কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা-মাসে একবারের বেশি সুদ পরিবর্তন করতে পারবে না ব্যাংক

তফসিলি ব্যাংকগুলো মাসে একবারের বেশি সুদহার পরিবর্তন করতে পারবে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক গতকাল বুধবার ব্যাংকগুলোকে এ নির্দেশনা দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ সময় আরও বলেছে, এক কোটি বা তার চেয়ে বেশি টাকার স্থায়ী বা মেয়াদি আমানতের তথ্য সাপ্তাহিক ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাতে হবে।


তফসিলি ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো সার্কুলারে বলা হয়েছে, ইতিপূর্বে ঘোষিত সুদহারের বাইরে আমানত ও ঋণের ওপর সুদ আরোপ করা যাবে না, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এমন নির্দেশনা দিয়ে তা কঠোরভাবে অনুসরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, কোনো কোনো ব্যাংক স্থায়ী বা মেয়াদি আমানতের ওপর ঘোষিত সুদ বা মুনাফা হারের বাইরে অধিক হারে সুদ নিচ্ছে বা মুনাফা দিচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক কোটি টাকা বা তার চেয়ে বেশি আমানতের তালিকা সাপ্তাহিক ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছে। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি ছক ব্যাংকগুলোর জন্য তৈরি করে তা সার্কুলারে যুক্ত করেছে।
জানা গেছে, ব্যাংকঋণের সুদহারের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরোপিত সীমা কয়েক মাস আগে প্রত্যাহার করা হয়। আর সম্প্রতি ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের (সিইও) সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) এক বৈঠকে মেয়াদি আমানতে সর্বোচ্চ সুদ সাড়ে ১২ শতাংশ নির্ধারণ করে। এবিবি একই সঙ্গে শিল্পের মেয়াদি ঋণ ও চলতি মূলধনের সর্বোচ্চ সুদও নির্ধারণ করে, যা সাড়ে ১৫ শতাংশ।
ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠছিল, ব্যাংকগুলো নিজেদের বেঁধে দেওয়া সুদহারও মানছে না। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন ব্যাংকে তাৎক্ষণিক পরিদর্শক দল পাঠায়। সূত্রগুলো বলছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শক দল অনেক ব্যাংকেই গিয়ে দেখেছে, নিজেদের ঘোষণা তারা মানছে না।
আমানত সংগ্রহের জন্য ব্যাংকগুলো একপ্রকার মরিয়া হয়ে উঠেছে। শাখা ব্যাংকের অনেক কর্মকর্তাই এখন দিনের বেশির ভাগ সময় আমানত সংগ্রহের চেষ্টায় কাটান। আমানত সংগ্রহের এই প্রতিযোগিতায় ব্যাংকগুলো অপর ব্যাংক থেকে বেশি সুদ দেওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছে। এতে অসুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরি হচ্ছে বলে মনে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অভিযোগ আছে, অন্য ব্যাংকের গ্রাহককে ভাগিয়ে আনতে বেশি মুনাফার প্রস্তাব চলছেই।
এ প্রক্রিয়ায় সরকার, সরকারি প্রতিষ্ঠান, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি যেসব প্রতিষ্ঠানের কাছে বড় অঙ্কের নগদ টাকা, প্রভিডেন্ট ফান্ড বা ভবিষ্য তহবিল রয়েছে, তারা ব্যাংকগুলোর কাছে বিশেষ মর্যাদা পাচ্ছে। আমানত সংগ্রহের ক্ষেত্রে ঘুষও দেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ আছে, সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থ নিতে প্রতি কোটি টাকার বিপরীতে তিন হাজার টাকা করে নগদ ‘ঘুষ’ দিতে হয় প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাকে। পরে এই ঘুষের টাকা বিভিন্ন খরচের ভাউচারে দেখানো হয়।

No comments

Powered by Blogger.