ক্যারেন ডি ইয়াং-হিলারির পাকিস্তান সফর এবং কিছু কথা

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি রডহ্যাম ক্লিনটন পাকিস্তানের নেতাদের সঙ্গে কয়েক ঘণ্টার বৈঠক করেছেন। তাঁর এই সফরের উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কের নতুন দিক উন্মোচন করা। হিলারি ক্লিনটন স্পষ্টত সেখানে বলেছেন, ওসামা বিন লাদেন নিহত হওয়ার পর আমরা নতুন একটি অধ্যায়ে পেঁৗছতে সক্ষম হয়েছি।


কিন্তু এ কথা সত্য, আল-কায়েদা এবং তাদের সিন্ডিকেট আমাদের জন্য হুমকি হিসেবে এখনো বহাল তবিয়তে আছে। তিনি সকালে এসেছেন আর পাকিস্তানে অবস্থান করেছেন বিকেল পর্যন্ত। পূর্বানুমতি ব্যতিরেকে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী পাকিস্তানের ভেতরে ঢুকে বিন লাদেনকে খুন করার মাধ্যমে তাদের সার্বভৌমত্বকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে। পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, তাতে ফাটল ধরার মতো অবস্থা হয়েছে এই আক্রমণের কারণে। এ সম্পর্ক পুনরায় প্রতিষ্ঠা করার জন্যই যে এই সফর_তা স্পষ্ট হয়েছে তাঁদের বক্তব্য থেকেই।
ওবামা প্রশাসন আল-কায়েদার বিরুদ্ধে যে প্রচার চালিয়েছে, তারই সূত্র ধরে দুই পক্ষের মধ্যে স্পষ্ট কিছু নির্দেশনা নিয়ে কথা হয়েছে। সেখানে নির্দিষ্ট কিছু অপারেশনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। উভয় পক্ষই সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান বিষয়েও ঐকমত্যে পেঁৗছেছে। আরেক কর্মকর্তা বলেছেন, ভবিষ্যতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, সেই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আলোচনাও হয়েছে। তার মধ্যে যৌথভাবে অভিযান পরিচালনার বিষয়টিও আলোচনায় স্থান পেয়েছে।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, দুই পক্ষই ভবিষ্যতে যৌথ অভিযান পরিচালনায় সম্মত হয়েছে। এই তথ্য নিশ্চিত করেছে প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির এক মুখপাত্র। অ্যাডমিরাল মিকায়েল মুলেনও বলেছেন, পাকিস্তানের কাছ থেকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রত্যাশা করেছেন, ভবিষ্যতে পাকিস্তান যেন তাদের সহযোগিতার হাত আরো সম্প্রসারণ করে।
বিগত দশকগুলোতে সন্ত্রাসী দলের অনেক নেতাই পাকিস্তানে বাস করেছে। এমনকি পাকিস্তানের নাগরিক নয়, এমন সন্ত্রাসীরাও সেখানে থেকে সন্ত্রাস-কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল। সেসব সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধেও লড়াই করতে হবে। কারণ তারা পাকিস্তানের জনজীবন তছনছ করে দিচ্ছে। এই সম্পর্কে তিনি সম্প্রতি কয়েক ডজন পাকিস্তানি নাগরিকের মৃত্যুর কথাও উল্লেখ করেছেন। পাকিস্তানের নেভির বিমানঘাঁটিতে যে বোমা হামলা হয়েছে, তাও জোরালোভাবে উল্লেখ করা হয় সেখানে।
বেশ কয়েক মাস আগে আফগানিস্তানে আফগান সরকার ও সেখানকার তালেবানের সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গও উত্থাপিত হয় সেখানে। এ মুহূর্তে পাকিস্তানের উচিত হবে আন্তরিকভাবে আমাদের সব বিষয়ে সমর্থন করা। এদিকে পাকিস্তানের হাতেও এমন ক্ষমতা আছে, যা দিয়ে আফগানিস্তানের রাজনীতিতে তুরুপের তাসের মতো খেলতে পারে। পাকিস্তান পক্ষ যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতিশ্রুত সহযোগিতার প্রসঙ্গে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি দ্রুত সেসব প্রতিশ্রুতি পূরণ করত, তাহলে পাকিস্তানের জনগণ তা প্রত্যক্ষ করত এবং তাদের মানসিকতা আরো ইতিবাচক হতো।
হিলারি ক্লিনটন এবং মুলেন সংবাদ সম্মেলনে মুখোমুখি হয়েছিলেন। তার আগে তাঁরা পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জারদারি, প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি, সামরিক বাহিনী প্রধান জেনারেল আশফাক কায়ানি ও ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) প্রধান লে. জেনারেল আহমেদ সুজা পাশার সঙ্গে আলোচনা করেছেন। সঙ্গে আসা সাংবাদিকদের রাখা হয়েছিল খুবই কঠোর পর্যবেক্ষণের মধ্যে। তাঁদের পাকিস্তানি কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। টেলিভিশন ক্যামেরাগুলোও কূটনৈতিক কর্মকর্তাদের উপস্থিত হওয়ার মুহূর্তেই ছবি তোলার সুযোগ পেয়েছে। আর পেয়েছে পরবর্তীকালে_যে সময় তাঁদের মুখ থেকে হাসিই বেরিয়ে এসেছে। বলা হয়েছে, সব কিছু ঠিক আছে।
আলোচনায় পাকিস্তানের গোয়েন্দাদের ব্যর্থতার কথা এসেছে। বলা হয়েছে, অ্যাবোটাবাদে সামরিক আবাসিক এলাকা থেকে মাইলখানেক দূরত্বে আল-কায়েদাপ্রধান বসবাস করার পরও তাঁর সম্পর্কে কেউ কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
কিন্তু পাকিস্তানি পক্ষ বারবারই বলেছে, পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব অস্বীকার করার মতো কাজ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এটা যুক্তরাষ্ট্রের কাজের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে গণ্য হতে পারে। বলা হয়েছে, পাকিস্তানের জনগণ বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করেনি। হিলারি বলেছেন, পাকিস্তানের নেতাদেরই সেই বিষয়টি বুঝিয়ে বলার দায়িত্ব নেওয়া দরকার। কারণ এর সঙ্গে পাকিস্তানের নিরাপত্তাও জড়িত।
পাকিস্তান চীনের সঙ্গে আরো সুসম্পর্ক তৈরি করতে চায়, এমন কথা বলার পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অনেকেই হয়তো জানে না যে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে, তা সৌদি আরব কিংবা চীনের চেয়ে অনেক বেশি দৃঢ় এবং পাকিস্তান তা থেকে বেশি উপকৃতও হচ্ছে।
হিলারি স্পষ্ট করে আবারও উল্লেখ করেছেন, পাকিস্তানের কোনো উচ্চপদস্থ ব্যক্তি বিন লাদেনের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করে চলেছেন, এমন কোনো তথ্য তাদের জানা নেই।
পাকিস্তানের কিছু অসন্তোষ থাকার পরও তারা হিলারি ক্লিনটনকে তাদের দেশে আসার সুযোগ করে দিয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে তারা যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে ভালো ধারণা পোষণ করে বলেই। (সংক্ষিপ্ত)
লেখক : সাংবাদিক
ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে ভাষান্তর মোস্তফা হোসেইন


No comments

Powered by Blogger.