রাজনীতি-ভারতের উদ্বেগের কিছু নেই by এম আবদুল হাফিজ
ধরা যাক, খালেদা জিয়ার বিএনপি একটি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হলো_ তাকে ভারতের মতো দেশ কী দৃষ্টিতে দেখবে? তখন তো তা একটি নির্বাচিত সরকারের ব্যাপার। ভারত কি তখন কয়েক কোটি মানুষের দ্বারা নির্বাচিত সরকারকে অগ্রাহ্য করতে চাইবে? না, তা চাইতে পারে না। সেখানে গোয়েন্দারাও নিষ্ক্রিয়।
তাহলে কেন এসব অনুমান এবং উদ্বেগ! আন্তর্জাতিক সম্পর্কে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে জনগণের পর্যায়ে
গণতান্ত্রিক দেশে দেশে সময় হলেই নির্বাচন হয়। সেগুলোর ফলাফল নিয়ে বড়জোর সেগুলোর সঙ্গে সম্পর্কসাপেক্ষে স্বভাবতই একটি কৌতূহল থাকে। আজকাল যুক্তরাষ্ট্রেও বারাক ওবামা ও মিট রমনির প্রতিদ্বন্দ্বিতা তুঙ্গে। অনেকেই প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে হয়তো-বা তাদের পক্ষাবলম্বনও করেছেন, যদিও তাদের জয়-পরাজয়ে কারও কোনো লাভ-লোকসান নেই। কিন্তু কেউ কি কখনও শুনেছেন যে, প্রতিবেশী কোনো দেশে নির্বাচনী ফলাফল প্রত্যাশা অনুযায়ী না হওয়ার সম্ভাবনায় আরেকটি দেশ 'উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়' বিমূঢ় হয়ে পড়ে? আমাদের এই বাংলাদেশে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি নাগাদ অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের ফলাফল নাকি ইতিমধ্যেই আগ্রহী দেশগুলোতে পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণে উঠে এসেছে।
ভারতের মুম্বাইভিত্তিক সর্বাধিক প্রচারিত ইংরেজি দৈনিকে দেশের আগামী নির্বাচনে ১৯৯১ সাল থেকে চক্রাকারে ক্ষমতার পালাবদলের সূত্র অনুযায়ী বিএনপিই এবার নির্বাচন জেতার হকদার। তারও হয়তো ব্যতিক্রম ঘটে ক্ষমতাসীন মহাজোটের স্বপ্ন পূরণ হতে পারত। কিন্তু ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মূল্যায়নে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট জিতবার সপক্ষে কোনো পূর্বাভাস দেখাতে পারেনি। অপশাসন, অনিয়ম, অযোগ্যতা, অপব্যয়, দুর্নীতি ইত্যাকার নেতিবাচক অভিধায় বিভূষিত এই সরকারের নির্বাচনী সাফল্য ও সম্ভাবনা সম্বন্ধে সরকারের সবচেয়ে হিতৈষী ভারতও খুব একটা আশাবাদ পোষণ করে না। তাই উভয় পক্ষেই বিরাজমান এক ক্রম ঘনীভূত উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। টাইমস্ অব ইন্ডিয়ার প্রতিপাদ্য সেটাই।
এতদঞ্চলে ভারত প্রকৃত প্রস্তাবে একটি পরাশক্তি। তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে ভারত সে দৃষ্টিতেই দেখে থাকে। প্রতিবেশী দেশগুলোতে তার সৎ, যোগ্য ও মেধাবী সরকারের দরকার নেই। তার দরকার অনুগত এবং ভারতের আধিপত্যবাদ বাস্তবায়নের জন্য সহযোগী সরকারের। বিএনপি দলটির মধ্যে ভারত কি সেই আনুগত্য বা সহযোগিতা খুঁজে পাবে? কিন্তু ভারত যদি বুদ্ধিমান হয় এবং তারা অবশ্যই বুদ্ধিমান জাতি, তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। যদি না ভারতই একটি স্পষ্টবাদী ন্যায়ভিত্তিক সরকারের সঙ্গে লেনদেনে অনীহা প্রদর্শন না করে এবং সেটিই ঘটেছিল নব্বই-উত্তর প্রথম বিএনপি সরকারের সঙ্গে।
তারও পূর্বে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সরকারের সঙ্গে কোনো পর্যায়েই ভারতের সম্পর্ক খারাপ ছিল না। জিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রফেসর শামসুল হক তার রচিত ইধহমষধফবংয রহ ওহঃবৎহধঃরড়হধষ চড়ষরঃরপং-এ ইন্দিরা গান্ধীসহ ভারতীয় শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে জিয়ার চমকপ্রদ সমীকরণের মনোজ্ঞ বর্ণনা দিয়েছেন। বাংলাদেশি রাজনৈতিক দল ও নেতারা তা না বুঝলেও ভারত ঠিকই জানে যে কীভাবে তাদের স্বার্থে পরিবর্তিত বাস্তবতায় তারা নতুন নেতৃত্ব কাছে টেনে নেবে এবং নতুন সম্পর্কের ভিত রচনা করবে।
দুঃখজনক হলেও ভারতেও আজ আর সেই উচ্চতার নেতৃত্ব নেই। তাই সম্ভবত তারা গোয়েন্দাদের পরিবেশিত তথ্যেই বিশ্বাস স্থাপন করে এবং এক প্রকার মনোবৈকল্যেও ভোগে। সাউথ ব্লকের আমলা-কূটনীতিকদের দৃষ্টিই ভারতের মতো দেশের পক্ষে দৃষ্টিপাত হতে পারে না।
অতঃপর যখন ১৯৭৭ সালের মার্চে ইন্দিরা গান্ধী সরকারকে পরাজিত করে দিলি্লতে মোরারজি দেশাইয়ের নতুন সরকার অধিষ্ঠিত হয় তারই ফলে ১৯৭৭ সালের ১৮ এপ্রিলের জিয়া-জগজীবন রাম চুক্তি ছিল গঙ্গার পানি বণ্টনে উভয় পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি মাইলফলক পদক্ষেপ, যা পাঁচ বছরের জন্য গৃহীত হয়। নবায়নের ভিত্তিতে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত চুক্তিটি কার্যকর বহাল থাকে।
ধরা যাক, খালেদা জিয়ার বিএনপি একটি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হলো_ তাকে ভারতের মতো দেশ কী দৃষ্টিতে দেখবে? তখন তো তা একটি নির্বাচিত সরকারের ব্যাপার। ভারত কি তখন কয়েক কোটি মানুষের দ্বারা নির্বাচিত সরকারকে অগ্রাহ্য করতে চাইবে? না, তা চাইতে পারে না। সেখানে গোয়েন্দারাও নিষ্ক্রিয়। তাহলে কেন এসব অনুমান এবং উদ্বেগ! আন্তর্জাতিক সম্পর্কে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে জনগণের পর্যায়ে। সেই জনগণ যেই নির্বাচনী রায় দিক না কেন ভারতের মতো বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র তো সেই রায়কেই শ্রদ্ধা দেখিয়ে ভবিষ্যতের সম্পর্ক গড়ে তুলবে। গোয়েন্দাদের তথ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে না। উভয় দেশের জনগণের একাত্মতার ভিত্তিতেই তা গড়ে ওঠে।
শেখ হাসিনা যদি ভারতের কাছে প্রিয় এবং কাম্য হয়ে থাকেন, খালেদা জিয়া নির্বাচনে জিতলেও ভারতের কাছে অচ্ছুত হতে যাবেন কেন? খালেদা জিয়াও অতীতে দু'দু'বার দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। জনগণের প্রত্যাশা পূরণ এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে না পারায় পরবর্তী নির্বাচনে জনগণ তাকে বদল করেছে। শেখ হাসিনাও যদি একই রকমভাবে জনপ্রত্যাশা পূরণ না করে থাকেন স্বাভাবিক নিয়মেই আগামী নির্বাচনে জনগণের কাছে প্রত্যাখ্যাত হবেন। এতে অনুমান-উদ্বেগের কী আছে?
অবশ্য নিন্দুকেরা নানা কথাই বলে। বিষয়টা শুধু নির্বাচিত সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশাই নয়। ব্যাপারটা বাংলাদেশের কাছে ভারতের প্রত্যাশার ব্যাপারও বৈকি! ভারত শেখ হাসিনার শাসনামলে এ দেশের সবকিছু_ ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা-সংস্কৃতি- কৃষ্টি, এমনকি রিয়াল এস্টেটেও বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রকারান্তরে এই ক্ষুদ্র কিন্তু মহান দেশটির ওপর থাবা বসিয়েছে, যার থেকে বেরিয়ে আসা কষ্টসাধ্য হবে। ভারতে দীর্ঘদিন আশ্রয় পাওয়ার ঋণ শোধের একটা তাগিদ হয়তো শেখ হাসিনার মধ্যে কাজ করে। তাই তিনি এবং তার সরকার ভারতের প্রতি অত্যন্ত উদার। এই ঔদার্য থেকে ভারতের কি বঞ্চিত হওয়ার ভয়!
একাত্তরে বাংলাদেশ যুদ্ধের পর ভারতের ভাগ্যের আমূল পরিবর্তন হয়। তার পূর্বে বা পরেও দক্ষিণ এশীয় কোনো প্রতিবেশীর সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক ছিল না। এখনও নেই। এই অঞ্চলের প্রতিটি দেশের সঙ্গেই ভারত বিপুল শক্তি ও সম্পদের অধিকারী হয়েও নিষ্কণ্টক সম্পর্ক গড়তে পারেনি। পেরেছে শুধু বাংলাদেশ, তাও আওয়ামী সরকারের বদৌলতে। এই সরকারের জন্য বিদায় ঘণ্টা বাজলে তা উভয় পক্ষের জন্য করুণ রসের সিঞ্চন ঘটাবে। তবে ইতিহাস যদি সাক্ষী হয় জিয়ার বাংলাদেশ ও ভারতের সমীকরণ ছিল সর্বোত্তম। যদি জিয়া ছায়ার ক্ষমতায় পুনরাবির্ভাব ঘটেই, তাতে ভারতের আফসোস করার কিছুই থাকবে না, যদি আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ঝুলে থাকা ইস্যুগুলোর একটা সুরাহা হয়।
ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম আবদুল হাফিজ : সাবেক মহাপরিচালক, বিআইআইএসএস ও কলাম লেখক
গণতান্ত্রিক দেশে দেশে সময় হলেই নির্বাচন হয়। সেগুলোর ফলাফল নিয়ে বড়জোর সেগুলোর সঙ্গে সম্পর্কসাপেক্ষে স্বভাবতই একটি কৌতূহল থাকে। আজকাল যুক্তরাষ্ট্রেও বারাক ওবামা ও মিট রমনির প্রতিদ্বন্দ্বিতা তুঙ্গে। অনেকেই প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে হয়তো-বা তাদের পক্ষাবলম্বনও করেছেন, যদিও তাদের জয়-পরাজয়ে কারও কোনো লাভ-লোকসান নেই। কিন্তু কেউ কি কখনও শুনেছেন যে, প্রতিবেশী কোনো দেশে নির্বাচনী ফলাফল প্রত্যাশা অনুযায়ী না হওয়ার সম্ভাবনায় আরেকটি দেশ 'উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়' বিমূঢ় হয়ে পড়ে? আমাদের এই বাংলাদেশে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি নাগাদ অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের ফলাফল নাকি ইতিমধ্যেই আগ্রহী দেশগুলোতে পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণে উঠে এসেছে।
ভারতের মুম্বাইভিত্তিক সর্বাধিক প্রচারিত ইংরেজি দৈনিকে দেশের আগামী নির্বাচনে ১৯৯১ সাল থেকে চক্রাকারে ক্ষমতার পালাবদলের সূত্র অনুযায়ী বিএনপিই এবার নির্বাচন জেতার হকদার। তারও হয়তো ব্যতিক্রম ঘটে ক্ষমতাসীন মহাজোটের স্বপ্ন পূরণ হতে পারত। কিন্তু ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মূল্যায়নে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট জিতবার সপক্ষে কোনো পূর্বাভাস দেখাতে পারেনি। অপশাসন, অনিয়ম, অযোগ্যতা, অপব্যয়, দুর্নীতি ইত্যাকার নেতিবাচক অভিধায় বিভূষিত এই সরকারের নির্বাচনী সাফল্য ও সম্ভাবনা সম্বন্ধে সরকারের সবচেয়ে হিতৈষী ভারতও খুব একটা আশাবাদ পোষণ করে না। তাই উভয় পক্ষেই বিরাজমান এক ক্রম ঘনীভূত উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। টাইমস্ অব ইন্ডিয়ার প্রতিপাদ্য সেটাই।
এতদঞ্চলে ভারত প্রকৃত প্রস্তাবে একটি পরাশক্তি। তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে ভারত সে দৃষ্টিতেই দেখে থাকে। প্রতিবেশী দেশগুলোতে তার সৎ, যোগ্য ও মেধাবী সরকারের দরকার নেই। তার দরকার অনুগত এবং ভারতের আধিপত্যবাদ বাস্তবায়নের জন্য সহযোগী সরকারের। বিএনপি দলটির মধ্যে ভারত কি সেই আনুগত্য বা সহযোগিতা খুঁজে পাবে? কিন্তু ভারত যদি বুদ্ধিমান হয় এবং তারা অবশ্যই বুদ্ধিমান জাতি, তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। যদি না ভারতই একটি স্পষ্টবাদী ন্যায়ভিত্তিক সরকারের সঙ্গে লেনদেনে অনীহা প্রদর্শন না করে এবং সেটিই ঘটেছিল নব্বই-উত্তর প্রথম বিএনপি সরকারের সঙ্গে।
তারও পূর্বে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সরকারের সঙ্গে কোনো পর্যায়েই ভারতের সম্পর্ক খারাপ ছিল না। জিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রফেসর শামসুল হক তার রচিত ইধহমষধফবংয রহ ওহঃবৎহধঃরড়হধষ চড়ষরঃরপং-এ ইন্দিরা গান্ধীসহ ভারতীয় শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে জিয়ার চমকপ্রদ সমীকরণের মনোজ্ঞ বর্ণনা দিয়েছেন। বাংলাদেশি রাজনৈতিক দল ও নেতারা তা না বুঝলেও ভারত ঠিকই জানে যে কীভাবে তাদের স্বার্থে পরিবর্তিত বাস্তবতায় তারা নতুন নেতৃত্ব কাছে টেনে নেবে এবং নতুন সম্পর্কের ভিত রচনা করবে।
দুঃখজনক হলেও ভারতেও আজ আর সেই উচ্চতার নেতৃত্ব নেই। তাই সম্ভবত তারা গোয়েন্দাদের পরিবেশিত তথ্যেই বিশ্বাস স্থাপন করে এবং এক প্রকার মনোবৈকল্যেও ভোগে। সাউথ ব্লকের আমলা-কূটনীতিকদের দৃষ্টিই ভারতের মতো দেশের পক্ষে দৃষ্টিপাত হতে পারে না।
অতঃপর যখন ১৯৭৭ সালের মার্চে ইন্দিরা গান্ধী সরকারকে পরাজিত করে দিলি্লতে মোরারজি দেশাইয়ের নতুন সরকার অধিষ্ঠিত হয় তারই ফলে ১৯৭৭ সালের ১৮ এপ্রিলের জিয়া-জগজীবন রাম চুক্তি ছিল গঙ্গার পানি বণ্টনে উভয় পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি মাইলফলক পদক্ষেপ, যা পাঁচ বছরের জন্য গৃহীত হয়। নবায়নের ভিত্তিতে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত চুক্তিটি কার্যকর বহাল থাকে।
ধরা যাক, খালেদা জিয়ার বিএনপি একটি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হলো_ তাকে ভারতের মতো দেশ কী দৃষ্টিতে দেখবে? তখন তো তা একটি নির্বাচিত সরকারের ব্যাপার। ভারত কি তখন কয়েক কোটি মানুষের দ্বারা নির্বাচিত সরকারকে অগ্রাহ্য করতে চাইবে? না, তা চাইতে পারে না। সেখানে গোয়েন্দারাও নিষ্ক্রিয়। তাহলে কেন এসব অনুমান এবং উদ্বেগ! আন্তর্জাতিক সম্পর্কে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে জনগণের পর্যায়ে। সেই জনগণ যেই নির্বাচনী রায় দিক না কেন ভারতের মতো বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র তো সেই রায়কেই শ্রদ্ধা দেখিয়ে ভবিষ্যতের সম্পর্ক গড়ে তুলবে। গোয়েন্দাদের তথ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে না। উভয় দেশের জনগণের একাত্মতার ভিত্তিতেই তা গড়ে ওঠে।
শেখ হাসিনা যদি ভারতের কাছে প্রিয় এবং কাম্য হয়ে থাকেন, খালেদা জিয়া নির্বাচনে জিতলেও ভারতের কাছে অচ্ছুত হতে যাবেন কেন? খালেদা জিয়াও অতীতে দু'দু'বার দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। জনগণের প্রত্যাশা পূরণ এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে না পারায় পরবর্তী নির্বাচনে জনগণ তাকে বদল করেছে। শেখ হাসিনাও যদি একই রকমভাবে জনপ্রত্যাশা পূরণ না করে থাকেন স্বাভাবিক নিয়মেই আগামী নির্বাচনে জনগণের কাছে প্রত্যাখ্যাত হবেন। এতে অনুমান-উদ্বেগের কী আছে?
অবশ্য নিন্দুকেরা নানা কথাই বলে। বিষয়টা শুধু নির্বাচিত সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশাই নয়। ব্যাপারটা বাংলাদেশের কাছে ভারতের প্রত্যাশার ব্যাপারও বৈকি! ভারত শেখ হাসিনার শাসনামলে এ দেশের সবকিছু_ ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা-সংস্কৃতি- কৃষ্টি, এমনকি রিয়াল এস্টেটেও বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রকারান্তরে এই ক্ষুদ্র কিন্তু মহান দেশটির ওপর থাবা বসিয়েছে, যার থেকে বেরিয়ে আসা কষ্টসাধ্য হবে। ভারতে দীর্ঘদিন আশ্রয় পাওয়ার ঋণ শোধের একটা তাগিদ হয়তো শেখ হাসিনার মধ্যে কাজ করে। তাই তিনি এবং তার সরকার ভারতের প্রতি অত্যন্ত উদার। এই ঔদার্য থেকে ভারতের কি বঞ্চিত হওয়ার ভয়!
একাত্তরে বাংলাদেশ যুদ্ধের পর ভারতের ভাগ্যের আমূল পরিবর্তন হয়। তার পূর্বে বা পরেও দক্ষিণ এশীয় কোনো প্রতিবেশীর সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক ছিল না। এখনও নেই। এই অঞ্চলের প্রতিটি দেশের সঙ্গেই ভারত বিপুল শক্তি ও সম্পদের অধিকারী হয়েও নিষ্কণ্টক সম্পর্ক গড়তে পারেনি। পেরেছে শুধু বাংলাদেশ, তাও আওয়ামী সরকারের বদৌলতে। এই সরকারের জন্য বিদায় ঘণ্টা বাজলে তা উভয় পক্ষের জন্য করুণ রসের সিঞ্চন ঘটাবে। তবে ইতিহাস যদি সাক্ষী হয় জিয়ার বাংলাদেশ ও ভারতের সমীকরণ ছিল সর্বোত্তম। যদি জিয়া ছায়ার ক্ষমতায় পুনরাবির্ভাব ঘটেই, তাতে ভারতের আফসোস করার কিছুই থাকবে না, যদি আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ঝুলে থাকা ইস্যুগুলোর একটা সুরাহা হয়।
ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম আবদুল হাফিজ : সাবেক মহাপরিচালক, বিআইআইএসএস ও কলাম লেখক
No comments