নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন?- রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্র উপেক্ষা

যে গঠনতন্ত্র নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো নিবন্ধিত হয়েছে, তা যেন লোক দেখানো। দলগুলো, বিশেষ করে দেশের দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল নিজেদের মতোই চলছে; গঠনতন্ত্রে যা-ই থাকুক না কেন! বিষয়টি দেখার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর এই স্বেচ্ছাচারিতাকে তারা প্রশ্রয়ই দিয়ে চলেছে।


নতুন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিও অনুযায়ী কোনো রাজনৈতিক দল শ্রমিক বা ছাত্রদের কোনো সহযোগী সংগঠন রাখতে পারে না। এই নিয়ম বিবেচনায় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো গঠনতন্ত্র সংশোধন করেছে। আগে এসব সংগঠন রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগী হিসেবে বিবেচিত হতো। সরকারি দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ ও ছাত্রলীগকে সহযোগী সংগঠনের পরিবর্তে ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের স্বীকৃতি দিয়েছে। সে অনুযায়ী শ্রমিক লীগ ও ছাত্রলীগের নিজ নিজ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চলার কথা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ইচ্ছা-অনিচ্ছায় পরিচালিত হচ্ছে সংগঠন দুটি। এ ধরনের সংগঠনগুলোর নেতা বা নেতৃত্ব নির্বাচিত হচ্ছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ইচ্ছায়। আগে কাজটি সরাসরি হলেও এখন পরোক্ষভাবে বজায় রয়েছে।
অন্যদিকে, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এ নিয়ে রাখঢাকেরও ধার ধারে না। দলের প্রধান খালেদা জিয়া নিজেই দলের গঠনতন্ত্র মেনে চলছেন না। সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিএনপিরও প্রবাসে দলের শাখা বা ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর ওপর প্রভাব বিস্তার করার কোনো সুযোগ নেই। আর এ ধরনের সংগঠনগুলোর স্বাধীনভাবে চলার কথা। কিন্তু আমরা দেখছি বিএনপি এ ক্ষেত্রে সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে। ঢাকায় বসে দলটি বিএনপির যুক্তরাজ্য শাখা ভেঙে দিয়েছে। আর ছাত্রদলের কমিটিতে কারা থাকবেন, সেটা নির্ধারণ করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন। বিএনপির গুলশান কার্যালয় থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ঘোষণা করা হলো ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, গঠনতন্ত্রবিরোধী এ ধরনের অপকর্মকে যথাযথ বলেই মনে করছেন দলের দপ্তরের দায়িত্বে থাকা যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির।
দেশের দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন শর্ত মেনেই নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হয়েছে। এই দুটি দল বা অন্য যেকোনো নিবন্ধিত দল যদি শর্ত ভেঙে কোনো কাজ করে, তবে তা বিবেচনায় নেওয়া ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। রাজনৈতিক দলগুলো যে নিজেদের গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে চলছে, নিয়ম ভেঙে চলেছে, এর প্রতিকারে তবে নির্বাচন কমিশন কী করছে? গত নির্বাচন কমিশন গঠনতন্ত্রবহির্ভূত কাজের জন্য আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে সতর্ক করে দিয়েছিল। প্রধান রাজনৈতিক দল দুটির সাম্প্রতিক এ ধরনের গঠনতন্ত্রবহির্ভূত কাজ করার পর বর্তমান নির্বাচন কমিশন কী ব্যবস্থা নেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়। আমরা মনে করি, শুধু লোক দেখানো সতর্কতা নয়; শর্ত মেনে না চললে যে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে, তা কঠোরভাবে কার্যকর করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.