২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা-কলঙ্ক থেকে মুক্তি পাক জাতি

অনেক রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থান-হত্যাযজ্ঞ দেখেছে ৪০ বছরের বাংলাদেশ। স্বাধীনতার অব্যবহিত পর সামরিক বাহিনীর কিছু বিপথগামী কর্মকর্তার অভ্যুত্থানে সপরিবারে নিহত হয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ওই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র, ক্যুদেতা, পাল্টা ক্যুদেতার যে ধারাবাহিকতা শুরু হয়েছিল বাংলাদেশে,


তা বহুকাল পর্যন্ত জাতিকে ভুগিয়েছে। ইতিহাসের সে ক্ষতি ও ক্ষয়ের খেসারত আজও দিয়ে যাচ্ছে জাতি। কিন্তু এত ক্ষয়ক্ষতির পরও কি হত্যা ও রক্তপাতের ধারা বন্ধ হয়েছে? সাম্প্রতিক অতীতে ২০০৪ সালেও আরেক ভয়াবহতম ও কলঙ্কজনক ষড়যন্ত্র ও রক্তক্ষয়ের ইতিহাস রচিত হয়েছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট তখন ক্ষমতাসীন। শেখ হাসিনা তখন বিরোধীদলীয় নেতা এবং আওয়ামী লীগ প্রধান বিরোধী দল। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা সমাবেশ করছিলেন বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে। দলীয় নেতাকর্মীরা সমবেত হয়েছিলেন সে সমাবেশে। কিন্তু সহসা গ্রেনেডের আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল সমাবেশ। ইতিহাসের লজ্জাজনক অধ্যায় রচিত হলো বিরোধীদলীয় নেতাকে হত্যাচেষ্টার মধ্য দিয়ে। অলৌকিকভাবে বেঁচে গেলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু আহত-নিহত হলেন অসংখ্য মানুষ। রাজপথে রক্তধারা প্রবাহিত হলো। ওই ঘটনার পর অনেক বছর কেটে গেছে। এ বছরগুলোতে মানুষের মনে ঘুরেফিরে এসেছে কিছু প্রশ্ন। কেন শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হলো? কারা হত্যা করতে চেয়েছিল? হন্তারকদের পেছনে কারা ছিল? মর্মান্তিক ওই হামলার পর অর্ধযুগ পেরিয়ে গেলেও প্রশ্নগুলোর সদুত্তর মেলেনি। আজ অনেকটাই স্পষ্ট, কেন প্রশ্নগুলোর উত্তর জাতি পায়নি। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা নিয়ে সর্বশেষ চার্জশিটে দেখা যাচ্ছে, সে সময় যে ধর্মান্ধ জঙ্গিরা শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল তাদের পেছনে ছিল ক্ষমতাসীন দলের সমর্থন। হামলাকারীদের রক্ষা, পলায়নে সহায়তা থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে সমর্থন দিয়েছে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। বিএনপি আমলে গ্রেনেড হামলা নিয়ে যে মামলা হয়েছিল, তাতে পক্ষপাতদুষ্ট চার্জশিট দেওয়া হয়েছিল। মামলাকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার ষড়যন্ত্রও হয়েছিল। পরে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মামলাটির কাজ শুরু হয়। বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় অধিকতর তদন্ত করে চূড়ান্ত চার্জশিট দাখিল করা হলো। এ চার্জশিটকে স্বাগত জানিয়েছেন দেশের মানুষ। ন্যক্কারজনক গ্রেনেড হামলার পুঙ্খানুপঙ্খ বিশ্লেষণ করে, সাক্ষী ও গ্রেফতারকৃত আসামিদের জবানবন্দি অনুসরণ করে মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। সবাই আশা করে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতাকে হত্যার জন্য সংঘটিত এ ন্যক্কারজনক গ্রেনেড হামলার সুষ্ঠু বিচার হোক। ওই হামলার ফলে বহু মানুষ নিহত হয়েছেন। নিহতদের তালিকায় আছেন বর্তমান রাষ্ট্রপতির স্ত্রীও। গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন অনেকে। ভয়াবহ ওই অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় যথাযথ বিচারের মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তি হোক। ইতিহাসের ন্যক্কারজনক এই হামলার কলঙ্ক থেকে মুক্তি পাক জাতি। তবে ওই গ্রেনেড হামলার সুষ্ঠু বিচারই যথেষ্ট নয়, ভবিষ্যতে যাতে এমন হত্যাকাণ্ড-রক্তপাতের রাজনীতি থেকে জাতি মুক্ত হতে পারে সে উদ্যোগও আজ নিতে হবে। সমাজের সর্বত্রই ষড়যন্ত্র ও রক্তপাতের রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
 

No comments

Powered by Blogger.