পরিবেশ-বন বিভাগের দক্ষতা বাড়বে কবে? by মো. কামাল হোসাইন
উনিশ শতকের শেষদিকে ব্রিটিশ শাসকরা এই উপমহাদেশে বন ব্যবস্থাপনা শুরু করলেও সবচেয়ে বেশি বৃক্ষসম্পদ ধ্বংস হয় এই ব্রিটিশদের হাতেই। শিল্পায়ন, রেলওয়ে স্লিপার ও নৌবাহিনীর বিশাল বহরের চাহিদার জোগানের জন্য যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এ দেশ থেকে প্রাকৃতিক বনের কাঠ পাচারের মাধ্যমে আমাদের বন উজাড় শুরু
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য একটি দেশের মোট আয়তনের শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়োজন বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। উনিশ শতকের শেষে বাংলাদেশে বনাঞ্চলের পরিমাণ মোট ভূমির ২৫ শতাংশেরও বেশি ছিল। বর্তমানে বাংলাদেশে বনাঞ্চলের সঠিক পরিমাণ নিয়ে বিভিন্ন সংস্থার হিসাবে বেশ গরমিল থাকলেও বন বিভাগের প্রদত্ত তথ্যানুসারে বাংলাদেশে মোট ২ দশমিক ৫২ মিলিয়ন হেক্টর বনভূমি রয়েছে, যা দেশের মোট ভূমির শতকরা প্রায় ১৭ দশমিক ৪ ভাগ।
বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত বন উজাড় ও জবরদখল হচ্ছে এবং বনাঞ্চল ধ্বংসের ভয়াবহতা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আশির দশকে প্রতি বছর বন উজাড়ের পরিমাণ ৮ হাজার হেক্টর হলেও একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে তা ৩৭ হাজার ৭০০ হেক্টরে পেঁৗছায় বলে এফএও-এর জরিপে প্রকাশ পায়। অন্য এক সূত্রে বাংলাদেশে বন উজাড়ের হার ৩ দশমিক ৩ শতাংশ বলে ধারণা করা হয়। এ ছাড়া বিগত ২০ বছরে বিভিন্নভাবে বাংলাদেশের ৫০ শতাংশ বন ধ্বংস হয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে প্রকাশ পায়। যার ফলে স্বাধীনতার প্রাক্কালে যেখানে মাথাপিছু বনভূমির পরিমাণ ছিল ০.০৩৫ হেক্টর, তা বর্তমানে কমে ০.০২ হেক্টরেরও কমে এসে দাঁড়িয়েছে।
উনিশ শতকের শেষদিকে ব্রিটিশ শাসকরা এই উপমহাদেশে বন ব্যবস্থাপনা শুরু করলেও সবচেয়ে বেশি বৃক্ষসম্পদ ধ্বংস হয় এই ব্রিটিশদের হাতেই। শিল্পায়ন, রেলওয়ে স্লিপার ও নৌবাহিনীর বিশাল বহরের চাহিদার জোগানের জন্য যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এ দেশ থেকে প্রাকৃতিক বনের কাঠ পাচারের মাধ্যমে আমাদের বন উজাড় শুরু। প্রাকৃতিক মিশ্র বনে বাছাই-কাটা ব্যবস্থাপনার পরিবর্তে সাফাই-কর্তনের মাধ্যমে বন থেকে বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ সরিয়ে কথিত মূল্যবান বৃক্ষ, যেমন_ সেগুন লাগানোর মাধ্যমে আমাদের পাহাড়ি বন ধ্বংসের অভিষেক হয় সেই ১৮৭১ সালেই।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে বন উজাড়ের জন্য জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ব্যাপক দারিদ্র্য, ভূমিহীন মানুষের বনে অবৈধ অবস্থান, সংঘবদ্ধ কাঠচোরদের দৌরাত্ম্য, জবরদখল, জুমচাষ, শিল্প কারখানার প্রসার ও বন সম্পদের অনুপযুক্ত ব্যবহারকেই বেশি দায়ী করা হয়। উষ্ণমণ্ডলীয় প্রাকৃতিক বনাঞ্চলে বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ৭-৮ ঘনমিটার-হেক্টরের বেশি নয়। সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আমাদের দেশে সেগুনের উৎপাদন ক্ষমতা কিছু ক্ষেত্রে ৭-৮ ঘনমিটার পাওয়া গেলেও স্থান ও ব্যবস্থাপনাভেদে এ উৎপাদন ক্ষমতা ২.০-২.৫ ঘনমিটারের বেশি নয়। বাংলাদেশে গাছ জন্মানো ও বৃদ্ধির উপযোগী আবহাওয়া ও মাটি বিদ্যমান থাকলেও আমরা সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতার ধারেকাছেও যেতে পারিনি। এমনকি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের বিচারে আমাদের বনের উৎপাদন ক্ষমতা আশঙ্কাজনকভাবে কম।
বাংলাদেশে যথাযথ বন সংরক্ষণ ও আধুনিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সফল না হওয়ার যেসব কারণ দায়ী বলে মনে করা হয়, তা হলো_ বন বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা, যেমন_ প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবলের অভাব, অপ্রতুল বাজেট, প্রয়োজনীয় যন্ত্রাদি ও সরঞ্জামের অভাব, প্রশাসনে স্বচ্ছতার অভাব ও দুর্নীতি। ঐতিহ্যবাহী বন অধিদফতরের পুরনো প্রশাসন ও বন ব্যবস্থাপনার ইতিহাস বিশেল্গষণে দেখা যায়, ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে বন ব্যবস্থাপনায় রাজস্ব আয় করাটাই ছিল মূলনীতি। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে বন ব্যবস্থাপনায় বন সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। নতুন নীতি বাস্তবায়নের জন্য ইউএনডিপি, এডিবি, ইউএসএইড, বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সামাজিক বনায়ন ও সংরক্ষিত এলাকায় জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
বন অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণাধীন ও ব্যবস্থাপনায় বর্তমানে প্রায় ১ দশমিক ৫২ মিলিয়ন হেক্টর বনভূমি আছে। বননীতি ১৯৯৪-এর বাস্তবায়নে ১৯৯৯ সালে সর্বশেষ বন বিভাগের সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠনের মাধ্যমে কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা কিছুটা হলেও বাড়ানো হয়। স্বাধীনতার পর অনেক অধিদফতর বা বিভাগ তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী জনবল কাঠামো বৃদ্ধি করে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় তাদের অফিস স্থাপন এবং গবেষণা ও প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রেখেছে। কৃষি বিভাগসহ আরও অনেক বিভাগ তাদের নিজ নিজ সেক্টরের উন্নয়ন ও উৎপাদন কয়েক গুণ বৃদ্ধি করে জনগণের চাহিদা মেটাতে অনেকটাই সক্ষম হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে সরকারের প্রায় প্রতিটি বিভাগের একাধিক প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা রয়েছেন, যাদের মাধ্যমে নিজ নিজ বিভাগ/অধিদফতরের সুফলগুলো জনগণের কাছে সহজে পেঁঁৗছে যাচ্ছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, ২১ শতকের বিভিন্নমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উপজেলা পর্যায়ে বন বিভাগের কোনো প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা তো নেই-ই, এমনকি দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৩৮টিতে বন অধিদফতরের জেলা পর্যায়ের কোনো দফতর, কর্মকর্তা নেই। ফলে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যথোপযুক্ত প্রতিনিধিত্বের অভাবে বন উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও সংরক্ষণ কার্যক্রমে সমন্বয়হীনতার অভাব পরিলক্ষিত হয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে বন সৃষ্টি, রক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৪২ হাজার একর জমি ও ৫১ হাজার কিলোমিটার রাস্তা বনায়নের উদ্যোগ আশা জাগায় বৈকি।
বনের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার লক্ষ্যে প্রতিবেশ পর্যবেক্ষণ, সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও গবেষণার জন্য বন বিভাগের নিজস্ব তেমন কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ ও তহবিল নেই। এ অবস্থায় বন সংকোচন ও পরিবেশ বিপর্যয়ের মতো দুর্যোগ মোকাবেলায় একটি সুগঠিত ও শৃঙ্খলাপূর্ণ প্রশাসনিক কাঠামো ও দক্ষ জনবল গড়ে তোলা সময়েরই দাবি। সরকারের বন মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৫ সালের মধ্যে দেশের শতকরা ২০ ভাগ এলাকা বনায়নের আওতায় আনার কথা থাকলেও বর্তমান জনবল কাঠামো দিয়ে তা পূরণ সম্ভব বলে মনে হয় না। বনায়ন বর্তমান বিশ্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। আমাদের দেশেও হাজার হাজার হেক্টর ভূমি বৃক্ষশূন্য হয়ে পরিবেশ বিপর্যয়ের দিকে আমাদের ঠেলে দিচ্ছে। বনের ওপর নির্ভরশীল জনগণ ক্রমেই প্রয়োজনের তাগিদে বন উজাড়, ভূমির অপব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে। তাই যথাশিগগির এসব এলাকাকে বনায়নের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
ড. মোহাম্মদ কামাল হোসাইন : প্রফেসর, ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস, চবি
বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত বন উজাড় ও জবরদখল হচ্ছে এবং বনাঞ্চল ধ্বংসের ভয়াবহতা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আশির দশকে প্রতি বছর বন উজাড়ের পরিমাণ ৮ হাজার হেক্টর হলেও একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে তা ৩৭ হাজার ৭০০ হেক্টরে পেঁৗছায় বলে এফএও-এর জরিপে প্রকাশ পায়। অন্য এক সূত্রে বাংলাদেশে বন উজাড়ের হার ৩ দশমিক ৩ শতাংশ বলে ধারণা করা হয়। এ ছাড়া বিগত ২০ বছরে বিভিন্নভাবে বাংলাদেশের ৫০ শতাংশ বন ধ্বংস হয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে প্রকাশ পায়। যার ফলে স্বাধীনতার প্রাক্কালে যেখানে মাথাপিছু বনভূমির পরিমাণ ছিল ০.০৩৫ হেক্টর, তা বর্তমানে কমে ০.০২ হেক্টরেরও কমে এসে দাঁড়িয়েছে।
উনিশ শতকের শেষদিকে ব্রিটিশ শাসকরা এই উপমহাদেশে বন ব্যবস্থাপনা শুরু করলেও সবচেয়ে বেশি বৃক্ষসম্পদ ধ্বংস হয় এই ব্রিটিশদের হাতেই। শিল্পায়ন, রেলওয়ে স্লিপার ও নৌবাহিনীর বিশাল বহরের চাহিদার জোগানের জন্য যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এ দেশ থেকে প্রাকৃতিক বনের কাঠ পাচারের মাধ্যমে আমাদের বন উজাড় শুরু। প্রাকৃতিক মিশ্র বনে বাছাই-কাটা ব্যবস্থাপনার পরিবর্তে সাফাই-কর্তনের মাধ্যমে বন থেকে বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ সরিয়ে কথিত মূল্যবান বৃক্ষ, যেমন_ সেগুন লাগানোর মাধ্যমে আমাদের পাহাড়ি বন ধ্বংসের অভিষেক হয় সেই ১৮৭১ সালেই।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে বন উজাড়ের জন্য জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ব্যাপক দারিদ্র্য, ভূমিহীন মানুষের বনে অবৈধ অবস্থান, সংঘবদ্ধ কাঠচোরদের দৌরাত্ম্য, জবরদখল, জুমচাষ, শিল্প কারখানার প্রসার ও বন সম্পদের অনুপযুক্ত ব্যবহারকেই বেশি দায়ী করা হয়। উষ্ণমণ্ডলীয় প্রাকৃতিক বনাঞ্চলে বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ৭-৮ ঘনমিটার-হেক্টরের বেশি নয়। সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আমাদের দেশে সেগুনের উৎপাদন ক্ষমতা কিছু ক্ষেত্রে ৭-৮ ঘনমিটার পাওয়া গেলেও স্থান ও ব্যবস্থাপনাভেদে এ উৎপাদন ক্ষমতা ২.০-২.৫ ঘনমিটারের বেশি নয়। বাংলাদেশে গাছ জন্মানো ও বৃদ্ধির উপযোগী আবহাওয়া ও মাটি বিদ্যমান থাকলেও আমরা সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতার ধারেকাছেও যেতে পারিনি। এমনকি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের বিচারে আমাদের বনের উৎপাদন ক্ষমতা আশঙ্কাজনকভাবে কম।
বাংলাদেশে যথাযথ বন সংরক্ষণ ও আধুনিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সফল না হওয়ার যেসব কারণ দায়ী বলে মনে করা হয়, তা হলো_ বন বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা, যেমন_ প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবলের অভাব, অপ্রতুল বাজেট, প্রয়োজনীয় যন্ত্রাদি ও সরঞ্জামের অভাব, প্রশাসনে স্বচ্ছতার অভাব ও দুর্নীতি। ঐতিহ্যবাহী বন অধিদফতরের পুরনো প্রশাসন ও বন ব্যবস্থাপনার ইতিহাস বিশেল্গষণে দেখা যায়, ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে বন ব্যবস্থাপনায় রাজস্ব আয় করাটাই ছিল মূলনীতি। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে বন ব্যবস্থাপনায় বন সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। নতুন নীতি বাস্তবায়নের জন্য ইউএনডিপি, এডিবি, ইউএসএইড, বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সামাজিক বনায়ন ও সংরক্ষিত এলাকায় জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
বন অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণাধীন ও ব্যবস্থাপনায় বর্তমানে প্রায় ১ দশমিক ৫২ মিলিয়ন হেক্টর বনভূমি আছে। বননীতি ১৯৯৪-এর বাস্তবায়নে ১৯৯৯ সালে সর্বশেষ বন বিভাগের সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠনের মাধ্যমে কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা কিছুটা হলেও বাড়ানো হয়। স্বাধীনতার পর অনেক অধিদফতর বা বিভাগ তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী জনবল কাঠামো বৃদ্ধি করে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় তাদের অফিস স্থাপন এবং গবেষণা ও প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রেখেছে। কৃষি বিভাগসহ আরও অনেক বিভাগ তাদের নিজ নিজ সেক্টরের উন্নয়ন ও উৎপাদন কয়েক গুণ বৃদ্ধি করে জনগণের চাহিদা মেটাতে অনেকটাই সক্ষম হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে সরকারের প্রায় প্রতিটি বিভাগের একাধিক প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা রয়েছেন, যাদের মাধ্যমে নিজ নিজ বিভাগ/অধিদফতরের সুফলগুলো জনগণের কাছে সহজে পেঁঁৗছে যাচ্ছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, ২১ শতকের বিভিন্নমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উপজেলা পর্যায়ে বন বিভাগের কোনো প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা তো নেই-ই, এমনকি দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৩৮টিতে বন অধিদফতরের জেলা পর্যায়ের কোনো দফতর, কর্মকর্তা নেই। ফলে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যথোপযুক্ত প্রতিনিধিত্বের অভাবে বন উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও সংরক্ষণ কার্যক্রমে সমন্বয়হীনতার অভাব পরিলক্ষিত হয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে বন সৃষ্টি, রক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৪২ হাজার একর জমি ও ৫১ হাজার কিলোমিটার রাস্তা বনায়নের উদ্যোগ আশা জাগায় বৈকি।
বনের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার লক্ষ্যে প্রতিবেশ পর্যবেক্ষণ, সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও গবেষণার জন্য বন বিভাগের নিজস্ব তেমন কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ ও তহবিল নেই। এ অবস্থায় বন সংকোচন ও পরিবেশ বিপর্যয়ের মতো দুর্যোগ মোকাবেলায় একটি সুগঠিত ও শৃঙ্খলাপূর্ণ প্রশাসনিক কাঠামো ও দক্ষ জনবল গড়ে তোলা সময়েরই দাবি। সরকারের বন মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৫ সালের মধ্যে দেশের শতকরা ২০ ভাগ এলাকা বনায়নের আওতায় আনার কথা থাকলেও বর্তমান জনবল কাঠামো দিয়ে তা পূরণ সম্ভব বলে মনে হয় না। বনায়ন বর্তমান বিশ্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। আমাদের দেশেও হাজার হাজার হেক্টর ভূমি বৃক্ষশূন্য হয়ে পরিবেশ বিপর্যয়ের দিকে আমাদের ঠেলে দিচ্ছে। বনের ওপর নির্ভরশীল জনগণ ক্রমেই প্রয়োজনের তাগিদে বন উজাড়, ভূমির অপব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে। তাই যথাশিগগির এসব এলাকাকে বনায়নের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
ড. মোহাম্মদ কামাল হোসাইন : প্রফেসর, ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস, চবি
No comments