কলকাতার চিঠি-বামফ্রন্টের ভাগ্যাকাশে অশনিসংকেত? by অমর সাহা
যুদ্ধের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। আজ সোমবার সূর্য ওঠার কিছু পরেই পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ময়দানে শুরু হয়ে যাচ্ছে বিধানসভা নির্বাচনের মহারণ। একদিকে শাসক বামফ্রন্ট, অন্যদিকে বিরোধী কংগ্রেস-তৃণমূল জোট। পশ্চিমবঙ্গের শক্তিধর দুই মহাজোট। একদিকের সেনাপতি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আর অন্যদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দুই সেনাপতিই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। বুদ্ধদেব বলেছেন, এবারের নির্বাচনেও তাঁরা পরাস্ত করবেন বিরোধী কংগ্রেস-তৃণমূল জোটকে। তাঁরাই গড়বেন অষ্টম বামফ্রন্ট সরকার। বিরোধী জোট যতই আস্ফাালন করুক না কেন, রাজ্যের খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষ এখনো তাঁদের পাশে রয়েছে। তারাই জিতিয়ে দেবে বামফ্রন্টকে। বামফ্রন্টকে নিয়েই এখনো তারা স্বপ্ন দেখে।
আর মমতা তো একধাপ এগিয়ে বলেই দিয়েছেন, এবার এই রাজ্যপাট থেকে বিদায় নেবেই বাম শাসনের ৩৪ বছরের দুঃসহ দিনগুলোর কালো ইতিহাস। ৩৪ বছর পর ক্ষমতায় আসছে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট। মানুষের মনে জেগেছে ঊর্মি। তারা ইতিমধ্যেই প্রত্যাখ্যান করেছে বামফ্রন্টকে। তাই সুদিন আসছে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের। মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন মমতা। আর রাজ্যপাট থেকে বিদায় নিয়ে বনবাসে যাবেন বুদ্ধ। মমতা বলেছেন, দিকে দিকে মানুষ জেগে উঠেছে। গড়েছে তারা বামবিরোধী ঐক্য। আর কোনো শক্তি নেই এই মানুষের ঐক্যে ফাটল ধরানোর। জয় সুনিশ্চিত কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের। বিদায় নেবেই বামফ্রন্ট এই রাজ্যপাট থেকে।
দুই পক্ষের এই লড়াইকে এবার আরও বেগবান করে দিয়েছে কলকাতার প্রচারমাধ্যম। প্রচারমাধ্যমগুলো একযোগে বলছে, জয় এবার মমতার। বিদায় এবার বুদ্ধের। টেলিভিশন চ্যানেল বা সংবাদপত্র—সবারই এককথা, জয়ের নিরিখে এগিয়ে রয়েছেন মমতা। ইন্ডিয়া টুডে, আনন্দবাজার, এ সি নিয়েলসন, মহুয়া টেলিভিশন ও সংবাদ প্রতিদিন—সবারই সমীক্ষার এককথা, জিতছেন মমতা, হারছেন বুদ্ধদেব।
এখন এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না যে কলকাতার একটিমাত্র সংবাদপত্র ও দুটি টেলিভিশন চ্যানেল ছাড়া বাকি সব সংবাদপত্র ও টেলিভিশন চ্যানেল একবাক্যে বলে আসছে, বাম দলের পতন এবার নিশ্চিত। পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছর পর উদিত হবে নতুন সূর্য। সেই সূর্যের তাপে ধুয়েমুছে যাবে বাম শাসনের ৩৪ বছরের দুঃসহ যন্ত্রণার দিনগুলো।
কলকাতার সংবাদপত্র ও সংবাদমাধ্যমের এই প্রচারকে অবশ্য এখনো আমলে নেয়নি বামফ্রন্ট। এক সিপিএম নেতা বলেছেন, ‘২০০১ সালের কথা মনে আছে? তখন তো এভাবেই প্রচারমাধ্যম বলেছিল, জয় মমতার হবেই। সেদিন তারা পরিসংখ্যান দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গের পালাবদল হচ্ছেই। আর ক্ষমতায় আসছেন মমতা। কিন্তু কী ঘটেছিল, মনে আছে? তৃণমূল-কংগ্রেস পেয়েছিল ৬০টি আসন আর কংগ্রেস পেয়েছিল ২৬টি। আর বামফ্রন্ট পেয়েছিল ১৯৯টি আসন। অথচ সেদিন আউটলুক বলেছিল, কংগ্রেস-তৃণমূল পাবে ১২৯-১৩৯, দ্য উইক বলেছিল ১৭০-১৮০, আর টাইমস অব ইন্ডিয়া বলেছিল ১৫০-১৭৫ আসন পাবে কংগ্রেস-তৃণমূল। কিন্তু কী পেয়েছিল, জনগণ তা দেখিয়ে দিয়েছে। আবার ২০০৬ সালের নির্বাচনে জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী ফল হয়নি। সেবার তৃণমূল পেয়েছিল ৩০, কংগ্রেস ২১ আর বামফ্রন্ট ২৩৫টি আসন। তাই আমরা মনে করি, প্রচারমাধ্যম যা-ই বলুক না কেন, রাজ্যবাসী আমাদের পাশেই আছে। তারা ব্যালটযুদ্ধে প্রমাণ করে দেবে, বামফ্রন্টই এই রাজ্যের মূলশক্তি। বামফ্রন্টের বিকল্প বামফ্রন্টই। বামফ্রন্টই গড়বে অষ্টম বামফ্রন্ট সরকার। ১৯৭৭ সালে ক্ষমতায় আসার পর বামফ্রন্ট সাতটি সরকার গড়েছে। এবার তারা অষ্টম বামফ্রন্ট সরকার গড়ার দিকে এগোচ্ছে। ১৩ মে সেই ছবিই দেখা যাবে। ক্ষমতায় আসবে বামফ্রন্ট। আর এবারও স্বপ্ন থেকে যাবে তৃণমূলের। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সাধও উবে যাবে।’
সত্যি কি তাই? কী ঘটতে পারে এবারের বিধানসভা নির্বাচনে, তাই নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা-কল্পনা ও তর্কবিতর্কের অভাব নেই। তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা কিন্তু এমনটা বলতে কুণ্ঠাবোধ করেননি যে এবার সত্যিই এক কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি হয়েছে এই দুই জোট। তবে এখন পর্যন্ত পাল্লা ভারী মমতার। কিন্তু বামফ্রন্ট অতীত দিনের ভুলভ্রান্তি শুধরে যেভাবে প্রচারে নেমেছে, তাতে এটা মনে করা হচ্ছে যে বামফ্রন্টের অবস্থান আগের তুলনায় কিছুটা হলেও শক্তিশালী হয়েছে। বিক্ষুব্ধ হয়ে যেসব কর্মী দল ছেড়ে গিয়েছিলেন, তাঁরাও ধীরে ধীরে ফিরতে শুরু করেছেন। তা ছাড়া পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং পৌরসভা নির্বাচনে তৃণমূলের জয়ী পঞ্চায়েত ও পৌরসভার কাজ দেখেও নিরপেক্ষ বহু মানুষ ফের আবার ঝুঁকতে শুরু করেছে বামফ্রন্টের দিকে। তবু বলা যায়, বামফ্রন্ট এখনো উদ্ধার করতে পারেনি তাদের হূত রাজনৈতিক জমি। এই জমি উদ্ধারের জন্য বামফ্রন্ট এখনো চালিয়ে যাচ্ছে জোর লড়াই। বামফ্রন্ট মনে করছে, মানুষ আবার মুখ ঘোরাবে বামফ্রন্টের দিকে। কারণ বামফ্রন্ট সব সময় গরিবদের নিয়ে রাজনীতি করেছে। তাদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য কর্মসূচি নিয়েছে। সেই মানুষ নিশ্চয়ই বামফ্রন্টকে নিরাশ করবে না। এই আশায় বুকে বেঁধে এগোচ্ছে বামফ্রন্ট।
সত্যি কি এবার ভারতের নির্বাচন কমিশনও পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের ব্যাপারে কড়া অবস্থান নিয়েছে? এই মৌসুমে ভারতের পাঁচটি রাজ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ বাদে আর যে চারটি রাজ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তা হলো আসাম, তামিলনাড়ু, কেরালা ও পুদুচেরি। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার, এই নির্বাচন আসামে দুই দিন হলেও কেরালা, তামিলনাড়ু ও পুদুচেরিতে হয়েছে মাত্র একদিনে, সেই ১৩ এপ্রিল। আর একই নির্বাচন পশ্চিমবঙ্গে হচ্ছে ছয় পর্বে। এর কারণও বিবিধ। মমতা বারবার বলে এসেছেন, রিগিং করে জিতে আসছে সিপিএম। তাই নির্বাচন কমিশনও এবারের এই নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে ছয় পর্বে অনুষ্ঠিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সেই লক্ষ্য নিয়ে আজ থেকে শুরু হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ২৯৪টি আসনে নির্বাচনের প্রথম পর্ব। আজ ছয় জেলার ৫৪টি আসনে নেওয়া হচ্ছে ভোট।
ভোট হবে ছয় পর্বে। আজকের পর ফের লড়াই হবে ২৩ ও ২৭ এপ্রিল। এরপর ৩, ৭ ও ১০ মে। ফল প্রকাশিত হবে ১৩ মে। সেদিনই জনগণের দেওয়া রায় বলে দেবে, কে আসছেন ক্ষমতায়—বামফ্রন্ট, না কংগ্রেস-তৃণমূল জোট। কে হচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তবে শেষ কথা হিসেবে বলতে চাই, এখন যে নির্বাচনী হাওয়া, তাতে একটু পাল্লা ভারী মমতারই। বামফ্রন্ট যদি নির্বাচনে অলৌকিক কিছু ঘটাতে পারে তবে হয়তো এবারও সেই ২০০৬ সালের নির্বাচনী সমীক্ষার ফলের মতো উল্টে দিতে পারে সব হিসাব-নিকাশ। এত কিছুর পরও মমতার দল এখন নিশ্চিত হয়েই বলতে শুরু করেছে, আর নয় দরকার, বামফ্রন্ট সরকার।
অমর সাহা: প্রথম আলোর কলকাতা প্রতিনিধি।
আর মমতা তো একধাপ এগিয়ে বলেই দিয়েছেন, এবার এই রাজ্যপাট থেকে বিদায় নেবেই বাম শাসনের ৩৪ বছরের দুঃসহ দিনগুলোর কালো ইতিহাস। ৩৪ বছর পর ক্ষমতায় আসছে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট। মানুষের মনে জেগেছে ঊর্মি। তারা ইতিমধ্যেই প্রত্যাখ্যান করেছে বামফ্রন্টকে। তাই সুদিন আসছে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের। মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন মমতা। আর রাজ্যপাট থেকে বিদায় নিয়ে বনবাসে যাবেন বুদ্ধ। মমতা বলেছেন, দিকে দিকে মানুষ জেগে উঠেছে। গড়েছে তারা বামবিরোধী ঐক্য। আর কোনো শক্তি নেই এই মানুষের ঐক্যে ফাটল ধরানোর। জয় সুনিশ্চিত কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের। বিদায় নেবেই বামফ্রন্ট এই রাজ্যপাট থেকে।
দুই পক্ষের এই লড়াইকে এবার আরও বেগবান করে দিয়েছে কলকাতার প্রচারমাধ্যম। প্রচারমাধ্যমগুলো একযোগে বলছে, জয় এবার মমতার। বিদায় এবার বুদ্ধের। টেলিভিশন চ্যানেল বা সংবাদপত্র—সবারই এককথা, জয়ের নিরিখে এগিয়ে রয়েছেন মমতা। ইন্ডিয়া টুডে, আনন্দবাজার, এ সি নিয়েলসন, মহুয়া টেলিভিশন ও সংবাদ প্রতিদিন—সবারই সমীক্ষার এককথা, জিতছেন মমতা, হারছেন বুদ্ধদেব।
এখন এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না যে কলকাতার একটিমাত্র সংবাদপত্র ও দুটি টেলিভিশন চ্যানেল ছাড়া বাকি সব সংবাদপত্র ও টেলিভিশন চ্যানেল একবাক্যে বলে আসছে, বাম দলের পতন এবার নিশ্চিত। পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছর পর উদিত হবে নতুন সূর্য। সেই সূর্যের তাপে ধুয়েমুছে যাবে বাম শাসনের ৩৪ বছরের দুঃসহ যন্ত্রণার দিনগুলো।
কলকাতার সংবাদপত্র ও সংবাদমাধ্যমের এই প্রচারকে অবশ্য এখনো আমলে নেয়নি বামফ্রন্ট। এক সিপিএম নেতা বলেছেন, ‘২০০১ সালের কথা মনে আছে? তখন তো এভাবেই প্রচারমাধ্যম বলেছিল, জয় মমতার হবেই। সেদিন তারা পরিসংখ্যান দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গের পালাবদল হচ্ছেই। আর ক্ষমতায় আসছেন মমতা। কিন্তু কী ঘটেছিল, মনে আছে? তৃণমূল-কংগ্রেস পেয়েছিল ৬০টি আসন আর কংগ্রেস পেয়েছিল ২৬টি। আর বামফ্রন্ট পেয়েছিল ১৯৯টি আসন। অথচ সেদিন আউটলুক বলেছিল, কংগ্রেস-তৃণমূল পাবে ১২৯-১৩৯, দ্য উইক বলেছিল ১৭০-১৮০, আর টাইমস অব ইন্ডিয়া বলেছিল ১৫০-১৭৫ আসন পাবে কংগ্রেস-তৃণমূল। কিন্তু কী পেয়েছিল, জনগণ তা দেখিয়ে দিয়েছে। আবার ২০০৬ সালের নির্বাচনে জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী ফল হয়নি। সেবার তৃণমূল পেয়েছিল ৩০, কংগ্রেস ২১ আর বামফ্রন্ট ২৩৫টি আসন। তাই আমরা মনে করি, প্রচারমাধ্যম যা-ই বলুক না কেন, রাজ্যবাসী আমাদের পাশেই আছে। তারা ব্যালটযুদ্ধে প্রমাণ করে দেবে, বামফ্রন্টই এই রাজ্যের মূলশক্তি। বামফ্রন্টের বিকল্প বামফ্রন্টই। বামফ্রন্টই গড়বে অষ্টম বামফ্রন্ট সরকার। ১৯৭৭ সালে ক্ষমতায় আসার পর বামফ্রন্ট সাতটি সরকার গড়েছে। এবার তারা অষ্টম বামফ্রন্ট সরকার গড়ার দিকে এগোচ্ছে। ১৩ মে সেই ছবিই দেখা যাবে। ক্ষমতায় আসবে বামফ্রন্ট। আর এবারও স্বপ্ন থেকে যাবে তৃণমূলের। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সাধও উবে যাবে।’
সত্যি কি তাই? কী ঘটতে পারে এবারের বিধানসভা নির্বাচনে, তাই নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা-কল্পনা ও তর্কবিতর্কের অভাব নেই। তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা কিন্তু এমনটা বলতে কুণ্ঠাবোধ করেননি যে এবার সত্যিই এক কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি হয়েছে এই দুই জোট। তবে এখন পর্যন্ত পাল্লা ভারী মমতার। কিন্তু বামফ্রন্ট অতীত দিনের ভুলভ্রান্তি শুধরে যেভাবে প্রচারে নেমেছে, তাতে এটা মনে করা হচ্ছে যে বামফ্রন্টের অবস্থান আগের তুলনায় কিছুটা হলেও শক্তিশালী হয়েছে। বিক্ষুব্ধ হয়ে যেসব কর্মী দল ছেড়ে গিয়েছিলেন, তাঁরাও ধীরে ধীরে ফিরতে শুরু করেছেন। তা ছাড়া পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং পৌরসভা নির্বাচনে তৃণমূলের জয়ী পঞ্চায়েত ও পৌরসভার কাজ দেখেও নিরপেক্ষ বহু মানুষ ফের আবার ঝুঁকতে শুরু করেছে বামফ্রন্টের দিকে। তবু বলা যায়, বামফ্রন্ট এখনো উদ্ধার করতে পারেনি তাদের হূত রাজনৈতিক জমি। এই জমি উদ্ধারের জন্য বামফ্রন্ট এখনো চালিয়ে যাচ্ছে জোর লড়াই। বামফ্রন্ট মনে করছে, মানুষ আবার মুখ ঘোরাবে বামফ্রন্টের দিকে। কারণ বামফ্রন্ট সব সময় গরিবদের নিয়ে রাজনীতি করেছে। তাদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য কর্মসূচি নিয়েছে। সেই মানুষ নিশ্চয়ই বামফ্রন্টকে নিরাশ করবে না। এই আশায় বুকে বেঁধে এগোচ্ছে বামফ্রন্ট।
সত্যি কি এবার ভারতের নির্বাচন কমিশনও পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের ব্যাপারে কড়া অবস্থান নিয়েছে? এই মৌসুমে ভারতের পাঁচটি রাজ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ বাদে আর যে চারটি রাজ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তা হলো আসাম, তামিলনাড়ু, কেরালা ও পুদুচেরি। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার, এই নির্বাচন আসামে দুই দিন হলেও কেরালা, তামিলনাড়ু ও পুদুচেরিতে হয়েছে মাত্র একদিনে, সেই ১৩ এপ্রিল। আর একই নির্বাচন পশ্চিমবঙ্গে হচ্ছে ছয় পর্বে। এর কারণও বিবিধ। মমতা বারবার বলে এসেছেন, রিগিং করে জিতে আসছে সিপিএম। তাই নির্বাচন কমিশনও এবারের এই নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে ছয় পর্বে অনুষ্ঠিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সেই লক্ষ্য নিয়ে আজ থেকে শুরু হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ২৯৪টি আসনে নির্বাচনের প্রথম পর্ব। আজ ছয় জেলার ৫৪টি আসনে নেওয়া হচ্ছে ভোট।
ভোট হবে ছয় পর্বে। আজকের পর ফের লড়াই হবে ২৩ ও ২৭ এপ্রিল। এরপর ৩, ৭ ও ১০ মে। ফল প্রকাশিত হবে ১৩ মে। সেদিনই জনগণের দেওয়া রায় বলে দেবে, কে আসছেন ক্ষমতায়—বামফ্রন্ট, না কংগ্রেস-তৃণমূল জোট। কে হচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তবে শেষ কথা হিসেবে বলতে চাই, এখন যে নির্বাচনী হাওয়া, তাতে একটু পাল্লা ভারী মমতারই। বামফ্রন্ট যদি নির্বাচনে অলৌকিক কিছু ঘটাতে পারে তবে হয়তো এবারও সেই ২০০৬ সালের নির্বাচনী সমীক্ষার ফলের মতো উল্টে দিতে পারে সব হিসাব-নিকাশ। এত কিছুর পরও মমতার দল এখন নিশ্চিত হয়েই বলতে শুরু করেছে, আর নয় দরকার, বামফ্রন্ট সরকার।
অমর সাহা: প্রথম আলোর কলকাতা প্রতিনিধি।
No comments