স্মৃতিস্তম্ভের কবি by অধ্যাপক জমিলা আল আজাদ
ভাষাসংগ্রামী, মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট কবি, সব্যসাচি লেখক, শিক্ষাবিদ ড. আলাউদ্দিন আল আজাদ আমাদের জাতীয় ইতিহাসের এক উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। আলাউদ্দিন আল আজাদ ১৯৩২ সালের ৬ মে নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার রামনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা গাজী আবদুস সোবহান এবং মা মোসাঃ আমেনা খাতুন।
আলাউদ্দিন আল আজাদ অভিজাত, বনেদি ও সাংস্কৃতিক পরিবারে জন্ম নিলেও শৈশবটা তেমন সুখকর ছিল না। দেড় বছর বয়সে মা ইন্তেকাল করেন এবং ১০ বছর বয়সে বাবা। তখন থেকেই প্রায় সর্বহারা আজাদের সংগ্রামশীল জীবনের শুরু।
১৯৪৯ সালে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আইএ পাস করেন আজাদ। ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স প্রথম শ্রেণীতে প্রথম এবং ১৯৫৪ সালে প্রথম শ্রেণীতে এমএ পাস করেন। ১৯৭০ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৫৫ সালে তোলারাম কলেজের প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। পরে সিলেট এমসি কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। তিনি ১৯৭২ সালে ঢাকা কলেজের প্রিন্সিপালও ছিলেন। বর্ণাঢ্য ও বিশাল কর্মজীবন ছাড়াও তিনি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত থেকে দেশ ও জাতির জন্য সেবামূলক কাজ করে গেছেন। গল্প, উপন্যাস, কবিতা, নাটক, প্রবন্ধ, গবেষণা, সম্পাদনাসহ সাহিত্যের প্রায় প্রতিটি শাখায় তার সফল ও সার্থক প্রচারণা। তার রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৪৯।
আলাউদ্দিন আল আজাদ কেবল সাহিত্যিক ও শিক্ষানুরাগীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন রাজনীতিসচেতন একজন খাঁটি দেশপ্রেমিকও। ১৯৫২ সালে বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভাষা আন্দোলনে তিনি সরাসরি অংশ নেন। একুশের রক্তাক্ত ঘটনার পর তার উদ্যোগে প্রথম প্রকাশিত হয় একুশে প্রথম বুলেটিন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গণে স্থাপিত প্রথম শহীদ মিনার ধ্বংসের পর তিনি রচনা করেন ঐতিহাসিক ও অমর কবিতা 'স্মৃতিস্তম্ভ'। এ কবিতা শুধু শোকগাথা নয়, এটি ছিল আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী চেতনা ও সর্বজনীন গণমানুষের সংগ্রামী চেতনার প্রতীক।
মুক্তিযোদ্ধা আজাদ কেবল বাঙালিই নন, মহামানবতার উদগাতা শিল্পসৈনিক। তার 'ফেরারী ডায়রী' সর্বকালের এক শ্রেষ্ঠ মানবদলিল। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাসংগ্রামে তিনি এক গর্বিত সৈনিক। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা নিয়ে রচিত তার বিখ্যাত গ্রন্থ 'ফেরারী ডায়রী'তে তিনি বলেন, 'মুজিবের ৭ মার্চের ভাষণ গণতন্ত্রের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দলিল, লিঙ্কনের গৃহযুদ্ধ সম্পর্কিত ভাষণের চেয়েও শ্রেষ্ঠ।'
ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ ছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক আন্দোলনে যুক্ত থাকার কারণে নির্যাতন ও কারাভোগ করেছেন। আলাউদ্দিন আল আজাদ শান্তি সম্মেলনে যোগ দেওয়ার অপরাধে কলকাতায় প্রেসিডেন্সি জেলে নিরাপত্তা বন্দি ছিলেন ১৯৪৯ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত। রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে ১৯৬১ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন প্রায় এক বছর।
আলাউদ্দিন আল আজাদ তার পরিকল্পিত ও পরিচালিত সাহিত্যমূলক অনুষ্ঠান রত্নদীপ, মণিহার, চয়ন, রত্নদীপ (পুনঃ) বিপুল দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ক্ষেত্রে আলাউদ্দিন আল আজাদের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। তিনি প্রথম প্রগতিশীল ছবি 'সূর্যস্নান'-এর রচয়িতা। সুভাষ দত্তের 'বসুন্ধরা' তার উপন্যাস অবলম্বনে রচিত হয়েছে। তার ছোটগল্প ছাতা অবলম্বনে স্বল্পদৈর্ঘ্য 'আবর্তন' ও 'বৃষ্টি' অবলম্বনে মুক্তদৈর্ঘ্য 'বৃষ্টি' নির্মিত হয়েছে।
আলাউদ্দিন আল আজাদের রচনাবলি বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তার জনপ্রিয় উপন্যাস 'তেইশ নম্বর তৈলচিত্র' ইংরেজি, হিন্দি, উর্দু ও বুলগেরীয় ভাষায় অনূদিত হয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছে। এটি পকেট বুক হিসেবে বেস্ট সেলার। তার বিখ্যাত ছোটগল্প 'বৃষ্টি' ব্রুনেই দারুস সালামের জাতীয় ভাষায় অনূদিত হয়ে চিত্রায়নসহ প্রকাশিত হয়েছে। আলাউদ্দিন আল আজাদের মৌলিক ইংরেজি কবিতার বই 'অ্যাসেস অ্যান্ড স্পার্কস' আমেরিকায় জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তরজমা হয়েছে তার 'বৃষ্টি' গল্পটিও।
আলাউদ্দিন আল আজাদ সাহিত্য ক্ষেত্রে গৌরবময় অবদানের জন্য বাংলা একাডেমী, ইউনেস্কো ও একুশে পদকসহ বিভিন্ন পুরস্কার লাভ করেন। বাংলা সাহিত্যের প্রবাদপ্রতিম কীর্তিমান পুরুষ আলাউদ্দিন আল আজাদ ২০০৯ সালের ৩ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন।
১৯৪৯ সালে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আইএ পাস করেন আজাদ। ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স প্রথম শ্রেণীতে প্রথম এবং ১৯৫৪ সালে প্রথম শ্রেণীতে এমএ পাস করেন। ১৯৭০ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৫৫ সালে তোলারাম কলেজের প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। পরে সিলেট এমসি কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। তিনি ১৯৭২ সালে ঢাকা কলেজের প্রিন্সিপালও ছিলেন। বর্ণাঢ্য ও বিশাল কর্মজীবন ছাড়াও তিনি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত থেকে দেশ ও জাতির জন্য সেবামূলক কাজ করে গেছেন। গল্প, উপন্যাস, কবিতা, নাটক, প্রবন্ধ, গবেষণা, সম্পাদনাসহ সাহিত্যের প্রায় প্রতিটি শাখায় তার সফল ও সার্থক প্রচারণা। তার রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৪৯।
আলাউদ্দিন আল আজাদ কেবল সাহিত্যিক ও শিক্ষানুরাগীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন রাজনীতিসচেতন একজন খাঁটি দেশপ্রেমিকও। ১৯৫২ সালে বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভাষা আন্দোলনে তিনি সরাসরি অংশ নেন। একুশের রক্তাক্ত ঘটনার পর তার উদ্যোগে প্রথম প্রকাশিত হয় একুশে প্রথম বুলেটিন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গণে স্থাপিত প্রথম শহীদ মিনার ধ্বংসের পর তিনি রচনা করেন ঐতিহাসিক ও অমর কবিতা 'স্মৃতিস্তম্ভ'। এ কবিতা শুধু শোকগাথা নয়, এটি ছিল আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী চেতনা ও সর্বজনীন গণমানুষের সংগ্রামী চেতনার প্রতীক।
মুক্তিযোদ্ধা আজাদ কেবল বাঙালিই নন, মহামানবতার উদগাতা শিল্পসৈনিক। তার 'ফেরারী ডায়রী' সর্বকালের এক শ্রেষ্ঠ মানবদলিল। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাসংগ্রামে তিনি এক গর্বিত সৈনিক। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা নিয়ে রচিত তার বিখ্যাত গ্রন্থ 'ফেরারী ডায়রী'তে তিনি বলেন, 'মুজিবের ৭ মার্চের ভাষণ গণতন্ত্রের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দলিল, লিঙ্কনের গৃহযুদ্ধ সম্পর্কিত ভাষণের চেয়েও শ্রেষ্ঠ।'
ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ ছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক আন্দোলনে যুক্ত থাকার কারণে নির্যাতন ও কারাভোগ করেছেন। আলাউদ্দিন আল আজাদ শান্তি সম্মেলনে যোগ দেওয়ার অপরাধে কলকাতায় প্রেসিডেন্সি জেলে নিরাপত্তা বন্দি ছিলেন ১৯৪৯ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত। রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে ১৯৬১ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন প্রায় এক বছর।
আলাউদ্দিন আল আজাদ তার পরিকল্পিত ও পরিচালিত সাহিত্যমূলক অনুষ্ঠান রত্নদীপ, মণিহার, চয়ন, রত্নদীপ (পুনঃ) বিপুল দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ক্ষেত্রে আলাউদ্দিন আল আজাদের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। তিনি প্রথম প্রগতিশীল ছবি 'সূর্যস্নান'-এর রচয়িতা। সুভাষ দত্তের 'বসুন্ধরা' তার উপন্যাস অবলম্বনে রচিত হয়েছে। তার ছোটগল্প ছাতা অবলম্বনে স্বল্পদৈর্ঘ্য 'আবর্তন' ও 'বৃষ্টি' অবলম্বনে মুক্তদৈর্ঘ্য 'বৃষ্টি' নির্মিত হয়েছে।
আলাউদ্দিন আল আজাদের রচনাবলি বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তার জনপ্রিয় উপন্যাস 'তেইশ নম্বর তৈলচিত্র' ইংরেজি, হিন্দি, উর্দু ও বুলগেরীয় ভাষায় অনূদিত হয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছে। এটি পকেট বুক হিসেবে বেস্ট সেলার। তার বিখ্যাত ছোটগল্প 'বৃষ্টি' ব্রুনেই দারুস সালামের জাতীয় ভাষায় অনূদিত হয়ে চিত্রায়নসহ প্রকাশিত হয়েছে। আলাউদ্দিন আল আজাদের মৌলিক ইংরেজি কবিতার বই 'অ্যাসেস অ্যান্ড স্পার্কস' আমেরিকায় জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তরজমা হয়েছে তার 'বৃষ্টি' গল্পটিও।
আলাউদ্দিন আল আজাদ সাহিত্য ক্ষেত্রে গৌরবময় অবদানের জন্য বাংলা একাডেমী, ইউনেস্কো ও একুশে পদকসহ বিভিন্ন পুরস্কার লাভ করেন। বাংলা সাহিত্যের প্রবাদপ্রতিম কীর্তিমান পুরুষ আলাউদ্দিন আল আজাদ ২০০৯ সালের ৩ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন।
No comments