সময়ের কথা-আশির দশকের 'সাউন্ড এফেক্ট' ও বর্তমান বাস্তবতা by অজয় দাশগুপ্ত
কোন দল বা জোট কী দাবিতে হরতাল ডেকেছে, সেটা জনসাধারণ না জানলেও চলে। কেবল এটা জানাই যথেষ্ট যে, কোন তারিখে কতটা সময় পর্যন্ত রাজপথে যানবাহন বের করতে হবে না। এ দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অবধারিতভাবে বন্ধ থাকবে। ঢাকা ও অন্যান্য স্থানে প্রধান প্রধান মার্কেটও বন্ধ থাকবে।
হরতালের আগের রাতে রাজধানীর কোনো না কোনো স্থানে কয়েকটা যানবাহনে আগুন দেওয়ার 'ঘটনা অবধারিতভাবে ঘটবেই'
সপ্তাহে দুই দিন ছুটির নিয়ম চালু হওয়ার পর থেকে 'ছুটির ফাঁদে' কথাটি মাঝেমধ্যেই শোনা যায়। শুক্র ও শনিবারের সঙ্গে একদিন ছুটি পড়লে কিংবা হরতাল ডাকা হলেই 'তিন দিন ছুটি'। কী মজা! রোজা ও কোরবানির ঈদের পর 'টানা ৯ দিন ছুটি' ভোগ করে অনেক লোক। হরতালও এখন অনেকের কাছে এক ধরনের ছুটিতে পরিণত হয়েছে। এ ধরনের কর্মসূচি আহ্বানের পেছনে কারণ অবশ্যই থাকে। রাজনীতিকরা অনেক হিসাব-নিকাশ করেন। তবে অনেক বছর ধরেই মনে হচ্ছে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মতো বড় দলগুলোর জন্য হরতাল এমন এক কর্মসূচি যাতে ঝামেলা কম, অর্থ ব্যয়ও তেমন নেই। একটা বড় জনসমাবেশ বা মিছিল আয়োজনের তুলনায় এতে ঝামেলা অনেক কম। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ৬ ও ৭ জুলাইয়ের টানা ৪৮ ঘণ্টা হরতাল কর্মসূচি প্রসঙ্গেও এটা বলা যায়। ৮ ও ৯ জুলাই শুক্র ও শনিবার। পরের দুটি দিন ১০ ও ১১ জুলাই টানা ৩০ ঘণ্টার হরতাল পালনের আহ্বান জানিয়েছে কয়েকটি ইসলামী দল। তাদের দাবি, সামরিক শাসকরা বাংলাদেশের সংবিধানে যেভাবে ধর্ম যুক্ত করেছিলেন, সেভাবেই তা বহাল রাখতে হবে। টানা ছয় দিন ছুটির আমেজেই হরতাল সফল!
বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী ১২ ও ১৩ জুন টানা ৩৬ ঘণ্টার হরতাল আহ্বান করেছিল। তখনও ইস্যু ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখা। শেখ হাসিনার সরকার তাদের দাবিতে কর্ণপাত করেনি। তারা সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অনুমোদন করিয়ে নেয়। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে নিজের তোলা এক সময়ের অতি জনপ্রিয় একটি দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করতে হয়েছে। সত্তর ও আশির দশকে জিয়াউর রহমান এবং এইচএম এরশাদ, এ দু'জন সামরিক শাসক নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রহসনে পরিণত করেছিলেন। খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছিলেন, সেটাও ছিল সামরিক শাসকদের ধারারই অনুসরণ। এর বিপরীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অধীনে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি ওঠে এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররা হরতাল-ধর্মঘট-অবরোধের মাধ্যমে তা আদায় করে ছাড়ে। জনসমর্থনও ছিল বৈকি! ১৫ ফেব্রুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনের পর এ আন্দোলন ব্যাপক জনসমর্থন লাভ করে। সে সময় খালেদা জিয়া কার্যত একঘরে হয়ে পড়েন। এখন যে জামায়াতে ইসলামী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে তার সঙ্গে রয়েছে, তারা সে সময়ে ছিল শেখ হাসিনার সঙ্গে। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিচারের মুখোমুখি হওয়া সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীও ছিলেন বিএনপিবিরোধী শিবিরে। এইচএম এরশাদের দল জাতীয় পার্টির অবস্থানও ছিল অভিন্ন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে এখন শেখ হাসিনার ঝাণ্ডা খালেদা জিয়ার হাতে। শেখ হাসিনা এক সময় রাজনৈতিক আন্দোলনের হাতিয়ার হিসেবে হরতাল ব্যবহার না করার অঙ্গীকার করেছিলেন। বিরোধী দলে থাকার সময় সেটা রক্ষা করেননি। তার হরতাল-অবরোধের ঝাণ্ডাও এখন খালেদা জিয়ার হাতে। তিনি কি শেখ হাসিনার মতো এর সফল প্রয়োগ করতে পারবেন?
অনেকে বলেন, শেখ হাসিনা একসঙ্গে অনেক ফ্রন্ট ওপেন করেছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল, সংবিধানে 'ধর্মনিরপেক্ষতা' সংযোজন, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা প্রদান, মার্কিন কোম্পানি কনোকো ফিলিপসের সঙ্গে বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের চুক্তি সই, নতুন শিক্ষানীতি, নারী উন্নয়ন নীতি_ এর প্রতিটিরই যেমন মিত্র আছে, তেমনি আছে শত্রু। সর্বোচ্চ আদালত সামরিক শাসনকে অবৈধ করে যে রায় দিয়েছে, সেটাকেও তার ফ্রন্ট হিসেবেই ধরা হয়ে থাকে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবল্পুব্দ এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ আহূত সমাবেশে ভয়ঙ্কর গ্রেনেড হামলা এবং ২০০৩ সালের ১০ এপ্রিল চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র কেলেঙ্কারিতে যুক্তদের বিচারের ব্যবস্থার ইস্যুটিও যত যৌক্তিক মনে হোক না কেন, তার বিরোধী পক্ষ থাকবেই। দ্রব্যমূল্যও সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছিল ২১ বছর পর। বিএনপি সে নির্বাচনেও মূল হাতিয়ার করেছিল ভারত বিরোধিতা ও ইসলাম গেল রব। 'ওরা আসছে'_ এমন পোস্টার লাগানো হয়েছিল, যাতে বলা হয় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে জমি-বাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ফেলে যারা বিভিন্ন সময়ে ভারত চলে গিয়েছিল, তারা ফিরে আসবে এবং সেগুলো যাদের দখলে রয়েছে তাদের তা ছেড়ে দিতে হবে। আরও প্রচার ছিল, ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে দলের নেতাকর্মীরা খাই খাই করবে। বিস্ময়করভাবে দলটি ক্ষমতায় আসার পর চাল-ডাল-ভোজ্যতেলসহ অনেক পণ্যের দাম রাতারাতি কমে গিয়েছিল। এর পেছনে তাদের যা কৃতিত্ব ছিল, তার চেয়ে ঢের বেশি বাস্তবতা ছিল বিশ্ববাজারে অনেক পণ্যের দাম কমে যাওয়া। সে সময় জ্বালানি তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ১০ ডলারে নেমে এসেছিল, যা এখন দশ গুণেরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ২০০১ সালের অক্টোবরে বিএনপি ক্ষমতায় ফিরে আসে জামায়াতে ইসলামীকে সঙ্গী করে। সে সময় বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম অনেক বেড়ে যায়। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার সময়ও বিশ্ববাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম একইভাবে চড়া ছিল। দেশের বাজারে তার প্রভাব পড়বেই। তবে এটাও মনে রাখা দরকার যে, অভ্যন্তরীণ বাজারে ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে ওঠা ব্যবসায়ী গোষ্ঠীকে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কেউই ঠিক নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। এর ফলে জনদুর্ভোগে বাড়তি মাত্রা যুক্ত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ শেয়ারবাজারে ফটকা ব্যবসায়ী চক্রকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। তারা ১৯৯৬ সালের মতোই বাজারে কারসাজি করে আওয়ামী লীগের কপালে কলঙ্ক তিলক এঁকে নিজেদের নিরাপদ অবস্থানে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
আশির দশকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এইচএম এরশাদের বিরুদ্ধে একযোগে হরতাল করেছিল। তারা এক মঞ্চে না উঠেই অভিন্ন যুগপৎ কর্মসূচি ঘোষণা করত। এইচএম এরশাদ হরতাল-অবরোধে বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ হয়ে এক সময় সংবাদপত্রে 'হরতাল', 'অবরোধ' বা এ ধরনের শব্দ ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছিলেন। এটাকে দণ্ডনীয় বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। এ অবস্থায় সংবাদপত্রে 'সকাল-সন্ধ্যা' হরতালকে লেখা হতো 'সকাল-সন্ধ্যা কর্মসূচি'। হরতাল-অবরোধ যারা ডাকতেন তারা কী বলতে চান, সেটা জনগণ বুঝে যেত। তখন বেসরকারি বেতার-টিভি ছিল না। বিটিভির নাম দেওয়া হয়েছিল সাহেব-বিবি-গোলামের বাক্স। সাহেব-বিবি ছিলেন এইচএম এরশাদ ও তার স্ত্রী রওশন এরশাদ। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, কাজী জাফর আহমদ, মিজানুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ ছিলেন এইচএম এরশাদের সঙ্গী। বিটিভির আটটার সংবাদকে বিরোধীরা বলতেন 'ঠাট্টার সংবাদ'_ পুরোটা জুড়েই সাহেব-বিবি এবং তাদের গোলামদের খবর। এখন বেসরকারি টেলিভিশনের যুগ। বিটিভি না দেখলেও চলে। কোনো দল হরতাল ডাকার আগেই তারা জনগণকে আগাম খবর জানিয়ে দেয়। এ এক মস্ত সুবিধা। কোন দল বা জোট কী দাবিতে হরতাল ডেকেছে, সেটা জনসাধারণ না জানলেও চলে। কেবল এটা জানাই যথেষ্ট যে, কোন তারিখে কতটা সময় পর্যন্ত রাজপথে যানবাহন বের করতে হবে না। এ দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অবধারিতভাবে বন্ধ থাকবে। ঢাকা ও অন্যান্য স্থানে প্রধান প্রধান মার্কেটও বন্ধ থাকবে। হরতালের আগের রাতে রাজধানীর কোনো না কোনো স্থানে কয়েকটা যানবাহনে আগুন দেওয়ার 'ঘটনা অবধারিতভাবে ঘটবেই'। এইচএম এরশাদের আমলে এর স্থানে ছিল 'সাউন্ড এফেক্ট'_ হরতালের আগের রাতে পটকা-বোমা ফাটানো হতো। হরতাল সমর্থকরাই এটা করত। এর উদ্দেশ্য ছিল যানবাহনের মালিকদের ভয় দেখানো। স্বস্তির খবর যে, এ ধরনের সাউন্ড এফেক্ট বা বোমাবাজির হাত থেকে আমরা নিষ্কৃতি পেয়েছি। তার পরিবর্তে চালু হয়েছে হরতালের আগের সন্ধ্যায় গাড়িতে আগুন দেওয়া। বেসরকারি টেলিভিশনের কল্যাণে একটি গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটলে তা অতি দ্রুত পেঁৗছে যায় দেশের সর্বত্র। আশির দশকের সাউন্ড এফেক্টের মতো এটা বেশি কার্যকর প্রমাণিত হচ্ছে।
বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী কি পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত (যা আড়াই বছর পর হওয়ার কথা) এ ধরনের হরতাল চালিয়ে যাবে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অর্থনীতির অধ্যাপককে (যাকে এ জোটের নিষ্ঠাবান সমর্থক বলে ধরা হয়) এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যেমন বঙ্গভবন অবরোধ কিংবা রাজপথ-রেলপথ অবরোধের মতো কর্মসূচি সফল করেছিল, সেটা বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী পারবে না। বিরোধী দলে থেকেও লগি-বৈঠা নিয়ে হাজার হাজার লোক নিয়ে গুলিস্তান এলাকা টানা কয়েকদিন দখলে রেখেছিল আওয়ামী লীগ। এমন সমাবেশ ঘটানোর ক্ষমতা বিএনপির নেই। জামায়াতে ইসলামী ২০০৬ সালের অক্টোবরের শেষ দিকে পল্টন এলাকায় লগি-বৈঠার পাল্টা সমাবেশ করার চেষ্টা করেছিল। পুলিশের সমর্থন ছিল তাদের প্রতি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সমর্থকদের কাছে টিকতে পারেনি। এখন কি বিরোধী দলে থেকে তারা সে চেষ্টা করে সফল হতে পারবে?
বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী ১২ ঘণ্টা, ৩৬ ঘণ্টা ও ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে। এরপর কত ঘণ্টা ডাকবে? ৭২ না-কি ৯৬ ঘণ্টা? আশি ও নব্বইয়ের দশকে এ ধরনের টানা হরতালের ঘটনা ঘটেছে। তবে ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগ হরতালের পাশাপাশি অবরোধের প্রতি নজর দিয়েছিল। বিএনপি কি মিত্রদের নিয়ে সে পথে যাবে? তারা লাগাতার হরতাল ডাকবে বলে জানিয়েছে। এতে যদি সরকারের পতন না ঘটে তাহলে কী করবে, সেটাই দেখার বিষয়। ভারতের দার্জিলিং এলাকায় একটানা মাসখানেক করে অবরোধ-ধর্মঘটের ঘটনা একাধিকবার ঘটেছে। তাতে অবশ্য সরকারের পতন ঘটেনি। কিন্তু জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছে। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী কি সে পথে যাবে?
খালেদা জিয়া ৩০ জুন সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, সংবিধানের 'পঞ্চম সংশোধনী সামরিক শাসন জারির দলিল নয়, সামরিক শাসন প্রত্যাহারের ইনস্ট্রুমেন্ট।' তিনি দাবি করেন, এ সংশোধনীতে যেসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত তা জনগণের কাছ থেকে 'গণভোটের মাধ্যমে প্রাক-অনুমোদনপ্রাপ্ত'। তিনি আরও বলেন, '১৯৭২ সালে রচিত সংবিধানে বাংলাদেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি।' তার এ দুটি অবস্থানই কিন্তু আদর্শগত। এটা সবার জানা যে, জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালে যে গণভোটের আয়োজন করেছিলেন তাতে নির্বাচন কমিশন প্রায় ১০০ ভাগ ভোট পড়েছে প্রচার করলেও বাস্তবে ১ শতাংশ ভোটারও ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়নি। আর ১৯৭২ সালের সংবিধানে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি বলার মাধ্যমে তিনি এটাই স্পষ্ট করে দিলেন যে, পাকিস্তান আমলে জামায়াতে ইসলামী ও মুসলিম লীগ যে মতাদর্শ অনুসরণ করেছে, তিনি সে পথেই চলতে চান। তিনি যদি এ অবস্থানে অটল থাকেন তাহলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার আপসের সামান্যতম যোগসূত্রও থাকে না।
কিন্তু দাবি আদায় করবেন কীভাবে? টানা আড়াই বছর মাঝে মধ্যে বিরতি দিয়ে হরতাল দিয়ে যাবেন? না-কি ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সাম্প্রতিক বহুল আলোচিত এই উক্তিতেই ভরসা রাখবেন :'যে কোনো সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পাল্টে যেতে পারে।' আমরা জানি, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ এবং ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশে আকস্মিক পরিবর্তন ঘটেছিল। আবারও কি সে ধরনের কিছু ঘটবে? বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতারা কোনো ক্লু দেবেন কি? নাকি তা চমক হয়েই আসবে?
অজয় দাশগুপ্ত : সাংবাদিক
ajoydg@gmail.com
সপ্তাহে দুই দিন ছুটির নিয়ম চালু হওয়ার পর থেকে 'ছুটির ফাঁদে' কথাটি মাঝেমধ্যেই শোনা যায়। শুক্র ও শনিবারের সঙ্গে একদিন ছুটি পড়লে কিংবা হরতাল ডাকা হলেই 'তিন দিন ছুটি'। কী মজা! রোজা ও কোরবানির ঈদের পর 'টানা ৯ দিন ছুটি' ভোগ করে অনেক লোক। হরতালও এখন অনেকের কাছে এক ধরনের ছুটিতে পরিণত হয়েছে। এ ধরনের কর্মসূচি আহ্বানের পেছনে কারণ অবশ্যই থাকে। রাজনীতিকরা অনেক হিসাব-নিকাশ করেন। তবে অনেক বছর ধরেই মনে হচ্ছে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মতো বড় দলগুলোর জন্য হরতাল এমন এক কর্মসূচি যাতে ঝামেলা কম, অর্থ ব্যয়ও তেমন নেই। একটা বড় জনসমাবেশ বা মিছিল আয়োজনের তুলনায় এতে ঝামেলা অনেক কম। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ৬ ও ৭ জুলাইয়ের টানা ৪৮ ঘণ্টা হরতাল কর্মসূচি প্রসঙ্গেও এটা বলা যায়। ৮ ও ৯ জুলাই শুক্র ও শনিবার। পরের দুটি দিন ১০ ও ১১ জুলাই টানা ৩০ ঘণ্টার হরতাল পালনের আহ্বান জানিয়েছে কয়েকটি ইসলামী দল। তাদের দাবি, সামরিক শাসকরা বাংলাদেশের সংবিধানে যেভাবে ধর্ম যুক্ত করেছিলেন, সেভাবেই তা বহাল রাখতে হবে। টানা ছয় দিন ছুটির আমেজেই হরতাল সফল!
বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী ১২ ও ১৩ জুন টানা ৩৬ ঘণ্টার হরতাল আহ্বান করেছিল। তখনও ইস্যু ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখা। শেখ হাসিনার সরকার তাদের দাবিতে কর্ণপাত করেনি। তারা সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অনুমোদন করিয়ে নেয়। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে নিজের তোলা এক সময়ের অতি জনপ্রিয় একটি দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করতে হয়েছে। সত্তর ও আশির দশকে জিয়াউর রহমান এবং এইচএম এরশাদ, এ দু'জন সামরিক শাসক নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রহসনে পরিণত করেছিলেন। খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছিলেন, সেটাও ছিল সামরিক শাসকদের ধারারই অনুসরণ। এর বিপরীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অধীনে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি ওঠে এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররা হরতাল-ধর্মঘট-অবরোধের মাধ্যমে তা আদায় করে ছাড়ে। জনসমর্থনও ছিল বৈকি! ১৫ ফেব্রুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনের পর এ আন্দোলন ব্যাপক জনসমর্থন লাভ করে। সে সময় খালেদা জিয়া কার্যত একঘরে হয়ে পড়েন। এখন যে জামায়াতে ইসলামী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে তার সঙ্গে রয়েছে, তারা সে সময়ে ছিল শেখ হাসিনার সঙ্গে। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিচারের মুখোমুখি হওয়া সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীও ছিলেন বিএনপিবিরোধী শিবিরে। এইচএম এরশাদের দল জাতীয় পার্টির অবস্থানও ছিল অভিন্ন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে এখন শেখ হাসিনার ঝাণ্ডা খালেদা জিয়ার হাতে। শেখ হাসিনা এক সময় রাজনৈতিক আন্দোলনের হাতিয়ার হিসেবে হরতাল ব্যবহার না করার অঙ্গীকার করেছিলেন। বিরোধী দলে থাকার সময় সেটা রক্ষা করেননি। তার হরতাল-অবরোধের ঝাণ্ডাও এখন খালেদা জিয়ার হাতে। তিনি কি শেখ হাসিনার মতো এর সফল প্রয়োগ করতে পারবেন?
অনেকে বলেন, শেখ হাসিনা একসঙ্গে অনেক ফ্রন্ট ওপেন করেছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল, সংবিধানে 'ধর্মনিরপেক্ষতা' সংযোজন, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা প্রদান, মার্কিন কোম্পানি কনোকো ফিলিপসের সঙ্গে বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের চুক্তি সই, নতুন শিক্ষানীতি, নারী উন্নয়ন নীতি_ এর প্রতিটিরই যেমন মিত্র আছে, তেমনি আছে শত্রু। সর্বোচ্চ আদালত সামরিক শাসনকে অবৈধ করে যে রায় দিয়েছে, সেটাকেও তার ফ্রন্ট হিসেবেই ধরা হয়ে থাকে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবল্পুব্দ এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ আহূত সমাবেশে ভয়ঙ্কর গ্রেনেড হামলা এবং ২০০৩ সালের ১০ এপ্রিল চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র কেলেঙ্কারিতে যুক্তদের বিচারের ব্যবস্থার ইস্যুটিও যত যৌক্তিক মনে হোক না কেন, তার বিরোধী পক্ষ থাকবেই। দ্রব্যমূল্যও সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছিল ২১ বছর পর। বিএনপি সে নির্বাচনেও মূল হাতিয়ার করেছিল ভারত বিরোধিতা ও ইসলাম গেল রব। 'ওরা আসছে'_ এমন পোস্টার লাগানো হয়েছিল, যাতে বলা হয় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে জমি-বাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ফেলে যারা বিভিন্ন সময়ে ভারত চলে গিয়েছিল, তারা ফিরে আসবে এবং সেগুলো যাদের দখলে রয়েছে তাদের তা ছেড়ে দিতে হবে। আরও প্রচার ছিল, ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে দলের নেতাকর্মীরা খাই খাই করবে। বিস্ময়করভাবে দলটি ক্ষমতায় আসার পর চাল-ডাল-ভোজ্যতেলসহ অনেক পণ্যের দাম রাতারাতি কমে গিয়েছিল। এর পেছনে তাদের যা কৃতিত্ব ছিল, তার চেয়ে ঢের বেশি বাস্তবতা ছিল বিশ্ববাজারে অনেক পণ্যের দাম কমে যাওয়া। সে সময় জ্বালানি তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ১০ ডলারে নেমে এসেছিল, যা এখন দশ গুণেরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ২০০১ সালের অক্টোবরে বিএনপি ক্ষমতায় ফিরে আসে জামায়াতে ইসলামীকে সঙ্গী করে। সে সময় বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম অনেক বেড়ে যায়। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার সময়ও বিশ্ববাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম একইভাবে চড়া ছিল। দেশের বাজারে তার প্রভাব পড়বেই। তবে এটাও মনে রাখা দরকার যে, অভ্যন্তরীণ বাজারে ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে ওঠা ব্যবসায়ী গোষ্ঠীকে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কেউই ঠিক নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। এর ফলে জনদুর্ভোগে বাড়তি মাত্রা যুক্ত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ শেয়ারবাজারে ফটকা ব্যবসায়ী চক্রকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। তারা ১৯৯৬ সালের মতোই বাজারে কারসাজি করে আওয়ামী লীগের কপালে কলঙ্ক তিলক এঁকে নিজেদের নিরাপদ অবস্থানে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
আশির দশকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এইচএম এরশাদের বিরুদ্ধে একযোগে হরতাল করেছিল। তারা এক মঞ্চে না উঠেই অভিন্ন যুগপৎ কর্মসূচি ঘোষণা করত। এইচএম এরশাদ হরতাল-অবরোধে বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ হয়ে এক সময় সংবাদপত্রে 'হরতাল', 'অবরোধ' বা এ ধরনের শব্দ ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছিলেন। এটাকে দণ্ডনীয় বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। এ অবস্থায় সংবাদপত্রে 'সকাল-সন্ধ্যা' হরতালকে লেখা হতো 'সকাল-সন্ধ্যা কর্মসূচি'। হরতাল-অবরোধ যারা ডাকতেন তারা কী বলতে চান, সেটা জনগণ বুঝে যেত। তখন বেসরকারি বেতার-টিভি ছিল না। বিটিভির নাম দেওয়া হয়েছিল সাহেব-বিবি-গোলামের বাক্স। সাহেব-বিবি ছিলেন এইচএম এরশাদ ও তার স্ত্রী রওশন এরশাদ। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, কাজী জাফর আহমদ, মিজানুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ ছিলেন এইচএম এরশাদের সঙ্গী। বিটিভির আটটার সংবাদকে বিরোধীরা বলতেন 'ঠাট্টার সংবাদ'_ পুরোটা জুড়েই সাহেব-বিবি এবং তাদের গোলামদের খবর। এখন বেসরকারি টেলিভিশনের যুগ। বিটিভি না দেখলেও চলে। কোনো দল হরতাল ডাকার আগেই তারা জনগণকে আগাম খবর জানিয়ে দেয়। এ এক মস্ত সুবিধা। কোন দল বা জোট কী দাবিতে হরতাল ডেকেছে, সেটা জনসাধারণ না জানলেও চলে। কেবল এটা জানাই যথেষ্ট যে, কোন তারিখে কতটা সময় পর্যন্ত রাজপথে যানবাহন বের করতে হবে না। এ দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অবধারিতভাবে বন্ধ থাকবে। ঢাকা ও অন্যান্য স্থানে প্রধান প্রধান মার্কেটও বন্ধ থাকবে। হরতালের আগের রাতে রাজধানীর কোনো না কোনো স্থানে কয়েকটা যানবাহনে আগুন দেওয়ার 'ঘটনা অবধারিতভাবে ঘটবেই'। এইচএম এরশাদের আমলে এর স্থানে ছিল 'সাউন্ড এফেক্ট'_ হরতালের আগের রাতে পটকা-বোমা ফাটানো হতো। হরতাল সমর্থকরাই এটা করত। এর উদ্দেশ্য ছিল যানবাহনের মালিকদের ভয় দেখানো। স্বস্তির খবর যে, এ ধরনের সাউন্ড এফেক্ট বা বোমাবাজির হাত থেকে আমরা নিষ্কৃতি পেয়েছি। তার পরিবর্তে চালু হয়েছে হরতালের আগের সন্ধ্যায় গাড়িতে আগুন দেওয়া। বেসরকারি টেলিভিশনের কল্যাণে একটি গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটলে তা অতি দ্রুত পেঁৗছে যায় দেশের সর্বত্র। আশির দশকের সাউন্ড এফেক্টের মতো এটা বেশি কার্যকর প্রমাণিত হচ্ছে।
বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী কি পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত (যা আড়াই বছর পর হওয়ার কথা) এ ধরনের হরতাল চালিয়ে যাবে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অর্থনীতির অধ্যাপককে (যাকে এ জোটের নিষ্ঠাবান সমর্থক বলে ধরা হয়) এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যেমন বঙ্গভবন অবরোধ কিংবা রাজপথ-রেলপথ অবরোধের মতো কর্মসূচি সফল করেছিল, সেটা বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী পারবে না। বিরোধী দলে থেকেও লগি-বৈঠা নিয়ে হাজার হাজার লোক নিয়ে গুলিস্তান এলাকা টানা কয়েকদিন দখলে রেখেছিল আওয়ামী লীগ। এমন সমাবেশ ঘটানোর ক্ষমতা বিএনপির নেই। জামায়াতে ইসলামী ২০০৬ সালের অক্টোবরের শেষ দিকে পল্টন এলাকায় লগি-বৈঠার পাল্টা সমাবেশ করার চেষ্টা করেছিল। পুলিশের সমর্থন ছিল তাদের প্রতি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সমর্থকদের কাছে টিকতে পারেনি। এখন কি বিরোধী দলে থেকে তারা সে চেষ্টা করে সফল হতে পারবে?
বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী ১২ ঘণ্টা, ৩৬ ঘণ্টা ও ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে। এরপর কত ঘণ্টা ডাকবে? ৭২ না-কি ৯৬ ঘণ্টা? আশি ও নব্বইয়ের দশকে এ ধরনের টানা হরতালের ঘটনা ঘটেছে। তবে ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগ হরতালের পাশাপাশি অবরোধের প্রতি নজর দিয়েছিল। বিএনপি কি মিত্রদের নিয়ে সে পথে যাবে? তারা লাগাতার হরতাল ডাকবে বলে জানিয়েছে। এতে যদি সরকারের পতন না ঘটে তাহলে কী করবে, সেটাই দেখার বিষয়। ভারতের দার্জিলিং এলাকায় একটানা মাসখানেক করে অবরোধ-ধর্মঘটের ঘটনা একাধিকবার ঘটেছে। তাতে অবশ্য সরকারের পতন ঘটেনি। কিন্তু জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছে। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী কি সে পথে যাবে?
খালেদা জিয়া ৩০ জুন সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, সংবিধানের 'পঞ্চম সংশোধনী সামরিক শাসন জারির দলিল নয়, সামরিক শাসন প্রত্যাহারের ইনস্ট্রুমেন্ট।' তিনি দাবি করেন, এ সংশোধনীতে যেসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত তা জনগণের কাছ থেকে 'গণভোটের মাধ্যমে প্রাক-অনুমোদনপ্রাপ্ত'। তিনি আরও বলেন, '১৯৭২ সালে রচিত সংবিধানে বাংলাদেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি।' তার এ দুটি অবস্থানই কিন্তু আদর্শগত। এটা সবার জানা যে, জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালে যে গণভোটের আয়োজন করেছিলেন তাতে নির্বাচন কমিশন প্রায় ১০০ ভাগ ভোট পড়েছে প্রচার করলেও বাস্তবে ১ শতাংশ ভোটারও ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়নি। আর ১৯৭২ সালের সংবিধানে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি বলার মাধ্যমে তিনি এটাই স্পষ্ট করে দিলেন যে, পাকিস্তান আমলে জামায়াতে ইসলামী ও মুসলিম লীগ যে মতাদর্শ অনুসরণ করেছে, তিনি সে পথেই চলতে চান। তিনি যদি এ অবস্থানে অটল থাকেন তাহলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার আপসের সামান্যতম যোগসূত্রও থাকে না।
কিন্তু দাবি আদায় করবেন কীভাবে? টানা আড়াই বছর মাঝে মধ্যে বিরতি দিয়ে হরতাল দিয়ে যাবেন? না-কি ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সাম্প্রতিক বহুল আলোচিত এই উক্তিতেই ভরসা রাখবেন :'যে কোনো সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পাল্টে যেতে পারে।' আমরা জানি, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ এবং ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশে আকস্মিক পরিবর্তন ঘটেছিল। আবারও কি সে ধরনের কিছু ঘটবে? বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতারা কোনো ক্লু দেবেন কি? নাকি তা চমক হয়েই আসবে?
অজয় দাশগুপ্ত : সাংবাদিক
ajoydg@gmail.com
No comments