মুক্তিযুদ্ধের শহীদ চিকিৎসক ডা. শামসুদ্দিন by সাব্বির আহমদ
‘কোথায় যাবেন আপনারা? আমরা ডাক্তার। আহত মানুষ ফেলে আমারতো কোথাও যেতে পারি না’। ডাক্তারদের উদ্দেশে কথাগুলো বলেছিলেন ডা. শামসুদ্দিন। ১৯৭১ সালের এপ্রিল। পাকিস্তানি বর্বর হানাদার বাহিনী সিলেটে বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়তে থাকে, শত শত মানুষ রক্তাক্ত আহত হয়ে হাসপাতালের দারস্থ হয়। মানবসেবায় নিবেদিত ডা. শামসুদ্দিন তখন তাদের পাশে।
১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে ভোররাতে সিলেট শহরের একাংশের দখল নিয়ে একদল হানাদার স্বাধিকার আন্দোলনের অন্যতম সমর্থক ডা. শামসুদ্দিনকে খুঁজতে থাকে। এক পর্যায়ে হাসপাতালে কর্তব্যরত অবস্থায় ওরা খুঁজে পায় তাকে। সেখন থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে তাকে সার্জারি ওয়ার্ডের বারান্দায় গুলি করে হত্যা করে। এসময় ডা. শ্যামল কান্তি লালা ও হাসপাতালের আরও ছয় থেকে সাত কর্মচারীকেও হত্যা করে মানুষরূপী হায়নারা।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর নির্মমতার শিকার হয় একের পর এক শহর-নগর-বন্দর। প্রতিদিনই চলছে তাদের বর্বরোচিত ও নৃশংস গণহত্যা। একাত্তরের ৩ থেকে ৮ এপ্রিল সিলেট শহর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
সিলেট শহর পুনর্দখলের জন্য ঢাকা থেকে অতিরিক্ত সেনা এনে ৭ ও ৮ এপ্রিল বিমান ও সেনাবাহিনী দিয়ে আক্রমণ চালায় পাকবাহিনী। ৯ এপ্রিল তারা সিলেট শহরের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। আর তখনই হানাদার বাহিনীর কালো চক্ষু গিয়ে পড়ে এ মহান সেবকের দিকে। পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করা হয় তাকে। তিনি সিলেট চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ের শৈল্য চিকিৎসক ছিলেন।
শহর ছেড়ে তখন নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছে সবাই। ডা. শামসুদ্দিন নিজের পরিবার পরিজনকেও পাঠিয়ে দিয়েছেন গ্রামের বাড়িতে। মহিলা নার্সদের ছুটি দিয়ে দিয়েছেন। জনমানবশূন্য হয়ে পড়া সিলেট শহর থেকে সেবাব্রত ছেড়ে যাননি ডা. শামসুদ্দিন। একের পর এক আহত মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসা করে গেছেন তিনি। তাকে সাহায্য করার জন্য থেকে গেছেন আরও কয়েকজন।
পানি, বিদ্যুৎ, ঔষধ সব শেষ। তখনও সেবা শেষ হয়নি ডা. শামসুদ্দিনের। জীবনের শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে সেবার কালজয়ী দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন তিনি।
পথিমধ্যে পরিচিত একজনের সঙ্গে দেখা ডা. শামসুদ্দিনের। ‘একি আপনি এই পরিস্থিতিতে হাসপাতালে যাচ্ছেন কেন?’ শুরুতেই প্রশ্ন পরিচিত জনের। ‘ভাই, কিছু রোগী হাসপাতালে রয়ে গেছে। তাদের ফেলে কোথায় যাই বলুন। আমার শিক্ষাই যে মানবতার সেবা।’ হাসি মুখে উত্তর দিলেন ডা. শামসুদ্দিন।
৯ এপ্রিল ১৯৭১। আকাশে হিংস্র শকুনের চাইতেও পাক হানাদার বাহিনীর আনাগোনা। হাসপাতালের পূর্বপাশে সিলেট সরকারি মহিলা কলেজ। পাকবাহিনীর ক্যাম্প। উত্তর পাশে টিলার উপর সিভিল সার্জনের বাংলো আর টিলার নিচে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা।
সকাল ৯ টায় মুক্তিবাহিনী সেই বাংলো ও মাদ্রাসা থেকে আক্রমণ চালায় পাকিস্তানি বাহিনীর একটি কনভয়ের উপর। মারা যায় তিন পাকসেনা। বেপরোয়া পাকবাহিনী তখন পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে। তন্ন তন্ন করে খুঁজতে থাকে মুক্তিযোদ্ধাদের।
ডা. শামসুদ্দিন তখন অপারেশন থিয়েটারে বসে আছেন। রক্তের অভাবে অপারেশন করা যাচ্ছেনা আহত মানুষগুলোর। নিজের অসহায়ত্ব তাকে যেন মৃত্যুর চেয়েও বেশি পীড়া দিচ্ছে। হঠাৎ করেই মুক্তিযোদ্ধাদের খোঁজে হাসপাতালে এসে উপস্থিত হয় মেজর রিয়াজসহ সশস্ত্র কয়েকজন পাকসেনা।
মুক্তিযোদ্ধাদের না পেয়ে ডা. শামসুদ্দিনসহ পাঁচজনকে লাইন করে দাঁড় করানো হলো। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে নিজের ব্যক্তিত্বে তখনো অনড় ডা. শামসুদ্দিন। নিজের জীবন ভিক্ষা চাননি। চেয়েছিলেন অপারেশন থিয়েটারে রেখে আসা মুমূর্ষু রোগীগুলোর অপারেশন শেষ করে আসতে।
কিন্তু বর্বর পাকিস্তানি সেনারা প্রথম গুলি তাকেই করে। প্রথম গুলিটি লেগেছিল তার বাম উরুতে, দ্বিতীয়টি পেটের বাম পাশে। তিনি তখনও দাঁড়িয়ে। একচোখ বিস্ময় নিয়ে দেখছিলেন কর্তব্যরত ডাক্তার কারো শত্রু হয় কিভাবে। তৃতীয় গুলিটি লাগে তার বুকের বাম পাশে, হৃৎপিণ্ডে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ডা. শামসুদ্দিন।
এরপর একে একে হত্যা করা হয় ডা. শ্যামল কান্তি লালা, ডা. জিয়াউর রহমান, বয় মাহমুদুর রহমান, অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার কোরবান আলীকে। তখন শোনা যায় কিছু আদিম উল্লাস। তারপর শুধুই নিরবতা।
মানবতাবাদী ডাক্তার শামসুদ্দিন আহমদ ও তার প্রিয়ছাত্র ডাক্তার শ্যামল কান্তি লালাকে যখন হত্যা করা হয় তখন তাদের বাহুতে ছিল রেডক্রস ব্যাজ। গোঁয়ার ঘাতক সেনারা রেডক্রসের ব্যাজ দেখেও তাদের রেহাই দেয়নি।
শহরে এরপর থেকে টানা কারফিউ। ১৩ তারিখ মাত্র এক ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল করা হলে ডা. শামসুদ্দিনের পায়ের জুতো দেখে তাকে শনাক্ত করা হয়। হাসপাতালের ভিতর একফুট গর্ত করে দ্রুত তার দাফন করা হয়।
ডা. শামসুদ্দিনের জীবন ও কর্ম: ছাত্রজীবনে ডাক্তার শামসুদ্দিন আহমদ প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। আসাম মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের নেতা ছিলেন তিনি। তার ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ছিলেন তৎকালীন যুব ও ছাত্রনেতা পীর হবিবুর রহমান ও তাসাদ্দুক আহমদ।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির প্রাক্কালে শামসুদ্দিন আহমদ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডাক্তার হয়ে বের হন। প্রথম দিকে তিনি সরকারি চাকরিতে যোগ দেননি, যদিও চাকরির সুযোগ ছিল।
কিন্তু ভারত বিভক্তির কারণে হিন্দু সম্প্রদায়ের ডাক্তাররা ভারতে চলে গেলে সিলেট মেডিকেলে চিকিৎসক শূন্যতা দেখা দেয়। এ সময় মানবতার সেবায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি সরকারি ডাক্তার হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন।
ঊনসত্তরে গণঅভ্যুত্থানের সময় ডা. শামসুদ্দিন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের সার্জারির অধ্যাপক ছিলেন। তীব্র গণআন্দোলনে ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীতে ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল করে। মিছিলে ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণী শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহা। ক্যাম্পাসে মোতায়েন জল্লাদ সেনারা মিছিলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ড. শামসুজ্জোহাকে গুলি এবং বেয়োনেটের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করে দেয় তার দেহ।
ঘাতকরা সার্জারির প্রফেসর ডা. শামসুদ্দিনকে একটি ভুয়া পোস্টমর্টেম রিপোর্ট তৈরি করে দিতে বলেছিল। দেশপ্রেমিক ডা. শামসুদ্দিন তাদের আদেশ পালন না করে রিপোর্টে ড. শামসুজ্জোহার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ তুলে ধরেছিলেন। রাজশাহীতে প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ পায়নি ঘাতকরা। পরে তারা সিলেটে প্রথম সুযোগেই আহত রোগীদের সেবাদানরত অবস্থায় তাকে তুলে নিয়ে তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
সিলেটে যে স্থানটিতে তাদের হত্যা করা হয়েছিল সেখানে এই বীর শহীদদের স্মরণে স্মৃতির মিনার গড়ে উঠেছে। চৌহাট্টা সড়কের পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন অধ্যাপক ডা. শামসুদ্দিন আহমদ, ডা. শ্যামলকান্তি লালা, মেইল নার্স মাহমুদুর রহমান, অ্যাম্বুলেন্স চালক কুরবান আলী এবং অন্য শহীদেরা।
সেই হাসপাতালটি এখন শহীদ ডা. শামসুদ্দিন হাসপাতাল নামকরণ করা হয়েছে। তার পাশে আছে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের আবাসন ডা. শহীদ শামসুদ্দিন ছাত্রাবাস।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর নির্মমতার শিকার হয় একের পর এক শহর-নগর-বন্দর। প্রতিদিনই চলছে তাদের বর্বরোচিত ও নৃশংস গণহত্যা। একাত্তরের ৩ থেকে ৮ এপ্রিল সিলেট শহর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
সিলেট শহর পুনর্দখলের জন্য ঢাকা থেকে অতিরিক্ত সেনা এনে ৭ ও ৮ এপ্রিল বিমান ও সেনাবাহিনী দিয়ে আক্রমণ চালায় পাকবাহিনী। ৯ এপ্রিল তারা সিলেট শহরের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। আর তখনই হানাদার বাহিনীর কালো চক্ষু গিয়ে পড়ে এ মহান সেবকের দিকে। পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করা হয় তাকে। তিনি সিলেট চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ের শৈল্য চিকিৎসক ছিলেন।
শহর ছেড়ে তখন নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছে সবাই। ডা. শামসুদ্দিন নিজের পরিবার পরিজনকেও পাঠিয়ে দিয়েছেন গ্রামের বাড়িতে। মহিলা নার্সদের ছুটি দিয়ে দিয়েছেন। জনমানবশূন্য হয়ে পড়া সিলেট শহর থেকে সেবাব্রত ছেড়ে যাননি ডা. শামসুদ্দিন। একের পর এক আহত মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসা করে গেছেন তিনি। তাকে সাহায্য করার জন্য থেকে গেছেন আরও কয়েকজন।
পানি, বিদ্যুৎ, ঔষধ সব শেষ। তখনও সেবা শেষ হয়নি ডা. শামসুদ্দিনের। জীবনের শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে সেবার কালজয়ী দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন তিনি।
পথিমধ্যে পরিচিত একজনের সঙ্গে দেখা ডা. শামসুদ্দিনের। ‘একি আপনি এই পরিস্থিতিতে হাসপাতালে যাচ্ছেন কেন?’ শুরুতেই প্রশ্ন পরিচিত জনের। ‘ভাই, কিছু রোগী হাসপাতালে রয়ে গেছে। তাদের ফেলে কোথায় যাই বলুন। আমার শিক্ষাই যে মানবতার সেবা।’ হাসি মুখে উত্তর দিলেন ডা. শামসুদ্দিন।
৯ এপ্রিল ১৯৭১। আকাশে হিংস্র শকুনের চাইতেও পাক হানাদার বাহিনীর আনাগোনা। হাসপাতালের পূর্বপাশে সিলেট সরকারি মহিলা কলেজ। পাকবাহিনীর ক্যাম্প। উত্তর পাশে টিলার উপর সিভিল সার্জনের বাংলো আর টিলার নিচে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা।
সকাল ৯ টায় মুক্তিবাহিনী সেই বাংলো ও মাদ্রাসা থেকে আক্রমণ চালায় পাকিস্তানি বাহিনীর একটি কনভয়ের উপর। মারা যায় তিন পাকসেনা। বেপরোয়া পাকবাহিনী তখন পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে। তন্ন তন্ন করে খুঁজতে থাকে মুক্তিযোদ্ধাদের।
ডা. শামসুদ্দিন তখন অপারেশন থিয়েটারে বসে আছেন। রক্তের অভাবে অপারেশন করা যাচ্ছেনা আহত মানুষগুলোর। নিজের অসহায়ত্ব তাকে যেন মৃত্যুর চেয়েও বেশি পীড়া দিচ্ছে। হঠাৎ করেই মুক্তিযোদ্ধাদের খোঁজে হাসপাতালে এসে উপস্থিত হয় মেজর রিয়াজসহ সশস্ত্র কয়েকজন পাকসেনা।
মুক্তিযোদ্ধাদের না পেয়ে ডা. শামসুদ্দিনসহ পাঁচজনকে লাইন করে দাঁড় করানো হলো। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে নিজের ব্যক্তিত্বে তখনো অনড় ডা. শামসুদ্দিন। নিজের জীবন ভিক্ষা চাননি। চেয়েছিলেন অপারেশন থিয়েটারে রেখে আসা মুমূর্ষু রোগীগুলোর অপারেশন শেষ করে আসতে।
কিন্তু বর্বর পাকিস্তানি সেনারা প্রথম গুলি তাকেই করে। প্রথম গুলিটি লেগেছিল তার বাম উরুতে, দ্বিতীয়টি পেটের বাম পাশে। তিনি তখনও দাঁড়িয়ে। একচোখ বিস্ময় নিয়ে দেখছিলেন কর্তব্যরত ডাক্তার কারো শত্রু হয় কিভাবে। তৃতীয় গুলিটি লাগে তার বুকের বাম পাশে, হৃৎপিণ্ডে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ডা. শামসুদ্দিন।
এরপর একে একে হত্যা করা হয় ডা. শ্যামল কান্তি লালা, ডা. জিয়াউর রহমান, বয় মাহমুদুর রহমান, অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার কোরবান আলীকে। তখন শোনা যায় কিছু আদিম উল্লাস। তারপর শুধুই নিরবতা।
মানবতাবাদী ডাক্তার শামসুদ্দিন আহমদ ও তার প্রিয়ছাত্র ডাক্তার শ্যামল কান্তি লালাকে যখন হত্যা করা হয় তখন তাদের বাহুতে ছিল রেডক্রস ব্যাজ। গোঁয়ার ঘাতক সেনারা রেডক্রসের ব্যাজ দেখেও তাদের রেহাই দেয়নি।
শহরে এরপর থেকে টানা কারফিউ। ১৩ তারিখ মাত্র এক ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল করা হলে ডা. শামসুদ্দিনের পায়ের জুতো দেখে তাকে শনাক্ত করা হয়। হাসপাতালের ভিতর একফুট গর্ত করে দ্রুত তার দাফন করা হয়।
ডা. শামসুদ্দিনের জীবন ও কর্ম: ছাত্রজীবনে ডাক্তার শামসুদ্দিন আহমদ প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। আসাম মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের নেতা ছিলেন তিনি। তার ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ছিলেন তৎকালীন যুব ও ছাত্রনেতা পীর হবিবুর রহমান ও তাসাদ্দুক আহমদ।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির প্রাক্কালে শামসুদ্দিন আহমদ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডাক্তার হয়ে বের হন। প্রথম দিকে তিনি সরকারি চাকরিতে যোগ দেননি, যদিও চাকরির সুযোগ ছিল।
কিন্তু ভারত বিভক্তির কারণে হিন্দু সম্প্রদায়ের ডাক্তাররা ভারতে চলে গেলে সিলেট মেডিকেলে চিকিৎসক শূন্যতা দেখা দেয়। এ সময় মানবতার সেবায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি সরকারি ডাক্তার হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন।
ঊনসত্তরে গণঅভ্যুত্থানের সময় ডা. শামসুদ্দিন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের সার্জারির অধ্যাপক ছিলেন। তীব্র গণআন্দোলনে ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীতে ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল করে। মিছিলে ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণী শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহা। ক্যাম্পাসে মোতায়েন জল্লাদ সেনারা মিছিলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ড. শামসুজ্জোহাকে গুলি এবং বেয়োনেটের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করে দেয় তার দেহ।
ঘাতকরা সার্জারির প্রফেসর ডা. শামসুদ্দিনকে একটি ভুয়া পোস্টমর্টেম রিপোর্ট তৈরি করে দিতে বলেছিল। দেশপ্রেমিক ডা. শামসুদ্দিন তাদের আদেশ পালন না করে রিপোর্টে ড. শামসুজ্জোহার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ তুলে ধরেছিলেন। রাজশাহীতে প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ পায়নি ঘাতকরা। পরে তারা সিলেটে প্রথম সুযোগেই আহত রোগীদের সেবাদানরত অবস্থায় তাকে তুলে নিয়ে তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
সিলেটে যে স্থানটিতে তাদের হত্যা করা হয়েছিল সেখানে এই বীর শহীদদের স্মরণে স্মৃতির মিনার গড়ে উঠেছে। চৌহাট্টা সড়কের পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন অধ্যাপক ডা. শামসুদ্দিন আহমদ, ডা. শ্যামলকান্তি লালা, মেইল নার্স মাহমুদুর রহমান, অ্যাম্বুলেন্স চালক কুরবান আলী এবং অন্য শহীদেরা।
সেই হাসপাতালটি এখন শহীদ ডা. শামসুদ্দিন হাসপাতাল নামকরণ করা হয়েছে। তার পাশে আছে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের আবাসন ডা. শহীদ শামসুদ্দিন ছাত্রাবাস।
No comments