চারদিক-আপনি কি বাচ্চু বা রহিমা? by ফেরদৌস ফয়সাল
আপনি কি সিলেটে থাকেন? আপনার নাম কি বাচ্চু? আপনার নাম কি রহিমা? দুঃখিত, আমরা আপনাদের আসল নাম জানি না। যদি কোনো কারণে আপনার বা আপনার পরিচিত কারও নাম বাচ্চু বা রহিমা হয়, তাহলে এই লেখাটা একটু পড়ুন।
এমনও তো হতে পারে, সোহেল নামের এই ছেলেটি আপনারই সন্তান!
আমরা যে সোহেলের কথা বলছি, সে শুধু বাবার নাম বাচ্চু ও মায়ের নাম রহিমাই বলতে পারে। আর হ্যাঁ, বাবা স-মিলে কাজ করতেন, সেটাও মনে আছে ওর। আরেকটা কথা বেশ মনে করতে পারে সোহেল। ওর আছে দুই বোন—সনি ও সামিয়া।
ব্যস! এই এতটুকু তথ্যের ওপর নির্ভর করেই সোহেলকে বাড়ি ফিরতে হবে।
সোহেল নামটি আমাদেরই দেওয়া। মা-বাবা অন্য কোনো নাম রেখেছিলেন। পুনর্বাসনকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন এমন কারও নাম-পরিচয় পত্রিকার নীতি অনুযায়ী ছাপা হয় না, তাই ওর নাম সোহেল। বয়স বছর দশেক। পথশিশু ছিল। বখাটেদের সংস্পর্শে এসে নিজেও বখে গিয়েছিল। পুনর্বাসনকেন্দ্রে আসার পর একটু স্থিত হয়েছে। এখন সোহেল ফিরতে চায় মা-বাবার কাছে। ফিরতে চায় বোনদের কাছে।
প্রথম আলো মাদকবিরোধী আন্দোলনের উপদেষ্টা ব্রাদার রোনাল্ড ড্রাহোজাল। মাদকাসক্তি পুনর্বাসনকেন্দ্র ‘আপন’-এর নির্বাহী পরিচালকও তিনি। বললেন, আপনগাঁওতে অনেক পথশিশু মাদকের পথ ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছে। সোহেলও তেমন একটি শিশু। শিশুটি নিজ বাড়ি-ঘরের কথা বলতে পারে না। ও এখন সুস্থ। মা-বাবার কাছে ফিরে যেতে চায়। ব্রাদার আশাবাদী—পত্রিকায় সোহেলের ছবি ছাপা হলে ওর মা-বাবা চিনতে পারবেন।
আবার বলি, আপনি যদি সিলেটের মানুষ হন, আপনার নাম যদি বাচ্চু বা রহিমা হয়ে থাকে, তাহলে ছবিটি দেখুন। দেখুন, ছেলেটি আপনার কি না।
সোহেলের বাড়ি ছেড়ে আসার গল্পটি একটু শুনে নিই।
কয়েক বছর আগে সোহেল বন্ধু জিয়ার সঙ্গে বেড়াতে বের হয়েছিল। ঘুরতে ঘুরতে চলে এসেছিল সিলেট রেলস্টেশনে। বন্ধুরা ঠিক করেছিল, ট্রেনে ঘুরবে কিছুক্ষণ। কিন্তু সেই ট্রেন সিলেট থেকে চলে এল ঢাকা বিমানবন্দর রেলস্টেশনে। নতুন জায়গা। আগে কখনো আসেনি, মহা বিপদে পড়ে গেল সোহেল। এখানে বন্ধুরা তাকে রেখে চলে যায়। এখানেই নতুন বন্ধুদের সঙ্গে ওর দেখা।
এই নতুন ‘বন্ধু’রা পলিথিনে মুখ ঢুকিয়ে বসে থাকে। ওদের কাছ থেকেই নেশার রাস্তা খুঁজে পায় সোহেল। ডান্ডি, সিগারেট, গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইন, মদ—সবটাতেই আসক্ত হয়ে পড়ল সোহেল। এসবের মধ্যেই একটা ভাঙারির দোকানে কাজ জুটিয়ে নেয়। ভিডিও গেমসের নেশা চাপে মনে।
সব ধরনের নেশার টাকা জোগাড় করতে হলে তো বাড়তি কিছু করতে হবে। শুধু ভাঙারির দোকানের বেতনে চলবে না। তাই শুরু হয় চুরি করা। সোহেল বলল, ‘খিলক্ষেত, নর্দা, বিশ্বরোড এলাকায় বাড়ি বাড়ি চুরি করতাম। আর ওই টাকায় নেশা করতাম। ১০ হাজার টাকা দামের মোবাইল চুরি করলে পাঁচ হাজার টাকা পাইতাম। আর ওই টাকা দিয়ে নেশা করতাম।’
চুরি করতে কেন?
‘খিদা লাগে। নেশার খিদা। নেশার খিদা লাগলে কি আর ঠিক থাকা যায়? কমলাপুর স্টেশনের ৮ নম্বর লাইনে থাকতাম। আমরা বন্ধুরা বইয়া নিশা করতাম। একদিন ‘আপন’-এর ব্রাদার আমাগো লইয়া আসে আপনে। এখন আর মাদক নিই না। আজকে এক বছরের বেশি সুস্থ আছি।’ বলল সোহেল।
যোগ করল, ‘নেশা আমার ভালো লাগে না। আমি আমার মা-বাবার কাছে যেতে চাই। কত দিন মারে দেখি না, তাঁদের দেখলে তো আমি চিনব না!’
সোহেল এখন সুস্থ। মাদক নেয় না। ফিরে যেতে চায় মা-বাবার কাছে। ও নিশ্চিত, ছবিটা দেখলে ওর মা-বাবা ওকে চিনতে পারবেন। আর তাহলেই সোহেল ফিরে যেতে পারবে সিলেটে নিজের বাড়িতে।
ছবিটি দেখুন। এই ছেলেটি কি আপনার পরিচিত?
যদি পরিচিত হয়, তাহলে ওকে ওর নিজ ঠিকানায় ফিরে যাওয়ার জন্য সাহায্য করুন।
একটি ছেলে ফিরে পাচ্ছে নিজের পরিবার—এর চেয়ে সুখের কথা আর কী হতে পারে!
ফেরদৌস ফয়সাল
আমরা যে সোহেলের কথা বলছি, সে শুধু বাবার নাম বাচ্চু ও মায়ের নাম রহিমাই বলতে পারে। আর হ্যাঁ, বাবা স-মিলে কাজ করতেন, সেটাও মনে আছে ওর। আরেকটা কথা বেশ মনে করতে পারে সোহেল। ওর আছে দুই বোন—সনি ও সামিয়া।
ব্যস! এই এতটুকু তথ্যের ওপর নির্ভর করেই সোহেলকে বাড়ি ফিরতে হবে।
সোহেল নামটি আমাদেরই দেওয়া। মা-বাবা অন্য কোনো নাম রেখেছিলেন। পুনর্বাসনকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন এমন কারও নাম-পরিচয় পত্রিকার নীতি অনুযায়ী ছাপা হয় না, তাই ওর নাম সোহেল। বয়স বছর দশেক। পথশিশু ছিল। বখাটেদের সংস্পর্শে এসে নিজেও বখে গিয়েছিল। পুনর্বাসনকেন্দ্রে আসার পর একটু স্থিত হয়েছে। এখন সোহেল ফিরতে চায় মা-বাবার কাছে। ফিরতে চায় বোনদের কাছে।
প্রথম আলো মাদকবিরোধী আন্দোলনের উপদেষ্টা ব্রাদার রোনাল্ড ড্রাহোজাল। মাদকাসক্তি পুনর্বাসনকেন্দ্র ‘আপন’-এর নির্বাহী পরিচালকও তিনি। বললেন, আপনগাঁওতে অনেক পথশিশু মাদকের পথ ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছে। সোহেলও তেমন একটি শিশু। শিশুটি নিজ বাড়ি-ঘরের কথা বলতে পারে না। ও এখন সুস্থ। মা-বাবার কাছে ফিরে যেতে চায়। ব্রাদার আশাবাদী—পত্রিকায় সোহেলের ছবি ছাপা হলে ওর মা-বাবা চিনতে পারবেন।
আবার বলি, আপনি যদি সিলেটের মানুষ হন, আপনার নাম যদি বাচ্চু বা রহিমা হয়ে থাকে, তাহলে ছবিটি দেখুন। দেখুন, ছেলেটি আপনার কি না।
সোহেলের বাড়ি ছেড়ে আসার গল্পটি একটু শুনে নিই।
কয়েক বছর আগে সোহেল বন্ধু জিয়ার সঙ্গে বেড়াতে বের হয়েছিল। ঘুরতে ঘুরতে চলে এসেছিল সিলেট রেলস্টেশনে। বন্ধুরা ঠিক করেছিল, ট্রেনে ঘুরবে কিছুক্ষণ। কিন্তু সেই ট্রেন সিলেট থেকে চলে এল ঢাকা বিমানবন্দর রেলস্টেশনে। নতুন জায়গা। আগে কখনো আসেনি, মহা বিপদে পড়ে গেল সোহেল। এখানে বন্ধুরা তাকে রেখে চলে যায়। এখানেই নতুন বন্ধুদের সঙ্গে ওর দেখা।
এই নতুন ‘বন্ধু’রা পলিথিনে মুখ ঢুকিয়ে বসে থাকে। ওদের কাছ থেকেই নেশার রাস্তা খুঁজে পায় সোহেল। ডান্ডি, সিগারেট, গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইন, মদ—সবটাতেই আসক্ত হয়ে পড়ল সোহেল। এসবের মধ্যেই একটা ভাঙারির দোকানে কাজ জুটিয়ে নেয়। ভিডিও গেমসের নেশা চাপে মনে।
সব ধরনের নেশার টাকা জোগাড় করতে হলে তো বাড়তি কিছু করতে হবে। শুধু ভাঙারির দোকানের বেতনে চলবে না। তাই শুরু হয় চুরি করা। সোহেল বলল, ‘খিলক্ষেত, নর্দা, বিশ্বরোড এলাকায় বাড়ি বাড়ি চুরি করতাম। আর ওই টাকায় নেশা করতাম। ১০ হাজার টাকা দামের মোবাইল চুরি করলে পাঁচ হাজার টাকা পাইতাম। আর ওই টাকা দিয়ে নেশা করতাম।’
চুরি করতে কেন?
‘খিদা লাগে। নেশার খিদা। নেশার খিদা লাগলে কি আর ঠিক থাকা যায়? কমলাপুর স্টেশনের ৮ নম্বর লাইনে থাকতাম। আমরা বন্ধুরা বইয়া নিশা করতাম। একদিন ‘আপন’-এর ব্রাদার আমাগো লইয়া আসে আপনে। এখন আর মাদক নিই না। আজকে এক বছরের বেশি সুস্থ আছি।’ বলল সোহেল।
যোগ করল, ‘নেশা আমার ভালো লাগে না। আমি আমার মা-বাবার কাছে যেতে চাই। কত দিন মারে দেখি না, তাঁদের দেখলে তো আমি চিনব না!’
সোহেল এখন সুস্থ। মাদক নেয় না। ফিরে যেতে চায় মা-বাবার কাছে। ও নিশ্চিত, ছবিটা দেখলে ওর মা-বাবা ওকে চিনতে পারবেন। আর তাহলেই সোহেল ফিরে যেতে পারবে সিলেটে নিজের বাড়িতে।
ছবিটি দেখুন। এই ছেলেটি কি আপনার পরিচিত?
যদি পরিচিত হয়, তাহলে ওকে ওর নিজ ঠিকানায় ফিরে যাওয়ার জন্য সাহায্য করুন।
একটি ছেলে ফিরে পাচ্ছে নিজের পরিবার—এর চেয়ে সুখের কথা আর কী হতে পারে!
ফেরদৌস ফয়সাল
No comments