়েছে। এটা তার জন্য বিপজ্জনক। কিন্তু তিনি আমার পরামর্শে কানই দিলেন না।
প্রশ্ন: অভিযোগ আছে যে, আপনি ও পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যিক, বোদ্ধারা তার জন্য যথেষ্ট করেন নি।
সুনীল: এটা ঠিক নয়। যখন তার বিরুদ্ধে একটি ফতোয়া দেয়া হলো, তার জীবন হুমকির মধ্যে পড়েছিল। তখন কবি শঙ্খ ঘোষ ও আমি ব্যক্তিগতভাবে কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি এবং তাকে অনুরোধ করি তসলিমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সম্ভাব্য সব কিছু করতে। তসলিমা ২০০৭ সালে কলকাতা ছেড়ে যাওয়ার ঠিক আগে তার হয়ে টিপু সুলতান মসজিদের ইমামের কাছে দুঃখ প্রকাশ করি এবং তসলিমাকে তার ভুলের জন্য ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখার আহ্বান জানাই। কিন্তু তিনি আমার কথা শুনলেন না।
প্রশ্ন: এখন কি আপনি ক্ষোভ অনুভব করছেন? আপনি কি আঘাত পেয়েছেন?
সুনীল: তসলিমার জন্য আমার অনেক সহমর্মিতা আছে। আমি সবসময় তাকে পথ দেখাতে চেয়েছি। যখন তিনি ‘লজ্জা’ লেখেন আমি তাকে বলেছিলাম- দেখুন আপনাকে ব্যালান্স করতে হবে। সব হিন্দুই ভাল নন। আবার সব মুসলমানই খারাপ নন। কিন্তু তিনি বিতর্ক সৃষ্টি করলেন। তিনি আমার সঙ্গে একমত না হলেও আমি তা মেনে নিই। কিন্তু এই যৌন হয়রানির অভিযোগ আমাকে খুব পীড়া দেয়। আমি বিস্মিত ও হতবাক।
No comments