রক্ষা করার নামে নদী হত্যার আয়োজন বন্ধ হোক-তুরাগ উদ্ধারের প্রহসন

কী পরিহাস, নদীর সীমানায় খুঁটি পুুঁতে দখল থেকে রক্ষার জন্য আদালতকে নির্দেশ দিতে হয়। আর কত বড় অন্যায় যে সেই খুঁটি পোঁতা হয় নদীর ভেতরই, যাতে পাড়ের অনেকখানি জায়গা দখল করা যায়। তুরাগ নদ রক্ষার নামে ঢাকা জেলা প্রশাসন এবং অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের এই নিষ্ঠুর প্রহসন নদী রক্ষার নামে নদী হত্যারই


আয়োজন। এটা প্রকৃতির বিরুদ্ধে অপরাধ, মানুষের বিরুদ্ধে অপরাধ, এটা আইনের নির্লজ্জ বরখেলাপ। এর বিচার হওয়া প্রয়োজন।
ঢাকার চারটি নদীকে ‘প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ বলে ঘোষণা করা হয়েছিল কয়েক বছর আগে। এরপর উচ্চ আদালত বিভিন্ন সময় ঢাকার তুরাগ, বালু, বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যাকে দূষণ ও দখল থেকে মুক্ত করার নির্দেশও দেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৯ সালে তুরাগ নদের সীমানায় খুঁটি পুঁতে, গাছ লাগিয়ে, পাড় বাঁধিয়ে দখলদারদের প্রতিহত করার নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। কিন্তু এই দায়িত্বে নিয়োজিত ঢাকা জেলা প্রশাসন এবং অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ সুকৌশলে শুকনো মৌসুমে শীর্ণ হয়ে আসা নদের সীমাকেই স্থায়ী করে দেওয়ার ফন্দি করে। অর্থাৎ বর্ষায় নদী যতটা প্রসারিত হয়, সেটাকেই নদীর স্বাভাবিক সীমা হিসেবে মেনে নিলে, যেহেতু ইতিমধ্যে তুরাগের ভেতরে যেসব দখল সম্পন্ন হয়েছে, সেগুলো উচ্ছেদ করতে হয়। তা তারা করবে না বলেই আদালতের নির্দেশ কৌশলে ফাঁকি দিয়ে প্রভাবশালী মহলের দখল চিরস্থায়ী করার বন্দোবস্ত করে। এরই প্রতিফলন ঘটে নদের প্রকৃত সীমানা চিহ্নিত করার বদলে আয়তন সংকীর্ণ করার খুঁটি বসানোর আয়োজনে। সন্দেহের অবকাশ নেই যে এটি কোনো ভুল নয়, এটি সজ্ঞান প্রতারণা।
আবারও প্রমাণিত হলো, নদী উদ্ধারের মৌসুমি অভিযানে শোরগোলই সার। একশ্রেণীর আমলা-রাজনীতিক-ভূমিদস্যু, এই ত্রিভুজ ক্ষমতার কাছে সরকারি তৎপরতা সমুদ্রে ঢিল ছোড়ার মতোই অর্থহীন হয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীও যে বারবার নদী বাঁচানোর বক্তব্য দেন, সেসবকেও কি তাহলে কথার কথা ধরে নিতে হবে? বছরের পর বছর ধরে সারা দেশে নদ-নদীর দখল ও দূষণ বিপৎসীমাকে ছাপিয়ে গেছে। আর সময় নেই, কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে জিজ্ঞাসা, তাঁরা কি কোনো কথাই রাখবেন না? আমরা চাই, আদালতের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালিত হোক। আমরা চাই, ঢাকার চারটি নদী উদ্ধারকে সারা দেশের নদী উদ্ধারের সূচনা হিসেবে পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করা হোক। নদী হত্যার অপরাধ ক্ষমাহীন।

No comments

Powered by Blogger.