ছিনতাই ঠেকাতে গিয়ে মৃত্যু-এ সাহসিকতার মূল্যায়ন হতেই হবে
রাজধানীতে ছিনতাই নিয়মিত ঘটনা। দিনদুপুরে জনঅধ্যুষিত কোনো রাস্তায় হোক কিংবা নীরব কোনো রাস্তায় সন্ধ্যা বা সকালের ঘটনা হোক_ দেখেশুনেও নীরবতা শ্রেয় মনে করেন অনেকে। এটাই যেন রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্মিলিত প্রতিবাদ, জনসচেতনতার কথা অহরহ উচ্চারিত হয় বটে।
কিন্তু পথচারীরা বিলক্ষণ জানেন ছিনতাইকারীরা প্রস্তুতি নিয়ে অস্ত্র সজ্জিত হয়েই অপকর্মে নামে। প্রয়োজনে সে অস্ত্রের ব্যবহার করতেও তাদের বাধে না। নিরস্ত্র মানুষ কীভাবে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের মুখোমুখি দাঁড়াবে? শুধু শুভবোধ আর সাহসই তাদের সম্বল। প্রাণ হারানোর আশঙ্কা মাথায় নিয়েও তাই ব্যতিক্রমী কেউ কেউ সন্ত্রাসীদের মুখোমুখি দাঁড়ান। কেউ কেউ সফল হন, কেউবা ব্যর্থ হন। মারাত্মক আহত হয়ে কিংবা মৃত্যুর ভবিতব্যও মেনে নিতে হয় তাদের। এমনই এক ব্যক্তি হযরত আলী। সকালের আলো ফোটা রাস্তায় হয়তো অনেক পথচারীর চোখে পড়েছে ছিনতাইয়ের ঘটনাটি। একটি প্রাইভেটকার থামিয়ে মর্নিংওয়াকে বের হওয়া তিন নারীর কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও অলঙ্কার ছিনিয়ে নিচ্ছিল ছিনতাইকারীরা। কেউ এগিয়ে আসেনি। কিন্তু হযরত আলী দৃশ্যটি দেখে নীরব থাকতে পারেননি। তিনি প্রতিবাদ হিসেবে ঢিল ছুড়ে মেরেছিলেন ছিনতাইকারীদের দিকে। আর তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে গুলি করে তাকে মেরে ফেলে তারা। হযরত আলী অবশ্যই সৎ, সাহসী, কর্তব্যপরায়ণ মানুষ। তার প্রতিবাদী ভূমিকা অবশ্যই প্রশংসনীয়। কিন্তু তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে একটি পরিবারের স্বপ্নের পথে যে বাধা পড়ল তার ক্ষতিপূরণ কে দেবে? সত্যি কথা বলতে কি, ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ সবসময়ই বহাল। কিন্তু নিরস্ত্র অবস্থায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের ঠেকানোর উপায় কী? এ কাজ অবশ্যই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। দিনদুপুরে ছিনতাই হচ্ছে, সকাল-সন্ধ্যায় খোলা রাস্তায় অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে_ এমন দৃশ্য কোনো অবস্থাতেই স্বাভাবিক বলে গণ্য হতে পারে না। ঘরে ঘরে বা বেডরুমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না হয় না-ই সম্ভব হলো_ তাই বলে খোলা রাস্তায় অপরাধ চলতে থাকবে নির্বিবাদে? স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য একটু খোলা স্থানে হাঁটতে গিয়েও জীবন ও সঙ্গে থাকা সামান্য সম্পদের নিরাপত্তা থাকবে না? যে অপরাধীদের নাম-পরিচয় পুলিশের খাতায় থাকার কথা, তারা নির্বিবাদে প্রতিদিন কোনো বাধা ছাড়াই অপকর্ম চালিয়ে যাবে তা কীভাবে মানা যায়? রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিনই ছোট-বড় ছিনতাই, হত্যাকাণ্ডসহ নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। কিন্তু এটা এমনকি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও স্বীকার করবে, সাম্প্রতিক সময়ে অপরাধ বেড়েছে এবং তাতে স্পষ্ট যে পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষগুলো আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিকে হয় অবহেলা করছে, নয়তো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তারা ব্যর্থ। আমরা মনে করি, এ বিষয়ে এখনই মনোযোগ দেওয়া দরকার। গৎবাঁধা কথা না বলে দায়িত্বশীলদের উচিত অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনায় মনোযোগ দেওয়া। এ কথা মনে রাখতে হবে, মানুষের নিরাপদ চলাচলকে বাধাগ্রস্ত করে এমন সন্ত্রাস দ্রুত নাগরিক অসন্তোষ বৃদ্ধি করতে পারে। ফলে বিষয়গুলোকে অবজ্ঞা করলে তা সন্ত্রাসীদের কেউ উৎসাহিত করবে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন হবে না। হযরত আলী অসম সাহসিকতার সঙ্গে দুষ্কৃতকারীদের মোকাবেলায় এগিয়ে গিয়ে নিজের জীবন দিলেন। এখন সরকার, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং নাগরিক সমাজ_ সবার দায়িত্ব তার পরিবার ও স্বজনদের পাশে দাঁড়ানো। এটাই যে বিবেকের আহ্বান।
No comments