শ্রদ্ধাঞ্জলি-শিক্ষক যেখানে ডিরোজিও by সুরঞ্জিত বৈদ্য
‘যে তর্ক করে না, সে অন্ধ গোঁড়ামিতে ভুগছে। যে তর্ক করতে পারে না, সে নির্বোধ; আর যে তর্ক করে না, সে ক্রীতদাস।’—ডিরোজিও উনিশ শতকের গোড়ার দিকে কলকাতার হিন্দু কলেজের (প্রতিষ্ঠা: ১৮১৭ সাল) এক তরুণ শিক্ষক পুরোনো-গোঁড়া-সংকীর্ণ ভাবনা আর অন্ধ সমাজ-নিয়মের বিরুদ্ধে ভয়শূন্য চিত্তে দাঁড়িয়েছিলেন।
নতুন বৈপ্লবিক চিন্তাধারা নিয়ে নতুন কিছু সৃষ্টি করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তাঁরই স্বপ্নে গোটা শহরের তরুণ যুবসমাজ যেন মেতে উঠেছিল নব উন্মাদনায়।
গোঁড়া সনাতনপন্থীরা নাক সিটকিয়ে বলতে লাগল, ‘ড্রোজু হেঙ্গাম বাঁধিয়েছে।’ আসলে ড্রোজু নয়, ডিরোজিও। পুরো নাম হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও। জন্ম ১৮০৯ সালের আজকের এই দিনে অর্থাৎ ১৮ এপ্রিল; কলকাতার এক ফিরিঙ্গি পরিবারে। পিতা ফ্রান্সিস ডিরোজিও ছিলেন পর্তুগিজ আর মা সোফিয়া জনসন ছিলেন একজন ইংরেজ মহিলা। শৈশবে ডিরোজিও ‘ধর্মতলা অ্যাকাডেমি’-তে ভর্তি হয়ে দীর্ঘ আট বছর সেখানে পড়াশোনা করেছিলেন। তখনই সান্নিধ্য পেয়েছিলেন এক খোলা দৃষ্টির বুদ্ধিদীপ্ত হূদয়বান স্কটিশ পণ্ডিত ডেভিড ড্রামন্ডের, যাঁর পরতে পরতে ছিল নতুনের স্বীকৃতি, প্রচলিতের বাইরে যাওয়ার আহ্বান, বাঁধা পথ ছেড়ে অন্য কিছু সৃষ্টি করার প্রেরণা। সেই প্রেরণায় শাণিত হয়ে ডিরোজিও হয়ে উঠলেন মুক্তমনের আদর্শ শিক্ষক। তিনি ছিলেন হিন্দু কলেজের চতুর্থ শিক্ষক। পড়াতেন গোল্ডস্মিথের ইতিহাস, রাসেলের আধুনিক ইউরোপ, রবার্টসনের পঞ্চম চার্লস, গের উপকথা, পোপের অনুবাদে হোমারের ইলিয়াড ও ওডিসি, ড্রাইডেনের অনুবাদে ভার্জিল, মিল্টনের প্যারাডাইস লস্ট, শেকসিপয়ারের ট্র্যাজেডি; পড়াতেন মগ্ন হয়ে, পড়াতেন বিশ্বাস, অনুভব, জীবনবোধ আর স্বপ্ন সম্বল করে। পাঠ্যক্রমের ধরাবাঁধা ছক ভেঙে দিতেন বারবার। ইতিহাস থেকে দর্শন, দর্শন থেকে সাহিত্যে তাঁর অবাধ বিচরণ। তাঁর কাছ থেকেই ছাত্ররা জানতে পারত বিশ্বের বিভিন্ন দার্শনিক মতামত। কখনো অনর্গল তিনি শোনাতেন ইতিহাসের পাতা থেকে ন্যায়পরায়ণতা, স্বার্থত্যাগ, দেশপ্রেম ও মানবপ্রেমের নানা কাহিনি। তাঁর কাছ থেকে হিন্দু কলেজের ছেলেরা জেনেছে বেকন, লক, বার্কলে, হিউম, রিড, স্টুয়ার্ড প্রমুখ বিখ্যাত দার্শনিকের তত্ত্ব; জেনেছে ফরাসি বিপ্লবের সাম্য-মৈত্রী-স্বাধীনতার বাণী, পড়েছে টম পেইনের এজ অব রিজন—যুক্তির যুগ।
পড়াতে পড়াতে তিনি চাইতেন ছাত্ররাও যেন অংশ নেয় ক্লাসে, ভাবতে থাকে সঙ্গে সঙ্গে। বোঝাতেন পরীক্ষায় পাস করা নয়, শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য সে শিক্ষাকে জীবনে প্রয়োগ করা। বলতেন, ‘মিথ্যাকে ঘৃণা করবে। মনে রেখো, সত্যের প্রতি নিষ্ঠা যেন টুটে না যায় কোনো পরিস্থিতিতেই।’ শেখাতেন যেকোনো কথাকে, যেকোনো তত্ত্বকে, যেকোনো বক্তব্যকে প্রশ্ন করতে; প্রশ্নে প্রশ্নে জর্জরিত করে মনের সাধ মিটলে তখন তাকে বিচার শেষে গ্রহণ করতে। শিক্ষকের তো এটাই কাজ, নানা বিষয় সম্পর্কে ছাত্রদের মনে উৎসাহ জাগিয়ে তোলা, চিন্তার জগতে তাদের স্বাবলম্বী করে তোলা। নিছক একঘেয়ে বুলি পড়া আর খাতায় তাকে অবিকল উগরে দেওয়া—এতে কি চিন্তার কোনো নতুনত্ব আছে? তাই লোহা যেমন চুম্বকের টানে জড়ো হয় চারপাশে, তারাও এসে ডিরোজিওকে কেন্দ্র করে গড়ে তুলেছিল একটা নতুন গোষ্ঠী, যাদের বলা হতো ‘ইয়ং বেঙ্গল’। বিশ্বাস তাদের চোখেমুখে, সত্য তাদের লক্ষ্য, যুক্তি তাদের তলোয়ার, তর্ক তাদের সঙ্গী, স্বপ্ন তাদের দাবি; তাদের সংস্পর্শে বেগবান হলো বাংলার নবজাগরণ।
ইয়ং বেঙ্গলের সদস্যদের নিয়ে ‘অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন’ নামে ডিরোজিওর বৈঠকখানায় গোড়াপত্তন হলো এক তর্কসভার। কিছুদিন পর তার কেন্দ্র হলো হিন্দু কলেজের অধ্যক্ষ সভার সদস্য শ্রীকৃষ্ণ সিংহের মানিকতলার বাগানবাড়ি। এ দেশের ছাত্রদের প্রথম আলোচনা সভা, তরুণদের অসংকোচ আবেগের মননশীল অভিব্যক্তির ক্ষেত্র, যেখানে ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, বৈজ্ঞানিক, ধর্মীয়, দার্শনিক নানা বিষয়ে বিতর্ক হতো। বক্তারা ইচ্ছামতো যুক্তিতর্ক উত্থাপন করতেন, চলত বাক্যের লড়াই, চিন্তার সংঘর্ষ; টলমল করে উঠত ভণ্ড, বিকল অন্ধ সমাজের ভিত্তিভূমি। এবার তাদের নেতৃত্বে প্রকাশিত হলো নিজস্ব মুখপত্র পার্থেনন। প্রথম সংখ্যাতেই প্রবল আক্রমণ করা হলো হিন্দু সমাজের কুসংস্কার আর ইংরেজ সরকারের ব্যয়বহুল বিচার বিভাগের প্রতি। খেপে উঠল হিন্দুসমাজ ও হিন্দু কলেজ কর্তৃপক্ষ। তাদের প্রবল চাপের মুখে বন্ধ হলো পর্থেনন। কিন্তু ঐতিহাসিক গুরুত্বে পার্থেনন চিহ্নিত হয়ে গেল এ দেশের মানুষের পরিচালিত আর সম্পাদিত প্রথম সংবাদপত্র হিসেবে।
ডিরোজিওর ছিল সুন্দর একটি কবিমন। ভারতবর্ষকে তিনি নিজের দেশ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন মনেপ্রাণে। লিখলেন কবিতা ‘টু ইন্ডিয়া মাই নেটিভল্যান্ড’, অনেকের বিবেচনায় যেটাকে বলা হয় ভারতবর্ষের প্রথম স্বদেশপ্রেমের কবিতা। এ ছাড়া ‘ফ্রিডম অব দ্য স্লেভ’ ও ‘অন দ্য অ্যাবলিশন অব সতি’-এর মতো অসংখ্য বিখ্যাত কবিতা। তার পরও কুসংস্কারাচ্ছন্ন হিন্দুসমাজের অসহিষ্ণু ধর্মীয় শক্তির হাত থেকে রেহাই পাননি ডিরোজিও। তাদের ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয়ে একদিন (এপ্রিল ১৮৩১) হিন্দু কলেজ ছাড়তে হলো তাঁকে। মাত্র পাঁচ বছর শিক্ষকতা করার পর ডিরোজিও হিন্দু কলেজ ছেড়ে চলে গেলেন বটে; কিন্তু যে ঢেউ তিনি তুলে দিয়ে গেলেন, তার প্রতিঘাত ছড়িয়ে যেতে লাগল দিকে দিকে, সবখানে।
ইতিমধ্যে কলকাতার চারদিকে কলেরা মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। ১৮৩১ সালের ১৭ ডিসেম্বর ডিরোজিও কলেরায় আক্রান্ত হলেন। কলেরা সংক্রামক ব্যাধি জেনেও তাঁর কলকাতার মৌলালির বাড়ি ভরে গেল অসংখ্য ভক্ত, ছাত্র, শুভাকাঙ্ক্ষিতে। দীর্ঘ ১০ দিন রোগে ভোগার পর ২৬ ডিসেম্বর মাত্র ২২ বছর আট মাস আট দিনের মাথায় ডিরোজিওর জীবনপ্রদীপ অকালে চিরদিনের জন্য নিভে গেল। তাঁর মৃত্যুর এত বছর পর এসেও হিন্দু কলেজের সেই বাড়িটির ডান দিকে ঢুকেই দেখা যাবে ডিরোজিওর আবক্ষ মূর্তি। অন্য কোনো শিক্ষক নন, হিন্দু কলেজ থেকে বিতাড়িত এক তরুণ শিক্ষককেই মনে রেখেছে ইতিহাস। কারণ, তিনি যে ছিলেন ছাত্রদের কাছে আদর্শ শিক্ষকের প্রতিমূর্তি! আজ ডিরোজিওর ২০২তম জন্মদিন। এই দিনে ট্র্যাজেডির অকালপ্রয়াত নায়কের প্রতি রইল আমাদের গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
সুরঞ্জিত বৈদ্য
গোঁড়া সনাতনপন্থীরা নাক সিটকিয়ে বলতে লাগল, ‘ড্রোজু হেঙ্গাম বাঁধিয়েছে।’ আসলে ড্রোজু নয়, ডিরোজিও। পুরো নাম হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও। জন্ম ১৮০৯ সালের আজকের এই দিনে অর্থাৎ ১৮ এপ্রিল; কলকাতার এক ফিরিঙ্গি পরিবারে। পিতা ফ্রান্সিস ডিরোজিও ছিলেন পর্তুগিজ আর মা সোফিয়া জনসন ছিলেন একজন ইংরেজ মহিলা। শৈশবে ডিরোজিও ‘ধর্মতলা অ্যাকাডেমি’-তে ভর্তি হয়ে দীর্ঘ আট বছর সেখানে পড়াশোনা করেছিলেন। তখনই সান্নিধ্য পেয়েছিলেন এক খোলা দৃষ্টির বুদ্ধিদীপ্ত হূদয়বান স্কটিশ পণ্ডিত ডেভিড ড্রামন্ডের, যাঁর পরতে পরতে ছিল নতুনের স্বীকৃতি, প্রচলিতের বাইরে যাওয়ার আহ্বান, বাঁধা পথ ছেড়ে অন্য কিছু সৃষ্টি করার প্রেরণা। সেই প্রেরণায় শাণিত হয়ে ডিরোজিও হয়ে উঠলেন মুক্তমনের আদর্শ শিক্ষক। তিনি ছিলেন হিন্দু কলেজের চতুর্থ শিক্ষক। পড়াতেন গোল্ডস্মিথের ইতিহাস, রাসেলের আধুনিক ইউরোপ, রবার্টসনের পঞ্চম চার্লস, গের উপকথা, পোপের অনুবাদে হোমারের ইলিয়াড ও ওডিসি, ড্রাইডেনের অনুবাদে ভার্জিল, মিল্টনের প্যারাডাইস লস্ট, শেকসিপয়ারের ট্র্যাজেডি; পড়াতেন মগ্ন হয়ে, পড়াতেন বিশ্বাস, অনুভব, জীবনবোধ আর স্বপ্ন সম্বল করে। পাঠ্যক্রমের ধরাবাঁধা ছক ভেঙে দিতেন বারবার। ইতিহাস থেকে দর্শন, দর্শন থেকে সাহিত্যে তাঁর অবাধ বিচরণ। তাঁর কাছ থেকেই ছাত্ররা জানতে পারত বিশ্বের বিভিন্ন দার্শনিক মতামত। কখনো অনর্গল তিনি শোনাতেন ইতিহাসের পাতা থেকে ন্যায়পরায়ণতা, স্বার্থত্যাগ, দেশপ্রেম ও মানবপ্রেমের নানা কাহিনি। তাঁর কাছ থেকে হিন্দু কলেজের ছেলেরা জেনেছে বেকন, লক, বার্কলে, হিউম, রিড, স্টুয়ার্ড প্রমুখ বিখ্যাত দার্শনিকের তত্ত্ব; জেনেছে ফরাসি বিপ্লবের সাম্য-মৈত্রী-স্বাধীনতার বাণী, পড়েছে টম পেইনের এজ অব রিজন—যুক্তির যুগ।
পড়াতে পড়াতে তিনি চাইতেন ছাত্ররাও যেন অংশ নেয় ক্লাসে, ভাবতে থাকে সঙ্গে সঙ্গে। বোঝাতেন পরীক্ষায় পাস করা নয়, শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য সে শিক্ষাকে জীবনে প্রয়োগ করা। বলতেন, ‘মিথ্যাকে ঘৃণা করবে। মনে রেখো, সত্যের প্রতি নিষ্ঠা যেন টুটে না যায় কোনো পরিস্থিতিতেই।’ শেখাতেন যেকোনো কথাকে, যেকোনো তত্ত্বকে, যেকোনো বক্তব্যকে প্রশ্ন করতে; প্রশ্নে প্রশ্নে জর্জরিত করে মনের সাধ মিটলে তখন তাকে বিচার শেষে গ্রহণ করতে। শিক্ষকের তো এটাই কাজ, নানা বিষয় সম্পর্কে ছাত্রদের মনে উৎসাহ জাগিয়ে তোলা, চিন্তার জগতে তাদের স্বাবলম্বী করে তোলা। নিছক একঘেয়ে বুলি পড়া আর খাতায় তাকে অবিকল উগরে দেওয়া—এতে কি চিন্তার কোনো নতুনত্ব আছে? তাই লোহা যেমন চুম্বকের টানে জড়ো হয় চারপাশে, তারাও এসে ডিরোজিওকে কেন্দ্র করে গড়ে তুলেছিল একটা নতুন গোষ্ঠী, যাদের বলা হতো ‘ইয়ং বেঙ্গল’। বিশ্বাস তাদের চোখেমুখে, সত্য তাদের লক্ষ্য, যুক্তি তাদের তলোয়ার, তর্ক তাদের সঙ্গী, স্বপ্ন তাদের দাবি; তাদের সংস্পর্শে বেগবান হলো বাংলার নবজাগরণ।
ইয়ং বেঙ্গলের সদস্যদের নিয়ে ‘অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন’ নামে ডিরোজিওর বৈঠকখানায় গোড়াপত্তন হলো এক তর্কসভার। কিছুদিন পর তার কেন্দ্র হলো হিন্দু কলেজের অধ্যক্ষ সভার সদস্য শ্রীকৃষ্ণ সিংহের মানিকতলার বাগানবাড়ি। এ দেশের ছাত্রদের প্রথম আলোচনা সভা, তরুণদের অসংকোচ আবেগের মননশীল অভিব্যক্তির ক্ষেত্র, যেখানে ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, বৈজ্ঞানিক, ধর্মীয়, দার্শনিক নানা বিষয়ে বিতর্ক হতো। বক্তারা ইচ্ছামতো যুক্তিতর্ক উত্থাপন করতেন, চলত বাক্যের লড়াই, চিন্তার সংঘর্ষ; টলমল করে উঠত ভণ্ড, বিকল অন্ধ সমাজের ভিত্তিভূমি। এবার তাদের নেতৃত্বে প্রকাশিত হলো নিজস্ব মুখপত্র পার্থেনন। প্রথম সংখ্যাতেই প্রবল আক্রমণ করা হলো হিন্দু সমাজের কুসংস্কার আর ইংরেজ সরকারের ব্যয়বহুল বিচার বিভাগের প্রতি। খেপে উঠল হিন্দুসমাজ ও হিন্দু কলেজ কর্তৃপক্ষ। তাদের প্রবল চাপের মুখে বন্ধ হলো পর্থেনন। কিন্তু ঐতিহাসিক গুরুত্বে পার্থেনন চিহ্নিত হয়ে গেল এ দেশের মানুষের পরিচালিত আর সম্পাদিত প্রথম সংবাদপত্র হিসেবে।
ডিরোজিওর ছিল সুন্দর একটি কবিমন। ভারতবর্ষকে তিনি নিজের দেশ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন মনেপ্রাণে। লিখলেন কবিতা ‘টু ইন্ডিয়া মাই নেটিভল্যান্ড’, অনেকের বিবেচনায় যেটাকে বলা হয় ভারতবর্ষের প্রথম স্বদেশপ্রেমের কবিতা। এ ছাড়া ‘ফ্রিডম অব দ্য স্লেভ’ ও ‘অন দ্য অ্যাবলিশন অব সতি’-এর মতো অসংখ্য বিখ্যাত কবিতা। তার পরও কুসংস্কারাচ্ছন্ন হিন্দুসমাজের অসহিষ্ণু ধর্মীয় শক্তির হাত থেকে রেহাই পাননি ডিরোজিও। তাদের ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয়ে একদিন (এপ্রিল ১৮৩১) হিন্দু কলেজ ছাড়তে হলো তাঁকে। মাত্র পাঁচ বছর শিক্ষকতা করার পর ডিরোজিও হিন্দু কলেজ ছেড়ে চলে গেলেন বটে; কিন্তু যে ঢেউ তিনি তুলে দিয়ে গেলেন, তার প্রতিঘাত ছড়িয়ে যেতে লাগল দিকে দিকে, সবখানে।
ইতিমধ্যে কলকাতার চারদিকে কলেরা মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। ১৮৩১ সালের ১৭ ডিসেম্বর ডিরোজিও কলেরায় আক্রান্ত হলেন। কলেরা সংক্রামক ব্যাধি জেনেও তাঁর কলকাতার মৌলালির বাড়ি ভরে গেল অসংখ্য ভক্ত, ছাত্র, শুভাকাঙ্ক্ষিতে। দীর্ঘ ১০ দিন রোগে ভোগার পর ২৬ ডিসেম্বর মাত্র ২২ বছর আট মাস আট দিনের মাথায় ডিরোজিওর জীবনপ্রদীপ অকালে চিরদিনের জন্য নিভে গেল। তাঁর মৃত্যুর এত বছর পর এসেও হিন্দু কলেজের সেই বাড়িটির ডান দিকে ঢুকেই দেখা যাবে ডিরোজিওর আবক্ষ মূর্তি। অন্য কোনো শিক্ষক নন, হিন্দু কলেজ থেকে বিতাড়িত এক তরুণ শিক্ষককেই মনে রেখেছে ইতিহাস। কারণ, তিনি যে ছিলেন ছাত্রদের কাছে আদর্শ শিক্ষকের প্রতিমূর্তি! আজ ডিরোজিওর ২০২তম জন্মদিন। এই দিনে ট্র্যাজেডির অকালপ্রয়াত নায়কের প্রতি রইল আমাদের গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
সুরঞ্জিত বৈদ্য
No comments